কম খরচে ভালো থাকুন

কম খরচে ভালো থাকুন

একটি টাকা সঞ্চয় করা মানেই একটি টাকা আয় করা। আর তাই আয় যেমনই হোক না কেন প্রতিদিনই কিছু না কিছু সঞ্চয় করুন। সেটা পাঁচ টাকা, দশ টাকা আর একশো টাকা যাই হোক না কেন। ব্যাংকে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলুন। কোনোরকম চাপ না নিয়েই জমাতে পারেন সেরকম অংকের ৩-১০ বছরের মেয়াদি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলুন। আজকের এই সঞ্চয়টাই আগামী দিনের পুঁজি হয়ে উঠবে। ভবিষ্যতে কোনো বড় অংকের টাকার প্রয়োজনটা মেটাতে পারবেন।

মধ্যবিত্ত জীবনের এক চরম সংকট স্বল্প আয়ে জীবনের নানা প্রয়োজন পূরণের আয়োজন করা। জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখিতার এই সময়ে আয়টা কিন্তু বাড়ছে না সে অনুপাতে। ফলে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংসার খরচ নামক ঘোড়াটাকে সামাল দিতে। সংসার খরচের লাগামটাকে যতই টেনে ধরতে চাইছেন ততই যেন সে ছুটে চলতে চাইছে দুরন্ত গতিতে। নিত্যপ্রয়োজন পূরণ করার পাশাপাশি নিত্যনতুন জিনিসের প্রলোভন, ছেলেমেয়েদের হাজার আবদার-বায়না, নানা অনুষ্ঠানের দাওয়াত কত রকম ঝক্কি! তবে এটাই শেষ কথা নয়। খরচের অস্ত্র যতই ধারালো হোক মিতব্যয়িতার কঠিন বর্ম দিয়ে তাকে ঠেকিয়ে রাখা খুব কঠিন কিছু নয়। একটুখানি হিসেবি আর পরিকল্পিত জীবন যাপনে অভ্যস্ত হলেই এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব খুব সহজেই। আর এই পরিকল্পনা কিংবা মিতব্যয়িতার চর্চা যাই বলি না কেন তা করতে হবে পরিবারের সবাইকে সঙ্গে নিয়েই। অর্থনৈতিক এই মহামন্দার সময়েও সঠিক পরিকল্পনা, মিতব্যয়িতার মাধ্যমে কম খরচেও ভালো থাকার উপায় নিয়েই এবারের প্রচ্ছদ রচনা।  আলোকচিত্রঃ ফজলে এলাহী ইমন।

  

প্রাথমিক পরিকল্পনা

সংসারের খরচ কমানোর প্রথম এবং প্রাথমিক ধাপটিই হচ্ছে পারিবারিক বাজেট প্রণয়ন। পরিবারের সব সদস্যকে সঙ্গে নিয়েই প্রণয়ন করুন বাজেট। বড়দের পরামর্শতো নিবেনই ছোটদের মতামতকেও গুরুত্ব দিন। তাহলে একদিকে যেমন পরিবারের সবাইকে গুরুত্ব দেওয়া হবে তেমনি মসৃণভাবে চলবে সংসার। মিটিংয়ে সন্তানদের রাখলে তারাও সাংসারিক বিভিন্ন বিষয় বুঝতে পারবে। ফলে অহেতুক বায়না করবে না। আগের মাসের শেষ ছুটির দিনটিকে বেছে নিতে পারেন পারিবারিক বাজেট প্রণয়নের জন্য। তাহলে সবাইকে একসঙ্গেই পাবেন। সেটা সম্ভব না হলে অন্তত মাসের প্রথম ছুটির দিনটাকে বেছে নিন। 

