ফারুক মাহমুদ-এর ৩ কবিতা

ফারুক মাহমুদ-এর ৩ কবিতা

কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবে ১৯৫২ সালের ১৭ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন ফারুক মাহমুদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর। বিচিত্র পেশার পাশাপাশি জড়িত সাংবাদিকতার সঙ্গে। মূলত কবিতা লেখেন। তার প্রকাশিত কাব্য ‘পাথরের ফুল’, ‘অপূর্ণ তুমি আনন্দ বিষাদে’, ‘অনন্ত বেলা থেকে আছি’, ‘এত কাছে এত দূরে’, ‘সৌন্দর্য হে ভয়ানক’, ‘বাঘের বিষন্ন দিন’, ‘অন্ধকারে মুগ্ধ’ প্রভৃতি। সুকুমার রায় সাহিত্য পদকসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন ফারুক মাহমুদ। অন্যদিন-এর পাঠকদের জন্য প্রকাশ হলো তাঁর ৩টি কবিতা। 

 

পুণ্যশান্তি

 

বারুদের স্তূপাকার গান যুদ্ধমোড়লের মুখে

অস্ত্রঘরে আমাদের বসবাস ভূয়সী সুখের

বোমারু বিমানগুলো ঢেকে দেয় গানের আকাশ

মুছে যায়- ইচ্ছেরঙে যত ছবি হয়েছিল আঁকা

 

আঙুল বাঁকালে তবে পাত্র থেকে ঘৃত উঠে আসে

তখনো চাটুচালাকি, রাজত্বটা সর্ব সর্বনাশের

পায়ে পায়ে মৃত্যু ঘোরে- বধিরতা বিষের গর্জন;

পরিষেবা থেমে গেছে, পদে পদে স্তূপাকার বর্জ্য

 

হিসেবের সব খাতা গোলমেলে। কোলাহলজাত

ঘুরপথে কেন যাবে! তখন তো দূরত্বপাথর

সোজা রেখা এঁকে দাও, সুস্থ হবে দগ্ধক্ষতক্ষতি

নির্ভয় সরণি হবে- চলাচল সহজ গতির...

 

পাখিদের ঘরকন্না, খ্যাতি আছে সহিষ্ণু গাছের

চলে এসো- পুণ্যশান্তি- অবারিত প্রেম জেগে আছে

 

 

ডাল

 

কোনো-এক রাত্রিঝড়ে ভাঙতে ভাঙতে বেঁচে গেলাম রে!

 

অন্যদিন, সিনেমার প্রতিনায়কের

বিকট হাসির মতো ক্রুদ্ধ কুড়ালের

এককোপে কেটে নিল আমাদের ছোট সহোদর

গোঙানির শব্দ ওঠে¬ ‘দাদাভাই, আমাকে তুমি বাঁচিয়ে রাখো’

 

দু’হাতে ঠেকিয়ে দিই ছোটো-বড়ো ঝড়ো উপদ্রব

নিজেদের শুশ্রুষায় সেরে ওঠে আমাদের আহত শরীর

এত এতকিছু, তবু-ও তো

সানন্দে ফুটিয় যাই পুষ্পহাসিগন্ধনিবেদন

ছায়া হয়ে ঝরে থাকি, বাতাসের নৃত্যছন্দদোলা

 

যেদিন শুকিয়ে যাব, বাঁচার ‘নব আনন্দে’ থেকে যেতে চাই

আমার নিরক্ত হাড় হয় যদি নিরন্নের চুলার আগুন

অপূর্ব সৌভাগ্য হবে। জ্বলেপুড়ে ছাই হতে হতে

সন্ধ্যার আলোর মতো শেষবার, চোখ ভ'রে দেখে নেওয়া যাবে-

 কতটা উজ্জ্বল হয় ক্ষুধাক্লান্ত, রান্নারত মানুষের মুখ

 

 

শেষপর্যন্ত এটি একটি প্রেমের কবিতা

 

আজন্ম আমার এই দুরারোগ্য ব্যাধি- ঘাড় নোয়াতে পারি না

যত বলি: হে প্রত্যঙ্গ, গৎবাঁধা মানুষের মতো

                                      নত হয়ে থাকো

করজোড় হও, রপ্ত করো

প্রভুর পায়ের কাছে বসে থাকা কুকুরের অর্থহীন ভাষা

 

উল্টো, ও-কে দেখি-

নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মতো

অনেক অজস্র বেশি শক্ত হয়ে আছে

 

শৈশবের স্মৃতি:

অসমাপ্ত ঘুম আর কুয়াশার মশারি সরিয়ে

                 ছুটে গেছি সকালের শিউলি-তলায়

আমার-যে প্রিয় পড়শিনি-

কুড়িয়ে ভরেছে ডালি, চোখ ভরা হাসি

বোকাটে, বিষন্ন আমি- ফিরেছি পুষ্পশূন্য হাতে

 

যৌবনের নানা স্তরে এসে

দেখেছি- ছড়িয়ে আছে বিত্ত শক্তি ক্ষমতার মাহার্ঘ মোহর

ভোরের বৃষ্টির মতো সহজ আনন্দে

                            একটু নুয়ে কুড়ানো যেত...

                ভয় ছিল- ঘাড় যদি বাঁকা হয়ে যায়!

 

একমাত্র ব্যতিক্রম হলো-

‘পাখির নীড়ের মতো’ চোখ যার, সেই চোখে নয়

স্থায়ী চাকরির মতো ওর প্রফুল্ল পায়ের দিকে নুয়ে বসে চেয়ে হেসে থেকে

কেটে গেল দুজনের একফালি জয়শ্রী জীবন

Leave a Reply

Your identity will not be published.