মঞ্চের রঙ্গ-তামাশা

মঞ্চের রঙ্গ-তামাশা

মঞ্চেও হাসির নাটক দুর্লভ নয়। বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলা ভাষাভাষী নাট্যকার-নির্দেশক-শিল্পী-কলাকুশলীরা এই মাধ্যমে বেশ কয়েকটি হাসির নাটক মঞ্চস্থ করেছে। এখানে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নাটকের ওপর আলো ফেলা হলো।

কঞ্জুস

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় হাসির মঞ্চনাটক। লোক নাট্যদলের এই নাটকটি ফরাসি নাট্যকার মলিয়েরের ‘দি মাইজার’ অবলম্বনে তারিক আনাম খান অনুবাদ করেছেন। নির্দেশক কামরুন নূর চৌধুরী। এটি পুরান ঢাকার বাসিন্দাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জীবন ও সংস্কৃতির ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এখানে হায়দার আলী নামের একজন কৃপণ ব্যক্তির গল্প বলা হয়েছে, যিনি ছেলে কাযিম আলী, মেয়ে লাইলী এবং দুই গৃহভৃত্য—লাল মিয়া ও কালা মিয়ার সঙ্গে বসবাস করেন।

মুনতাসির

এটির রচয়িতা সেলিম আল দীন। নাটকটি ১৯৭৩ সালে প্রথম মঞ্চায়িত হয়েছিল। আর এটি বাংলাদেশের প্রথম মিউজিক্যাল কমেডি। নাটকটি একটি নির্দিষ্ট আঙ্গিক অনুসরণ করে নির্মিত। এখানে বাদ্যযন্ত্রও ব্যবহার করা হয়—যার একটি বিশেষ ঢং ছিল। নাট্যকার এখানে খামখেয়ালি আর রাক্ষসের মতো সর্বভুক এক চরিত্র এঁকেছেন। তার নাম মুনতাসির।

ভদ্দরনোক

মলিয়েরের ‘দ্যা বুর্জোয়া জেন্টেলম্যান’ অবলম্বনে এটির নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন গোলাম সরোয়ার। নাট্যকেন্দ্রের এই মঞ্চনাটকে দেখানো হয়েছে, সমাজে হঠাৎ করে গজিয়ে ওঠা বিত্তবানেরা আকস্মিক অর্থপ্রাপ্তিতে বেসামাল হয়ে নিজেদের কুলীন প্রমাণের জন্য নগরজীবনের ফাঁপা সংস্কৃতির গড্ডালিকা প্রবাহে কীভাবে গা ভাসিয়ে দেয়।

ঘরজামাই

মলিয়েরের নাটকটির বাংলায় রূপান্তর ও নির্দেশনা দিয়েছেন গোলাম সরোয়ার। এখানে দেখা যায়, সোলায়মান নামের এক যুবক এক ধনী ব্যক্তির ঘরজামাই হয়ে কীভাবে চতুর স্ত্রীর কাছে নাস্তানাবুদ হয়। মঞ্চে নাটকটি এনেছে ঢাকা থিয়েটার।

বিচ্ছু

নাটকটি মঞ্চে এনেছে নাট্যকেন্দ্র। নির্দেশক আমিরুল বাপ্পি। এটি রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক একটি কাজ। থিম হলো, ‘ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়’।

ইঙ্গিত

এস এম সোলায়মানের মঞ্চনাটক। গত শতকের আশির দশকে,  হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলের প্রেক্ষাপটে মনিরুল ইসলাম রুবেলের নির্দেশনায় এই নাটকে সমাজের নানা ক্ষেত্রে অবক্ষয়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, শিক্ষাব্যবস্থার পতন এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে, হাস্যরস ও ব্যঙ্গের মাধ্যমে। এখানে নাট্যকারের উদ্দেশ্য ছিল, ভবিষ্যতে একটি সম্ভ্রাব্য পতনের ইঙ্গিত দেওয়া।

গৌরবের কবচ

কলকাতার সংস্তব প্রযোজনার মঞ্চনাটক। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে এটির রচয়িতা ও নির্দেশক সুমন সেনগুপ্ত। প্রাণবন্ত এই হাসির নাটকে জীবন ও ন্যায়-অন্যায়ের এক ভিন্ন রূপ তুলে ধরা হয়েছে।

হুলস্থূল

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পের কুন্তল মুখোপাধ্যায় কর্তৃক নাট্যরূপ। নির্দেশক দেবাশিস রায়। সংলাপ কলকাতা’র এই নাটকটি বিনোদন তথা হাস্যরসে ভরপুর।

কেনারাম বেচারাম

কলকাতার মঞ্চনাটক। মনোজ মিত্র রচিত এই নাটকে দেখা যায়, বেচারামের অধীনে দীর্ঘ দিন কাজ করা কেনারাম অবশেষে বকেয়া বেতন পায়। তৎসঙ্গে হাতে পায় একটি জাদুকরী গিটার—যা সুরের মাধ্যমে সবাইকে নাচতে বাধ্য করে। এই বেহালার মাধ্যমে কেনারাম সমাজে বিদ্যমান বিচার, আইনের ফাঁকি এবং শোষণের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলে।

চোখে আঙুল দাদা

মনোজ মিত্রের আরেকটি মঞ্চনাটক। এখানে রয়েছে একটি বিচিত্র চরিত্র, যে নাকি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সবার খুঁত ধরে বেড়ায়। অন্য কথায়, এখানে সমাজের নানা অসঙ্গতি এবং মানুষের ত্রুটি-বিচ্যুতিকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

তথ্যসূত্র : নাট্যজন ইকবাল বাবু ও বাংলাদেশ থিয়েটার আর্কাইভস

Leave a Reply

Your identity will not be published.