শুরুতেই আয়, ব্যয় এবং সঞ্চয়ের হিসাব করে ফেলুন। ধার থাকলে সেটারও হিসাব করুন। বাজেটের শুরুতেই রাখুন ধার শোধের বিষয়টা। বেতন পাওয়ার পর প্রথমেই ঋণ পরিশোধ করুন। পুরোটা না পারলেও যতটা সম্ভব করুন। ঋণ পরিশোধ না করে সঞ্চয় করতে যাবেন না। খরচের হিসাব রাখুন। প্রতিদিন কোথায় কত খরচ হলো লিখে রাখুন। মাস শেষে সেটি নিয়ে বসুন। এবার দেখুন কোন কোন খাতে খরচ বেশি হয়েছে এবং সেগুলো একটু চেষ্টা করলেই কমানো সম্ভব কি না। খরচের একটা খসড়া করে নিন। নির্দিষ্ট একটি ডায়রি মেইনটেন করতে পারেন। শুরুতেই মাসের বাঁধাধরা ব্যয় যেমন ইলেকট্রিক বিল, বাজার খরচ, ফোনের বিলের টাকা, কাজের লোকের মাইনে, ছেলেমেয়ের স্কুল, টিউশন ফি এবং আরো অন্যান্য খরচ আলাদা ভাগ করে নিন। প্রয়োজনে আলাদা আলাদা খামে ভরে, ওপরে নাম লিখে রাখুন। এতে বাড়তি খরচ করার প্রবণতা কমে যাবে। আয় যেমনটাই হোক না প্রতি মাসে অন্তত কিছু হলেও সঞ্চয় করুন। 

কেনাকাটার ক্ষেত্রে

মাসের শুরুতেই ঠিক করে নিন এ মাসে আপনাকে কী কী কিনতে হবে। শপিংয়ের আগে তালিকা তৈরি করুন। কেনাকাটার  আগে দেখে নিন আপনার কী কী আছে এবং কী কী না কিনলেই নয়। ভবিষ্যতে কী কী কিনতে হবে তারও তালিকা করুন। বড় অংকের টাকার প্রয়োজন এমন জিনিসগুলোর আলাদা তালিকা তৈরি করুন। সবগুলো একবারে না কিনে ধীরে ধীরে কিনুন। এ ধরনের পণ্য কেনার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে নিন। কত টাকা করে জমালে জিনিসটা কেনা সম্ভব হবে সে অনুযায়ী আলাদা করে টাকা জমান। সবার আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের একটা তালিকা তৈরি করুন। কম পচনশীল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো সারামাসেরটা একসঙ্গেই কিনুন। একসঙ্গে বেশি পণ্য কিনলে দাম অনেকটা কমে যায়। মাছ, মাংস, দুধের মতো পচনশীল খাদ্যদ্রব্যগুলোও অন্তত পুরো সপ্তাহেরটা কিনে ফ্রিজে রাখুন। মৌসুমের শুরুতে যে-কোনো জিনিসপত্রের দাম অনেক কম থাকে। স্টোর করার পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে  চাল , ডাল, পেঁয়াজ, রসুনের মতো জিনিসগুলো মৌসুমের শুরুতে বেশি করে কিনে রাখুন। 

পণ্যের গুণগত মান এবং দামটা যাচাই করে তবে পণ্য কিনুন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার কুপনে কিংবা মোবাইল কোম্পানির সৌজন্যেও নানা ধরনের অফার পাওয়া যায়। এ ধরনের অফারগুলি গ্রহণ করুন। এছাড়াও বিভিন্ন  পণ্যে ছাড় কিংবা উপহার দেওয়া থাকে। এগুলোও গ্রহণ করুন। এছাড়াও একই পণ্যের ক্ষেত্রে দোকান অনুযায়ী দামটা বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে যেসব দোকানে অধিকতর কম মূল্যে পাবেন সেখান থেকেই কিনুন। তবে অনেকক্ষেত্রে এর উল্টো ব্যাপারটাও ঘটতে দেখা যায়। বিশেষ অফারের কারণে অপ্রয়োজনীয় জিনিসটাও কিনতে দেখা যায়। সেদিকে খেয়াল রাখুন। অফার গ্রহণ করতে গিয়ে যেন অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিংবা বাড়তি জিনিস  কেনা না হয়ে যায়। বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে গেলে অনেক সময়ই বাড়তি জিনিস কেনার প্রবণতা দেখা যায় অনেকের মধ্যেই। অনেকক্ষেত্রে অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিসও কেনা হয়ে যায়। এটা এড়াতে সবচেয়ে ভালো বাজার করতে যাওয়ার আগেই একটা তালিকা তৈরি করে নিন। কেনার আগে কয়েকটা দোকান ঘুরে দামটা যাচাই করে নিন। অনেক সময়ই বিশেষ ব্র্যান্ডের প্রতি দুর্বলতা থাকে। সেই ব্র্যান্ডের পণ্যের দাম যতই হোক সেটাই কেনা চাই। সেক্ষেত্রে খরচটা বেড়ে যায় অবধারিতভাবেই। তাই অন্য ব্র্যান্ডগুলোও যাচাই করে দেখতে পারেন। অনেকসময়ই আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের কারণে দামটা বেশি পড়ে যায়। একই গুণগতমানের পণ্যই হয়তো উপস্থাপনের ভিন্নতা কিংবা দোকানভেদে দামের অনেক হেরফের হয়। সেক্ষেত্রে নিজেদের ব্যবহারের জন্য না হয় কম আকর্ষণীয় কিংবা সাধারণ দোকানগুলো থেকেই কিনলেন। ঝাঁচকচকে শপিংমলের বদলে একটু সাধারণ মানের দোকান থেকে পণ্য কিনলে অনেক কম মূল্যে একই পণ্য মিলবে। বিশেষ করে পোশাক-আশাক, এক্সেসরিজের ক্ষেত্রে। তবে কোয়ালিটিটা যেন ভালো হয় সেদিকটাও যাচাই করে দেখবেন। 

