চলচ্চিত্রে  গ্যাংস্টার ও মোশাররফ করিমের ‘হুব্বা’

চলচ্চিত্রে  গ্যাংস্টার ও মোশাররফ করিমের  ‘হুব্বা’

 

চলচ্চিত্রে গ্যাংস্টার, নতুন কোনো বিষয় নয়। হলিউড, বলিউড, টালিউড, ঢালিউড— সব ইন্ডাস্ট্রিতেই গ্যাংস্টারদের নিয়ে সিনেমা নির্মিত হয়েছে। বলা বাহুল্য, কোনো কোনো সিনেমায় বাস্তবের গ্যাংস্টারদের জীবনের ছায়াও পড়েছে। হলিউডের এ ধরনের  সিনেমার মধ্যে শীর্ষে অবস্থান করছে ‘দ্য গড ফাদার’।

এর পরেই রয়েছে ‘গুড ফেলাস’। ‘দ্য গড ফাদার ২’ চলচ্চিত্রটিও কম জনপ্রিয় হয় নি। উল্লেখযোগ্য অন্যান্য চলচ্চিত্র হচ্ছে: হোয়াইট হিট, বনি অ্যান্ড ক্লাইড, স্কারফেস, পাল্প ফিকশান, দ্য পাবলিক এনিমি, লিটল সিজার। ‘দ্য গড ফাদার’সহ কয়েকটি সিনেমায় বাস্তবের গড ফাদারদের জীবনও উঠে এসেছে।

বলিউডের সিনেমায়ও গ্যাংস্টারদের কর্মকাণ্ড নিয়ে বহু সিনেমা নির্মিত হয়েছে। বাস্তবের গ্যাংস্টারদের জীবনের ছায়াও দেখা গেছে কোনো কোনো ছবিতে। যেমন বহু বছর আগে মুক্তি পেয়েছিল ‘মুকাদ্দার কা সিকান্দার’। এখানে অমিতাভ বচ্চন অভিনীত চরিত্রে রয়েছে মুম্বাইয়ের বাস্তবের গ্যাংস্টার হাজী মাস্তানের ছায়া। আর সাম্প্রতিক ট্রেন্ড হলো, ছায়া নয় গ্যাংস্টারদের বাস্তব জীবনেরই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বলিউডের চলচ্চিত্রে। এই ধারার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি চলচ্চিত্র হচ্ছে— কোম্পানি, ব্ল্যাক ফ্রাইডে, ওয়ান আপন আ টাইম ইন মুম্বাই, ড্যাডি, দয়াবান, শুটআউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা, হাসিনা, গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি, রইস ইত্যাদি। 

বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় ‘রংবাজ’ ছবিটি। জহিরুল হক পরিচালিত এ ছবিতে রাজ্জাক এক মাস্তান তথা  গ্যাংস্টারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ‘রংবাজ’ই দেশীয় চলচ্চিত্রে এ ধরনের ছবির একটি নতুন ধারা তৈরি করে। পরে  ‘গুণ্ডা’, ‘আম্মাজান’ ‘শান্ত কেন মাস্তান’সহ বহু ছবি এ দেশে তৈরি হয়েছে। নিকট অতীতে যেমন মুক্তি পেয়েছে সাইফ চন্দন পরিচালিত ‘আব্বাস’। এখানে নিরব পুরোনো ঢাকার একজন গ্যাংস্টারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন।  

ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও গ্যাংস্টারদের নিয়ে ছবি তৈরি হয়েছে। প্রসেনজিৎসহ আরও কয়েকজন সেইসব ছবিতে অভিনয় করেছেন। অন্যদিকে ২০১৬ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘গ্যাংস্টার’। এখানে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন যশ দাশগুপ্ত।  সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে ব্রাত্য বসু পরিচালিত ও মোশাররফ করিম অভিনীত সিনেমা ‘হুব্বা’র টিজার। যেখানে গ্যাংস্টার চরিত্রে হাজির হয়েছেন বাংলাদেশি গুণী এ অভিনেতা।

৪০ সেকেন্ডের টিজারের একদম শুরুতে শোনা যায় মোশাররফ করিমের সংলাপ। তিনি বলছেন, ‘কুত্তা যদি ঘেউ ঘেউ না করলো, তাহলে সে কিসের কুত্তা!’ অল্প সময়ের টিজারটিতে দেখা যায়— ভয়ংকর রূপের পাশাপাশি গ্যাংস্টার হুব্বার ব্যক্তিগত জীবন। ইমেজের পর ইমেজে দর্শকের সামনে মূর্ত হয়ে ওঠে— মানুষজনকে অত্যাচার করছে হুব্বা, দলবল সিয়ে পাড়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হুব্বা, রাতের আঁধারে নারী সঙ্গিনীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ অবস্থায় হুব্বা, বিয়ের আসরে নাচছে হুব্বা ইত্যাদি। সব মিলিয়ে ভিন্ন রূপে দেখা গেছে মোশাররফ করিমকে। এমন চরিত্রে তাঁকে আগে কখনো দেখা যায় নি।

থ্রিলার ও কমেডির মিশ্রণ রয়েছে ‘হুব্বা’ সিনেমায়। এখানে পুলিশের চরিত্রে দেখা গেছে কলকাতার পরিচিত মুখ ইন্দ্রনীল সেনগুপ্তকে। বোঝাই যাচ্ছে, মোশাররফের সঙ্গে তার বেশ লড়াই হবে।

টিজারটি দেখে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দর্শকেরা। অনেকেই বলেছেন, সিনেমাটি দেখতে তারা মুখিয়ে রয়েছেন। কলকাতার পরিচালক বাংলাদেশের অসাধারণ অভিনেতাকে কাজে লাগাচ্ছেন বলে কেউ কেউ মত প্রকাশ করেছেন। এর আগে ২০২১ সালে পরিচালক ব্রাত্য বসু ‘ডিকশনারি’ ছবি বানিয়েছিলেন মোশাররফ করিমকে নিয়ে।

‘হুব্বা’ তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের গ্যাংস্টার হুব্বা শ্যামলের জীবন অবলম্বনে। হুগলি জেলার অপরাধজগতের সম্রাট ছিলেন হুব্বা। ‘হুগলির দাউদ ইব্রাহিম’ নামে ডাকা হতো তাকে। খুন, মাদক পাচারসহ অসংখ্য অপরাধে এই অপরাধীকে যতবারই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, প্রতিবারই জামিন পেয়ে গেছেন। একসময় ভোটেও দাঁড়াতে চেয়েছিলেন, ২০১১ সালে বৈদ্যবাটীর খালে হুব্বা শ্যামলের মৃতদেহ ভেসে ওঠে। 

 

Leave a Reply

Your identity will not be published.