উইকএন্ডে বেড়ানো

উইকএন্ডে বেড়ানো

ব্যস্ত জীবনে অনেক কিছু উপভোগ করা থেকে আমরা বঞ্চিত হই। আবার একটু উদ্যোগী হলেই কিন্তু সেই উপভোগে বাধা থাকে না। যেমন উইকএন্ডে আমরা বেড়িয়ে পড়তে পারি। দেশের দর্শনীয় কিছু স্থান ঘুরে দেখতে পারি। বেড়ানো শেষে ফিরে এসে আবার কর্মজীবনে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি। এতে জীবন হবে বৈচিত্র্যপূর্ণ। প্রতিদিনের একঘেয়েমি কিছুটা হলেও কাটবে। উইকএন্ডে বেড়ানোর মতো কয়েকটি স্থানের ওপর আলোকপাত করা হলো এখানে।

ময়নামতি

মহাস্থানগড়ের মতো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের আরেকটি স্থান ময়নামতি। এটি কুমিল্লায় অবস্থিত। ঢাকা থেকে খুব সকালবেলা রওনা হলে সন্ধ্যাবেলাই ফেরা যাবে। ফলে থাকার ঝামেলা থাকবে না।

কুমিল্লা শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে ময়নামতি অবস্থিত। এখানে রয়েছে বিহার, মুড়া, রাজার বাড়ি, ঢিবি, বৌদ্ধ মন্দির, লালমাই পাহাড়, ময়নামতি জাদুঘর। 

ময়নামতিতে যতগুলো বিহার রিয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত বিহার হচ্ছে শালবন বিহার। এর চারদিকে রয়েছে ১২৫ টি কক্ষ, যা এক ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহৃত হতো।বিহারটি দেখতে অনেকটা দুর্গের মতো এবং এর প্রাচীর ৫ ফুট পুরু।

ময়নামতিতে দেখতে পাবেন নানা ভাস্কর্য। এক্ষেত্রে বৌদ্ধ নিদর্শনের সঙ্গে হিন্দু দাব-দেবীও কম নয়।সাম্প্রতিক সময়ে ময়নামতির কোটিলা মুড়ার কাছে পাওয়া গেছে একটি বোধিসত্ত্ব মস্তক এবং রুপন্যার মুড়া থেকে বিরাট আকারের প্রায় অর্ধটন ওজনের একটা ঘন্টা- এগুলো নতুন মাত্রা যোগ করেছে নিঃসন্দেহে। এছাড়া পোড়ামাটির ভস্কর্য এবং টেরাকোটাও নজর কাড়বে আপনার।

ময়নামতিতে ৫৪ টিবি রয়েছে। এর মদ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো কুমিল্লা ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া সড়কের পাশে লাল্মাই ময়নামতি টিলা শ্রেনীর উত্তর প্রান্ত এবং অন্যটি সেনানিবাস এলাকায় ব্রিগেডিয়ার বাংলোর কাছে অবস্থিত। 

শালবন বিহারের পাশেই রয়েছে ময়নামতি জাদুঘর। এখানে ময়নামতি থেকে প্রাপ্ত সব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রাখা হয়েছে। জাদুঘর খোলা থাকে সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। ৫ টাকার টিকেট কিনে আপনি এ জাদুঘরে প্রবেশ করতে পারেন।

ময়নামতি ছারাও কুমিল্লায় রয়েছে আরও দর্শনীয় স্থান। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- ওয়ার সিমেট্রি, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, ক্যাডেট কলেজ, কারিগরি প্রশিক্ষ্ণ কেন্দ্র, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, রুপবান মুড়া ও চন্ডিমুড়া।