পছন্দ হলেই কোনো জিনিস হুট করে কিনে ফেলবেন না। কোন উদ্দেশ্যে জিনিসটা কিনছেন, জিনিসটা আপনার প্রয়োজন ঠিক কতটা মেটাবে সেটা বিবেচনা করেই কিনুন। সিদ্ধান্ত নিতে ঝামেলা হলে প্রয়োজনে আরো একটু সময় নিন। জিনিস কেনার সময় মাল্টি পারপাস সার্ভ করে এমন জিনিসটাই কিনুন। এসব জিনিসের ক্ষেত্রেও অনেক সময়ই অনেক আকর্ষণীয় ছাড় পাওয়া যায় সেটা গ্রহণ করতে পারেন। তবে ছাড়ে কিনতে গিয়ে যেন গুণগত মানটা ঠিক থাকে সেদিকটাতেও খেয়াল রাখুন। অনেকসময় উপহার সামগ্রীতেও ছাড় পাওয়া যায়। প্রতি মাসেই তো কোনো-না-কোনো নিমন্ত্রণে যোগ দিতেই হয়। কিছু উপহার আছে যেটা যে-কোনো অনুষ্ঠানেই দেওয়া যায়। আবার ঘরে বেশ কিছুদিন নিশ্চিন্তে রেখে দেওয়া যায় সেসব উপহার সামগ্রী ছাড়ে কিনতে পারেন। 

শপিংয়ের সময় শিশুদের না নেওয়াই ভালো। শিশুর অযথা বায়না মেটাতে গিয়ে হয়তো প্রয়োজনীয় জিনিসটা কেনার বাজেটে টান পড়তে পারে। 

খাবারের বাজেট

ফ্যামিলি বাজেটের একটি বড় অংশ ব্যয় হয় খাওয়াদাওয়ায়। যখন বাজেট ঠিক করবেন, খেয়াল রাখবেন এই খাতে যেন অপ্রয়োজনীয় খরচ না হয়। অল্প খরচেও যেন পুষ্টি মেলে ষোলআনা সে দিকে খেয়াল রাখুন। 

খাওয়ার খরচ কমাতে বাইরে খাওয়ার অভ্যাস বর্জন করা জরুরি। সপ্তাহের শুরুতে সাপ্তাহিক খাবারের মেন্যু ঠিক করে নিন। এমনভাবে মেন্যু তৈরি করুন যাতে খাবারে একঘেয়েমি না আসে। পরিবারের সবাইকে সবধরনের খাবার গ্রহণের প্রতি আগ্রহী করে তুলুন। সবসময় যে মাছ-মাংসই খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। খাবার তালিকায় প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি রাখুন। প্রয়োজনে শাক-সবজি দিয়েই ভিন্নধরনের আকর্ষণীয় কোনো আইটেম ও তৈরি করতে পারেন। এতে খরচ কমার পাশাপাশি পুষ্টিও মিলবে ষোলআনা। বাইরে বের হওয়ার সময় পানির বোতল, হালকা স্ন্যাকস সঙ্গেই রাখুন। মাঝে মাঝে রেসিপি বুক দেখে নিজেই তৈরি করতে পারেন স্পেশাল আইটেম। অফিস কিংবা বাচ্চার টিফিনে বাইরের খাবার না দিয়ে ঘরে তৈরি করা খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন। পরিমিত খাবার তৈরি করুন। বেঁচে যাওয়া খাবার ঠিকঠাক সংরক্ষণ করে রাখুন। চেষ্টা করুন অল্প তেল-মসলাযুক্ত খাবার খাওয়ার। এতে খাবার খরচ কমার সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যের জন্যও তা উপকারী। মৌসুমী শাকসবজি-ফলমুল খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি পুষ্টির পরিমাণটাও বেশি মিলবে। গেট টুগেদারের জন্য দামি রেস্টুরেন্টের বদলে নিজের বাসাটিকেই বেছে নিন। লাগামহীন আড্ডার পাশাপাশি খাবারের খরচটাও কমবে অনেকখানি। তবে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মাঝে মাঝে রেস্টুরেন্টে যাওয়া যেতেই পারে। 

