ধান নদীর দেশে...

ধান নদীর দেশে...

বিএম কলেজ
বরিশালের প্রাচীন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রজমোহন কলেজ। প্রায় ১২৬ বিঘা জমির ওপরে প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন এ কলেজ ক্যাম্পাসটি মনোমুগ্ধকর। 

 

অশ্বিনী কুমার টাউন হল

বরিশাল শহরের উন্নয়নের প্রাণপুরুষ ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অশ্বিনী কুমার দত্তের নামানুসারে এ হলের নামকরণ করা হয়। বরিশাল শহরের সদর রোডে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী অশ্বিনী কুমার টাউন হল। 

 

অক্সফোর্ড মিশন গির্জা 

শহরের বগুড়া রোডে রয়েছে সুরম্য স্থাপনাসমৃদ্ধ অক্সফোর্ড মিশন গির্জা। এখানকার গির্জাটি বেশ আকর্ষণীয়। এ ছাড়াও বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বিবিরপুকুর, বেলস পার্ক, লেডিস পার্ক ইত্যাদি।

জীবনানন্দ দাশের বাড়ি 

জীবনানন্দ দাশ এবং তাঁর মা ‘আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে’...খ্যাত কবি কুসুমকুমারী দেবী দু’জনই বরিশালের গৌরব। তাদের স্মৃতিবিজড়িত বৈদারাপুর গ্রাম এখন বিস্মৃত অধ্যায়ে পরিণত হতে চলেছে। দখলদারদের জিম্মায় চলে গেছে। অথচ জীবনানন্দ দাশদের বাড়ি এবং স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো হতে পারত দর্শনীয় স্থান ও জাদুঘর। 

 

শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর

মহান নেতার স্মৃতি এবং কীর্তিকে ধরে রাখার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে—শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে ১৯৮২ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিচালিত হচ্ছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে। বানারীপাড়া

 

 

উপজেলার চাখারে অবস্থিত এ জাদুঘর বরিশাল সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে। রোববার থেকে শুক্রবার খোলা থাকে। শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধ।

 

মাধবপাশা জমিদারবাড়ি 

প্রায় ৩০০ বছর পুরনো মাধবপাশা জমিদার বাড়ি। দুটি প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও এখানে রয়েছে মন্দির। 

দুর্গাসাগর দিঘি

১৭৯০ সালে তৎকালীন জমিদার জয়নারায়ণের আমলে খনন করা দিঘিটির নামের সঙ্গে সাগর শব্দ থাকলেও আসলে এটি বড় একটি দিঘি। শহর থেকে প্রায় পাঁচ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে এর অবস্থান। দুর্গাসাগর তো বটেই এর আশপাশেও বেড়ানোর মতো অনেক জায়গা রয়েছে। 

যেভাবে যাওয়া যাবে

কথায় আছে, ভ্রমণ করার নেশা হলে ভ্রমণপিপাসুরা হেঁটে হেঁটে তাদের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে আসেন। ভ্রমণপ্রেমীদের সুবিধার্থে বরিশালে যাওয়ার কিছু যানবাহনের নাম-ঠিকানা ও ফোন নম্বর দেওয়া হলো ঢাকা থেকে নদী ও সড়কপথে বরিশাল যাওয়া যায়। ঢাকার সদরঘাট থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র রকেট স্টিমার পিএস মাহমুদ, পিএস অস্ট্রিচ এবং পিএস লেপচা, পিএস শোলা, পিএস টার্ন চলাচল করে। এ ছাড়াও বরিশালে যাওয়ার জন্য কিছু বড় বড় লঞ্চ রয়েছে। যেমন এমভি সুন্দরবন (০১৭১৩০৩০২৮৯), এমভি সুরভী (০১৭১৩৪৫০১৪৫), এমভি দ্বীপরাজ-(০১৭২৭৭০০৭৭৭), এমভি কীর্তনখোলা, এমভি কামালখান (০১৭১১৩৩০৬৪২)। যারা স্থলপথে বরিশাল যেতে চান। তাদের জন্য গাবতলী থেকে বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায়। সাকুরা পরিবহন (০২-৮০১৪৭০২), সুরভি পরিবহন/দ্রুতি পরিবহন (০২-৯০০২৯৮৯), শ্যামলী পরিবহন (০২-৯১৪১০৪৭), হানিফ এন্টারপ্রাইজ (০২-৯১৩৫০১৮)। 

