[এই ধারাবাহিকটির লেখক তানকিউল হাসান, আর্থিক অনটন থেকে মুক্তির আশায় নিউইয়র্কের রাস্তায় শুরু করেছিলেন ট্যাক্সি চালানো। সেই সময় তিনি মুখোমুখি হন বিচিত্র অভিজ্ঞতার। সেইসব ঘটনাই ফুটে উঠেছে এই ধারাবাহিক রচনায়। আজ পড়ুন ২৪তম পর্ব।]
প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব চতুর্থ পর্ব পঞ্চম পর্ব ষষ্ঠ পর্ব সপ্তম পর্ব
অষ্টম পর্ব নবম পর্ব দশম পর্ব পর্ব ১১ পর্ব ১২ পর্ব ১৩ পর্ব ১৪ পর্ব ১৫ পর্ব ১৬
পর্ব ১৭ পর্ব ১৮ পর্ব ১৯ পর্ব ২০ পর্ব ২১ পর্ব ২২ পর্ব ২৩
প্রিয় পাঠক, তিন মাসের মাথায় কোর্টে আমার হিয়ারিংয়ের ডেট পড়েছে। কেনেডি বিমানবন্দরে ট্রাফিক কোর্ট আছে। আমি সেখানে হাজির হলাম। আমাকে টিকেট ইস্যু করা পুলিশকেও কোর্টে হাজির হতে হয়েছিল। এটাই নিয়ম। জজ সাহেব প্রথমে পুলিশের ভাষ্য শুনলেন। এবার আমার পালা। আমি বেশী কিছু না বলে জজ সাহেবের দিকে আমার ট্রিপশীটখানা বাড়িয়ে ধরি। ট্রিপশীট দেখে জজ সাহেব আমার কেস ডিসমিস করে দেন। আমি কেসে জিতে যাই। পুলিশ ব্যাটার চেহারা হয়েছিল দেখার মতো! হা হা!
এরপর আর কখনও ফোনে কথা বলার কারণে টিকেট খাই নি, যদিও প্রতিদিনই ফোনে কথা বলেছি।
যাত্রী
ট্যাক্সিতে নানান শ্রেণির এবং নানা বর্ণের লোক ওঠে। শ্রেণিভেদে বললে ট্যাক্সিতে অ্যাম্বাসাডার থেকে শুরু করে প্লাম্বার পর্যন্ত ওঠে আর বর্ণভেদে বললে কালো, সাদা, হলুদ সব বর্ণেরই লোক ওঠে। আপনারা নিশ্চয়ই ভাবছেন হলুদ বর্ণের লোক আবার কারা? আমেরিকায় নাক চ্যাপ্টা মানুষদের হলুদ বর্ণের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয়। তা সে চাইনিজ, জাপানিজ কিংবা কোরিয়ানই হোক! এদের আমেরিকানরা এশিয়ান বলে ডাকে। আমাদের ডাকে ইন্ডিয়ান বলে, যদিও ইন্ডিয়া এশিয়া মহাদেশেই অবস্থিত; তারপরও আমাদের কখনো এশিয়ান হিসেবে গণ্য করে না। আমরা হচ্ছি কারি ইটিং ব্রাউন ইন্ডিয়ান!
আমি দিন এবং রাতের এই দুই শিফতেই কাজ করেছি এবং এই দুই সময়ে নেয়া প্যাসেঞ্জাদের মধ্যে কিছু ব্যাপার লক্ষ করেছি। যেমন দিনের শিফটের প্যাসেঞ্জাররা সাধারণত কম কথা বলে এবং খুব সিরিয়াস একটা ভাব নিয়ে গাড়িতে বসে থাকে। হাতে থাকে পত্রিকা কিংবা ফোন। এরা অফিসগামী যাত্রী। গাড়িতে থাকার সময়ে কোনো কথাবার্তা বলে না। গন্তব্যে পৌঁছানোর পর ভাড়া মিটিয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। রাতের শিফটে এই একই মানুষগুলো অনেকখানি বদলে যায়। অফিস থেকে বের হওয়ার পর হালকা মেজাজে থাকে। নানান বিষয়ে গল্পসল্প করে। তার সাথে থাকে প্রেমিকা কিংবা স্ত্রী। তাদের গন্তব্য হয়তোবা কোনো রেস্তোরাঁ কিংবা ব্রডওয়ের কোনো শো’তে।
এক দুপুরবেলার গল্প বলি। ম্যানহাটানের ফিফটি স্ট্রিট ধরে পূর্বদিকে যাচ্ছি। আমার গাড়িতে কোনো প্যাসেঞ্জার নেই। আমার সামনের ট্যাক্সিগুলোও খালি। সবার রুফলাইট জ্বালানো। রাস্তা দিয়ে টাইমস স্কয়ার পার হওয়ার সময় লক্ষ করলাম, এক লোক হাত উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার সামনের তিনটি খালি ট্যাক্সি তাকে দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। এবার আমার পালা।
ম্যানহাটানে একটা ট্যাক্সি যদি প্যাসেঞ্জারকে অগ্রাহ্য করে সোজা চলে যায়, তাহলে বুঝতে হবে ওই প্যাসেঞ্জারের মধ্যে কোনো সমস্যা আছে এবং এটি চেইন রিয়েকশনের মতন কাজ করে, যার ফলাফল ওই ট্যাক্সির পেছনের দুই ট্যাক্সির না থামা। আমি থামলাম এবং প্যাসেঞ্জারের দিকে ভালোমতন তাকালাম। তিনটা ট্যাক্সি কেন তাকে উঠাল না ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছি। প্যাসেঞ্জার এশিয় লোক। আমেরিকানদের কাছে নাক বোঁচা মানুষ মানেই এশিয়ান। লোকটির বয়স আনুমানিক সত্তুরের কাছাকাছি। পরনের কাপড়চোপড় অতি নোংরা। তার হাতে পলিথিনের ব্যাগ, সেটায় কিছু কাপড়চোপড় দেখা যাচ্ছে। লোকটাকে দেখেই মনে হচ্ছে রাস্তার বম। আমেরিকায় রাস্তায় বসবাস করা হোমলেস কিংবা ভিক্ষুক শ্রেণির মানুষকে বম বলে ডাকে। যাই হোক আমি গাড়ি থামিয়ে তাঁকে ওঠালাম। সে গাড়িতে উঠে বসল। গাড়িতে বসার পর তাকে তার গন্তব্য জিজ্ঞেস করলাম।
সে ভাঙা ইংরেজিতে বলল, ‘জেএফকে এয়ারপোর্ট।’
কিছুটা অবাক হলাম। এই বম যাবে এয়ারপোর্ট? ব্যাটার কাছে কি ভাড়া আছে? জেএফকে এয়ারপোর্টের ভাড়া বাহান্ন ডলার তারপর টানেলের টোল আছে। বকশিসের কথা নাহয় বাদই দিলাম। এই লোকের কাছে কি ষাট ডলার আছে?
(চলবে…)
Leave a Reply
Your identity will not be published.