কীভাবে যাবেন

সায়েদাবাদ বাসদ টার্মিনাল থেকে কুমিল্লায় যেতে পারেন। ১১০ থেকে ১৩০ টাকায় টিকেট কেটে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট নামবেন। সেখান থেকে রিকশা কিংবা সিএনজিতে যাবেন কোটবাড়ি। কোটবাড়িতেই শালবন বিহার ও জাদুঘর অবস্থিত। যদি লালমাই পাহাড় দেখতে চান, তাহলে কোটবাড়ি থেকে আপনাকে যেতে হবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। সেখান থেকে সুন্দরভাবে দেখতে পাবেন লালমাই পাহাড়।

কোথায় থাকবেন

খুব ভালোভাবে কুমিল্লার নানা জায়গা দেখতে চাইলে আপনাকে সেখানে থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন কিছু বাংলা হোটেল আছে। এগুলোর কোনো একতিতে রাতে থাকতে পারেন।

মহাস্থান গড়

উত্তরবঙ্গে যদি আপনি বেড়াতে যান, তাহলে প্রথম ভ্রমণস্থল হতে পারে বগুড়া। আর এখানেই রয়েছে মহাস্থানগড়। বগুড়া শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উওত্থরে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন নৃতাত্ত্বিক আবিষ্কার মহাস্থানগড়। এটি খনন কাজের মাধ্যমে উদ্ধারকৃত এক চমৎকার পুরাকীর্তি। ভূমির স্বাভাবিক উচ্চতা থেকে কোথাও কোথাও এটি ৪৫০০ ফুট থেকে ৫০০০ ফুট পর্যন্ত উঁচু। তবে গড় উচ্চতা প্রায় ১৫ফুট। চারদিকে মেঠে জমি দ্বারা ঘেরা এই স্থাপত্যকীর্তিটি অন্যান্য  স্থাপত্য  নিদর্শনসহ ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্মৃত। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর এই স্থাপত্য নিদর্শ্নটি হিন্দুধর্মালম্বীদের কাছে এক পৃথক তীর্থস্থান। এখানকার বেশকিছু পুরাকীর্তির নাম- খোদার পাথ ভিটা, মানকালীর কুন্ড, পরশুরামের বাড়ি, জীয়তকুন্ডু, বৈরাগীর ভিটা, গোবিন্দভিটা ইত্যাদি | আসলে এইসব ঐতিহাসিক নিদর্শনের ধ্বংসাবশেষই চোখে পড়বে আপনার । তাই বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের বাসরঘর দেখতে গিয়েও হতাশ হবেন। কিন্তু দুই হাজার তিনশত বছর আগের বাসরঘরের অবশিষ্টাংশ যে এখনও আছে সেটাই যথেষ্ট। আর এই বাংলার প্রাচীন নগরী পুন্ড্রনগরীও কম দর্শনীয় বিষয় নয়। এখানে ওই নগরীর রাজাদের ব্যবহার্য জিনিস থেকে শুরু করে দেখতে পারেন শিবলিংগ পর্যন্ত।

এছাড়া মহাস্থানগড়ের আশেপাশে দেখতে পারেন গোকুল মঠ, শাহ সুলতান কুল্কি মহীশুরীর মাজার, নেতাই ধোঁপানীর পাট, বিহার গ্রাম, ভাসুবিহার, ভীমের জাংগাল, পাথর ঘাটা, মহীপুর, কাসবা, উচাই…..।

বগুড়ায় এসে শুধু মহাস্থানগড়ই দেখবেন? বগুড়া শহরেও রয়েছে নানা আকর্ষনীয় স্থান। এখানে আছে নবাবের প্যালেস, নবাববাড়ি মিউজিয়াম, কারুশিল্পী ও ওয়ান্ডার ল্যান্ড।

কীভাবে যাবেন

সড়ক কিংবা ট্রেনে আপনি বগুড়া যেতে পারেন। এসি এবং নন এসি বাস রয়েছে। এগুলো হলো- এসআর পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন, বাবুল এন্টারপ্রাইজ, টিআর এন্টারপ্রাইজ, কেয়া পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, গ্রীন নাইন ভলভোসহ আরও কিছু বাস। আন্তঃনগর ট্রেনেও যেতে পারেন।