 

কোথায় থাকবেন

বরিশালে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। যেমন—হোটেল অ্যাথেনা। (০১৭১২২৬১৬৩৩), হোটেল আলী ইন্টারন্যাশনাল (০১৭১৪২০৭০৭০)। 

রূপ-বৈচিত্র্যে অন্যান্য জেলাসমূহ

দেখার মতো বরিশালে রয়েছে অনেক কিছু। বরিশাল শহরের বাইরেও রয়েছে চোখ বাঁধানো সকল সৌন্দর্য ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মৃতিচিহ্ন—যা গভীর মনোযোগ দিয়ে অবলোকন করতে গেলে গুনগুন করে যে কেউ গেয়ে উঠবে—‘সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভূমি...’। বরিশালের জেলা শহরগুলো হলো—বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী।

 

বরগুনা

বরিশালের একটি জেলা বরগুনা। এই জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ সম্পর্কে এখানে উল্লেখ করা হলো। 

 

হরিণবাড়িয়ার চর

বিশখালী ও পায়রা নদীর মোহনায় জেগে উঠেছে ছোট্ট অথচ সুন্দর একটি দ্বীপ—হরিণবাড়িয়ার চর। ওখানে যাওয়ার প্রধান যানবাহন নৌকা। জঙ্গলের নিঝুম সৌন্দর্য। জঙ্গল পেরিয়ে আরও দূরে গেলে জেলেপট্টি। এর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। নদী এবং সাগরবেষ্টিত বলে এ এলাকার গুরুত্ব যেন একটু আলাদা। এ এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে হরিণের দেখা মেলে।

 

সোনাচর 

আমতলী উপজেলা থেকে ৩২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এ চর খ্যাত হরেক রকম সামুদ্রিক পাখির জন্য। বরগুনায় আরও রয়েছে বৌদ্ধ একাডেমী। বৌদ্ধ মন্দিরে রয়েছে সুবিশাল বৌদ্ধমূর্তি। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে বেতাগীর বিবিচিনি মসজিদ, ছাতনাপাড়ার বৌদ্ধমঠ ও প্রাচীন স্থাপত্য কীর্তি। 

 

ঝালকাঠি

ঝালকাঠিতে দেখার মতো অনেককিছু রয়েছে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য গালুয়া পাকা মসজিদ। শিলালিপি সূত্রে জানা যায়, ১১২২ সালে মাহমুদজান আকন (মামুজি) এ মসজিদ নির্মাণ করেন। 

 

গাবখান সেতু

ঝালকাঠি শহরের পশ্চিম পাশে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে পঞ্চম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু। গাবখান চ্যানেলের উপরে নির্মিত ইংরেজি এস অক্ষরের আকৃতিতে নির্মিত এ সেতুটি বেশ উঁচু। এ সেতুতে দাঁড়িয়ে গাবখান চ্যানেলের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

 

সাতুরিয়া জমিদার বাড়ি

এই জমিদার বাড়ি প্রকৃতপক্ষে শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নানাবাড়ি। রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামে অবস্থিত এ বাড়ি প্রায় তিন শ’ বছরের পুরনো।

পিরোজপুর

বরিশাল বিভাগের একটি জেলা পিরোজপুর। দেশের দক্ষিণপ্রান্তে পিরোজপুরের অবস্থান। মসজিদ এবং জমিদার বাড়ির জন্য জেলাটি অনেক বিখ্যাত। উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানের ওপর আলো ফেলা হলো। 

 

রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি 

১৮৫৬ সালে নির্মিত এ জমিদার বাড়িতে রয়েছে অতিথিশালা, নাট্যশালা, নহেবতখানা ইত্যাদি। ধ্বংসপ্রাপ্ত এ বাড়ির কালীমন্দিরে রয়েছে ২৫ মণ ওজনের একটি শিবলিঙ্গ।

প্রণব মঠ

শরৎচন্দ্র মিত্র তিন বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলেন এ মঠ। এখানে একটি সেবাশ্রমও রয়েছে। 

 

ভোলা 

তিন হাজার বয়সী দ্বীপজেলা ভোলা। ভোলা দ্বীপাঞ্চল হলেও এটি একটি প্রাচীন জনপদ। ভোলা জেলায় অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে। 

 

শাহবাজপুর গ্যাসফিল্ড 

শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শাহবাজপুর গ্যাসফিল্ড। এখান থেকে গ্যাস উত্তোলিত হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র গ্যাসফিল্ড এটি। 

 

বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর

মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল। তাঁর বাড়ি ভোলার আলীনগর ইউনিয়নে। এখানেই তাঁর স্মরণে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নির্মিত হয়েছে জাদুঘরটি।

 

 

চর ফ্যাশন

চরের সমারোহ চরফ্যাশনে। এ জায়গার নামেও তেমন আগাম আভাস পাওয়া যায়। এখানকার চরগুলো হচ্ছে-লক্ষ্মীপক্ষী, চরফাকিরা, মেঘভাসান, আইচা, লেতরা, নীলকমল, কচ্ছপিয়া, চরমঙ্গল, চরকিশোর, মায়ারচর ইত্যাদি। 

 

মুদ্ধাকান্দি মসজিদ

সদর থানার উত্তরে মুদ্ধাকান্দি গ্রামে রয়েছে পুরনো এ মসজিদটি। ১২৮০ বঙ্গাব্দে নির্মিত মসজিদটির সৌন্দর্যবিভা এখনো উজ্জ্বল হয়ে আছে। 

 

চর কুকরী-মুকরী 

বঙ্গোপসাগরের তীরে মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর মোহনায় জেগে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চর কুকরী-মুকরী। এ চরের প্রধান আকর্ষণ এখানকার ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, জনশূন্য পরিচ্ছন্ন সমুদ্রসৈকত। সারাবছর এখানে নানান সামুদ্রিক পাখির আনাগোনা থাকলেও শীতে পুরো দ্বীপ পরিণত হয় পাখির অভয়ারণ্যে। 

 

পটুয়াখালী 

অনিন্দ্যসুন্দর এবং পর্যটনের অপরিহার্য এক জেলা পটুয়াখালী। বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এ জেলা প্রকৃত অর্থেই নদীর দেশ। নদী কিংবা সবুজ প্রকৃতি দিয়েই নয়—পটুয়াখালী যথেষ্ট সমৃদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনেও। উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে— 

কমল রানীর দিঘি

বাউফল থানার কালাইয়া বন্দরে রয়েছে কমল রানীর দীঘি। দিঘিটির অতীত ঐতিহ্য তেমন একটা অবশিষ্ট না থাকলেও এখনো এর চারদিকের দৃশ্যাবলি মানুষকে আচ্ছন্ন করে। 

 

গলাচিপা 

পটুয়াখালী থেকে ৩ ঘণ্টার লঞ্চযাত্রায় গলাচিপা থানায় পৌঁছানো যায়। গলাচিপার দক্ষিণে রয়েছে সুন্দর কয়েকটি দ্বীপ—চর মোনতাজ, চর আন্তা, চর বাহন, চরবিশ্বাস, সোনারচর, বুড়িরচর, রূপারচর, শিবচর, কলাগাছিয়া, ছোট বাইশদিয়া, রাঙ্গাবালি। এখানে খেপুপাড়া রাখাইন অধ্যুষিত এলাকা। ওখানে বেড়াতে গেলে রাখাইন সম্প্রদায়ের জীবনধারার বৈচিত্র্য খুঁজে পাওয়া যায়। 