  

হেঁশেলের বাজেট 

খাবার খরচ কমানোর প্রক্রিয়াটি শুরু হয় রান্নাঘর থেকেই। গ্যাস জ্বালানোর আগেই সবকিছু গুছিয়ে নিন। এতে অহেতুক গ্যাস খরচ হবে না। অনেকেই পরিমাণটা ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেন না। অনেকে আবার মনে করেন বেশি তেল-মসলা মানেই বেশি স্বাদ। এটা ভুল ধারণা। কম তেল-মসলাতেও অনেক সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়। সেভাবে তৈরি প্রণালি শিখে নিন। পরিমাণের ব্যাপার বুঝতে না পারলে রেসিপি বুক দেখে কিংবা অভিজ্ঞজনদের পরামর্শ নিতে পারেন। ঠিকঠাক সংরক্ষণের অভাবে রান্নাঘরের অনেক সরঞ্জামের অপচয় হয়। চাল, ডাল, আটা, চিনি, মসলা প্রভৃতি সংরক্ষণের ঠিকঠাক পদ্ধতিটা জেনে নিন। গরম মসলার মতো দামি মসলাগুলি ব্যবহারের আগে ভালোভাবে গুঁড়া করে নিয়ে সামান্য লবণ বা চিনি মিশিয়ে নিন। তাতে ফ্লেভার ভালো ছড়াবে। চাল-ডাল কিংবা অন্যান্য মসলা ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে পোকা ধরে যায়। সেক্ষেত্রে সেগুলো সংরক্ষণ করুন ঠিকমতো। মসলা মাঝে মাঝে রোদে দিন। চাল-ডালের পাত্রে নিমপাতা দিয়ে রাখুন তাহলে পোকা ধরবে না। অনেক গম একসঙ্গে স্টোর করতে চাইলে কয়েকটা শুকনো মেথি পাতা দিয়ে রাখুন। সুজির পোকা ধরা রোধ করতে সামান্য তেলে ভেজে বায়ুরোধী ক্যানে রাখুন। বিস্কুট মচমচে রাখতে কৌটার ভেতর কিছু ব্লটিং পেপার বিছিয়ে তার ওপর বিস্কুট রাখুন। 

তেল কম লাগে এমন বাসনপত্র ব্যবহার করুন। দু’তিনটা ননস্টিক বাসন হলেই নানারকম রান্নার কাজ চলে যায়।

যানবাহন খরচ কমান 

দৈনন্দিন বাজেটের একটা বড় অংশ ব্যয় হয় যাতায়াতের ক্ষেত্রে। চেষ্টা করলে এই খরচটাও কমিয়ে আনা সম্ভব অনেকটাই। রিকশা, ট্যাক্সি কিংবা সিএনজির পরিবর্তে বাস কিংবা কম খরচের বাহনে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কাছের গন্তব্যে চেষ্টা করুন হেঁটে যেতে।  

উপহারের বাজেট 

প্রতি মাসেই বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, কলিগ কিংবা পরিচিত জনের কোনো-না-কোনো নিমন্ত্রণ থাকেই। সেটা এড়ানোর কোনো সুযোগ থাকে না, উচিতও নয়। সামাজিকতা, পারস্পরিক সৌহার্দ্য রক্ষার জন্য এসব আমন্ত্রণ রক্ষা করতেই হয়। আর নিমন্ত্রণ মানেই কোনো না গিফট নিতেই হবে। এ খরচটা তো কমানোর সুযোগ কম তবে অসম্ভব নয়। চাইলেই এই খরচটাও কমিয়ে আনা সম্ভব অনেকখানি। সবসময় যে দামি উপহারই দিতে হবে এমনটা নয়। কম খরচেও দারুণ সব উপহার দেওয়া সম্ভব। দেশীয় নানা উপকরণে তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র উপহার হিসেবে দারুণ। এসব উপহার খরচ কমানোর পাশাপাশি আপনার নান্দনিকতারও পরিচয় বহন করবে। উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে নিজের সৃজনশীলতাটাকেও কাজে লাগাতে পারেন। নিজের হাতে তৈরি ব্যাগ, নকশি কাঁথা, শোপিস দিতে পারেন উপহার হিসেবে। নিজের হাতের তৈরি যে-কোনো উপহারের কদরই আলাদা। আর খরচ তো কমবেই। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গিফট হাউসগুলোতে নানা রকম ছাড় দেওয়া হয়। তখনো কিনে রাখতে পারেন এসব উপহার। উপস্থাপনের কারণে অনেক সাধারণ জিনিসও অসাধারণ হয়ে ওঠে। অনেক সময় উপস্থাপনার শৈলীর সাধারণ জিনিসের দামও অনেক বেশি পড়ে যায়। এই সুযোগটা আপনিই নিতে পারেন। কম মূল্যের কোনো জিনিস খুব আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে পারেন।  

