বেইলী রোড ট্র্যাজেডি ও একটি প্রাচীন পুকুর

বেইলী রোড ট্র্যাজেডি ও একটি প্রাচীন পুকুর

রাজধানী ঢাকায় প্রায় দুই কোটি মানুষের মাত্রারিক্ত চাপের কারণে শহরটি দিনদিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। শহরে জমির দাম অনেক আগেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বাড়ি বানাতে গেলে রাস্তার জন্য কেউই এক ইঞ্চি জমি বেশি ছাড়তে নারাজ। রাজউকের দেওয়া বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি তৈরি করার মানসিকতা খুব কম মালিকেরই আছে। 

একটি পরিকল্পিত আদর্শ শহর নির্মাণ করতে শহরটির মোট আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ জমি রাস্তার জন্য রাখার নিয়ম। কিন্তু ঢাকায় রাস্তার জন্য মোট আয়তনের শতকরা ৮ ভাগ জমি ব্যবহার হচ্ছে। এ কারণে ঢাকায় ট্রাফিক জ্যাম দুঃসহ পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। কোনো জায়গায় আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো যানজটে আটকে থাকে বা সরু রাস্তায় ঢুকতে পারে না। 

আমাদের ঢাকা শহরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হচ্ছে পুকুর, খাল কিংবা প্রাকৃতিক জলাধার সংকট। একসময় ঢাকায় অনেক খাল, প্রাকৃতিক জলাশয় ও পুকুর  ছিল। অধিকাংশ খাল অনেক আগেই ভূমিদস্যুদের কবলে পড়ে ভরাট ও বেদখল হয়ে গেছে। অন্যদিকে অধিকাংশ পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো মানুষ ভরাট করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে। এখন হাতে গোনা কয়েকটি খাল, জলাশয় ও পুকুর রয়েছে। এ কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলোকে পানির উৎস খুঁজে পেতে বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। 

নতুন তথ্য হচ্ছে, ২৯ ফেব্রুয়ারি বেইলী রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দ্রুত আগুন নেভাতে সেই এলাকার 
একটি প্রাচীন পুকুর বিরাট ভূমিকা রেখেছে। এই পুকুরটি অগ্নি-দুর্ঘটনাস্থলের খুব কাছে ছিল বলে ফায়ার ফাইটার্সদের পানি সংগ্রহে কোনোরকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় নি। নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহ না পেলে সেই রাতে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড আরও ভয়াবহ আকারে অন্যান্য বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ত। আমার জানা মতে, এই বড় পুকুরটির অবস্থানের বিষয়টি বেইলী রোড দিয়ে প্রতিদিন চলাচলকারী অনেক মানুষজনই জানতেন না। এই বিশালাকৃতির পুকুরটির পানি বেইলী রোডের বাসিন্দাদের জন্য সেই কালরাত্রিতে বড় ধরনের এক আশীর্বাদ।

কোথাও আগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের প্রচুর পরিমাণ পানির দরকার হয়ে পড়ে। ঢাকা শহরের বেদখল হয়ে যাওয়া অসংখ্য খাল, পুকুর ও প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধার করা এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা নিরাপদ নগরী চাই। অগ্নিদগ্ধ মানুষের মৃত্যুর মিছিল আর দেখতে চাই না। আশা করি, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই আরও সচেতন হবেন। 

Leave a Reply

Your identity will not be published.