বাংলাদেশের প্রথম নারী চলচ্চিত্রকার রেবেকা। এই অভিনেত্রী পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন ১৯৭০ সালে। ছবির নাম ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’। পরে অবশ্য তিনি আর কোনো চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন নি।
এরপর পরিচালক হিসেবে আবির্ভাব ঘটে স্বনামধন্য অভিনেত্রী রোজীর। ছবির নাম ‘আশা নিরাশা’ (১৯৮৬)। কিন্তু তার ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সফল না হওয়ায় তিনি আর দ্বিতীয় ছবি নির্মাণ করেন নি।
রোজীর পরে পরিচালনায় আসেন আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুজাতা। তার পরিচালিত ছবির নাম ‘অর্পণ’ (১৯৮৮)। ছবিটি ব্যবসায়িক কিংবা শৈল্পিক, কোনো দিক থেকেই সফল হয় নি। আর কোনো ছবিও সুজাতা পরিচালনা করেন নি।
১৯৯৯ সালে পরিচালনার খাতায় নাম লেখান অভিনেত্রী সুচন্দা। তার অভিষেক চলচ্চিত্র ‘সবুজ কোট কালো চশমা’। ছবিতে একটি বাস্তব সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে। ব্যবসায়িকভাবেও ছবিটি সফল ছিল।...সুচন্দার দ্বিতীয় ছবি ‘হাজার বছর ধরে’। এটি সুচন্দার প্রয়াত স্বামী জহির রায়হানের বিখ্যাত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত। এখানে চলচ্চিত্রকার হিসেবে সুচন্দার উত্তোরণ ঘটেছে।
আরেক নারী চলচ্চিত্রকার নারগিস আক্তার। দেশীয় চলচ্চিত্রে তার কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকলেও পূর্বসূরিদের থেকে তিনি অনেক বেশি দক্ষ। চলচ্চিত্র মাধ্যমটিতে তার দখল তুলনামূলকভাবে বেশি। কয়েকটি টেলিফিল্ম নির্মাণের পর তিনি নির্মাণ করেন পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র ‘মেঘলা আকাশ’। এইডসকে ঘিরে বাংলাদেশের প্রথম ছবি। ছবিটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। এর পরে নারগিস আক্তার ‘চার সতীনের ঘর’সহ আরও কয়েকটি ছবি নির্মাণ করেছেন।
সাংবাদিক-লেখক শামীম আক্তার প্রথম ছবি ‘সে’। স্বল্পদৈর্ঘ্যরে এই ছবিটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন প্রয়াত তারেক মাসুদের সঙ্গে। অতঃপর শাহীন আখতার ও মকবুল চৌধুরীর সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করেন প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘গ্রহণকাল’। এখানে ফতোয়াবাজদের শিকার ‘নূরজাহান’সহ কয়েকজন নারীর মর্মন্তুদ পরিণতি দেখানো হয়েছিল।
১৯৯৯ সালে শামীম আক্তার এককভাবে নির্মাণ করেন ‘ইতিহাস কন্যা’। এখানে বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুর সমস্যাকে তুলে ধরা হয়েছে। শামীম আক্তারের আরেকটি ছবি ‘শিলালিপি’। এটি ১৯৭১ সালে নিহত সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের জীবনকে ঘিরে নির্মিত। কয়েক বছর আগে মুক্তি পেয়েছে শামীমের আরেকটি ছবি ‘রিনা ব্রাউন’।
প্রয়াত চলচ্চিত্রাভিনেত্রী কবরী, তার পরিচালিত প্রথম ছবি হচ্ছে একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্র। স্বল্পদৈর্ঘ্যরে এই ছবিটির পরে কবরী নির্মাণ করেছিলেন পূর্ণদৈর্ঘ্যরে প্রথম চলচ্চিত্র ‘আয়না’। ছবিটি সুধীজনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তার দ্বিতীয় ও সর্বশেষ ছবি ‘এই তুমি সেই তুমি’ এখনো মুক্তি পায় নি।
একজন মেধাবী চলচ্চিত্রকার শাহনেওয়াজ কাকলী। তার প্রথম ছবি ‘উত্তরের সুর’। এখানে দারিদ্র্য ও ক্ষুধার মর্মান্তিক রূপ ফুটে উঠেছে। ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। কাকলীর আরেকটি ছবি ‘নদীজন’। এটিও চমৎকার একটি ছবি। অবশ্য তার ‘জলরঙ’ ছবিটি এখনো মুক্তি পায় নি। এই ছবিতে একটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রয়াত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক।
মেধাবী আরেক চলচ্চিত্রকার রুবাইয়াত হোসেন। তিনি ‘মেহেরজান’ এবং ‘আন্ডার কন্সট্রাকশন’ নির্মাণ করে নিজের জাত চিনিয়েছেন। দেশ-বিদেশে ছবি দুটি খুবই প্রশংসিত হয়েছে।
প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল নাম শবনম ফেরদৌসী। তার নির্মিত ‘বিষকাব্য’ ও ‘জন্মসাথি’ প্রশংসিত ও পুরস্কৃত হয়েছে।
এ ছাড়া মৌসুমী (কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, মেহের নিগার), সামিয়া জামান (রানী কুঠিরের বাকি ইতিহাস, আকাশ কত দূরে), মেহের আফরোজ শাওন (কৃষ্ণপক্ষ), রওশন আরা নীপা (মহুয়া সুন্দরী), গীতালী হাসান (প্রিয়া তুমি সুখী হও), আফসানা মিমি (রান), তানিয়া আহমেদ (ভালোবাসা এমনই হয়) এবং চয়নিকা চৌধুরীও (বিশ্বসুন্দরী) চলচ্চিত্রকার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। এই তালিকায় কিছুদিন আগে নাম লিখিয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোজিনা। অনুদান পাওয়া তার ছবির নাম ‘ফিরে দেখা’। সম্প্রতি আরেকটি নাম যুক্ত হয়েছে, তিনি অরুণা বিশ্বাস।
অরুণা বিশ্বাসের অভিষেক চলচ্চিত্র ‘অসম্ভব’ একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র। সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এ ছবিটির প্রথম লটের শুটিং সম্প্রতি শেষ হয়েছে। লোকেশন ছিল মানিকগঞ্জের জাবরা গ্রাম। এখন ঢাকায় শুটিং হবে দ্বিতীয় লটের।
‘অসম্ভব’-এ তিন জোড়া জুটি থাকছে। অরুণা বিশ্বাস (কাজল) ও শতাব্দী ওয়াদুদ (সুমন), শাহেদ শরীফ খান (শান্ত) ও স্বাগতা (পুষ্পিতা) এবং সোহানা সাবা (রেখা) ও আব্দুন নূর (সাগর)। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র, বীর প্রতীক আফজাল চৌধুরীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন আবুল হায়াত। আর নিজের চরিত্রে নিজেই অভিনয় করছেন যাত্রা সম্রাজ্ঞী জ্যোৎস্না বিশ্বাস।
পরিচালক অরুণা বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘অসম্ভব’ একটি পারিবারিক চলচ্চিত্র। পাশাপাশি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধও এখানে মূর্ত হয়ে উঠবে। তিনি এই ছবিটিকে উৎসর্গ করেছেন তার চলচ্চিত্র-গুরু নায়করাজ রাজ্জাককে।
Leave a Reply
Your identity will not be published.