হারিয়ে যাচ্ছে কাঠের তৈরি নৌকা

হারিয়ে যাচ্ছে কাঠের তৈরি নৌকা

নদীমার্তৃক আমাদের সবুজ শ্যামল বাংলাদেশে এক সময় নৌকাই ছিল অন্যতম যোগাযোগের বাহন পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এতো মিঠাপানির নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাঁওর জলাশয়ের দেখা পাওয়া যায় না বর্তমানে যান্ত্রিকতার যুগে বিলীন হয়ে গেছে আবহমান গ্রাম বাংলার মনোমুগ্ধকর সেই চিরচেনা দৃশ্য আমাদের দেশের নদীগুলোতে সারি সারি পাল তোলা নৌকা এখন আর চোখে পড়ে না তীব্র নাব্যতা সংকটের কারণে আমাদের দেশের নদ-নদী গুলোর জৌলুশ ঠিক আগের মতো নাই বর্তমানে নদীতে হাতে গোনা দুই একটা পালের নাও চোখে পড়ে ধীরগতির কারণে এইসব নৌকায় আগের মতো আর মানুষ ওঠে না কুড়ি থেকে পঁচিশ বছর আগেও এই দেশের নদ-নদীগুলোর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য, স্বচ্ছ পানির কলতান, সারি সারি পালতোলা নৌকা আমাদের মনে আনন্দানুভতি জাগিয়ে তুলতো সময়ের বিবর্তনে ইঞ্জিন নৌকা আসায় পালতোলা নৌকা আজকাল আর নদীতে চোখে পড়ে না

আমাদের গ্রামবাংলায় জালের মতো ছড়িয়ে আছে নাম না-জানা অসংখ্য খাল-বিল, নদ-নদী বর্ষায় দুই কূল ছাপিয়ে ডুবিয়ে দেয় গ্রামীণ জনপদ নদীর বুক চিরে তিরতির করে এগিয়ে যেত পালতোলা নৌকা পাটবোঝাই করে নৌকা ছুটে চলত গঞ্জে হালকা সাদা কিংবা রঙিন পালে হাওয়া লেগে নৌকা ছুটে চলতো তার গন্তব্যে বাঙালি জাতি হিসেবে নদীকেন্দ্রিক সংস্কৃতি ঐতিহ্য আমাদের গ্রামবাংলার জনজীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে  মহাজনী নৌকা মালামাল বোঝাই করে দূরপাল্লার হাটে যাওয়ার সেই দৃশ্য, নৌকার মাঝিমাল্লাদের ভাটিয়ালি গানের সুর নদীপাড়ের মানুষদের মন আন্দোলিত করার সেই সুন্দর  দিনগুলো আমরা অনেক পিছনে ফেলে এসেছি বিখ্যাত পল্লীগীতি সম্রাট প্রয়াত আব্দুল আলীমের গাওয়ানাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা কোন দূরে যাও চইলা,  ‘নায়ে বাদাম তুইলা দে ভাই ওরে  আল্লাহ রাসুল কইয়া আমি পদ্মা নদী পাড়ি দিবো মওলাজীর নাম লইয়া, এই কালজয়ী গানগুলো এখনো আমাদের কানে ভাসে আমরা নদী পাাড়ের মানুষরা আবেগতাড়িত হয়ে পড়িকিছু সময়ের জন্য হারিয়ে যাই আমরা সেই সুদূর সোনালি অতীতে

