আমেরিকার লস এঞ্জেলসের রকি বীচ-এর বাসিন্দা তিন কিশোর, তিন বন্ধু-কিশোর পাশা, মুসা আমান এবং রবিন মিলফোর্ড। তারা একটি গোয়েন্দা দল গড়ে তোলে। আর এটির হেডকোয়ার্টার হলো কিশোর পাশার চাচা রাশেদ পাশার একটি মোবাইল ভ্যানের ভেতরে, যেটি অনেক দিন চাপা পড়েছিল পুরোনো লোহালক্করের মধ্যে। এই তিন গোয়েন্দার রহস্য উন্মোচনের নানা অভিযানে সাহায্য করে রাশেদ পাশার গাড়ির দুই ড্রাইভার বোরিস আর রোভার। অন্যদিকে নানা বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে তিন কিশোর গোয়েন্দাকে তথ্য জানায় তাদের বন্ধু জিনা। বাংলাদেশে ‘তিন গোয়েন্দা’ সিরিজের আবির্ভাব হয়েছিল ১৯৮৫ সালে, সেবা প্রকাশনী থেকে। একে একে প্রকাশিত হয়েছিল সিরিজটির আড়াই শ’টি বই। এর মধ্যে দেড় শ’ বই লিখেছিলেন রকিব হাসান। উল্লেখ্য, রবার্ট আর্থারের ‘থ্রি ইনভেস্টিগেটরস’ সিরিজ থেকে বাংলায় তিন গোয়েন্দার সূচনা হলেও রকিব হাসানের লেখনিতে তা ভিন্ন মাত্রা পায়। এই সিরিজের বহু বই-ই তাঁর মৌলিক রচনা।
সেই তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান অন্য ভুবনে পাড়ি জমিয়েছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। গতকাল ১৫ অক্টোবর, বুধবার, ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। দুপুরের পর ডায়ালাইসিস করাতে হাসপাতালে এসেছিলেন রকিব হাসান। তবে ডায়ালাইসিস শুরুর আগেই তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে হাসপাতালেই চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা হয়, কিন্তু বাঁচানো যায় নি।
গোয়েন্দা কাহিনির বাইরেও রকিব হাসান বহু ক্লাসিক ও কিশোর সিরিজও উপহার দিয়েছেন। সব মিলিয়ে তাঁর লেখা বইয়ের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক।
মূলত এক সময় পাঠকের হাতে স্বল্পমূল্যে বই তুলে দিতে এবং নিত্য-নতুন পাঠক সৃষ্টি করতে ‘পেপারব্যাক সংস্করণে’ প্রকাশিত নামে-বেনামে তাঁর লেখা বহু বই তিন দশক ধরে জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল।
১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় রকিব হাসানের জন্ম। বাবার চাকরির সুবাদে ছোটবেলা কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করেন। ভর্তি হন কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজে। অতঃপর বিএসসি পাস করেন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে। পড়াশোনা শেষ করে বিভিন্ন ধরনের চাকরিতে চেষ্টা করলেও শেষে লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন রকিব হাসান। সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত রহস্যপত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৭ সালে তাঁর প্রথম বই প্রকাশিত হয় ছদ্মনামে। অনুবাদগ্রন্থ ব্রাম স্টোকারের ‘ড্রাকুলা’।
এরিক ফন দানিকেন, ফার্লে মোয়াট, জেরাল্ড ডুরেল-এর মতো বিখ্যাত লেখকদের অনেক চিরায়ত লেখা তিনি বাংলায় অনুবাদ করেছেন। অ্যারাবিয়ান নাইটস ও টারজান সিরিজের বাংলা অনুবাদও তাঁর হাত দিয়ে এসেছে। অনুবাদ করেছেন জুল ভার্নের বইগুলোও। তবে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছে তাঁর তিন গোয়েন্দা সিরিজ। সেবা প্রকাশনী ছাড়ার পর ‘তিন বন্ধু’ ও ‘গোয়েন্দা কিশোর মুসা রবিন’ নামে এই সিরিজের বই লেখা চালিয়ে যান রকিব হাসান। নিজের নামে ‘কিশোর গোয়েন্দা’ সিরিজ, ‘খুদে গোয়েন্দা’ সিরিজ এবং ছদ্মনামে ‘রোমহর্ষক’ সিরিজ ও ‘গোয়েন্দা রাজু’ সিরিজ লিখে গেছেন তিনি।
Leave a Reply
Your identity will not be published.