 

কুয়াকাটা 

পটুয়াখালীর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা। কুয়াকাটা কারও কাছে সাগরকন্যা কারও কাছে বনকন্যা হিসেবে পরিচিত। কুয়াকাটায় রয়েছে প্রায় দুই শ’ বছরের ইতিহাস। তৎকালে স্বভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে বার্মা থেকে রাখাইন সম্প্রদায় দীর্ঘ সাগর পাড়ি দিয়ে কুয়াকাটায় আসে। পরবর্তী সময়ে এলাকাটি তারা বাসযোগ্য করে তোলে। পরবর্তীকালে সুমিষ্ট পানির জোগানদার এই কুয়াকে কেন্দ্র করেই এলাকার নাম হয় কুয়াকাটা। কুয়াকাটায় রয়েছে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত। এখানে সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দুটিই উপভোগ করা যায়। 

 

ফাতরার বন 

কুয়াকাটার কাছ ঘেঁষেই ফাতরার বন। ট্রলারে সাগর পাড়ি দিয়ে শাখা নদীর মাধ্যমে এ বনে যেতে হয়। ফাতরার বনে রয়েছে হাজারো উদ্ভিদের পাশাপাশি সুন্দরী গাছ। এ ছাড়া রয়েছে বিভিন্ন প্রাণী—বানর, শিয়াল, বাগডাস ইত্যাদি। 

 

গঙ্গামতির বন 

গঙ্গামতির বনে রয়েছে দানব কৃতির গাছ। বিশাল বিশাল চর। চরে রয়েছে নানা প্রজাতির হাজার হাজার পাখি। পর্যটকদের পাশাপাশি পাখিপ্রেমীদের কাছে গঙ্গামতির প্রিয় হয়ে উঠেছে। 

 

বৌদ্ধবিহার প্যাগোডা

কুয়াকাটার বৌদ্ধবিহার এবং প্যাগোডাও ঘুরে দেখা যেতে পারে। মাঘী পূর্ণিমা ও শারদীয় রাসপূর্ণিমায় কুয়াকাটায় জমজমাট মেলা বসে। প্রতিবছর নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হয় রাস পূর্ণিমা। মন্দিরের অভ্যন্তরে রয়েছে অষ্টধাতুর নির্মিত সাঁইত্রিশ মণ ওজনের ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধমূর্তি। 

শুঁটকিপট্টি 

কুয়াকাটার দুই কিলোমিটার পশ্চিমে শুঁটকিপট্টি। এ এলাকায় রয়েছে প্রচুর সংখ্যক জেলের বসবাস। জেলেরা মাছ ধরে ধরে মাছের একটা অংশ শুঁটকি বানায়। ভোজনোপযোগী হলে বাজারজাত করে। 

খাঁ বাড়ি 

সতেরো-আঠারো শতকে নির্মিত হয়েছে খাঁ-বাড়ি। পটুয়াখালী শহরের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে রয়েছে একটি দোতলা ভবন, কালাই খাঁর মসজিদ, বুরুম খাঁর সেতু, বখতার খাঁর বাড়ি ইত্যাদি। 

কীভাবে যাবেন এবং কোথায় থাকবেন

ঢাকা সদরঘাট থেকে সরাসরি কিছু লঞ্চে বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী যায়। আর স্থলপথে যেতে চাইলে তাও যাওয়া যাবে। ঢাকা থেকে অনেক বাস সরাসরি যায়। বরিশালের নথুল্লাবাদ থেকে সব স্থানে যাওয়ার বাস আছে। ইচ্ছে হলে লঞ্চেও যাওয়া যাবে।

প্রতিটি জেলা শহরে থাকার জন্য ভালো মানের বেশকিছু হোটেল রয়েছে। চাইলে এখানে কিছুদিন থেকে মনের মতো করে দেখা যাবে সৌন্দর্যের নগরী চির সবুজ বরিশাল। 

Leave a Reply

Your identity will not be published.