‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’ পেলেন সেলিনা হোসেন ও ফাতেমা আবেদীন

‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’  পেলেন সেলিনা হোসেন ও ফাতেমা আবেদীন

শুক্রবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’ প্রবীণ ও নবীন— দুজন কথাসাহিত্যিকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য সেলিনা হোসেন এবং নবীন সাহিত্যশ্রেণিতে (অনূর্ধ্ব চল্লিশ বছর বয়স্ক লেখক) ‘মৃত অ্যালবাট্রস চোখ’ গল্পগ্রন্থের জন্য ফাতেমা আবেদীন এ পুরস্কার পান।

অনূষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। সম্মাননীয় অতিথি খ্যাতিমান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর এমপি। সভাপতিত্ব করেন স্বনামধন্য কথাশিল্পী ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন এক্সিম ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মো, আব্দুল বারী, স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ-কথাশিল্পী মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী ও নির্মাতা, হুমায়ূন-পত্নী মেহের আফরোজ শাওন। শংসাবচন পাঠ করেন বিচারকমণ্ডলীর সম্মানিত সদস্য কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলন ও প্রাবন্ধিক-শিক্ষাবিদ বিশ্বজিৎ ঘোষ। অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে মেহের আফরোজ শাওনের সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে। তিনি ‘যদি মন কাঁদে’ ও ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’-এ দুটি গান গেয়ে শোনান।  

কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ, যাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে, ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের মাধ্যমে, পরের চার দশক আপন সৃষ্টিশীলতায় আচ্ছন্ন রেখেছেন কোটি বাঙালিকে। পরিস্থিতি নির্মাণ, বর্ণনাভঙ্গি, সংলাপে তিনি এমন শৈলীর উদ্ভাবন করেছেন যা বাংলা সাহিত্যে অদ্বিতীয়।

আপন দ্যুতিতে উদ্ভাসিত প্রয়াত এই লেখকের স্মরণে এবং দেশের নবীন-প্রবীণ কথাশিল্পীদের শিল্পসৃষ্টিতে প্রেরণা জোগাতে ২০১৫ সালে প্রবর্তিত হয় ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’। এক্সিম ব্যাংকের সহযোগিতায় পাক্ষিক ‘অন্যদিন’-এর এই উদ্যোগ। এ বছর সপ্তমবারের মতো এ পুরস্কার প্রদান করা হলো।

শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে যে এবারের ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’ পেয়েছেন দুজন। তাঁরা পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন যথাক্রমে পাঁচ লাখ এবং এক লাখ টাকা। এ ছাড়া তাদের প্রদান করা হযেছে ক্রেস্ট, উত্তরীয় এবং সার্টিফিকেট।

পুরস্কার গ্রহণ শেষে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘একজন লেখক হিসেবে পুরস্কৃত হয়ে গৌরব অর্জনকে আমার সামাজিক প্রেক্ষাপটে অনেক বড় একটি দিক বলে মনে করি।’

তরুণ লেখক ফাতেমা আবেদীন বলেন, ‘আমি সাধারণ মানুষকে নিয়ে লিখেছি। এই লেখার মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই। এ পুরস্কার আমাকে সামনে আরও লিখতে উৎসাহিত করবে।’ 

১২ নভেম্বর এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কিংবদন্তি কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন আমাদের অত্যন্ত কাছের মানুষ। অন্যদিন পরিবারের একজন। আজ তিনি নেই, কিন্তু তাঁর কালজয়ী সৃষ্টির মাঝে তিনি বেঁচে থাকবেন।’

শুভেচ্ছা বক্তব্যে এক্সিম ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মো. আব্দুল বারী দেশের প্রথম তিনটি ব্যাংকের মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের অবস্থান— এই বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি উপন্যাস খুব পড়ি। লক্ষ করি, ছোট একটি প্রশ্ন দিয়ে উপন্যাস শুরু হলেও শেষ হয় বড় একটি প্রশ্ন দিয়ে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চিন্তাবিদের মৃত্যু হলেও তার চিন্তাগুলো অবিনশ্বর।’ অতঃপর তিনি কিংবদন্তি কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের কালজয়ী সব সৃষ্টির কথা বলেন। এই প্রসঙ্গে হুমায়ূনের তুমুল জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘এইসব দিনরাত্রি’ ও ‘কোথাও কেউ নেই’-এর কথা উল্লেখ করেন। 

মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ যখন বেঁচে ছিলেন, তখন কিন্তু পাঠক তাঁকে একেবারে হৃদয় দিয়ে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু এ দেশের বড় বড় লেখক তাঁকে গ্রহণ করেন নি। তাঁকে অপমান করার জন্য নানা ধরনের শব্দ আবিষ্কার করেছেন। যখন তিনি বেঁচে ছিলেন, তাঁর সম্পর্কে ভালো কথা বলের নি; বরং এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পাওয়ার সময় একজন হুমায়ূন আহমেদের প্রশংসা করলে অন্য লেখকেরা তার প্রতিবাদ করেছিলেন। হুমায়ূন আহমেদ এসবের বিন্দুমাত্র কেয়ার করতেন না।’

মেহের আফরোজ শাওন বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনের আগের দিন এতগুলো মানুষকে একসঙ্গে পাওয়া আসলেই ভালো লাগার। ২০১৫ সালে হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করে এক্সিম ব্যাংকের সহায়তায় এবং পাক্ষিক অন্যদিন-এর উদ্যোগে যে পুরস্কার চালু হয়েছে, তা সব সময় চালু থাকবে, এটিই আশা।’

প্রধান অতিথি কে এম খালিদ এমপি বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের প্রতি তীব্র ভালোবাসা অনুভব করি আমরা। তাঁকে স্মরণ করে এই আয়োজন করা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এসে আমার খুবই ভালো লাগছে। সেলিনা হোসেনের কাছে তাঁর মেয়ে লারার হৃদয়স্পর্শী গল্প শুনলাম। আপা ও তাঁর মেয়ের প্রতি ভালোবাসা সব সময়।’

সম্মাননীয় অতিথি আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেন, ‘দর্শকদের কাছে আজ যে আমার জনপ্রিয়তা গড়ে উঠেছে তা হুমায়ূনের নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। গল্প বলার অসামান্য ক্ষমতা, সংলাপ রচনা, ছোট ছোট সিকোয়েন্সের মাধ্যমে গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া- তা আমি অন্য কারও মাঝে খুঁজে পাই নি।’

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘সেলিনা হোসেনকে সম্মাননা জানিয়ে আমরা নিজেরাও সম্মানিত হলাম। তরুণ লেখক ফাতেমা আবেদীনের লেখক জীবনের দরজা উন্মুক্ত করল এ পুরস্কার।’

২০১৫ সালে সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য শওকত আলী ও  নবীন সাহিত্যশ্রেণিতে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম। ২০১৬ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক ও স্বকৃত নোমান। ২০১৭ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও মোজাফ্ফর হোসেন। ২০১৮ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন রিজিয়া রহমান ও ফাতিমা রুমি। ২০১৯ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন রাবেয়া খাতুন্ ও সাদাত হোসাইন। অন্যদিকে ২০২০ সালে এ্ই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছিল হাসনাত আবদুল হাই ও নাহিদা নাহিদের হাতে। 

Leave a Reply

Your identity will not be published.