নৌকার অযান্ত্রিক যুগে প্রায় প্রতিটি মালবাহী মাঝারি বড় আকৃতির নৌকায় পালের ব্যাবহার ছিলো চোখে পড়ার মতো নৌকার মাস্তুল হলো নৌকায় পাল খাটাতে যে বড় খুঁটির প্রয়োজন হয়, সেটা আর নৌকার মাঝি যে যন্ত্র ধরে নৌকা চলাচলের দিক পরিবর্তন করে, সেটাই হলো নৌকার হাল নৌকার দাঁড় হলো নৌকা চালানোর দণ্ড ছোট দাঁড়কে বলে বইঠা আর নৌকা ঠেলে চালানোর দণ্ডকে লগি বলে, যা দিয়ে নৌকাকে বেয়ে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়ে থাকে সেটাকে নৌকার বইঠা বলে নৌকা যে চালান তাকে বলে মাঝি বায়ু শক্তিকে কাজে লাগিয়ে পাল দিয়ে নৌকা চালনা করা হয় নদীতে বাতাস যখন পড়ে যায়, তখন আর পাল কাজ করে না তখন কয়েকজন মাঝি নদীর তীরে গিয়ে গুন টেনে নৌকা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় গুন টানা ছিল অনেক কষ্টের নৌকার সঙ্গে বাঁধা লম্বা দড়ির মাথা লাঠির অগ্রভাগে বাঁধা থাকত, মাঝি তার কাঁধে দড়ি বাঁধা লাঠিটি ঠেকিয়ে নদীর পাড় ধরে হেঁটে যেতেন উঁচু, নিচু, ঢাল , গর্ত, সমান কোনো কিছুই তাদেরকে দমাতে পারতো না গঞ্জের হাটে ঠিক সময়ে পৌঁছাতে হবে, তাই গুন টানা মাঝির কাঁধে বড় দাগ হয়ে যেত নৌকার পালকে অঞ্চলভেদে বাদাম বলা হয়মনসামঙ্গল কাব্যে বণিক চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্য তরী চৌদ্দ ডিঙা নিয়ে শুরু করে বাণিজ্য যাত্রা সেখানেও পালতোলা নৌকার কথা উল্লেখ আছে নতুন বউ শ্বশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে যেতে পালতোলা নৌকায় চড়ার আবদার করত দাঁড় টানার পাশাপাশি পাল টানানো হলে নৌকার গতি বেড়ে যায়

নৌকার অংশগুলো হলোÑখোল, পাটা, ছই বা ছাউনি, হাল, দাঁড়, পাল, পালের দড়ি, মাস্তুল নৌকার খোলকে জলনিরোধক করার জন্য আলকাতরা ব্যবহার করা হয় যান্ত্রিক সভ্যতায় পুরোনো ঐতিহ্য সংস্কৃতি আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে নদী মরে গেছে ইঞ্জিন নৌকা আসায় পালতোলা নৌকা হারিয়ে গেছে কালের আবর্তে স্মৃতির ক্যানভাসে পালতোলা নৌকা আজও জ্বলজ্বল করে ষাটের দশকে জন্ম নেওয়া মধ্যবয়সীদের মনে