ফোন ব্যবহারে মিতব্যয়ী হোন

বর্তমান সময়ে ফোন ছাড়া যেন এক মুহূর্তও চলে না। অনেকেই ফোনে অকারণে কথা বলেন। সংসারের খরচ কমাতে এ ব্যাপারেও মিতব্যয়ী হোন। খোশ গল্প কিংবা অকারণ কথা বলার জন্য ফোন নয়। মোবাইল বা ল্যান্ডফোনের প্রতিটি শব্দ উচ্চারণের জন্যেই যে আপনাকে টাকা গুণতে হয় এ বিষয়টি মাথায় রাখুন। আর একারণেই ফোনের ব্যবহার প্রয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন। মাসের শুরুতেই ফোনের জন্য একটা নির্দিষ্ট বাজেট করে নিন। নির্দিষ্ট সীমার ওপরে চলে গেলে ফোনে কথা বলা কমিয়ে আনুন। কোনো মাসে বাজেট ক্রস করলে চেষ্টা করুন পরের মাসে সেটাকে পুষিয়ে নেয়ার। মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজনের ধরন অনুযায়ী সীম নির্বাচন করুন। সাধারণ ব্যবহারের জন্য কখনোই পোস্টপেইড সীম ব্যবহার করবেন না। এতে অতিরিক্ত কথা বলার প্রবণতা বেড়ে যায়। বিভিন্ন ফোন কোম্পানির দেওয়া বিভিন্ন অফার গ্রহণ করুন। তবে অনেকে এই অফার গ্রহণ করতে গিয়ে অতিরিক্ত কথা বলায় অভ্যস্ত হয়ে যান। সেদিকে খেয়াল রাখুন। যত স্বল্প কলরেটই হোক না কেন অহেতুক মোবাইলে কথা বলার প্রবণতা দূর করুন।  

  

ভ্রমণের খরচ হ্রাস

জ্ঞান আহরণ হোক আর মানসিক প্রশান্তির জন্যই হোক আর নিছক অফিসিয়াল ট্যুরই হোক ভ্রমণতো করতেই হয়। একটু পরিকল্পনা করে নিলে এই ভ্রমণের খরচটাও কমিয়ে আনা সম্ভব অনেকখানি। যে-কোনো জায়গয়ার যাওয়ার আগেই জায়গাটি সম্পর্কে, সেখানকার পরিবেশ, পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে পরিচিতজনদের কাছ থেকে ধারণা নিয়ে নিন। পরিবহন ব্যয়, থাকা-খাওয়া, কেনাকাটা এ সমস্ত কিছুতে কীরকম খরচ হতে পারে সেসম্পর্কেও আইডিয়া নিন। যাতায়াত, থাকা-খাওয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে একাধিক অপশন থাকে। সেক্ষেত্রে ভালোভাবে যাচাই করে তবেই আপনার সুবিধামতো অপশনটি গ্রহণ করুন। যাতায়াতের ক্ষেত্রে চেষ্টা করুন যে সার্ভিসটিতে গেলে তুলনামূলক কম খরচে ভ্রমণটা আরামদায়ক হবে সেই অপশনটিকে বেছে নিতে। হোটেল ভাড়ার ক্ষেত্রে সবচাইতে ভালো মানের হোটেলেই উঠতে হবে এমন কোনো কথা নেই। তুলনামুলক কম খরচের মধ্যেও ভালো মানের হোটেল পাওয়া যায়। চেষ্টা করুন সেগুলোতে থাকতে। তবে সিকিউরিটির বিষয়টি মাথায় রাখবেন। খাওয়ার ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন। খুব বড় রেস্টুরেন্টে গিয়ে অযথা অতিরিক্ত টাকা খরচ করবেন না। স্থানীয় অনেক হোটেল থাকে যেখানে কম খরচেও অনেক ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়। পর্যটন এলাকাগুলোতে ক্রেতাদের ঠকানোর প্রবণতা খুব বেশি থাকে। খাবার অর্ডার করার আগেই দামটা জেনে নিন। তবে যে-কোনো জায়গার বিশেষ খাবারগুলো খেতে ভুল করবেন না। বেড়াতে গিয়ে কেনাকাটার ক্ষেত্রেও মিতব্যয়ী হোন। সুন্দর জিনিসের ভিড়ে অনেকসময়ই অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে যা কোনো কাজেই লাগে না। কেনাকাটার ক্ষেত্রে এ বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখুন। কেনাকাটার সময় দামাদামি করতে সংকোচবোধ করবেন না মোটেও। খরচ বাঁচাতে সম্ভব হলে অফ সিজনে যান। তাহলে সবকিছু ভালোভাবে দেখতেও পারবেন আবার খরচটাও কমে যাবে অনেকটা। 

