আমরা এখন এক কৃত্রিম দুনিয়ায় বাস করছি। এই দুনিয়ায় সত্য নয়, মিথ্যের বসবাস। বিদেশে ঝাড়ুদার বা ধাঙড়ের কাজ করেন অথচ দেশে এলে সেটি লুকিয়ে অন্য কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ডিগ্রিধারীরা দেশে ছোটোখাটো কাজও করতে চান না। আবার কেউ ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে শিল্পপতি হয়েছেন বা ঘুষের টাকায় বহুতল বাড়ি বানিয়েছেন। অথচ এই সমাজ-সংসারে তারা গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে সুপরিচিত। আদর্শ ও সততার ফুলঝুরি অনর্গল ঝরে তাদের মুখ থেকে। এমনই কৃত্রিম তারা। কাচের ঘরের বাসিন্দা।
গ্ল্যামার জগতের মানুষদের ক্ষেত্রে তো এ কথা আরও বেশি প্রযোজ্য। তাদের অধিকাংশই সত্যের মুখোমুখি হতে চান না। বরং অনর্গল মিথ্যে কথা বলেন। হাতে কোনো ছবি নেই অথচ মুখে বলেন, ‘এখন আমি চুজি। বেছে বেছে কাজ করছি।’ তিনি এক নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। অথচ সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় বলেন, ‘আমার বাবা একজন বড় ব্যবসায়ী ছিলেন।’
অবশ্য হাতে গোণা কয়েকজন মানুষ থাকেন পৃথিবীর সব পারফর্মিং আঙিনাতেই, যারা সত্য কথা বলতে দ্বিধা করেন না। টালিউডের এই সময়ের অভিনেত্রী বিনীতা গুহ তাদেরই একজন।
বিনীতা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিজ্ঞাপন ও ওয়েব সিরিজে পারফর্ম করে সম্প্রতি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। দুর্গাপূজার একটি মিউজিক ভিডিওতে অভিনয় করেও বাহবা পাচ্ছেন।
এই বিনীতা একজন নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার বাবা যাদবপুরের সুখেন গুহ রাস্তায় টংয়ের দোকান চালিয়ে তাকে বড় করেছেন। করোনায় তিনি বেশ কিছুদিন উপার্জনহীন ছিলেন। মনের মাঝে দীর্ঘদিন ধরে একটি স্বপ্ন লালন করেছেন— রাস্তার ধারে নতুন একটি ভ্রাম্যমাণ চায়ের দোকান দেওয়ার।
সুখেন গুহের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে; বাস্তবের আলোয় মুখ দেখেছে। তার মেয়ে বিনীতা, টালিউডের সুপরিচিত অভিনেত্রী, তিনি সম্প্রতি বাবার জন্য খুলে দিয়েছেন একটি চায়ের টং দোকান। এ ক্ষেত্রে সামাজিক কুণ্ঠা বা গ্লানির ছিটেফোঁটাও দেখা যায় নি অভিনেত্রীর চোখেমুখে। বরং গর্ব করেই মিডিয়ার লোকজনদের তিনি জানিয়েছেন, টালিউডের সহকর্মী ও বন্ধুদের কাছে নিজেকে চা-বিক্রেতা বাবার মেয়ে হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বচ্ছন্দবোধ করেন। বিনীতা এই কথাও বলেছেন, ‘আমি সময় পেলেই বাবার দোকানে কচুরি ভাজি। বিক্রিও করি মাঝেমধ্যে। বাড়িতে সময় পেলে রান্না করতাম। তেমনই দোকানে করি। মানুষ বেঁচে থাকার জন্য যা যা করে, আমি আর বাবাও তা-ই করছি। এতে সংকোচের কী আছে? আমরা ভাড়াবাড়িতে থাকি। মা-বাবার মাথা গোঁজার জন্য একদিন বাড়ি করতে হবে আমাকে, সেটিই এখন লক্ষ্য।’
Leave a Reply
Your identity will not be published.