রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিল্প-সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রে স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল। চলচ্চিত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। অবশ্য এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। চলচ্চিত্রের শুটিং যেমন হচ্ছে তেমনই নতুন ছবিও মুক্তি পাচ্ছে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের জন্য খুশির খবর হচ্ছে, ১৫ নভেম্বর মুক্তি পাচ্ছে শাকিব খান অভিনীত ‘দরদ’। বলা হচ্ছে, এটি প্রথম সিনেমা, যেখানে বিনিয়োগ করেছেন বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বলিউডের বিনিয়োগকারীরা। এটিই বাংলাদেশের প্রথম প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র।
অনন্য মামুন পরিচালিত এই ছবির মাধ্যমেই এ দেশের চলচ্চিত্রশিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াবে— এমনটিই প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কেননা শাকিব খান আমজনতার তারকা। এ ছাড়া গত বছর তার ‘তুফান’ মুক্তির পর দেখা গিয়েছিল, মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের দর্শকেরাও প্রেক্ষাগৃহে ভিড় জমিয়েছে। ছবিটির নির্মাণশৈলীও সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
কী থাকছে শাকিবের ‘দরদ’-এ? প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র হিসেবে এর নায়িকা হয়েছেন বলিউডের সোনাল চৌহান। তাকে নিশ্চয় চলচ্চিত্রপ্রেমীরা চিনেন। বলিউডের ‘জান্নাত’ সিনেমায় ইমরান হাশমীর বিপরীতে তাঁর অভিনয় এখনো তাদের মনে গেঁথে আছে। এতে আরও অভিনয় করেছেন পায়েল সরকার, লুৎফর রহমান, প্রান্তিকা দাস, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, রাজেশ শর্মা, দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায়, এলিনা শাম্মী, ইমতু রাতিশ, রাহুল দেব, রিও, সাফা মারিয়া, আমির সিরাজী এবং জেসিয়া ইসলাম (অতিথি শিল্পী হিসেবে)।
ছবিতে দেখা যাবে— বারানসী শহরে হঠাৎ একের পর এক খুন হচ্ছে। সমাজের প্রথম সারির ব্যক্তিরাই এই খুনের শিকার হচ্ছে। বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এভাবে একের পর এক খুন হওয়ার পর পুলিশ প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। শুরু হয় পুলিশের তদন্ত। আর এই তদন্তে উঠে আসে দুলু মিয়ার নাম। দুলু মিয়া অটোচালক। সে-ই কি সিরিয়াল কিলার?
দুলু মিয়ার চরিত্রেই অভিনয় করেছেন শাকিব খান। জানা গেছে, চরিত্রটি বেশ রহস্যময়। তাকে পর্দায় দেখে দর্শকদের কখনো মনে হবে বোকা, কখনো পাগল, কখনো প্রেমিক আবার কখনো খুনি। কেন দুলু মিয়ারূপী শাকিব খান বারানসী শহরের বিশিষ্ট লোকদের একের পর এক খুন করে? কেন তাদের প্রতি দুলু মিয়ার আক্রোশ? তার কী ক্ষতি করেছে বারানসীর বিশিষ্ট মানুষেরা? তবে এ বিষয়ে আঁচ পাওয়া যায় টিজারে ব্যবহার করা শাকিবের দুটি সংলাপে। ‘যে আমার ভালোবাসার বুকে হাসি ফুটাইবো, সে আমার দোস্ত। আর যে হাসি কাইড়া নিব, সে আমার জানি দুশমন’ ও ‘আমি দুলু মিয়া, আমার বউয়ের মুখে হাসি দেখার জন্য আমি হাজারটা খুন করতে পারি।’ ধারণা করা হচ্ছে, সোনালের সঙ্গে ঘটে যাওয়া কোনো খারাপ ঘটনার জেরে রাতারাতি বদলে যায় নায়ক। অতি সাধারণ মানুষটি মেতে ওঠে প্রতিশোধের খেলায়। হাসতে হাসতে একের পর এক খুন করে। ‘দরদ-এ শাকিবের ভয়ংকর চরিত্রটি সাজানো হয়েছে কিছুটা জোকারের স্টাইলে। একই সঙ্গে মজার ও নিষ্ঠুর। এ চরিত্রের বর্ণনা দিতে তাই ব্যবহার করা হয়েছে অন্য একটি চরিত্রের আরেকটি সংলাপ, ‘সেদিন ভেবেছিলাম, তুই জোকার; কিন্তু এখন দেখছি, তুই হচ্ছিস জোকারবার্গ।’
তবে রহস্য, সাসপেন্সের পাশাপাশি দর্শকেরা এ ছবিতে রোমান্সও খুঁজে পাবেন। দরদভরা ভালোবাসায় আপ্লুত হবেন। শাকিব খান ও সোনাল চৌহানের রসায়ন তাদের মুগ্ধ করবে। তাই তো ছবিটি দেখার পর চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি ও চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ডের অন্যতম সদস্য কাজী হায়াৎ বলেছেন, “কোনো ধরনের কাটাছেঁড়া ছাড়াই ‘দরদ’ পাস করা হয়েছে। এটি প্রেমের ছবি, দেখে আমার কাছে ভালো লেগেছে। এটিকে আমি ভালো ছবি বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করব।”
‘দরদ’ সিনেমাটি হিন্দি, বাংলাসহ চারটি ভাষায় নির্মিত হয়েছে। সংগত কারণেই ছবির গানগুলোও একাধিক ভাষায় শোনা যাবে। জানা গেছে, সিনেমায় সংগীত পরিচালক ও হিন্দি ভার্সনের কথা লিখেছেন আরাফাত মেহমুদ এবং বাংলা ভার্সনের কথা লিখেছেন আসিফ ইকবাল, জাহিদ আকবর ও সোমেশ্বর অলি। গানগুলোতে কণ্ঠ দিয়েছেন বালাম, কোনাল, ইমরান, মোহাম্মদ ইরফান, নাকাষ আজিজ, নোবেল প্রমুখ।
Leave a Reply
Your identity will not be published.