কম খরচেই ঘর সাজান

প্রিয় আবাসটিকে সবাই চায় মনের মতো করে সাজিয়ে তুলতে। সে বাসাটি যেমনই হোক। প্রিয় আবাসটিকে মনের মতো করে সাজাতে সবসময় যে দামি জিনিসেরই প্রয়োজন হবে তেমনটা নয়। কম খরচেও আপনার ঘরটি হয়ে উঠতে পারে নান্দনিক সৌকর্যে অনন্য। তাতে মিলবে আপনার স্বকীয়তারও পরিচয়। সেক্ষেত্রে দামি বিদেশি পণ্যের বদলে বেছে নিতে পারেন দেশীয় পণ্য। বর্তমানে অনেক কম মূল্যেই মাটি, বাঁশ, বেত, কাঠ, তামা, কাঁসা, পিতল, পাট, কাপড় বা কাগজের বৈচিত্র্যপূর্ণ নান্দনিক জিনিসপত্র মিলবে খুব সহজেই। এসব পণ্য আপনার আপনভুবনকে যেমন দান করবে নান্দনিক সৌকর্য তেমনি  খরচও অনেক কম হবে। 

সঞ্চয় করুন

প্রবাদই আছে 'অ্যা পেনি ইজ সেভড, অ্যা পেনি ইজ আর্নড'—অর্থাৎ একটি টাকা সঞ্চয় করা মানেই একটি টাকা আয় করা। আর তাই আয় যেমনই হোক না কেন প্রতিদিনই কিছু না কিছু সঞ্চয় করুন। সেটা পাঁচ টাকা, দশ টাকা আর একশো টাকা যাই হোক না কেন। ব্যাংকে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলুন। কোনোরকম চাপ না নিয়েই জমাতে পারেন সেরকম অংকের ৩-১০ বছরের মেয়াদি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলুন। আজকের এই সঞ্চয়টাই আগামী দিনের পুঁজি হয়ে উঠবে। ভবিষ্যতে কোনো বড় অংকের টাকার প্রয়োজনটা মেটাতে পারবেন। কোনো ভালো কোম্পানিতে ইন্সুরেন্স করুন। অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনায় আর্থিক সমস্যা মোকাবেলা করার একটা নিশ্চিত ব্যবস্থা হওয়ার পাশাপাশি একটা বড় অংকের টাকাও জমা হবে আপনার ভবিষ্যতের জন্য। সন্তানকেও সঞ্চয় করতে উদ্বুদ্ধ করুন। আজকাল নানা ধরনের আকর্ষণীয় সব ব্যাংক কিনতে পাওয়া যায়। ছেলেবেলা থেকেই আকর্ষণীয় কোনো ব্যাংক কিনে দিন তাকে। এতে করে টাকা জমানোয় অনেক বেশি আগ্রহ গড়ে উঠবে। একটু বড় হলে তাকে নিয়েই জয়েন্ট সেভিংস অ্যাকাউন্ট গড়ে তুলুন।

