বিজয় || মাহবুব হাসান সালেহ

বিজয় || মাহবুব হাসান সালেহ

উনিশশো সত্তরের ষোলই ডিসেম্বর,
আমার পাঁচ বছরের জন্মদিন। 
কেকের টুকরো মুখে তুলে দিয়ে
আমার দু’গালে বাবা-মার স্নেহমাখা চুম্বন
আর মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ।

সগর্বে আমার ঘোষণা -
“জানো বাবা, জানো মা,
আমি এক থেকে 
একশো পর্যন্ত গুণতে পারি, লিখতেও পারি।”
দু’জনের মুখে আনন্দ ছটা -
“এবার তাহলে বয়েসের হিসেব 
মাসে নয়, দিনেই রাখবি।”
একটি একটি করে দিন যায়,
সূর্যাস্তের পর
ক্যালেন্ডারের পাতায় লিখি - 
এক, দুই, তিন। 
এমনি করে - নিরানব্বই। 
পঁচিশে মার্চ, উনিশশো একাত্তর - 
সূর্যাস্তের পর 
আমার উত্তেজনার শেষ নেই -
কাল শেষ হবে একশো গোণা,
আমার বয়েস হবে পাঁচ বছর একশো দিন। 

গভীর রাতে যেন বজ্র নিনাদ - 
জীবন আর মৃত্যু - 
এক হয়ে গেল। 
বাবার শেষ আর্ত চিৎকার - 
“সাহানা, বিজয়কে দেখো।”
মা আমাকে দেখেছিলেন -
বড়জোর কয়েক সেকেন্ড। 
বাবার রক্তমাখা নিষ্প্রাণ দেহের ওপর 
আছড়ে পড়লেন মা। 
আরো তিনটি বুলেট - 
বিজয় অনাথ হয়ে গেলো। 

আজ পঁচিশে মার্চ -
দু’হাজার চব্বিশ।
তিপ্পান্ন বছর আগের 
সে রাতের ভয়াল স্মৃতি 
আজো তাড়িয়ে ফেরে আমায়। 

বাবা আর মা -
বিজয় দিয়েছে।
বিজয় লড়ছে,
বিজয় লড়বে -
শকুনের থাবা থেকে 
শুদ্ধতাকে বাঁচাতে;
মরণের ছোবল থেকে 
জীবণকে বাঁচাতে;
পাশবিকতার নাগপাশ থেকে 
মানবিকতাকে বাঁচাতে;
বিকৃতির রাহুগ্রাস থেকে
নতুনকে বাঁচাতে। 

বিজয় লড়ে যাবে
মুক্তিযোদ্ধার মতো - 
অমিত সাহসে -
নতুনকে সাথে নিয়ে -
কালের নবযাত্রায় - 
সমাগত বিজয়ের -
রক্তিম সূর্যোদয়ে।

Leave a Reply

Your identity will not be published.