আমার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে সেই ছোটোবেলা থেকেই নদীর সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক নদীতে সাঁতার কেটে গোসল করাবিকেলে নদীর পাড়ে বসে সমবয়সী বন্ধুদের সাথে বসে  পালতোলা নৌকা দেখা নদীতে স্রোতের বিপরীতে চলা বড় বড় মালবাহী নৌকার মাঝিদের দাড় বেয়ে কিংবা গুন টেনে দূরদূরান্তে চলে যাওয়ার দৃশ্যগুলো দেখার স্মৃতি এখনো আমার উজ্জ্বল সৃতিতে মনে পড়ে আগে আমাদের শীতলক্ষ্যা নদীতে প্রচুর মাছ জেলেদের জালে ধরা পড়তো নদীর দুই পাড়ে গড়ে উঠা শিল্প-কলকারখানার বর্জ্য দূষণের কারণে নদীতে আগের মতো মাছ জেলেদের নৌকার জালে ধরা পড়ে না ৮০ দশক পর্যন্ত ছৈওয়াল নৌকায় করে দূরদূরান্তে আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার আনন্দের কথা আমি এখনো ভুলতে পারি  নাই শিশু বয়সে মায়ের সাথে আমার নানার বাড়ি বেড়াতে যেতাম দীর্ঘ নৌপথ পাড়ি দিয়ে সেই সময় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না নৌকা কিংবা রেলগাড়ি ছিল আমাদের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম   আমার নানার বাড়ি বর্তমান নরসিংদী জেলার ছোটো ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে অবস্থিত একসময় এই শাখা নদে বড় বড় পালতোলা মালবাহী গয়না নৌকা চলাচল করতো কালের বিবর্তনে ব্রহ্মপুত্রের এই শাখা নদটি বর্তমানে  ছোটো খালে পরিণত হয়েছে বাবার চাকুরির সূত্রে আমার কিশোর বেলা কেটেছে পদ্মা নদী ঘেঁষা  ফরিদপুর শহরে স্কুলের বন্ধুদের নিয়ে আমরা মাঝেমধ্যে নৌকায় করে প্রমত্তা পদ্মা নদীতে নৌকায় করে ঘুরে বেড়াতাম নৌকা চালানোর কায়দাকানুন আমি সেখান থেকেই শিখেছি  সেই দিনগুলোতে নদীতে অসংখ্য রংবেরঙের পাল তোলা নৌকার দেখা মিলতো বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ নদ-নদীখাল-বিল কিংবা হাওর-বাঁওরে পুরনো দিনের কাঠের নৌকাগুলো ঠিক তেমন চোখে পড়ে না কাঠের তৈরি নৌকার জায়গা দখল করেছে স্টিলের তৈরি যন্ত্রচালিত ট্রলার নৌকা এগুলোর অধিকাংশই মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হয় সম্প্রতি আমি নদীতীর ঘেষা সড়কপথে রূপগঞ্জের কাঞ্চন থেকে কালীগঞ্জে আমার গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দীর্ঘ পথে আমার চোখে একটিও কাঠের তৈরি নৌকার দেখা মিলে নি নদী পারাপারের জন্য কিছুদূর পরপর ইঞ্জিনচালিত খেয়া নৌকার দেখা মিলেছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা নদীসহ বাংলাদেশের অন্যান্য ছোটবড় নদ-নদীর চিত্রগুলো বলতে গেলে একই রূপ ধারণ করেছে নদীতে কাঠের তৈরি পালতোলা নৌকার দেখা মিলে না দেখা মিলে না দাড় বাওয়া কাঠের নৌকাগুলোর অথচ পালতোলা নৌকাগুলো হচ্ছে আমাদের দেশের নদীর অলংকার স্বরূপ একটি পালতোলা নৌকা নদীর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ যন্ত্রচালিত নৌকায় বিকট ভট ভট আওয়াজ নদীর নীরবতায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে নদীর অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করার আকর্ষণ আমরা প্রকৃতি প্রেমিক মানুষরা দিনে দিনে হারিয়ে ফেলছি জেলেদের নৌকা ছাড়া আমাদের চিরচেনা হাওর অঞ্চলের বাকিসব নৌকাগুলো এখন আর চোখে পড়ে না সেখানে ভ্রমণপিয়াসী মানুষদের জন্য নির্মিত হয়েছে স্টিলের তৈরি বিচিত্র নকশার নৌকা কিংবা ট্রলার আলোকচিত্রের বিশাল শক্তিশালী ক্যানভাসেই শুধু জীবন্ত হয়ে আছে চিরন্তন বাঙালি সংস্কৃতির এই অমূল্য সম্পদ স্বচ্ছ পানির কলতান আর পালে লাগা বাতাসের পত পত শব্দ সুন্দর অনুভূতি জুগিয়েছে আমাদের প্রাণে

পালের নাওকে উপজীব্য করে যুগে যুগে কবি-সাহিত্যিকরা রচনা করেছেন তাঁদের অমূল্য সৃষ্টি কবিতা, ছড়া, গল্প, গান পালা ইত্যাদি প্রখ্যাত শিল্পীরা তৈরি করেছেন উঁচু মানের শিল্পকর্ম শুধু দেশি কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী বা রসিকজনই নন বরং বিদেশি অনেক পর্যটকের মনেও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে পালের নাও