অপচয় রোধ করুন

কথায়ই আছে—‘যেজন দিবসে মনের হরষে জ্বালায় মোমের বাতি/আশুগৃহে তার দেখিবে না আর নিশীথে প্রদীপ ভাতি’। তাই সংসারে খরচ বাঁচাতে অপচয় রোধ করাটা জরুরি। প্রয়োজন না পড়লে ঘরের পানির ট্যাপ, চুলা ও ইলেক্ট্রনিক জিনিসপত্রের লাইন অফ করে রাখুন। বিল কম আসবে। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অপচয় সম্পর্কে বাড়ির সবাইকে সচেতন করুন। ইলেকট্রিসিটি না থাকলে মোমের বদলে চার্জার লাইট ব্যবহার করুন। বাড়ির সব আলো, পাখা একসঙ্গে জ্বালিয়ে রাখবেন না। সিলিংয়ে ফ্লাডলাইট ব্যবহার করবেন না। ঘরে উজ্জ্বল রঙ করান, আলোর ব্যবহার কম হবে। প্রাকৃতিকভাবেই আলো-বাতাস প্রবেশের সুযোগ থাকলে জানালাটা খোলা রেখে বাল্ব, ফ্যান বন্ধ রাখুন। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্যই চেক করে নিবেন সবকিছু ঠিকঠাক বন্ধ করেছেন কিনা।  অনেক সময় আবার ড্রইংরুমে টিভি চালিয়ে আমরা রান্নাঘরে কাজ করতে চলে যাই, কম্পিউটারটি চালিয়ে রেখেই অন্যান্য কাজ করি। এই অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করা জরুরি। প্রতি মাসে বাড়ির সব ইলেকট্রনিক মেইনটেন্যান্স কাজ করান। এতে জিনিসপত্রও ভালো থাকবে এবং ইলেকট্রিক বিলও কম উঠবে। প্রয়োজন না পড়লে সব ঘরের আলো, পাখা চালিয়ে রাখবেন না। অতিরিক্ত পানি খরচের দিকেও নজর দিন। অযথা কল খোলা যেন না থাকে। এই ছোট ছোট সতর্কতা মানলে আপনার মাসিক বাজেট আপনার নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।

গ্যাজেটের সঠিক ব্যবহার 

বর্তমান সময়ের ব্যস্ততার সময়ে গ্যাজেটের ব্যবহার আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে অনেকটাই। দৈনন্দিন কাজটাকে সহজ করা থেকে শুরু করে একটু আয়েশী জীবনযাপনের ক্ষেত্রে গ্যাজেটের জুড়ি মেলা ভার। ওভেন, ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিন এগুলো আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এই গ্যাজেটের অপব্যবহারই পারিবারিক বাজেটের ওপর ফেলতে পারে ভয়াবহ চাপ। এই চাপ কমাতে গ্যাজেটের ব্যবহারে সচেতন হোন। টেলিভিশন, কম্পিউটার, ল্যাপটপের মতো গ্যাজেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন তা যেন অযথা চালু না থাকে। কোনো গ্যাজেট কেনার আগেই তার এনার্জি সেভিং পাওয়ার দেখে কিনুন। এতে প্রথম পর্যায়ে দামটা একটু বেশি পড়লেও পরবর্তী সময়ে আপনার খরচ বাঁচাবে অনেক বেশি। ফ্রিজ কখনোই গ্যাসের কাছাকাছি কিংবা গরম পরিবেশে রাখবেন না। এতে ফ্রিজ গরম হয়ে বেশি এনর্জি খরচ হবে। খাবার ঠান্ডা করে তবেই ফ্রিজে ঢোকান। এতে এনার্জি কম খরচ হবে। ওভেন বারবার ব্যবহার না করে গরম থাকা অবস্থায় যতটা সম্ভব ব্যবহার করুন। এতে করে প্রিহিটের এনার্জি রোধ হবে। খুব বেশি গরম না পড়লে এসির ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। এসি চালিয়ে ঘর খোলা রাখবেন না। ঘর ঠান্ডা হয়ে গেলে এসি বন্ধ করে দিন। ওয়াশিং মেশিনে সপ্তাহের সব কাপড়চোপড় একসঙ্গে পরিষ্কার করুন। গ্যাজেট কেনার সময় খরচ একটু বেশি পড়লেও ভালো মানের কেনার চেষ্টা করুন।   

 

  

