উনিশশো সত্তরের ষোলই ডিসেম্বর,
আমার পাঁচ বছরের জন্মদিন।
কেকের টুকরো মুখে তুলে দিয়ে
আমার দু’গালে বাবা-মার স্নেহমাখা চুম্বন
আর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ।
সগর্বে আমার ঘোষণা -
“জানো বাবা, জানো মা,
আমি এক থেকে
একশো পর্যন্ত গুণতে পারি, লিখতেও পারি।”
দু’জনের মুখে আনন্দ ছটা -
“এবার তাহলে বয়েসের হিসেব
মাসে নয়, দিনেই রাখবি।”
একটি একটি করে দিন যায়,
সূর্যাস্তের পর
ক্যালেন্ডারের পাতায় লিখি -
এক, দুই, তিন।
এমনি করে - নিরানব্বই।
পঁচিশে মার্চ, উনিশশো একাত্তর -
সূর্যাস্তের পর
আমার উত্তেজনার শেষ নেই -
কাল শেষ হবে একশো গোণা,
আমার বয়েস হবে পাঁচ বছর একশো দিন।
গভীর রাতে যেন বজ্র নিনাদ -
জীবন আর মৃত্যু -
এক হয়ে গেল।
বাবার শেষ আর্ত চিৎকার -
“সাহানা, বিজয়কে দেখো।”
মা আমাকে দেখেছিলেন -
বড়জোর কয়েক সেকেন্ড।
বাবার রক্তমাখা নিষ্প্রাণ দেহের ওপর
আছড়ে পড়লেন মা।
আরো তিনটি বুলেট -
বিজয় অনাথ হয়ে গেলো।
আজ পঁচিশে মার্চ -
দু’হাজার চব্বিশ।
তিপ্পান্ন বছর আগের
সে রাতের ভয়াল স্মৃতি
আজো তাড়িয়ে ফেরে আমায়।
বাবা আর মা -
বিজয় দিয়েছে।
বিজয় লড়ছে,
বিজয় লড়বে -
শকুনের থাবা থেকে
শুদ্ধতাকে বাঁচাতে;
মরণের ছোবল থেকে
জীবণকে বাঁচাতে;
পাশবিকতার নাগপাশ থেকে
মানবিকতাকে বাঁচাতে;
বিকৃতির রাহুগ্রাস থেকে
নতুনকে বাঁচাতে।
বিজয় লড়ে যাবে
মুক্তিযোদ্ধার মতো -
অমিত সাহসে -
নতুনকে সাথে নিয়ে -
কালের নবযাত্রায় -
সমাগত বিজয়ের -
রক্তিম সূর্যোদয়ে।
Leave a Reply
Your identity will not be published.