নওশাদ জামিল-এর চারটি কবিতা

নওশাদ জামিল-এর চারটি কবিতা

সবুজ রক্ত

চুপচাপ শুয়ে আছি পাহাড়-টিলায়। চারদিকে

সহজ সবুজ ঘন চা-বাগান, মৃদু আলোড়ন।

কোথা থেকে এল ঢেউ? ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে

খিলখিল করে হাসে। বলে, ‘বাবু মেরা সাথ যাবে’?

হাসি শুধু হাসি নয়, বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে মদ

কটুগন্ধ। তিতাস্বাদ। তারাপুর পাহাড়চূড়ায়

কে তবে আমাকে ডাকে? মাটিতে লুটানো এলোচুল

বাগানে ছড়ানো শাড়ি, হাতে হাত রাখি, মুখে মুখ।

 

এ যেন সবুজ রক্ত, যোনীদ্বার থেকে গলে গলে

জ্বালিয়ে রেখেছে লাল মশাল, নিস্তব্ধ চরাচর।

বলি ‘চল ঘরে যাই’। হঠাৎ সে জোরে টান মেরে

আমাকে বলল হেসে: ‘বাবু এ-বাগান মোর ঘর’।

এত হাসি, এত সুখ? সামান্য গিলেই নাচে চাঁদ

আমি নাচি, সে-ও নাচে, কাঁপে পাহাড়ের কালোসাপ!

 

প্রত্নলিপি

তোমার ইশারালিপি পাঠ করি ধীরে

মনে হয়— আমরা ছিলাম মুখোমুখি

গুহার ভেতরে, অগ্নিপরিখার ঘরে

একদিন— নিজেরই গলার স্বর শুনে

বুঝি যে চিৎকারে কেঁপে ওঠে শিলাখণ্ড

দুলে ওঠে প্রত্নত্রস্ত পূর্ণাঙ্গ শরীর 

এতদিন কী দেখেছি— একে একে বলি

গুমোট, দুঃসহ, ভারী সেই নীরবতা।

 

অগ্নিপরিখার ঘরে— দাঁড়াই আবার

দেখি আজ হাওয়ায় দুলছে বনলতা

কাঁপছে উদ্ভিন্ন স্তন তীব্র শিহরণে

একদিন— নিজেরই গলার স্বর শুনে

বুঝি যে বিস্ফারে কেউ চলে যায় দূরে

কেউ থেকে যায়— মুখোমুখি গুহাঘরে।

 

রহস্য নোঙর

গভীর গহনস্রোতে চোখ রেখে বলি

হাতে হাতখানি ধরো— এসো, ঝাঁপ দিই

অতল জলের পিঠে ভাসাব সংসার

পাখায় পাখায় মেলে দেব লীলানাট

হাতটি বাড়াও স্রোতস্বিনী— ভেসে ভেসে

স্বপ্নে-পাওয়া ভেলা নিয়ে যাবে দূরদ্বীপে

হৃদয়বরণ ঘাটে যদি থামে ভেলা

মনে রেখো প্রেম এক রহস্য নোঙর!

 

হৃদমূলে, রক্তস্রোতে কী এক দহন

হাতটি বাড়াও স্রোতস্বিনী— ঝড়জলে

ভেসে ভেসে পাড়ি দেব প্রলয়পিঞ্জর

কোথায় সে দূরদ্বীপ, জলে ভেজা ঘাস

প্রেমের প্রবালদ্বীপে চোখ রেখে বলি

জীবন কি শুধু ভেসে যাওয়া, ডুবে যাওয়া?

 

বৃষ্টি নদী

চোখের কোণে নামল টলোমলো

বৃষ্টি নদী, ভিজল দুইধার

অন্ধকারে কাঁপছে সরোবর

স্তব্ধ হলো হৃদয় পারাবার!

 

বৃষ্টি মুছে আঙুর মেখে ঠোঁটে

নামল ঝড় তোমার সিঁথিজুড়ে

হঠাৎ করে তীব্র ঢেউ আজ

তুফান বেগে আছড়ে পড়ে দূরে।

 

বৃষ্টি দেখে জোরসে দাও টান

আয় রে নদী, ভিজুক চারপাশ

আঁধার রাতে কাঁপছে সরোবর

বুকের কাছে ভাসল রাজহাঁস।

 

অন্ধকারে তোমার ঠোঁটে ঝরে

আর্দ্র মধু, প্রেমের নিরাময়

মুগ্ধ হয়ে উঠল ফুঁসে জল

ভাসল তরি, নাই রে কোনো ভয়! 

 

Leave a Reply

Your identity will not be published.