চলচ্চিত্রে নানা ধরনের জুটি দেখা যায়। এমনই এক জুটি হলো, নায়ক-গায়ক জুটি। যেমন, একদা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্রে ছিল উত্তম-হেমন্ত জুটি। উত্তমকুমারের কণ্ঠস্বরের সঙ্গে হেমন্ত মুখোপাধ্যয়ের কণ্ঠস্বরের বেশ মিল ছিল। তাই ছবিতে হেমন্তের গাওয়া গানে উত্তম ঠোঁট মেলালে দর্শকদের কাছে মনে হতো, উত্তমই গানটি গাইছেন। অন্যদিকে মুম্বাইয়ের রাজকাপুর অভিনীত ছবিতে কণ্ঠশিল্পী মুকেশের গানও দর্শকদের বেশ পছন্দ ছিল। দুই দশক আগে যেমন ‘শাহরুখ কণ্ঠ’ বলা হতো কণ্ঠশিল্পী অভিজিৎ ভট্টাচার্যকে।
কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে শাহরুখের গানে অনুপস্থিত দেখা যাচ্ছে তাকে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ জানান, কিং খানের সঙ্গে মনোমালিন্যের জের ধরে তাকে ‘রাজনীতির বলি’ হতে হয়েছে বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। অভিজিৎ বলেন, “সংগীত পরিচালকেরা যখন শাহরুখের ছবি পেতেন, তখন সেই কাজে আমার আর সুযোগ হতো না। তা আমি সেই পরিচালকদের যতই ঘণিষ্ঠ হই না কেন!”
শাহরুখ খানের ক্যারিয়ারের শুরুতে তাঁর অভিনীত অনেক ছবিতে অভিজিৎ কণ্ঠদান করেছেন। যেমন, ‘চালতে চালতে’, ‘ইয়েস বস’, ‘ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্থানী’, ‘বাদশা’ ইত্যাদি। কিন্তু দুজনের মধ্যে সমস্যার সূত্রপাত হয় ‘ম্যায় হু না’ সিনেমাটি মুক্তির পর। অভিজিতের অভিযোগ ছিল, ওই সিনেমায় কণ্ঠশিল্পী হিসেবে তিনি যথাযথ সম্মান পান নি। ওই সময় এক সংবাদ সম্মেলনেরও আয়োজন করেছিলেন অভিজিৎ। তখন তিনি বলেছিলেন, তার গানই শাহরুখকে তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। এ বিষয়ে তিনি সহযোগিতাও করেছেন। তবে এখন থেকে চিন্তা-ভাবনা করে বলিউড নায়কদের জন্য গান গাইবেন। এরপর শাহরুখ ও অভিজিতের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয় এবং শাহরুখের জন্য ইন্ডাস্ট্রিতে অভিজিতের ভালো সিনেমার কাজের সংখ্যা কমতে থাকে।
সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে অভিজিৎ বলেছেন, ‘কী হচ্ছে আমরা দুজনেই ভালো করে জানি। আমি যদি তার কাছে এখন যাই, তার থেকে বয়সে ছয়-সাত বছরের বড় হওয়ার সুবাদে বলতেই পারি, অনেক হয়েছে এখন থাক, তুমি একজন তারকা, আর তাই থাকবে। কিন্তু আমি যদি সিনেমায় আসি, তাহলে আমাকে গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু তা কী করে হয়! ও জানে আমি মনে আঘাত পেয়েছি।’
অভিজিতের আক্ষেপ, সিনেমার টাইটেল কার্ডে গায়ক-গায়িকার নাম আসে সবার শেষে, যখন দর্শকেরা হল ছেড়ে বেরিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, শুধু শাহরুখ নয়, সালমান খানের সঙ্গেও অভিজিতের দ্বন্দ্ব রয়েছে। সালমানের বিরুদ্ধে অভিজিতের অভিযোগ হলো, বলিউডে ভারতের শত্রুদেশ পাকিস্তানের কণ্ঠশিল্পীদের সালমান সুযোগ দিয়েছেন।
আবার সালমানের সঙ্গে দ্বন্দ্ব রয়েছে গায়ক অরিজিৎ সিংয়ের। ২০১৪ সালে এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অরিজিৎ বেয়াদবি করেছিলেন বলে সালমানের কোনো ছবিতেই অরিজিতের গান নেই।
আবার এটাও দেখা গেছে, এই উপমহাদেশে আগে কণ্ঠশিল্পীরাই গুরুত্ব পেতেন। লোকজন তাদেরই চিনতেন। অন্যদিকে গীতিকার ও সুরকাদের পারিশ্রমিক ছিল অনেক কম। যেমন, কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ও সুর দেওয়া গান গেয়ে আব্বাস উদ্দিন অনেক বেশি সম্মানী পেতেন।
বাংলাদেশে অবশ্য সংগীত শিল্পীদের সঙ্গে তারকাদের দ্বন্দ্ব তেমন নেই। তবে কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে রয়েছে। অন্যদিকে মঞ্চে গান গাওয়ার সময় খুব কম শিল্পীই গীতিকার ও সুরকারদের নামটি উচ্চারণ করেন।
Leave a Reply
Your identity will not be published.