কয়েক বছর আগে ফিল্ম ফেয়ার অনুষ্ঠান জমিয়ে তুলেছিলেন রনবীর কাপুর ও ইমরান খান। সবাই ভীষণ পছন্দ করেছিলেন তাদের উপস্থাপনা। তখন জানা গিয়েছিল, এই অনুষ্ঠানের সূত্রে রনবীর ও ইমরানের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা জন্মেছে এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। ইমরান ও রনবীরের এই বন্ধুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলিউডের বন্ধুত্বের দিকে একটু নজর বুলিয়ে নিতে পারি- অতীত ও বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে।
‘বন্ধু কী ? দুটি দেহের মধ্যে অভিন্ন একটি হৃদয়।’ এ হলো বন্ধুত্ব সম্পর্কে ধ্রুপদী একটি সংজ্ঞা। তবে সাধারণভাবে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তখনই যখন পরস্পরের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সমতা থাকে। একজন অন্যজনের সঙ্গে মনের ভাব বিনিময় করতে পারে। সুখ ও দুঃখে একজন আরেকজনের পাশে থাকে। আস্থা ও বিশ্বাস এক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। বলাই বাহুল্য, ধ্রুপদী সংজ্ঞা অনুযায়ী বন্ধুত্ব শুধু বলিউডে কেন, সারা পৃথিবীতেই দুর্লভ। আর সাধারণভাবে যে বন্ধুত্ব- তার মধ্যে টানাপোড়েন এবং সম্পর্কের অবসান লক্ষ্য করা যায় পৃথিবীর নানা জায়গার মতো বলিউডেও।
শুরুতে অতীতের ওপর দৃষ্টিপাত করা যেতে পারে। গত শতাব্দীর চল্লিশ ও পঞ্চাশ দশকে বলিউডে দোর্দণ্ড প্রতাপ ছিল দিলীপ কুমার, রাজকাপুর ও দেবানন্দের। এই তিন চিত্রনায়কের মধ্যে পেশাগত জীবনে সুস্থ প্রতিযোগিতা ছাড়াও বন্ধুত্ব ছিল। একজন আরেকজনকে পছন্দ করতেন; পরস্পরের সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতেন না কখনোই। তবে সেই সময়ে রাজকাপুরের সঙ্গে গভীর বন্ধুত্ব ছিল রাজেন্দ্র কুমারের। এই দুজন নিজেদের বন্ধুত্বকে নতুন মাত্রা দেওয়ার ঐকান্তিক ইচ্ছায় নিজেদের ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিতে চাইলেন। বাগদানও সম্পন্ন হলো। কিন্তু রাজেন্দ্র কুমারের ছেলে কুমার গৌরব এই বিয়েতে অসম্মতি জানালেনÑ যখন তিনি প্রথম ছবি ‘লাভ স্টোরি’ করতে গিয়ে নায়িকা বিজয়েতা পণ্ডিতের প্রেমে পড়েন। ফলে রাজকাপুরের মেয়ের সঙ্গে কুমার গৌরবের বাগদান ভেঙে যায়। মজার ব্যাপার হলো, বিজয়েতার সঙ্গেও কুমার গৌরবের বিয়ে হয় নি। গৌরব বিয়ে করেন সুনীল দত্তের বড় মেয়েকে। বলাই বাহুল্য, সুনীল দত্তের বন্ধু ছিলেন রাজেন্দ্র কুমার।
এদিকে সুনীলের ছেলে সঞ্জয় দত্ত ও রাজেন্দ্র কুমারের ছেলে কুমার গৌরবও পরস্পরের বন্ধু। ‘লাভ স্টোরি’ সুপারহিট হলেও কুমার গৌরবের অন্য ছবিগুলো ফ্লপ করে এবং বলিউডে গৌরবের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এই সময় বন্ধু ও ভগ্নিপতি কুমার গৌরবকে সাহায্য করেছিলেন সঞ্জয় দত্ত। ‘নাম’সহ আরো দু’ একটি ছবিতে তিনি কুমার গৌরবের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু তার এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
