উপমহাদেশের চলচ্চিত্রে ফুটবল

উপমহাদেশের চলচ্চিত্রে ফুটবল

এবারের পুজোয়, ১০ অক্টোবর, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পেতে চলেছে ‘গোলন্দাজ’ ছবিটি। এখানে ভারতের ফুটবলের জনক নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন দেব। এই ছবির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে তিনি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ফুটবল তারকা বাইচুং ভুটিয়ার কাছে।

এদিকে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল নিয়ে বাংলাদেশে নির্মিতব্য ‘দামাল’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন বিদ্যা সিনহা মিম, সিয়াম আহমেদ ও শরীফুল রাজ।

ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় ছবিটি নির্মাণ করছেন তরুণ পরিচালক রায়হান রাফী। ফরিদুর রেজা সাগরের কাহিনীতে ছবির চিত্রনাট্য করেছেন নাজিম উদ দৌলা ও রায়হান রাফী।

এই পর্যায়ে ভারতীয় উপমহাদেশের চলচ্চিত্রে ফুটবল কীভাবে এসেছে তা এবার দেখে নেওয়া যাক।

গত শতকের আশির দশকে বলিউডে একটি ছবি নির্মিত হয়েছিল এক ফুটবলারকে ঘিরে। নায়ক ছিলেন অনিল কাপুর। কিন্তু ছবিতে তার ফুটবলার-জীবন প্রাধান্য পায় নি, পেয়েছে অন্য জীবন।

‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘ম্যায় হু না’, ‘জোশ’ প্রভৃতি ছবিতে শাহরুখ খানকে ফুটবল খেলতে দেখা গেছে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ফুটবলকে ঘিরে একটি ছবি তৈরি হয়েছিল গত শতকের সত্তর দশকে। মতি নন্দীর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই ‘স্ট্রাইকার’ ছবির পরিচালক ছিলেন অর্চন চক্রবর্তী। আর নায়কের ভূমিকায় ছিলেন শমিত ভঞ্জ। একজন ফুটবলার তথা স্ট্রাইকারের উঠে আসার এই কাহিনিতে ১৭ বছরের স্ট্রাইকারের ভূমিকায় শমিত ভঞ্জকে দর্শকরা গ্রহণ করে নি। তবে ষাট দশকে নির্মিত হয়েছিল যে দুটি ছবি- অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের ‘ধন্যি মেয়ে’ এবং মানু সেনের ‘মোহনবাগানের মেয়ে’। এখানে ফুটবল অনেকটাই প্রাধান্য পেয়েছিল আর ছবি দুটি উপভোগ্য হওয়ার কারণে দর্শকরাও গ্রহণ করেছিল। উল্লেখ্য, প্রথমোক্ত ছবিতে উত্তমকুমার এক ফুটবল-পাগল তরুণের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

এ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে নির্মিত হয়েছে চিরঞ্জিত অভিনীত ‘ইস্টবেঙ্গলের ছেলে’। একজন সাধারণ ফুটবলারের তারকা হওয়ার কাহিনি। ছবিতে মোহনবাগানের ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্যও অভিনয় করেছেন, নিজের ভূমিকায়ই। আর হ্যাঁ, গত শতাব্দীর ষাটের দশকে পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত ফুটবলার চুনী গোস্বামীকে নিয়ে অজয় বিশ্বাস নির্মাণ করেছিলেন ‘প্রথম প্রেম’। বিশ্বজিৎ ও সন্ধ্যা রায় ছিলেন নায়ক-নায়িকা। আর ছিলেন চুনী তাঁর তখন ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে আকাশছোঁয়া খ্যাতি। ছবিতে চুনীই ভারতের ফুটবল অধিনায়ক। খুব খারাপ অভিনয় করেছিলেন তাও নয়। উত্তমকুমারের কাছ থেকে কিছু টিপসও নিয়েছিলেন। কিন্তু ছবিটি ফ্লপ করেছিল।

কয়েক বছর আগে ‘পরান যায় জ্বলিয়া’ নামে চলচ্চিত্রের একটি সিকোয়েন্সে ফুটবল মূর্ত হয়ে উঠেছে দারুণভাবে। প্রবাসী ভারতীয় ও ইংরেজদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এক ফুটবল ম্যাচে দীর্ঘ দশ বছর পর জেতে ভারতীয় প্রবাসী দল। তখন আনন্দঘন এক অপরূপ মুহূর্তে সৃষ্টি হয়। ছবিটির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন দেব।

এবার বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। এখন তো এ দেশে ক্রিকেটের জয়জয়কার। কিন্তু যখন ফুটবল ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে তখনো ফুটবলকে ঘিরে কোনো মুভি তৈরি হয় নি। তবে হ্যাঁ, কয়েকটি ছবিতে অবশ্য ফুটবল এসেছে। যেমন, সি বি জামান পরিচালিত ‘পুরস্কার’ ছবিতে দেখা যায়, কয়েকজন কিশোর অপরাধী দুটি দলে বিভক্ত হয়ে ফুটবল খেলে। যে দল হেরে যায়, সেই দলের কিশোর অধিনায়ক (শাকিল) মন খারাপ করলে বিজয়ী দলের অধিনায়ক (মাস্টার সুমন) তাকে সান্ত্বনা দিয়ে গেয়ে ওঠে ‘হারজিৎ চিরদিন থাকবে/ তবুও এগিয়ে যেতে হবে/ বাধা বিঘ্ন না পেরিয়ে বড় হয়েছে কে কবে।’

আজিজ আজহার পরিচালিত ‘চোখের জলে’ ছবিতে নায়ক রাজ্জাককে দেখা যায় ফুটবলার হিসেবে। তবে ছবিতে তার ফুটবলার জীবন নয়, অন্য জীবন প্রাধান্য পেয়েছে। একই কথা মিতা পরিচালিত ‘সাহেব’ ছবির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাছাড়া রফিকুল বারী চৌধুরী পরিচালিত ‘পেনশন’ ছবিতে সোহেল রানাকেও ফুটবলার হিসেবে দেখা গেছে।

তবে ফুটবলকে ঘিরে পুরো ছবিটি আবর্তিত হয়েছে, বাংলাদেশের এমন ছবি হচ্ছে ‘জাগো’। বাংলাদেশের ছোট্ট একটি শহরের দামাল ছেলেদের প্রত্যয়ের সঙ্গে স্বপ্ন অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার কাহিনি এই চলচ্চিত্রে ফুটে উঠেছে। তারা দীর্ঘদিন পর ত্রিপুরার ফুটবল দলকে পরাজিত করে। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন খিজির হায়াৎ খান। অভিনয়ে ছিলেন তারিক আনাম, ফেরদৌস, বিন্দু, রওনক, আরেফিন শুভ, জোতিকা জ্যোতি এবং একঝাঁক তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রী।   

Leave a Reply

Your identity will not be published.