গজনী অন্যান্য 

শেরপুরের ঝিনাইগাতি সদর খানার পর গারো পাহাড়ে খানিকটা অংশ জুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে গজনী অবকাশ। চমৎকার নিসর্গমন্ডিত ওখানে রয়েছে কৃত্রিম হ্রদ। লেকের পাশে জলের ওপর বেসরকারি উদ্যোগে স্থাপিত জিহান অবসর কেন্দ্র। এখানে একটি রেস্তোরাঁ ও দিনের বেলায় বিশ্রামের জন্যেও রিয়েছে দ্বিতল রেস্টহাউজ। রেস্তোরাঁর ডান পাশে আছে প্যাডেল বোটের জেটি। কোনো একটি বোটে চড়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন নৌবিহারে। একসময় আপনার চোখে পড়বে একটি ছোট্ট পাহাড়ের ওপর জেলা প্রশাসনের প্রধান রেস্ট হাউজ অবকাশ- এর প্রতি। ছয় লক্ষ বিশিষ্ট এই রেস্ট হাউজে রাত্রি যাপন করতে হলে লাগবে জেলা প্রশাসনের অনুমতি।আর ভাড়া তো গুনতেই হবেই। এই রেস্টহাউজের এক প্রান্তে রিয়েছে শাল-সেগুনের বাগান ‘কবিতাংগন’। এখানে গাছে গাছে ঝুলছে গজনীকে নিয়ে লেখা কবিতা। বলাই বাহুল্য, গজনীর রুপে মুগ্ধ পর্যকটরা লিখেছেন এইসব কবিতা। আপনিও একটি কবিতা লিখে গাছে টাঙিয়ে  আসতে পারেন।

গজনীর আরো রয়েছে চারপাশের মনোরম প্রকৃতি দেখার জন্য ‘সাইতভিউ টাওয়ার’ এবং একটি আশ্চর্য গুহা। টিকেট কেটে এই গুহায় প্রবেশ করলে পাতাল্পুরীতে ভ্রমণের অনুভূতি জাগবে মনে।গজনীর আশেপাশে থাকে গারো উপজাতির নানা পরিবার। কাছ থেকে তাদের জীবন্ধারাও দেখতে পারেন। ভালো লাগবে।

এছাড়া শেরপুরের নালিতাবাড়িতে অবস্থিত মধুটিলা ইকোপার্কেও বেড়াতে যেতে পারেন। এখানেও রয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, লেক, কৃত্রিম জীবজন্তু। পাহাড়ের ওপর এখানেও রয়েছে একটি রেস্টহাউজ। ইচ্ছে করলে রাত্রিযাপন করতে পারেন।

শেরপুরের শেষ সীমানায়, জামাল্পুরে রয়েছে আরো একটি মনোরম স্পট। লালচাপরা নামের এই স্পটে রয়েছে রেস্টহাউজ, কৃত্রিম জীবজন্তুসহ আকর্ষণীয় অনেক  কিছু। এখাঙ্কার রেস্টহাউজে থাকতে হলে জেলা প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। 

কীভাবে যাবেন

ঢাকার মহাখালি বাস টার্মিনাল থেকে বাসে চড়ে শেরপুরে যেতে পারেন। অতঃপর শেরপুর থেকে ঝিনাইগাতি ও রাঙ্গাটিয়া পর্যন্ত অন্য আরেকটি বাসে যেতে হবে।

গজনীতে পর্যটন অবসর কেন্দ্রে থাকতে হলে জেলা প্রশাসন থেকে পূর্বপ্রস্তুতি নিতে হবে। যদি অনুমতি না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে শেরপুর শহরে হোটেলে থাকতে পারবেন।

