ঢাকা আর্ট সামিটের ৬ষ্ঠ আসরের শুরু হচ্ছে ৩ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার। প্রথমবারের মতো এবারের সংস্করণে বাংলা প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘বন্যা’। বাংলাদেশ তো বটেই দক্ষিণ এশীয় শিল্পকর্ম প্রদর্শনী বিষয়ক ও চিত্রকলার সবচেয়ে বড় এ আয়োজনটি শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনে।
দেশি ও বিদেশি ১৬০ জনেরও বেশি শিল্পী আয়োজনে অংশ নেবেন। জলবায়ু পরিবর্তন, লৈঙ্গিক সম্পর্ক, বিভিন্ন প্রজন্মের আলোচনা এবারের আসরে গুরুত্ব পাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে সামদানী আর্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া ১২ জন বাংলাদেশী শিল্পীর মাধ্যমে। আয়োজনটি চলবে ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজধানীর জাতীয় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সামিটের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট নাদিয়া সামদানি এবং ট্রাস্টি রাজিব সামদানি।
তারা জানান, ঢাকা আর্ট সামিটের এবারের আয়োজনটি সাজানো হয়েছে মূলত জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে। তরুণদের অগ্রাধিকার দেয়াও অন্যতম উদ্দেশ্য। এবার আর্ট সামিটে যে শিল্পকর্মগুলো আছে সেগুলোর বেশিরভাগই তরুণদের কথা মাথায় রেখেই করা হয়েছে। আর এবারের প্রতিপাদ্য ‘বন্যা’ নামটি দেওয়ার কারণ এটি একটি ছোট মেয়ের নাম। প্রথমে একটা প্রশ্ন এসেছিলো ইংরেজির ফ্লাড-এর প্রতিশব্দ বন্যা হয় যা পাশ্চাত্য দেশে কারও নাম ফ্লাড বা সাইক্লোন রাখা হয় না। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশে এই মানুষের এমন নামকরণ কেন হয়? এর কারণ হলো এই নদীমাতৃক দেশে ‘বন্যা’ শব্দরূপটি কেবলমাত্র একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগই নয় বরং এরচেয়ে বেশি কিছু হওয়ায় কন্যা শিশুর নামও ‘বন্যা’ রাখা হয়। এটা দিয়েই বোঝা যায় বন্যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটি দেয়ার জন্যই এবারের এই আয়োজন। এ ছাড়া এবার যেহেতু তরুণদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে তাই ১৬০ জন শিল্পীর সাথে ৬ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুরাও অংশগ্রহণ করেছে। এটি শুধু একটি প্রদর্শনীই নয়, এটি একটি গবেষণারও জায়গা।
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘এটি অত্যন্ত আনন্দের এবং গৌরবের যে ৬ষ্ঠ বারের মতো আয়োজন শুরু হতে যাচ্ছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় বন্যা। আগে দেখা যেতো যে গুটি কয়েক দেশে বন্যা হতো এখন সারা বিশ্বময় এমনকি মরুভূমির দেশেও হচ্ছে। মূলত সামিটের ভেতর দিয়ে আমরা গ্লোবাল ক্লাইমেটের এই পরিবর্তন বা চ্যালেঞ্জগুলো শিল্প কিভাবে দেখবে বা বিশ্লেষণ করবে সেই ভাবনার যোগান দেয়া। এছাড়া আমাদের শহরটি শিল্পের শহর। ৪০০ বছরের শিল্পের ইতিহাস রয়েছে। এই ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরতেই আমরা এই আর্ট সামিটের এবারের আয়োজন শুরু করতে যাচ্ছি।’
ঢাকা আর্ট সামিটের টাইটেল স্পন্সর গোল্ডেন হার্ভেস্ট এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মোহাম্মদ সাকের শামীম বলেন, ‘আমরা সবসময়ই চেষ্টা করেছি বাংলাদেশের আর্ট কালচারকে বিশ্বের দর্পনে তুলে ধরার জন্য। বাংলাদেশের সংস্কৃতি নিয়েই মূলত আমাদের পথচলা। আর এরই অংশ হিসেবে এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। কারণ আমরা ভেবে দেখেছি দেশের আর্টিস্টদের বিশ্বে পরিচিত করে তোলার যে উদ্যোগ তারা নিয়েছেন তাদের সহযোগী হতে পারলে দেশের উন্নয়নে আরও অবদান রাখতে পারবো।’
আর্ট সামিটের ৬ষ্ঠ আসরে অংশ নেয়া শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন- সুমাইয়া ভালি, এন্টনি গ্রমলি, আসফিকা রহমান, বিনোদবিহারী মুখার্জি, ভাষা চক্রবর্তী, চিত্রপ্রসাদ, ড্যানিয়েল বয়েড, দামাসুস হাচা, ফয়সাল জামান, গণেশ পইনি, গাজালেহ আভারজামানি, হা বিক চুহেন, হাবিবা নওরোজ, জামাল আহমেদ, জয়দেব রোয়াজা, জানি রুসিকা, কবির আহমেদ মাসুম চিশতি, কামরুজ্জামান স্বাধীন, লালা রুখ, লাপডিয়াং সাইয়েম, ম্যারিনা পেরেজ সিমাও, নাবিল আহমেদ, নাজমুন নাহার কেয়া, পল তাবুরেত, রূপালি গুপ্তা ও প্রসাদ শেট্টি, পূর্ণিমা আক্তার, রফিকুন নবী, সাফিউদ্দিন আহমেদ, সাহেজ রাহাল, তানিয়া গোয়েল, ভেরুনিকা হাপচেনকো, ইয়াসমিন জাহান নুপূর, রিজভি হাসান, গনেশ পাইন প্রমুখ।
ঢাকা আর্ট সামিটের যাত্রা ২০১২ সালে শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাঁচবার এই আয়োজনটি সম্পন্ন হয়েছে। সামদানী আর্ট ফাউন্ডেশনের লক্ষ্য বাংলাদেশের সমসাময়িক শিল্পকলার সাথে দর্শকদের গভীর সংযোগ স্থাপন করার পাশাপাশি দেশের শিল্পীদের আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা।
Leave a Reply
Your identity will not be published.