অমিতাভের উত্থানে রাজেশ খান্নার আসন টলে ওঠে এবং এক সময় তিনি রাজনীতির প্রতি ঝুঁকে পড়েন। তাই এই সুপার ও মেগা স্টারের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার প্রশ্নই ওঠে না। এছাড়া অমিতাভ সম্পর্কে রাজেশ খান্নার বিরূপ মন্তব্যও দুজনের মধ্যে সুস্থ ও সুন্দর সম্পর্ক তৈরিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সত্যি বলতে কী, অমিতাভের সঙ্গে তার সমসাময়িক নায়কদের কারোই বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে নি। ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে অমিতাভের ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তা ছিল বড় ও ছোটভাই সুলভ। অবশ্য সত্তর দশকে অমিতাভের সমসাময়িক নায়কদের মধ্যে বিনোদ খান্না ও শত্রুঘ্ন সিনহার বন্ধুত্ব ছিল উল্লেখ করার মতো।
বর্তমানের দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। শাহরুখ, আমির ও সালমানের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল তবে তা কখনোই গভীরতার পর্যায়ে পৌঁছে নি। তাই শাহরুখের সঙ্গে আমিরের কিংবা সালমানের সঙ্গে আমিরের দ্বন্দ্বের কথা শোনা গেছে। তবে কয়েক বছর হলো, তাদের সম্পর্ক আবার সহজ ও স্বাভাবিক হয়েছে।
ববি দেউল ও অজয় দেবগন বাল্যবন্ধু। কিন্তু পরে অজয়ের সঙ্গে বিবেক ওবেরয়ের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। বিবেকের দুঃসময়ে যখন তার একের পর ছবি ফ্লপ হয়, ঐশ্বরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের অবসানে খারাপ সময় যাচ্ছিল তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অজয় দেবগন।
ছোটবেলাতে ঋত্বিক রোশন ও অভিষেক বচ্চনের মধ্যেও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। এই দুজনের সম্পর্ক এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক আছে। দুজন দুজনের সফলতায় সত্যিকার অর্থে যে আনন্দিত ও গর্বিত হয়, সেটিও বোঝা যায় তাদের আচরণে।
বলিউডে গভীর বন্ধুত্ব সর্বকালেই দুর্লভ। সেই বন্ধুত্বের নিদর্শন হচ্ছে করন জোহর ও শাহরুখ খানের বন্ধুত্ব। করনের প্রথম ছবি ‘কুচ কুচ হোতা হ্যায়’ সফল হওয়ার ক্ষেত্রে শাহরুখের অবদান রয়েছে। পরে ‘কাভি খুশি কাভি গাম’, ‘কাভি আলবিদা না ক্যাহনায়’তেও শাহরুখের এই সম্পৃক্ততা লক্ষ্য করা গেছে। শাহরুখের সঙ্গে কাজল, ফারাহ খান কিংবা জুহি চাওলারও গভীর বন্ধুত্ব রয়েছে।
নায়িকাদের মধ্যে বন্ধুত্ব সুলভ নয়। আর বর্তমান ইঁদুর-দৌড়ে কে কাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে সেই চেষ্টাই থাকে সবসময়। বন্ধুত্ব তো দূরের কথা, সম্পর্কও নষ্ট হয় এ কারণে। এর প্রোজ্জ্বল উদাহরণ রানী মুখার্জি ও প্রীতি জিন্তা।
কোনো কোনো নায়ক-নায়িকার মধ্যে শুরুতে বন্ধুত্ব থাকলেও পরে তা প্রেমে পরিণত হয়েছে- এমন উদাহরণ তো বলিউডে অনেকই রয়েছে। যেমন: রাজকাপুর-নার্গিস, দিলীপ-মধুবালা, হেমা-ধর্মেন্দ্র, অমিতাভ-জয়া, রেখা-অমিতাভ, মিঠুন-শ্রীদেবী, সঞ্জয়-মাধুরী, সানি-ডিম্পল, সালমান-ঐশ্বরিয়া, কাজল-অজয়, অজয়-কারিশমা, অক্ষয়-রাবিনা, অক্ষয়-শিল্পা, বিপাশা-আব্রাহাম, সালমান-ক্যাটরিনা, দীপিকা-রনবীরসহ আরও অনেকের কথাই বলা যায়।
দেখা গেছে, অতীতে বলিউডে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে আত্মার তাগিদে। বর্তমানে সেখানে প্রয়োজনই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Leave a Reply
Your identity will not be published.