যমুনা রিসোর্ট

উইকএন্ডে মনোরম পরিবেশে দিন-রাত্রি কাটাতে চাইলে যেতে পারেন যমুনা রিসোর্টে। টাংগাইলের ভুয়াপুরে, যমুনা নদীর পূর্ব পাড়ে যমুনা সেতুর কোল ঘেঁসেগড়া এই স্থানটি অবশ্যই আপনার মনে জায়গা করে নেবে। ১৪০ বিঘা জমির উপর সাজিয়ে তোলা হয়েছে মনোরম এই রিসোর্টটি। টিলার মতো জায়গায় বসে বসে যমুনা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। বোটে চড়ে নৌভ্রমণও করতে পারেন। সুমিং পুলে সাঁতার কাটতে পারেন। মাল্টি কুজিন রেস্তোরাঁয় সেরে নিতে পারেন সকাল-দুপুর-রাতের আহার। নানা ধুরনের রুমে এবং স্যুটে থাকতে পারেন রাতে। 

কীভাবে যাবেন

নিজস্ব গাড়ি অথবা রেন্ট- এ কারে চড়ে যেতে পারেন যমুনা রিসোর্টে। এমনকি টাংগাইল গামী যে-কোনো গাড়িতেও যেতে পারেন। অথবা ট্রেনে যেতে পারেন ইব্রাহিমবাদ স্টেষন পর্যন্ত। সেখান থেকে যমুনা রিসোর্টে সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বাহনের ব্যাবস্থা করবে।

বিক্রমপুর

বিক্রমপুরে রয়েছে সোনালি অতীতের বেশ কিছু স্মৃতিচিহ্ন। কালের অত্যাচার সয়ে সেগুলো এখনো কোনোরকমে টিকে আছে। এগুলো দেখলে অন্য রকম অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হবে মন। এ ছাড়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ বিক্রমপুর।

কী কী দেখবেন

ইদ্রাকপুর দুর্গ

বাংলার শাসক ও মোঘল সেনাপতি মীর জুমলা ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে এটি নির্মাণ করেন- যাতায়াতের সুবিধা এবং মগ, পর্তুগীজ ও অহোম আক্রমণকারীদের প্রতিরোধ করার জন্য। বর্তমানে এটি জেলখানা। মুন্সীগঞ্জ শহরে অবস্থিত।

হযরত বাবা আদম শহীদ (রঃ) এর মাজার

হযরত বাবা আদম শহীদ (রঃ) ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এদেশে ১১৭৩ খ্রিষ্টাব্দে এসেছিলেন। তাঁর মাজারটি মুন্সিগঞ্জের সিপাহি পাড়ার রিকাবিবাজারে। আরেক পাশে রয়েছে একটি মাদ্রাসা। বাবা আদম শহীদ (রঃ) ফোরকানিয়া মাদ্রাসা। এটি স্থাপিত হয়েছে ১৯৮৭ সালের জানুয়ারিতে।

ছয় গম্বুজ মসজিদ

এটি বাবা আদম শহীদ (রঃ)- এর মাজারের পেছনে অবস্থিত। জানা যায়, সুলতান জামাল উদ্দিন ফতেহ শাহ-এর শাসনামলে মালিক কাফুর কর্তৃক ৮৮৮ হিজরি মোতাবেক ১৪৮৩ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদটি নির্মিত হয়। মসজিদের ভেতরে প্রবেশের পর পাথরের তৈরি স্তম্ভসমূহ, সিলিং দেয়ালে লতা-পাতার কারিকাজ দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন।

হরিশ্চন্দ্রের দিঘি

রাজা হরিশচন্দ্রের কথা তো শুনেছেন? দয়া-দাক্ষিণ্যের জন্য যাঁর বেশ সুনাম ছিলো। তাঁর নামে মুন্সিগঞ্জে বিশাল দিঘি রয়েছে। অবশ্য এই দিঘিটি মাঘী পূর্ণিমার দিঘি নামেও পরিচিত।

