পিতার পাঁজর
কোথায় খুঁজছো তুমি জনকের অস্থি
তুমি কি জানো না গোটা দেশে মিশে আছে
পিতার পাঁজর
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলজুড়ে ব্যাপ্ত বধ্যভূমি
কোথায় খুঁড়ছো তুমি বাংলার হৃৎপিণ্ড
যেখানেই হাত দেবে মুক্তিযোদ্ধার স্মারক
জননীর অশ্রুধারা আজ বাংলার তেরো শত নদী
রক্তধারা মিশে আছে বঙ্গোপসাগরে
লাল ও সবুজে মোড়া প্রতি ইঞ্চি জমি
পিতার পাঁজর বুকে ধরে আছে
একাত্তর-উত্তর প্রজন্ম তুমি
চিনে নাও আজ সেই পবিত্র জমিন
যাঁকে খুঁজে ফেরো পাবে তাঁকে সুনিশ্চিত
অনুভব করবে অন্তরে
যদি ঊর্ধ্বে তুলে ধরো
তাঁরই রক্তে ধোয়া দেশের সম্মান
শরৎ এলেই আমি কবি
শরৎ এলেই আমি কবি
বাকি দশ মাস করুণ কেরানি
ক্ষুণ্নিবৃত্তির ঘূর্ণিপাকে সেঁধে যাওয়া হাঁসফাঁস আকাশ
আমার নতুন প্রেম বরফের দেশে কবিতাকাতর
তুষারের দেহে আমি মনে মনে শিউলি এঁকেছি
দু’হাতে বরফ ছেনে, তারপর তাতে গাঢ়রঙ বৃন্ত
ঘ্রাণ নাও, পাবে আমারই কবিতার স্বাদ
বরফ কি কাশবন? না আকাশবন!
তার থেকে ছুটে আসা
সুতীব্র আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে
লাল টকটকে গাড়ি
আরোহিনী তার কবিতা-রোহিনী
এও শরতেরই অমলধবল দান, অফুরান
একটি সরোদ পড়ে আছে কতোকাল
উপেক্ষায় অপেক্ষায় অন্ধকারে বন্ধ ঘরে!
শরৎ তুলছে তাতে সুর আজ ভোরবেলা
আমারও ধারণা হলো আমি বেঁচে উঠলাম
সহস্র মৃত্যুর হিংস্র হিংসা ফুঁড়ে অপূর্ব উদ্ভ্রান্ত মেঘ!
কফি ও চুমু(ক)
অধুনা জীবন যেন শশব্যস্ত শব্দের দৃষ্টান্ত
নর্থ এন্ডে আমাদের প্রতীক্ষিত আড্ডাটা হচ্ছে না
কিছুতেই, ভিডিও কলেও না, তবু কমছে না টান তো
শাওন পেরিয়ে ভাদ্র, ছলাবদ্ধ-বাধাটা সরছে না
করোনাকে দুষবো? না, মুলতুবি ইচ্ছের তীব্রতা!
সংসার, চাকরি, আর কিছু সামাজিকতার চাপ
বাড়াচ্ছে শর্করা, রক্তচাপ, তবু ভাবছি: দিই ঝাঁপ
বিপরীতে সে কি নিভন্ত, নাকি ঢের পতিব্রতা!
