সম্প্রতি ‘ডেসপারেটলি সিকিং শাহরুখ’ নামে একটি বই প্রকাশ হয়েছে। লেখক শ্রায়ানা ভট্টাচার্য। বইটি ২০ বছরের গবেষণার ফসল। এখানে লেখক তুলে ধরেছেন কেন নারীরা বলিউড স্টার শাহরুখ খানকে এত পছন্দ করে!
কেন ভারতীয় নারীদের মধ্যে শাহরুখ-প্রীতি এত তীব্র? শ্রায়ানার বইতে এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, শাহরুখ ‘মজা’ করতে পারেন, বুদ্ধিদীপ্ত ব্যঙ্গ করতে দক্ষ, নায়ক হিসেবে আকর্ষণীয়, নিজের বক্তব্য স্পষ্টভাবে সাক্ষাৎকারে প্রকাশ করতে পারেন এবং খ্যাতি ও অর্থের জন্য তার যে প্রচেষ্টা, এ ব্যাপারে তার কোনো কুণ্ঠা বা লজ্জা নেই।
একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটা হলো এই যে, নারীদের স্বপ্ন, উদ্বেগ, প্রেম এবং সঙ্গী পছন্দ নিয়ে তাদের যে নিরন্তর লড়াই, এর সঙ্গে কোথাও যেন শাহরুখ-প্রীতির যোগসূত্র রয়েছে।
শাগরুখ খান বলিউডে প্রবেশ করেন গত শতকের নব্বই দশকে। সেই সময়ে সূচনা ঘটে নতুন এক ‘উদার অর্থনীতি’র। শ্রায়ানা ভট্টাচার্য সেই সময়ের ভারতের নারীদের কথা তার বইয়ে তুলে ধরেছেন। তিনি ২০০৬ সালে পশ্চিম ভারতের আগরবাতি কারখানার নারী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন, যারা মজুরি নিয়ে হতাশ ও ক্ষুব্ধ ছিল। তাদের সঙ্গে কথা বলে শ্রায়ানা জানতে পারেন কী কী বিষয় তাদের আনন্দ দেয় এবং বলিউড নায়কদের মধ্যে তাদের প্রিয় নায়ক শাহরুখ খান। এর পরের সব সমীক্ষায় শ্রায়ানা দেখতে পান, শাহরুখের এই নারী ফ্যানদের প্রায় সবাই শ্রম বাজারে বৈষম্যের শিকার। একই সঙ্গে ঘরে-বাইরে তাদের সবাইকে কম-বেশি সংগ্রাম করতে হয়। এমনকি শাহরুখের মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত নারী ফ্যানদের মুখেও একই কথা শোনা যায়।
সাধারণ একটি আক্ষেপ সব শ্রেণির নারীর মুখ থেকেই ঝরেছে— কেন আরও বেশি পুরুষ শাহরুখের মতো হয় না? পর্দায় নারীদের প্রতি শাহরুখের শতভাগ নিষ্ঠাও তাদের আকর্ষণ করেছে। অন্যদিকে পর্দায় আবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে শাহরুখ যেভাবে হু হু করে কেঁদে ফেলেন, এটিও তাদের বেশ পছন্দ। পর্দায় নারীদের প্রতি আবেগ প্রকাশে শাহরুখ যে লজ্জা পান না, এটিও পছন্দ তার নারী ফ্যানদের।
ধনী পরিবারের অসুখী এক নারী জানান, তিনি তার ছেলেদের ‘ভালো মানুষ’ হিসেবে বড় করতে চান, এমন মানুষ যারা শাহরুখের মতো কাঁদতে পারে। শাহরুখের মতো স্ত্রীদের মনে ভালোবাসা ও ভরসার বোধ তৈরি করতে পারে।
অন্যদিকে মুসলিম এক নারী পোশাক শ্রমিক বলেছেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখি কাভি খুশি কাভি গাম ছবিতে শাহরুখ যেভাবে কাজলের সঙ্গে কথা বলেছে, তাকে স্পর্শ করেছে, আমার সঙ্গেও কোনো পুরুষ যদি তেমন করত! কিন্তু আমার স্বামী ভীষণ রুক্ষ।’
১৯৯৭ সালের জুলাইতে পাক্ষিক অন্যদিন ‘ঢাকায় শাহরুখ’ শিরোনামে একটি প্রচ্ছদ রচনা প্রকাশ করে। সেখানে সমীক্ষা চালানো হয় ঢাকার দর্শকদের ওপর। তখন শাহরুখের নারী ফ্যানরা বলেছিল কেন তারা বলিউডের এই নায়ককে পছন্দ করে। কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছিল: শাহরুখ খুবই ভদ্র ও নম্র। তার মধ্যে ক্রূরতা নেই, ভারিক্কি ভাবও নেই। শাহরুখ প্রচণ্ড স্মার্ট ও স্টাইলিশও। তার মধ্যে নিষ্পাপ ভাবটা খুব বেশি, তার চোখ দুটি সেই কথাই বলে। স্বামী হিসেবেও শাহরুখ আদর্শ। স্ত্রী গৌরির সঙ্গে তার কোনো ঝামেলা নেই।
Leave a Reply
Your identity will not be published.