প্রবীণ মাঝিরা নৌকা চালানোর বিভিন্ন কলাকৌশল সম্পর্কে বেশ পারদর্শী ছিলেন তাদের হিসেব রাখতে হতো জোয়ার-ভাটার, বিভিন্ন তিথির এবং শুভ-অশুভ ক্ষণের কথিত আছে, বিজ্ঞ মাঝিরা বাতাসের গন্ধ শুঁকে বলে দিতে পারতেন ঝড়ের আগাম খবর রাতের আঁধারে নৌকা চালানোর সময় দিক নির্ণয়ের জন্য মাঝিদের নির্ভর করতে হতো আকাশের তারার ওপর তাই আগেভাগেই শিখে নিতে হতো কোন তারার অবস্থান কোন দিকে

গঠনশৈলী পরিবহনের ওপর নির্ভর করে অঞ্চলভেদে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের নৌকার প্রচলন রয়েছে যেমন ছিপ, বজরা, ময়ূরপঙ্খী, গয়না, পানসি, কোষা, ডিঙি, পাতাম, বাচারি, রপ্তানি, ঘাসি, সাম্পান, ফেটি, নায়রি, সওদাগরি, ইলশা, পালতোলা নৌকা, কেড়াই নৌকা, বেদে বা সাপুরিয়া নৌকা, ভোট নৌকা, বৌচোরা নৌকা, লক্ষ্মীবিলাস, গন্ডীবিলাস, খেয়া নৌকা, বাইচের নৌকা এর মধ্যে অধিকাংশই প্রায় বিলুপ্তির পথে কিছু আবার একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে আর বাকিগুলো এখন জাদুঘরে একই সঙ্গে কমে যাচ্ছে মাঝিমাল্লা নৌকা তৈরির কারিগরের সংখ্যাও

আমাদের দেশে চট্টগ্রাম অঞ্চলের  সাম্পান নৌকা সর্বাধিক পরিচিত সাগরে নদীতে যাত্রী মালামাল নিয়ে চন্দ্রাকৃতির এই নৌকাগুলো চলাচল করে

আগের দিনে বাংলার জমিদার এবং বিত্তশালীদের নৌভ্রমণের শখের বাহন ছিল বজরা এতে খাবার-দাবার ঘুমানোসহ নানা সুবিধা থাকত কোনোটাতে পালও লাগানো হতো এতে চারজন করে মাঝি থাকত যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নতির কারণে বহু আগে এই নৌকার কদর কমেছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহৃত বজরা নৌকাটি কুষ্টিয়া শিলাইদহের কুঠি বাড়িতে এখনো সংরক্ষিত আছে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় বজরা নৌকার প্রচলন অনেক দিন আগেই উঠে গেছে

ময়ূরপঙ্খি নৌকার প্রচলন ছিলো রাজা-বাদশাদের আমলে নৌকার সম্মুখভাগ ময়ুর আকৃতি হওয়ার কারণে এই বিশেষ ধরনের নৌকাগুলোকে ময়ুরপঙ্খী নাও বলা হতো ১৯৫০ সালের পরে এই নৌকাগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে

পদ্মা মেঘনা নদীতে ইলিশ মাছ আহরনের জন্য লম্বাকৃতির ইলিশা নৌকা ব্যবহৃত হয়ে আসছে আগে এই ধরনের নৌকাগুলোতে পাল ব্যবহৃত হতো

নৌভ্রমণে দূরে কোথাও যাওয়ার একমাত্র অন্যতম মাধ্যম ছিল পালতোলা পানসি নৌকা সম্রাট আকবরের আমলে নৌকায় করে জমিদাররা বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য করতে যেতেন বর্ষায় ভাটি অঞ্চলে নাইওরি বহনে এই নৌকার জনপ্রিয়তা ছিল এই পানসীতে চড়ে মাঝিমাল্লার ভাটিয়ালি, মুর্শিদী আর মারফতি গান গেয়ে মন কেড়ে নিত যাত্রীদের

পালতোলা পানসির মতো ছইওয়ালা একমালাই ছিল দূরপাল্লার নৌকা আজও এর দেখা মেলে বরিশালের দুশুমি গ্রাম এর আশপাশের এলাকাসহ উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের শতাধিক পরিবারের সদস্যরা ছইওয়ালা নৌকার মাঝি হিসেবে বাপ-দাদার পেশাকে এখনো আঁকড়ে ধরে রেখেছেন