পেয়ালা উছিলা মাত্র, কফিপানে অধর সরোদ
হয় না কখনো, যদি নাই চড়ে প্রেমের পারদ
কল্পনায় কফিশপে যাই, মনে-মনে চুমু চাই
সেই কবে থেকে বলছি চলুন, কফি খাই, ছাই।
কফির চুমুক চুমু না-ফুরোনো নিঃশব্দ কথারা
ব্যর্থ বটে; মনোপটে অফুরান ফুটছে তারারা ॥
মমির মতন প্রেম
প্রেমভিক্ষা অসম্ভব। উঠুক হৃদয়ে মরুঝড়
থাকুক নিভৃতে মূক অনিঃশেষ নির্জন নির্ঝর
বয়স জানিয়ে দ্যায় সম্পর্কের গতি, বহু মাত্রা
যদিও শুরুতে শুধু মোহ, একমুখী অভিযাত্রা
তিনটি দশক টানটান উপেক্ষার অভিনয়
শেষাবধি ওষ্ঠচ্যুত অনুরাগ— বিশুদ্ধ বিনয়
বিমূর্ত ঈর্ষার কষ্ট গচ্ছিত ছিল কি দূর গৃহে
নিষ্ঠুরার ওষ্ঠ নিল তুলে যত্নে সঘন সাগ্রহে
আয়ু ফুরোবার আগে এ প্রাপ্তি সামান্য নয় মানি
শূন্য প্রেম-পানপাত্র— প্রেমিকের সমূহ সম্মানী
একতরফের প্রেম সতত গোপন অভিপ্রায়
সর্বস্ব হারিয়ে ঠিকই একদিন সমগ্রতা পায়
স্বীকৃতি চায় নি ভালোবাসা, তবু পুড়ল প্রবল
মমির মতন প্রেম চিরজীবী বিদগ্ধ বিহ্বল ॥
প্রেয়সী-কন্যার বিয়ে
দারুণ শীতের রাত ছিল সেটা, যদিও ঘেমেছি
আমি অন্তর্গত বিরহী আগুনে—নির্জনেতা-ঘেরা
স্বেচ্ছা-কারাগারে মৌন, খসে-পড়া একাকী নক্ষত্র।
বিয়ের শাড়িতে তুমি— আমার চিরকালের দেবী
পুড়িয়ে কবির মন, মাড়িয়ে কবিতা— উদাসীনা
চলে যাচ্ছ অন্যের বাসরে— নিষ্ঠুর সুন্দর ছবি—
গোলাপবাগান হয়ে গেল অকস্মাৎ গোরস্তান
প্রেম কি চিতায় পোড়ে? নাকি মাটি চাপা দেয়া যায়!
আমন্ত্রণপত্র হাতে বসে থাকি আজ হতবাক
তোমার কন্যার বিয়ে এসে গেল! এ কী ভেল্কিবাজি?
আমাদের তারুণ্যের দিন সত্যি তাহলে ফুরলো
আমার যমজ যারা স্রেফ ভেসেছে, ভালোবেসেছে
দাবি নিয়ে দাঁড়ায় নি মুখোমুখি হাদা প্লেটোনিক
আমার সন্তান যেন তারা— কন্যারা সম্রাজ্ঞী
তোমাদের গর্ভজাত, গর্বভরে সাজাচ্ছে বাসর
কন্যা সুখী হোয়ো, জন্ম দিয়ো দুর্ভাগা প্রেমিক— কবি।
বিষমাখা মধু
ক্ষুরধার উদ্ধার বলে কিছু নেই আত্মহত্যা ছাড়া, এক বিষেই বিষম নেশা হয়ে গেছে, আর সব বরবাদ; ওই যে মউমউ মৌসুমের বাঁকে বাঁকে খলবল করে উঠেছিল অমলধবল বিদ্যুৎ, এমন ধাঁধিয়ে গেল মন, তারপর অদৃশ্য ছুরিতে কত রক্তারক্তি; টুটাফাটা মন, সেলাইফোঁড়াই করা হৃদয় তাজ্জব বনে গেছে শেষে এ নেশায় মাঝদরিয়ায়, স্মৃতিভ্রংশ নটরাজ আজ আওড়ায় বহু পুরাতন সংলাপ; তবু মনেও পড়ে না কোনো চুম্বিত অধর, মূল্যহীন হলো তরুধর্মী তরুণীর কান্নায় ঝলসে ওঠা পান্না; সব নাম মুছে গেল, শুধু একটি মুখ চিরমুখরা; পার্শ্ববর্তিনী পাশ ফিরে শোয়, বিষমাখা মধু গিলে আমার জীবনমরণ-দশা; মায়াবিনী জাদুভাণ্ড নিয়ে নির্ভার নিদ্রায় মগ্ন, আর আমি কী রোদ্দুরে কী জোছনায় হঠাৎ হঠাৎ ধড়ফড় উদ্ভ্রান্ত ছেঁড়াফাঁড়া হাঁসফাঁস লন্ডভন্ড...
Leave a Reply
Your identity will not be published.