হাসান হাফিজের গুচ্ছ কবিতা

হাসান হাফিজের গুচ্ছ কবিতা

হাসান হাফিজের জন্ম ১৫ অক্টোবর, ১৯৫৫, সোনারগাঁওয়ের এলাহি নগরে। যখন ছিলেন স্কুলছাত্র, প্রথম ছড়া ছাপা হয় ইত্তেফাকের কচি কাঁচার আসরে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় এম.এ. (ডাবল)। দীর্ঘ চার দশক ধরে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ১৪০। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: অবাধ্য অর্জুন (১৯৮৬); তুমি বধূ অবিবাহের (১৯৮৭); হাসান হাফিজের প্রেমের কবিতা (১৯৯৪); তৃষ্ণার তানপুরা (১৯৯৬); না ওড়ে না পোড়ে প্রেম (১৯৯৭); কনে দেখা আলোয় অহং; নির্বাচিত ৩০০ কবিতা; ছন্দে ছড়ায় ঈশপ; সাতটা কাকে দাড় বায়। পেয়েছেন বহু পুরস্কার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর স্বর্ণপদক, ডাকসু সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, এম নূরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার। এখানে হাসান হাফিজের একগুচ্ছ কবিতা তুলে ধরা হলো:

 

পরবাসে আশাই ভরসা

কাঙাল করেছো কারে

নিঃস্ব করতে চেয়েছিলে যারে

নির্লিপ্ত সে, কিছুই ছোঁয় না তারে

উল্টো তুমি নিজেই শিকার

কীভাবে তা করবে অস্বীকার!

ব্রহ্মচর্য সকলের ধাত নয়

এই তত্ত্ব সুনিশ্চয়

রয়েছে সে কাঙালের জানা

খুঁজে ফিরছি মোকাম ঠিকানা

মিলবে হয়তো কোনোদিন

শোধের অযোগ্য ঋণ

ঘাই মারবে খুঁচিয়ে বাড়াবে ক্ষত

অহর্নিশি অবিরত

এই সত্য ভালো করে জানি

জেনেছি বলেই হচ্ছি অবনত নশ্বর ও ভঙ্গুর

অভিমানই সূত্র বিচ্ছেদের

কে জানে সত্যই হয়তো মানে নাই এর

জলের ঘূর্ণনে তাই ছিন্ন পরবাস

আশা তুমি জেগে থাকো যতক্ষণ শ্বাস!

সায়াহ্ন সমীপে পৌঁছে

আপন ভাবছো কাকে? তরঙ্গিত এ সাগর

তোমার স্বজন নয়, তোমার শোকার্ত চোখ

মুছিয়ে দেবে না কেউ, ত্রিভুবনে মিত্র কেউ নাই।

চারিদিকে জাগরূক নৃত্যশীলা পিপাসা রয়েছে,

পরম্পরা আছে তার, ব্রহ্মতেজও আছে,

সে আগুনে পুড়ে তুমি হতে পারবে আরো নিঃস্ব

আরো একলা মুঠো মুঠো ছাই,

ছাইয়ের সঙ্গেও কারো শত্রুতা হয়

এমন দৃষ্টান্ত খুঁজে ত্রিভুবনে

কোথাও না পাই।

একাকিত্ব করো উদ্যাপন

বলো মনকে এই সন্ধিক্ষণ

দীর্ঘায়িত হবে আরো, বৃদ্ধি পাবে ঋণ

খুব দ্রুত মুক্তি নাই, সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ

পথ চলছো নির্বান্ধব, মানুষেরা এরকমই একা

নিজের ভিতরবাগে ভাঙচুর নিত্যদিন নিয়তি যা লেখা

বিরুদ্ধে কী করে যাবে, আয়ু আর প্রকৃতই কতটুকু আছে?

ঋণ বাড়ছে তিলে তিলে পৌঁছে গেলে সায়াহ্নের কাছে

রাত্রিদিন একাকার, সমাজ সংসার ঝাপসা সময় ফুরায়

আপন ঘরের সংজ্ঞা উপলব্ধি ভোঁতা বিদ্ধ ধুলোয় গড়ায়।

 

নির্বাণের ঠিকানা সন্ধান

গাছকে দুঃখের কথা যদি বলো,

সহমর্মী বন্ধু হয়ে বুঝতে পারবে গাছ

সবুজ পত্রালি সেই দুঃখ শুষে নেবে

দুঃখ তো বিষাক্ত দাগ, কার্বনেরই

অন্যবিধ নাম

 

তাই সব দুঃখরাশি উজাড় উপুড় করে

অপাত্রেই সব ঢাললাম,

এইবার বৃক্ষলতা তরু তোমরা

শুরু করো কাজ

আমি চাইছি

নির্বাণের ঠিকানা সাকিন

বড়ো হচ্ছে কপালের ভাঁজ,

ক্ষতি যা-ই হলো হোক

পরোয়া করি না

গাছপালা তোমাদের অস্তিত্ব সুরভি

নৈকট্যের সঙ্গসুধা দিলে

দুঃখজয় কঠিন কিছু তো নয়

স্বীকার করবে ওরা অনিবার্য ক্ষতি পরাজয়

 

সর্বহারার আহাজারি!

চিনব কারে এই পাথারে

নিজকে চিনাই হইল না

গিয়াছে সব মিছা উৎসব

সেই কথা আর বইলো না।

কে অচেনা কে বা চেনা

চুকলো না সেই লেনাদেনা

অভিমানী মুখ ফিরাইল

কোনো কথাই কইল না

আমি নিঃস্ব মধুর বিশ্ব

তোমরা মজায় দেখছ দৃশ্য

সয় সম্পত্তি বলতে আমার

একটি কণাও রইল না।

Leave a Reply

Your identity will not be published.