গোড়ালিসহ তালগাছ দিয়ে তৈরি ছোট নৌকা বিশেষ এটি তালের নাও বা কোন্দা নামে পরিচিত ডোঙা বেশ টেকসই কিন্তু প্রস্থতা এতই কম যে এতে খুব বেশি মানুষ বা মালামাল বহন করা যায় না একটু বেসামাল হলে ডোঙা উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে তাল গাছের কোন্দা সহজে পচে না বলে ডোঙা বেশ কয়েক বছর ব্যবহার করা যায়

আমাদের দেশে  সবচেয়ে পরিচিত নৌকা হচ্ছে ডিঙি যারা নদীর বা হাওর-বাঁওড়ে তীরে বাস করে, তারা নদী পারাপার, মাছ ধরা অন্যান্য কাজে এই নৌকাটি ব্যবহার করে আকারে ছোট বলে এই নৌকাটি চালাতে একজন মাঝিই যথেষ্ট মাঝে মধ্যে এতেও পাল লাগানো হয় এখনো গ্রামগঞ্জে অসংখ্য  ডিঙি নৌকার  দেখা মিলে

ভারি এবং বেশি ওজন বহন করার উপযোগী নৌকা হলঘাসী নৌকা এটি মালামাল পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হতো তবে এখন আর ঘাষী নৌকা দেখা যায় না

পাবনা অঞ্চলে এক সময় তৈরি হতো মল্লার নৌকা এটাও মূলত মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হতো ১২ থেকে ৫৬ টন ওজনের ভার বহনে সক্ষম মল্লার নৌকায় পাল থাকে দুটি, দাঁড় ছয়টি ধরনের নৌকাও এখন বিলুপ্তির পথে

কুষ্টিয়া অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী নৌকা ছিল বালার এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সেই প্রাচীনকাল থেকে এই নৌকা ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই নৌকাগুলো আকারে বড় হয়, যা দৈর্ঘ্য ১২ থেকে ১৮ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে বৈঠা বায় ১০ থেকে ১২ জন মাঝি নৌকায় পাল থাকে দুটো

ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য সওদাগররা এই সওদাগরি নৌকা ব্যবহার করে দেশ দেশান্তরে ঘুরে বেড়াতেন এসব নৌকায় অনেক লোক বহন করার ক্ষমতা ছিল এতেও পাল লাগানো হতোÑযা এখন বিলুপ্ত

নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা আমাদের দেশে জনপ্রিয় একটি ৎসব বাইচের নৌকাগুলো লম্বায় ১০০ থেকে ১৫০ ফুট লম্বা হয়ে থাকে আমাদের দেশে প্রতি বছর ভাদ্র-আশ্বিন মাসে ৎসবমুখর পরিবেশে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে

 

নদীনির্ভর বাংলাদেশে নৌকা বেদেদের বাহন ছোট সাইজের ছইওয়ালা নৌকার বহর নিয়ে বেদেরা  ঘুরে বেড়ায় দেশ-দেশান্তরে সাধারণভাবে নৌকাকে বাদিয়া-বাইদ্যা বা বেদের নৌকা নামে পরিচিত

গ্রামীণ নৌকা জীবনে এসেছে যান্ত্রিকতা যান্ত্রিক সভ্যতার ছোঁয়ায় হারিয়ে গেছে নৌকা এখন আর মাঝিকে গুণ টেনে নৌকা চালাতে হয় না সবকিছু এখন শুধুই স্মৃতি কালের আবর্তে এক সময় পরবর্তী প্রজন্মের শিশুরা ভুলে যাবে, ‘পালের নাও, পালের নাও, পান খেয়ে যাও ইত্যাদি ছড়া বিচিত্র রঙের পালের বাহারিতে ঝলমল করবে না, দেশের নদ-নদী, খাল-বিল

 

Leave a Reply

Your identity will not be published.