আন্ডারওয়ার্ল্ডের মানুষদের সবাই সমঝে চলেন। পর্দার মারকুটে নায়ক পর্যন্ত তাদের কাছে অসহায়। অথচ নিরীহ ‘ইমেজ’-এর বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা দারুণ সাহস দেখিয়েছিলেন এইসব মানুষের বিরুদ্ধে!
চলচ্চিত্রের সঙ্গে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সম্পর্ক নতুন কিছু নয়। পৃথিবীর সব চলচ্চিত্রশিল্পেই কম-বেশি অন্ধকার জগতের মানুষদের পদচারণা রয়েছে। চলচ্চিত্রে বিনিয়োগ করে কালো টাকা সাদা করা, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, অপহরণ, খুনসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে তারা জড়িত। বলিউডে এই জগতের মানুষদের দাপট সবসময়ই রয়েছে। বিশেষত গত শতকের সত্তর ও আশির দশকে তারা ছিল অপ্রতিরোধ্য। তাদের জীবনের ছায়াও রয়েছে কোনো কোনো চলচ্চিত্রের কাহিনিতে।
অমিতাভ বচ্চন অভিনীত ‘মুকাদ্দার কা সিকান্দার’-এ হাজী মাস্তানের জীবনের ছায়া রয়েছে বলে শোনা যায়। আর নিকট অতীতে নির্মিত ‘ওয়ান আপ্নস এ টাইম ইন মুম্বাই’-এ তো হাজী মাস্তান ও দাউদ ইব্রাহিমের চরিত্রে খোলাখুলি অভিনয় করেছিলেন যথাক্রমে অজয় দেবগণ ও ইমরান হাশমী। এ ছাড়া ‘ডন’, ‘বাস্তব’, ‘কোম্পানি’, ‘মাফিয়া’সহ নানা ছবিতেই আন্ডারওয়ার্ল্ডের মানুষদের জীবনের গল্প ফুটে উঠেছে। বলিউডের কোনো কোনো তারকা, প্রযোজক ও পরিচালকের সঙ্গেও আন্ডারওয়ার্ল্ডের যোগাযোগ রয়েছে। তাদেরকে কেউ সাধারণত ঘাঁটান না। এড়িয়ে চলেন অথবা সতর্ক থাকেন। মুখ বুজে সহ্যও করেন নানা অন্যায় দাবি ও অত্যাচার। অথচ বড়পর্দায় পাশের বাড়ির দুষ্টুমিষ্টি মেয়ের মতো উচ্ছল, আদুরে চরিত্রে যাকে দেখা গেছে, সেই বলিউড অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা নাকি এক আন্ডারওয়ার্ল্ড ডনের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন! সেই ডন ছোটা শাকিল।
প্রীতি যে ছোটা শাকিলের মতো ডনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেন, তা নাকি অনেকেই আঁচ করতে পারেন নি। তবে জীবনের প্রথম বলিউড ফিল্মেই যিনি কুমারী মায়ের চরিত্রে অভিনয় করে ‘ঝুঁকি’ নিয়েছেন, তাকে আর পাঁচটা নায়িকার সঙ্গে এক সারিতে অনেকেই রাখতে চান না।
সম্প্রতি ভারতীয় পত্রিকা আনন্দবাজারের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০১ সালে ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে’ ছবির শুটিং চলছিল। এই ছবিতে সালমান খানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন প্রীতি। পরিচালক জুটি আব্বাস-মস্তানের সেই ফিল্মের কাজ চলাকালীনই প্রীতির কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে হুমকি ফোন আসে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রীতির দাবি, অচেনা নম্বর থেকে ফোন করে তার কাছ থেকে ৫০ লাখের বেশি রুপি চাওয়া হয়। মুম্বাইয়ের আদালতে দাঁড়িয়ে এ দাবি করেছিলেন তিনি। ছোটা শাকিলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ ছিল তার। আদালতে ছোটা শাকিলসহ মাফিয়াদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যও দেন প্রীতি।
ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী প্রীতি এক সময় স্নাতকোত্তর পর্বে ক্রিমিনাল সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। এ কারণে প্রীতি মাফিয়াদের হুমকি পাওয়ার পর চুপচাপ বসে থাকেন নি। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে খোলাখুলি কথাও বলেন প্রীতি। তবে তা ঘটনার ১৭ বছর পর। ও্রই সময় কী হয়েছিল, কোন পরিস্থিতিতে আদালতের দ্বারস্থ হন, তা-ও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন তিনি।
জানা যায়, ছোটা শাকিলের ভয়ে পালিয়েছিলেন প্রীতির সিনেমার লোকজন। বলিউড পাড়ায় এ জল্পনাও ছড়িয়েছিল যে ‘চোরি চোরি চুপকে চুপকে’ সিনেমার প্রযোজক নাজিম রিজভি এবং লগ্নিকারী ভরত শাহের মাথায় নাকি গ্যাংস্টার ছোটা শাকিলের হাত ছিল।
অবশ্য ছোটা শাকিলের বিরুদ্ধে প্রীতি আদালতে ছুটলেও তেমনটা করেন নি অমিতাভ বচ্চন, সালমান খান, রাকেশ রোশন ও মহেশ মঞ্জরেকর। গুঞ্জন রয়েছে, তারাও ছোটা শাকিলের হুমকি-ফোন পেয়েছিলেন। তবে আদালতে বিবৃতি দেওয়ার ঠিক আগেই পিছু হঠেন তারা।
তারকাদের নিশ্চুপ থাকা নিয়েও কথা বলেছেন প্রীতি। তিনি বলেছিলেন, ‘সকলেই যদি পিছিয়ে আসবেন জানা থাকলে আমিও বোধ হয় মুখ খুলতাম না।’ প্রীতি আরও বলেন, ‘হুমকি পাওয়ার পর জীবনে সবচেয়ে বেশি ভয় পেয়েছিলাম। আমার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। কারণ আদালতে সাক্ষী দেওয়ার মিনিট দশেকের মধ্যেই তা টিভি মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসে গিয়েছিল।’
প্রীতির সাহস দেখে বাহবা দিয়েছিলেন অনেকেই। ঘটনার ১৭ বছর পর প্রীতি বলেছিলেন, ‘ওরা আমাকে ভয় দেখালেও ঠিকঠাক ছিলাম। কিন্তু এক সময় আমাকে গালিগালাজ করতে শুরু করেছিল। তবে লোকে আমাকে গালিগালাজ করবে আর আমি চুপ করে বসে থাকব, সেটা অসহ্য।’
তারকা হলেও তো প্রীতির মতো এত সাহস দেখাতে পারেন নি অমিতাভ-সালমানেরা। সে জবাবও দিয়েছেন প্রীতি। তিনি বলেন, ‘সেই সময় তো আমার কোনো পিছুটান ছিল না। সংসার শুরু করি নি। বাচ্চাকাচ্চাও নেই। ফলে সাহস ছিল।’
Leave a Reply
Your identity will not be published.