জিনিসের পুনঃপুনঃ ব্যবহার 

সব জিনিস পুরোনো হলেই প্রয়োজন ফুরিয়ে যায় তেমনটা নয়। একই জিনিস ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বারবার ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনো জিনিস ফেলে দেওয়ার আগে ভাবুন অন্য কাজে ব্যবহার করা যায় কিনা। অনেক পুরাতন জিনিসই একটু এদিক-সেদিক করে ব্যবহার করা যায় একেবারেই আনকোরা জিনিস হিসেবে। পুরোনো শাড়ি ফেলে না দিয়ে তৈরি করতে পারেন কাঁথা, বালিশের কভার, কুশন কভার। টুকরো কাপড় জোড়া দিয়ে তৈরি করতে পারেন চমৎকার পাপোশ। জিন্সের প্যান্ট দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন ব্যাগ, জুতা প্রভৃতি। মোমের গলে যাওয়া অংশগুলো জমিয়ে রাখতে পারেন। পরবর্তী সময়ে সেটা গলিয়ে মাঝখানে সুতো দিয়ে আবার মোম বানাতে পারবেন। সবজির উচ্ছিষ্ট অংশ, মাছের আঁশ, ডিমের খোঁসা ফেলে না দিয়ে একটি ঢাকনাওয়ালা পাত্রে রেখে পচিয়ে দিতে পারেন গাছের গোড়ায়। এমনকি খাবারও একটু বাসি হলেই ফেলে না দিয়ে তা দিয়েই তৈরি করতে পারেন অন্য কোনো সুস্বাদু আইটেম।

মিতব্যয়িতার শিক্ষা ছেলেবেলা থেকেই  

বাবা-মা সন্তানের জন্য পারলে আকাশের চাঁদটাও এনে দিতে প্রস্তুত যেন। না চাইতেই হাজির করতে চান তার প্রয়োজনের সবটুকু। সন্তানের নানা প্রয়োজনের দিকে বাবা-মা খেয়ালতো রাখবেনই, তাই বলে চাইতেই সবকিছু হাজির করে দিবেন তার কোনো মানে নেই। চাওয়াটা কতটুকু যৌক্তিক, জিনিসটি আসলেই তার কতখানি প্রয়োজন এইসব বিষয় বিবেচনায় এনে তবেই চাওয়াটা পূরণ করবেন। প্রয়োজনের বাইরে সন্তানের শখটার গুরুত্ব দিবেন না তেমনটা নয়, তবে শখের পরিধিটা সীমিত করুন। ছেলেবেলা থেকেই সন্তানকে দায়িত্বশীল করে তুলুন। সন্তানকে পকেটমানি দেওয়ার পাশাপাশি টাকার মূল্যটাও বুঝিয়ে দিতে ভুলবেন না। সেইসঙ্গে সঞ্চয়ের প্রতিও আগ্রহী করে তুলুন। তাকে কিনে দিতে পারেন সুন্দর ডিজাইনের পিগি ব্যাংক। খুব সামান্য হলেও প্রতিদিনই তাকে কিছু টাকা জমাতে বলুন। জমানো টাকা দিয়ে কিনে দিতে পারেন তারই কোনো শখের বা প্রয়োজনীয় জিনিসটাই। তাহলে সেই জিনিসটার প্রতিও তার ভালোবাসাটা থাকবে। সন্তান একটু বুঝতে শিখলেই তাকে নিয়েই তৈরি করুন পারিবারিক বাজেট। আপনার আয়-ব্যয় সম্পর্কেও তাকে ধারণা দিন। তাহলেও সে বুঝতে পারবে সাংসারিক বিষয়গুলি। সেইসঙ্গে একটা সেভিংস একাউন্ট খুলে দিন। প্রতি মাসেই সেখানে জমানোর ব্যাপারে উৎসাহী করে তুলুন। টাকা জমা দেওয়ার সময় তাকে সঙ্গে নিয়ে যান। চেকবই, পাসবইয়ের বিভিন্ন বিষয়, সুদের হিসাব প্রভৃতি সম্পর্কে তাকে ধারণা দিন। সেভিংসের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করে তুলুন। এতে করে সেভিংসের প্রতি তার আগ্রহ জন্মাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই ছেলেমেয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি কিংবা পার্টটাইম কোনো জব করতে চাইলে তাতে বাধা দিবেন না। তবে সেটা যেন লেখাপড়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব না ফেলে সেদিকে খেয়াল রাখুন। বাড়তি রোজগারের টাকাটা কীভাবে ব্যয় করছে সেদিকেও খেয়াল রাখুন।

মডেল: লাবণ্য, শিবলু, সূচনা এবং অন্যান্য
পোশাক: পৌরাণিক, মেকওভার: নূর-ই-জান্নাত

Leave a Reply

Your identity will not be published.