অতীশ দীপঙ্কর ভিটা

পন্ডিতের ভিটা নামেও এটি পরিচিত। দীপঙ্কর শ্ৰী জ্ঞান, বৌদ্ধ শাস্ত্রের বিখ্যাত পন্বিত, বাংলার রাজা প্রথম মহীপালের শাসনামলে বিক্রমশীলা (বর্তমান ভাগলপুর, বিহার) বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হল, বৌদ্ধধর্মের সংস্কারের অন্য তিব্বত যান। এই মহপন্ডিতের জন্মস্থান মুন্সীগঞ্জের বজ্রযোগিনী গ্রাম। যে স্থানে তিনি জন্মেছিলেন, পিতা কমলশ্রী মা প্রভাবনীর আদর-যত্নে বড় হয়েছিলেন, সেই স্থানটিতে এখন জনৈক লতিফ শেখের বাড়ি ।

এ ছাড়া মীর কাদিম পুল, শ্যাম সিদ্ধির মঠ, সোনারং জোড়া মঠ, পদ্মা রিসোর্টসহ নানা কিছু দেখতে পাবেন মুন্সীগঞ্জে।

বসুবাড়ি

জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর পৈতৃক ভিটা মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়ীখাল গ্রামে। বসুবাড়ির প্রাচীন ভবন কালের আঘাত সহ্য করতে করতে জীর্ণ হয়ে পড়ায় বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ভবনের চারপাশে বৃক্ষ শোভিত্ ৮টি পুকুর ঠিকই রয়েছে। অবশ্য এই স্থানটিতে দন্ডায়মান একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-রাঢ়িখাল স্যার জেসি বোস ইনস্টিটিউট ও কলেজ। স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯২১ সালে আর কলেজটি ১৯৯৪ সালে। এ ছাড়া পুরো এলাকাটি আকর্ষণীয় করার জন্য স্থাপন কা হয়েছে জেসি বোস কমপ্লেক্স। এই মনোরম কমপ্লেক্সটি ঘোরা যাবে বিশ টাকা প্রবেশ মূল্যের বিনিময়ে। এখানে রয়েছে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু জাদুঘর যেখানে সংরক্ষিত রয়েছে পুরনো দিনের অনেক জিনিসপত্র।

পদ্মা রিসোর্ট

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় পদ্মার চরের মনোরম স্থানে, থানার অদূরে গড়ে উঠেছে পদ্মা রিসোর্ট। এখানে রয়েছে ১৬টি নান্দনিক কটেজ। ভেতরের শয্যা, ফ্রেশরুম সবখানেই আধুনিকতার ছোঁয়া। খাবারের জন্য এখানে রয়েছে একটি রেস্টুরেন্ট। পদ্মা রিসোর্ট এ ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানাে যাবে ন্দীর বুকে। 

কীভাবে যাবেন 

ঢাকা থেকে সড়ক ও জলপথে মুন্সীগঞ্জে জেলা সদরে যাওয়া যায়। ঢাকার গুলিস্তান ও বঙ্গবনের দক্ষিণ পাশ থেকে নয়ন পরিবহন, ঢাকা ট্রান্সপোর্টসহ বেশ কিছু বাস সেখানে যায়। এ ছাড়া ঢাকার সদরঘাট থেকে ছোট ছোট কিছু লঞ্চ এবং চাঁদপুরগামী বড়সড় লঞ্চ মুন্সীগঞ্জের  কাঠপট্টি ঘাটে থামে।

সোনারগাঁ

একটি ঐতিহাসিক স্থান। কারও কারও মতে, বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম ঈশা খাঁর স্ত্রীর নামানুসারে এই জায়গাটির নাম হয়েছে। আবার কেউ কেউ ভিন্নমত পোষণ করেন। যাহোক, সোনারগাঁ গেলে আপনি মুগ্ধ হবেন। অতীতের সোনালি লিলগুলোতে বিচরণ করবে আপন মন।

