হাসানাত লোকমানের জন্ম ১৩ অগ্রহায়ণ, কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলায়। পঞ্চদশ ব্যাচে বিসিএস (প্রশাসন) পরিবারের সদস্য। বর্তমানে সচিব, বাংলা একাডেমি। তাঁর কবিতায় আবহমান বাংলার রূপ মূর্ত হয়ে ওঠে। দেশ ও নারীর প্রতি ভালোবাসাও বাঙ্ময়। অবশ্য শুধু দেশপ্রেম ও নারীপ্রেম নয়, কখনো কখনো সৃষ্টিকর্তার প্রতি আত্মনিবেদনের এক অনবদ্য শিল্পিত প্রকাশও লক্ষ করা যায় তাঁর কবিতায়।...এই কবি সহজ-সরল ভাষায় তাঁর শব্দপ্রতিমাকে গড়ে তোলেন অথচ তার অনুপম সৌন্দর্য পাঠকদের হৃদয় স্পর্শ করে। আলোড়িত করে তাদের।...তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- দাঁড়াবো ভোরের সূর্য ছুঁয়ে, আলোর নদী জলের আকাশ, অক্ষরের নক্ষত্র দীপাবলি, জোছনার জলে নীল বসন্ত, প্রাণপতনের শব্দাবলী, প্রেমের প্রজ্ঞাপন, রাসেলের জন্য ভালোবাসা।
স্বপ্নভাঙা ঝড়
আমার চাওয়া প্রাণ যমুনা শ্যামল মাটির ঘর
তুই দেখালি ঢেউয়ের তুফান স্বপ্নভাঙা ঝড়।
চেয়েছিলাম এক পেয়ালা কুসুম গরম প্রেম
তুই জড়ালি চাঁদের চাদর কাঁকন হাতে হেম।
চাইলাম আমি তোর কাছে স্নেহসবুজ ছায়া
তুই দেখালি হিজল তমাল বনবীথিকার মায়া।
তোর পালঙ্কে আমার চাওয়া একটুখানি স্থান
মেঘের সাথে রোদের খেলা মিষ্টি অভিমান।
আমার চাওয়া তোর উঠোনে জীবন করি চাষ
সুখে দুঃখে সাথে থাকি স্বপ্ন বারো মাস।
যদি ভালোবাসা পাই
যদি ভালোবাসা পাই
নদীর বুকে হব না চৈত্রের শূন্যতা
অনাহারী পথচারী হয়ে ধানের গোলার পাশে কাটাবো না রাত
তোমার তৃষ্ণায় বিশুদ্ধ জল হব স্বচ্ছ সলিলা।
যদি ভালোবাসা পাই
যৌবনা প্রকৃতির মতো শ্রাবণের বৃষ্টিতে হব লাবণ্যময়
বিপন্ন মনের বনে নেব নির্বিকার সুখের সন্যাস
দেব বৃক্ষরাজিরে অবাধ বেড়ে ওঠার নিরাপদ নিশ্চয়তা
আহত পশু পাখিদের জন্য বানাব একটি সমন্বিত আধুনিক হাসপাতাল।
যদি ভালোবাসা পাই
হব অবিরাম বহতা নদী
প্রেমের প্রবাহে শীতল করব হৃদয়ের অশান্ত কূল
লাউয়ের মতো আমার বুকের মাচানে
আগলে রাখবো তোমাকে সারাটা জীবন
প্রয়োজনে নীলকণ্ঠ হয়ে গরলকে অমৃত ভেবে করব পান।
রেশমি রুমাল
ভালোবাসার মায়াবী ঘূর্ণিতে চূর্ণ হয়েছে তাবৎ কষ্টের দিন,
সমূহ সর্বনাশের আগেই তুমি এলে বলে
দুলে উঠল পৃথিবী আমার
পুষ্প সৌরভে শোভিত হলো আমার আঙিনা, বিশ্বসংসার!
আমার আনন্দ আজ উপচানো দুধের মতো...
এই দেখো, অন্তর অঞ্জলি নিয়ে তোমার ভালোবাসার সমুদ্রতীরে
দাঁড়িয়েছি ভিক্ষুক হয়ে,
মরুর মাটির মতো পিপাসায় মরেছি
কতোদিন ধরে
পিপাসা মেটাও...
বুকের দুর্ভিক্ষ মুছে দাও রেশমি
রুমালে।
এই তো আমি-
আমার আমিত্ব ভুলে
সবকিছু নিয়ে তোমার কাছে... তুমি নাও,
যেভাবে যেমন চাও সব নাও,
এসো ভালোবাসার জলে সাঁতার কাটি, শুদ্ধ হই
মুছে ফেলি সব অপ্রয়োজন, এসো বাকিটা জীবন
কেবল ভালোবাসার ঘরে বাস করি।
মেঘ
মেঘ তুমি রিমঝিম চঞ্চল শ্রাবণকন্যা
শাল সেগুনের বনে উড়ে উড়ে ঝরো
তোমার উতল আঁচলে আমি কদম হব
জলোৎসবে ভিজে ভিজে হতে চাই অপাপবিদ্ধ যুবক,
তোমার স্পর্শে ফুলের শুচিতায় মূর্ত করো
পৃথিবীর রংধনু দ্যুতির আঙুল ধরে
পৌঁছাতে চাই সবুজ কোনো গাঁয়ে।
মেঘ তুমি হও পুণ্যস্নাত নিঝুম দিনের সুখ
ছেলেবেলায় বৃষ্টিতে আমের বদলে কুড়িয়েছি আনন্দ
সেইসব দিনের আঙিনায় এখনো বাজে পাতার বাঁশি,
চরের মতো যে বেদনা জেগে থাকে
তার কী নাম হতে পারে জানি না-
তবে আগুন হলেই যুতসই নাম হবে হয়তো
কেননা প্রতিদিন আমি বুকের স্পর্শে সিগ্রেট জ্বালাই।
তৃষ্ণাও হতে পারে
তৃষ্ণা তো কখনো কখনো ভালোবাসার মতো জ্বলে
হৃষ্টপুষ্ট দুঃখগুলোর দু’চোখ মুছে ছড়ায় গাঢ় নীল।
ও মেঘ, তুমি আসো প্রেমোল্লাসে
অঝোরে ভাসাও, হয়ে যাই জোয়ার গাঙের নাও।
Leave a Reply
Your identity will not be published.