গানে ছিল প্রাণ

গানে ছিল প্রাণ

বাংলা গান আবারো নিজের পুরোনো জৌলুস ফিরে পেয়েছে। ২০২৩ সাল সিনেমা ও বাংলা গানের ভুবনে যুক্ত হয়েছে নতুন সব অর্জন। এ বছর গান, সুরের মায়াজালে শ্রোতারা হয়েছে মুগ্ধ। পাশাপাশি গান শীর্ষে ছিল জনপ্রিয়তার বিচারে ও আলোচনার টেবিলে। চলুন পুরো বছরের আলোচিত ও দর্শকপ্রিয় গানগুলো সম্পর্কে জেনে নিই...

চলচ্চিত্রের গান

ফের সিনেমার গানে প্রাণ ফিরেছে। ‘ও প্রিয়তমা’, ‘ঈশ্বর’, ‘গা ছুঁয়ে বলো’-এর মতো আলোচিত গান মানুষের মুখে মুখে ফিরেছে। ২০২৩ সালের আলোচিত গানগুলোর মধ্যে শাকিব খান অভিনীত সিনেমার ‘ও প্রিয়তমা’ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন বালাম ও কোনাল যেটি আসিফ ইকবালের লেখা। এ ছাড়া এ বছরই প্রথমবারের মতো কোনো বাণিজ্যিক সিনেমার গানে পাওয়া গেছে সুরকার প্রিন্স মাহমুদকে। প্রিয়তমা সিনেমায় ‘ঈশ্বর’ গানটি শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়েছে। সোমেশ্বর অলির কথায় এই গানে কণ্ঠ দিয়ে পরিচিতি পেয়েছেন তরুণ গায়ক রিয়াদ।

‘গা ছুঁয়ে বলো’ গানে নিখাঁদ ভালোবাসা ছড়িয়েছেন তানজীব সারোয়ার ও অবন্তী সিঁথি। এদিকে নির্মাতা রায়হান রাফীর ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার গানটি শ্রোতাদের হৃদয়ে তরঙ্গ ছড়িয়েছে। নিজের লেখা গানটির সুর করেছেন তানজীব সারোয়ার, সংগীতে সাজিদ সরকার। একই সিনেমার আরেক গান ‘ও টাকা তুই আমার কলিজা আর জান’ও আলোচনায় ছিল। রাসেল মাহমুদের কথা ও আরাফাত মহসিনের সুর-সংগীতে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন কনা।

তরুণ পরিচালক তপু খানের ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ সিনেমার ‘সুরমা সুরমা’ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ইমরান মাহমুদুল ও কোনাল। জাহিদ আকবরের কথায় গানের সুর করেছেন নাভেদ পারভেজ। এই বছর সিনেমার আলোচিত গানের মধ্যে তিনটিই গেয়েছেন কোনাল, দুটিতে ইমরান। ইমরান ও কোনাল জুটির আরেক গান ‘মেঘের নৌকা’ও সাড়া ফেলেছে শ্রোতৃমহলে।

মৌলিক গানের পাশাপাশি একটি গোপালগঞ্জ অঞ্চলের লোকগানও সাড়া ফেলেছিল। 'মুজিব: একটি জাতির রূপকার' সিনেমার ‘কী কী জিনিস এনেছ দুলাল’ শিরোনামে এই গান গেয়েছেন ভারতীয় শিল্পী ঊর্মি চৌধুরী।

এর আগে গত বছর ‘সাদা সাদা কালা কালা’, ‘টেকা পাখি’ ও ‘চলো নিরালায়’-এর মতো সিনেমার গান জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায় এই বছর জনপ্রিয় গানের সংখ্যা আরও বেড়েছে। মাঝে প্রায় এক দশকে জনপ্রিয় গানের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা।

নতুন মাত্রা: কোক স্টুডিও বাংলা
বাংলা গানে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে কোক স্টুডিও বাংলা। এই বছর কোক স্টুডিও বাংলার দ্বিতীয় মৌসুমে এক ডজন নতুন গান প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ‘মুড়ির টিন’, ‘বনবিবি’, ‘দেওরা’, ‘কথা কইয়ো না’, ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’, ‘দিলারাম’ আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছে। যা সকল মহলের দর্শকের কাছে পেয়েছে গ্রহ্নযোগ্যতা।

ব্যান্ডসংগীতের আলোকিত সময়
কনসার্ট মূলত শীতকালে হয়। তবে করোনা মহামারির পর শীত-গ্রীষ্ম ছাপিয়ে বছরজুড়েই কনসার্টের খবর মিলছে। এই বছরও কনসার্ট আরও বেড়েছে। এই বছর আর্মি স্টেডিয়ামে ‘জয় বাংলা কনসার্ট’ ও ‘কোক স্টুডিও বাংলা লাইভ’-এর মতো বড় কনসার্ট দেখা গেছে। এসব আয়োজনে শ্রোতাদের ঢল নেমেছিল। এর বাইরে বছরজুড়ে ঢাকায় ‘দ্য স্কুল অব রক’, ‘চলো বাংলাদেশ কনসার্ট’, ‘দ্য নাইট অব প্রীতম হাসান’, ‘রক ইন দ্য সিটি’, ‘টু গাজা ফ্রম ঢাকা’ কনসার্ট, ‘ভালোবাসি জ্যোৎস্নায়’সহ দেশের নানা প্রান্তে নিয়মিত কনসার্ট হয়েছে। এসব কনসার্টে নগরবাউল, ওয়ারফেজ, আর্টসেল, শিরোনামহীনের মতো বড় ব্যান্ডকে দেখা গেছে।

ভারতীয় শিল্পীদের মধ্যে অঞ্জন দত্ত, নচিকেতা চক্রবর্তী, অনুপম রায়, অনুব জৈনসহ অনেকেই ঢাকায় গান করে গেছেন। এই বছর কলকাতায়ও ঢাকার ব্যান্ডের পদচারণ ছিল চোখে পড়ার মতো। মাকসুদ ও ঢাকা, ওয়ারফেজ, অ্যাশেজ, সোনার বাংলা সার্কাসসহ বেশ কয়েকটি ব্যান্ড কলকাতায় গান করে এসেছে।

মাঝে ঢাকার ব্যান্ডগুলো নতুন গান করা কমিয়ে দিয়েছিল। এখন স্পটিফাই, ইউটিউবের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে গান প্রকাশ করে আয়ের পথ খোলায় নতুন গানে ফিরছে ব্যান্ডগুলো। এই বছর আর্টসেল, চিরকুট, লালন, মেঘদল, নেমেসিস, অড সিগনেচার, অ্যাশেজ, ব্ল্যাক-বেশ কয়েকটি ব্যান্ড নতুন গান প্রকাশ করেছে। বেশ কিছু অ্যালবামেরও কাজও চলছে। পাশাপাশি ব্যান্ড সংগীতের উন্মাদনা তরুণদের মাঝে বেড়েই চলেছে।

একক-দ্বৈত গানের আলোচনা

চলতি বছর একক ও দ্বৈত গানের মধ্যে মুজা ও জেফার রহমানের ‘ঝুমকা’ গানটি ছিল আলোচনায়। র‍্যাপার হাসান আলীর ‘বাজার গরম’ ও গায়ক ঈশান মজুমদারের ‘নিঠুর মনোহর’ শিরোনামে দুটি গানও প্রশংসা কুড়িয়েছে শ্রোতামহলে।

Leave a Reply

Your identity will not be published.