কী কী দেখবেন 

লোকশিল্প জাদুঘর স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের প্রচেষ্টায় এটি গড়ে উঠেছিল। জাদুঘরের সংগ্রহে রয়েছে চার হাজারেরও বেশি সহ । জাদুঘরের বিক্রয় কেন্দ্র থেকে আপনি কারুশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী ও সংগ্রহ করার মতো জিনিস কিনতে পারবেন। জাদুঘর শুক্রবার থেকে মঙ্গলবার প্রতিদিন সকাল দশটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে। বুধবার অর্ধদিবস সকাল দশটা থেকে বেলা দু'টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এখানে একটি লাইব্রেরিও আছে।

লেক

লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের চত্বরে প্রায় তিন কিলােমিটার দীর্ঘ লেক রয়েছে। এতে নৌবিহারের সুযোগ রয়েছে।

কারুশিল্প গ্রাম

ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় এখানে বছরের বিভিন্ন সময় তাঁতিরা নিজেদের তাঁতে জামদানি বুনে সরাসরি সরবরাহ করে। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এখানে অনুষ্ঠিত হয় লোকজ উৎসব ও কারুশিল্প মেলা। প্রবেশ পথের ঠিক সামনেই রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেলিনের বিখ্যাত চিত্র অবলম্বনে নির্মিত ভাস্কর্য-কাদায় আটকে পড়া গরুর পাড়ি। পানামনগর জাদুঘর থেকে বেরিয়ে পূর্ব দিকে একটু এগোলেই দেখতে পাবেন পানামনগর।এখানে বহু পোড়াবাড়ি রয়েছে। প্রাচীন ডিজাইন দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। এখানে মসনদে আলা ঈশা  খাঁর রাজত্বের সোনাররগাঁ পরগনার রাজ-কর্মচারীরা থাকতেন।

দেওয়ানবাগ মসজিদ 

কাঁচপুর থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বে আকালিয়া খালের তীরে ঈশা খাঁর প্রপৌত্র মুনাওয়ায় খাঁ-এর নির্মিত একটি মসজিদ রয়েছে। একটি বিশাল দিঘি এবং মসজিদের সামনের পাথর খন্ড  দেওয়ানবাগের প্রাচীনত্বকে তুলে ধরে। সমাধি সৌধ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোগড়াপাড়া থেকে কয়েক কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে ইতিহাসখ্যাত সুলতান গিয়াসউদ্দিন আযম শাহ, তার শাসনামলের বিখ্যাত কাজী এবং পাঁচ পীরের মাজায়। | 

বাংলার তাজমহল

সোনারগাঁ-এর তারাব এলাকায় আগ্রার তাজমহলের অবিকল অনুকরণে তৈরি করা হয়েছে বাংলার তাজমহল। প্রায় পনের একর জায়গার ওপর সাদা রং-এর তাজমহলেকে অনেকেই ভুল করে এটিকে ভাবতে পারেন আগ্রার তাজমহল হিসেবে। ৫০ টাকার প্রবেশ মূল্য দিয়ে এখানে ঢুকে বেড়াতে পারেন। স্বচ্ছন্দে। এ ছাড়া এখানে রয়েছে পাঁচতারকা মানের রাজমণি ঈশা খাঁ মোটেল । দুভাবে যাওয়া যায় এখানে। প্রথমত, কাঁচপুর সেতু পেরিয়ে হাতের বাঁয়ে সিলেট মহাসড়কের বরপা হয়ে সরাসরি পৌঁছে যাবেন। দ্বিতীয়ত, কাচপুর সেতু পেরিয়ে চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে মদনপুর থেকে হাতের বাঁয়ে গাজীপুরগামী সড়ক ধরে সরাসরি বাংলার তাজমহল।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সোনারগাঁ যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সার্ভিস বোরাক, সোনারগাঁও ইত্যাদি। এ ছাড়া ঢাকা থেকে কুমিল্লা- বা দাউদকন্দিগামী যে-কো্নো বাসে উঠে মোগড়াপাড়া নেমে সহজেই যাওয়া যায় সোনারগাঁয়ে।

Leave a Reply

Your identity will not be published.