না-ফেরার দেশে ফরিদা পারভীন

না-ফেরার দেশে ফরিদা পারভীন

তিনি গান শুধু গাইতেন না, গানের মধ্য দিয়ে নিজেকে নিবেদন করতেন। প্রার্থনার মতো। সেই সময় তিনি জগৎ-সংসার ভুলে গানের মাঝেই মগ্ন থাকতেন। বলা যায়, লালনগীতির কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অনন্যা। স্বতন্ত্র। অসাধারণ। অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

তিনি ফরিদা পারভীন। গতকাল দিবাগত রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্বামী এবং চার সন্তান রেখে গেছেন।

দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন ফরিদা পারভীন। কিছুদিন ধরে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছিল, সপ্তাহে দুই দিন তাকে ডায়ালাইসিস করাতে হয়। নিয়মিত ডায়ালাইসিসের অংশ হিসেবে ২ সেপ্টেম্বর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। কিন্তু ডায়ালাইসিসের পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তখন চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরামর্শ দেন। এর পর থেকে তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত বুধবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ভেন্টিলেশনে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অবশেষে চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে তিনি চলে যান না-ফেরার দেশে।

লালন সাঁইজির গানের বাণী ও সুর জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে ফরিদা পারভীনের অবদান সর্বজনস্বীকৃত। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বদরবারেও তিনি লালন সাঁইজির বাণী ও সুরকে প্রচারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আরও বহু দেশে লালনসংগীত পরিবেশ করেছেন। লালনসংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক পান ফরিদা পারভীন। এর বাইরে ১৯৯৩ সালে ‘অন্ধ প্রেম’ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত ‘নিন্দার কাঁটা’ গানটির জন্য শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পী (নারী) হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ২০০৮ সালে জাপানের ফুকুওয়াকা পুরস্কার লাভ করেন।

বরেণ্য লোকসংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীনের লাশ আজ সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হবে। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য এক ঘণ্টা সেখানে তার মরদেহ রাখা হবে।

ফরিদা পারভীনের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বেলা ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে মরদেহ কুষ্টিয়ায় নিয়ে যাওয়া হবে। তার শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী বাবা-মায়ের কবরের পাশে কিংবদন্তি এই শিল্পীকে দাফন করা হবে।

মৃত্যুর পরও ফরিদা পারভীন বেঁচে থাকবেন, তাঁর গানের মাঝেই। আর আমাদের কাছে ‘অন্যদিন’ পরিবারের একজন হিসেবে, ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছো নয়নে নয়নে’।

Leave a Reply

Your identity will not be published.