চলচ্চিত্রে দেশভাগ ও ‘মা কালী’

চলচ্চিত্রে দেশভাগ ও ‘মা কালী’

১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ ভেঙে দু’ টুকরো হয় ভারত ও পাকিস্তান নামে। পাকিস্তানের আবার দুটি অংশ ছিল ইস্ট পাকিস্তান ও ওয়েস্ট পাকিস্তান। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তৎকালীন ইস্ট পাকিস্তানে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হয় এবং এর চূড়ান্ত পরিণতিতে সেই বছরের ১৬ ডিসেম্বর ‘বাংলাদেশ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে।

দেশভাগকে ঘিরে বেশ কয়েকটি গল্প-উপন্যাস রচিত হয়েছে। যেমন মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘স্বাধীনতার স্বাদ’, হিরন্ময় ব্যানার্জীর ‘উদ্বাস্তু’ ইত্যাদি। তবে সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী উপন্যাস হচ্ছে খুশবন্ত সিং-এর ‘ট্রেন টু পাকিস্তান’।

দেশভাগকে নিয়ে কয়েকটি চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে। যেমন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের ‘তাহাদের কথা’, রাজেন তরফদারের ‘পালঙ্ক’, গৌতম ঘোষের ‘শঙ্খচিল’, তানভীর মোকাম্মেলের ‘চিত্রা নদীর পাড়ে’ ও ‘সীমান্ত রেখা’ প্রভৃতি। আর ঋতিক ঘটকের প্রায় সব ছবিতেই দেশভাগের প্রসঙ্গ এসেছে। যেমন ‘সুবর্ণরেখা’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘যুক্তিতক্কো আর গপ্পো’। হিন্দিতে নির্মিত হয়েছে এস এম সথ্যুর ‘গরম হাওয়া’, গোবিন্দ নিহালনির ‘তমস’...।

এই সময়ে ভারতে নির্মিত হয়েছে বিজয় ইয়ালাকান্তির ‘মা কালী’। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছে টালিউড অভিনেত্রী রাইমা সেন ও অভিষেক সিং অভিনীত ছবিটির ট্রেলার। ১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের ট্রেলারে ‘স্বাধীনতার আগে দেশ বিভাগের সময় বাঙালিদের ওপর যে নির্মম অত্যাচার করা হয়েছিল’ সে কথাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন পরিচালক বিজয় ইয়ালাকান্তি।

এ ছবির নায়িকা রাইমা সেন অভিনয় করতে গিয়ে তিনিও নানা অজানা কথা জানতে পেরেছেন। ১৯৪৬ থেকে স্বাধীনতা ও তার পরের দিনগুলোয় বাংলা কী কী বীভৎসতার সম্মুখীন হয়েছিল, সে কথাই জানাচ্ছেন এ অভিনেত্রী।

বাংলাদেশের মেয়ে রাইমা সেনের দিদা প্রয়াত অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন। পাবনায় তার জন্ম। কখনো দিদার মুখে দেশভাগের কথা, কখনো দুই বাংলার গল্প, আবার কখনো সেই সময় ঘটে যাওয়া অত্যাচারের কথা শুনেছিলেন তিনি। এ অভিনেত্রী জানান, তার দিদা ছবি, অভিনয়ের পাশাপাশি অন্যান্য অনেক কথা বলতেন। কিন্তু তার কথায় কখনো পূর্ববঙ্গ বা দেশভাগের কথা উঠে আসেনি। রাইমা সেন বলেন, ‘এমন অনেক ঘটনা আছে, যা কেউই জানে না। আমিও কখনো জানতাম না। এ ছবির চিত্রনাট্য পড়ে জানতে পেরেছি দেশভাগের ইতিহাস। এখনই সেটি জানানো সম্ভব নয়, ছবি মুক্তির পরই দর্শক জানতে পারবেন।’

তিনি জানান, এ চিত্রনাট্য পড়ার সময়ে কেঁদে ফেলেছিলেন তিনি। তার মনে হয়েছে, এই অন্যায় দিনের পর দিন বাংলা ও বাঙালি সহ্য করে আসছে। যেহেতু তিনিও একজন বাঙালি। তাই সেই জায়গা থেকে তারও সেসব তুলে ধরা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাইমা সেন জানান, ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্টের সাম্প্রদায়িক সময়ের হিংসাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ‘মা কালী’ ছবিতে ইতিহাসের সেই কালো অধ্যায় জায়গা করে নিয়েছে, যা ‘ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে’ বা ‘১৯৪৬ ক্যালকাটা কিলিংস’ নামে পরিচিত। এ খবর প্রকাশের পর থেকেই বাড়ির ল্যান্ডফোনে ক্রমাগত মৃত্যুর হুমকি পেয়েছিলেন অভিনেত্রী। যদিও তিনি তাতে দমে যাননি।

‘মা কালী’ ছবি সম্পর্কে পরিচালক বিজয় ইয়ালাকান্তি বলেন, “এ ছবিতে ‘স্বাধীনতার আগে দেশ বিভাগের সময় বাঙালিদের ওপর যে মর্মান্তিক অত্যাচার করা হয়েছিল’ সে কথাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বাংলা অনেক নিন্দনীয় ঘটনার সাক্ষী। কিন্তু তার খবর কে রাখে! তাই পর্দায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। অপ্রকাশিত ঘটনাগুলোর দলিল হয়ে উঠতে চলেছে ‘মা কালী’ ছবিটি, যা দেখলে শিহরণ জাগবে দর্শকের মনে।”

Leave a Reply

Your identity will not be published.