বারুদের গন্ধ লোবানের ধোঁয়া

বারুদের গন্ধ লোবানের ধোঁয়া

বারুদের গন্ধ আর ভালো লাগে না।

ক্যাপ্টেন বশীর নিজের মনে বিড়বিড় করলে। মহকুমা কাচারির পাশেই এই বিল্ডিং সে অফিস বানিয়ে নিয়েছিল গত চার মাস। এলাকার লোক শান্তিপ্রিয়। তেমন কোনো গোলমাল করে নি কেউ। সব সাচ্চা মুসলমান। সবাই পাকিস্তান চায়। এই দিক থেকে ক্যাপ্টেন বশীর নিশ্চিন্ত ছিল। মাঝে মাঝে গোয়েন্দারা দুচারটে কালো ভেড়ার খবর আনত, তাদের রাস্তার কাঁটার মতো সরিয়ে ফেলতে বেশি দেরি হতো না। গ্রেফতার করে নিয়ে আসা এবং দিন শেষ হওয়ার যা অপেক্ষা। অন্ধকারে তারপর পাকিস্তান-বিরোধী নিমকহারামদের আর কোনো নাম-নিশানা থাকত না দুনিয়ায়। বিলম্বে অথবা প্রকাশ্যে শাস্তি দিলে ফল খারাপ হয়, তা ক্যাপ্টেন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছিল এই এলাকায় নয়, অন্য অঞ্চলে।

কলেজের এক ছাত্রকে ধরে এনেছিল জওয়ানেরা। রেললাইনের ধারে তার গতিবিধি কেমন সন্দেহজনক ঠেকেছিল। তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধরে আনা। তাকে সওয়াল জওয়াবের ফেরে ফেলেছিল ক্যাপ্টেন নিজে, কাজেই কথাগুলো এখনো কানে বাজতে থাকে।

তৌম কোন হো ?

স্টুডেন্ট!

ষোল-সতর বছরের ফর্সা যুবক। শীর্ণ দেহ। মুখে মেয়েলি ধরনের ছাপ থাকলেও কণ্ঠস্বরে দৃঢ়তার অভাব ছিল না।

ডরতি নেই ?

কিঁউ ?

স্টুডেন্ট লোক বড় বদমাস। বাংলাদেশ, বাংলাদেশ করত্যা হ্যায়, শোর মাচাতা হ্যায়। উসকা সাজা ভি হামলোগ দিয়া।

ঠিক হ্যায়।

সায় শুনে একটু অবাক হয়ে গিয়েছিল ক্যাপ্টেন, তাই সন্দেহ পরিষ্কারে আবার জিজ্ঞেস করেছিল, কিয়া ঠিক হ্যায়।

সব ঠিক হ্যায়।...

বেশ ভেতরে ভেতরে গর্জে উঠেছিল তখন ক্যাপ্টেন বশীর, তবু ঠান্ডা মেজাজে কথাগুলোর সঠিক হদিস ধরতে তৎপর। আবার প্রশ্ন। আবার জবাব, সেই জবাব। পাঁচ মিনিট এইভাবে চলার পর বশীর ক্যাপ্টেন আর মেজাজ রাখতে পারে নি। চিৎকার দিয়ে উঠেছিল, কিয়া ডরতা নেহি ? তার কোনো জবাব দেয় নি কয়েদি, বরং সোজাসুজি ক্যাপ্টেনের চোখের দিকে তাকিয়েছিল। বড় অদ্ভুত দৃষ্টি। সেখানে চ্যালেঞ্জের ভঙ্গি নেই, ঘৃণা নেই, ভীতি নেই। অসহায়তার লেশমাত্র অনুপস্থিত। চোখ নামিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন প্রশ্নকর্তা। আরও এক পাহারাদার জওয়ান স্টেনগান হাতে মজা দেখছিল। চেয়ারে উপবিষ্ট ক্যাপ্টেন। সামনে আসামি। টেবিলের উপরে রাখা একটা রিভলভার। হঠাৎ মরিয়া কয়েদি সেদিকে হাত বাড়াতে পারে। সান্ত্রীর মনে একটা কথা উদয় হওয়ার ফলে তার সতর্কতা আরও বেড়ে গিয়েছিল। কী মনে করে ক্যাপ্টেন আর সোজাসুজি পথে না গিয়ে কয়েদিকে কয়েকদিন হাজতে রাখতে হুকুম দিয়েছিল। কিন্তু গারদের মধ্যেই সেই তরুণের মৃত্যুসংবাদ আসে পরের দিন। জওয়ানদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির ফলে নাকি দুই সিপাই তাকে বেদম লাথি দিয়েছিল। শীর্ণ দেহের একহারা চেহারা, তাগড়া পাঞ্জাবির সবুট গোড়ালির আঘাত বেশিক্ষণ সইতে পারে নি। ক্যাপ্টেন বশীর খবর পেয়ে ভয়ানক ক্ষেপে উঠেছিল। সব সিপাইদের সে কোর্ট মার্শাল করবে। এক জোড়া চোখের প্রশ্নের জবাব সে দিতে পারে নি। তাই অমন তুমুল গোস্সা। কিন্তু এক সিপাই তখন সাহস করে বলেছিল, আপ জানতে নেহি এই বাঙ্গালি কা বাচ্চালোগ কিয়া হ্যায় ?

বাঙ্গালি !

শব্দটা ক্যাপ্টেন বশীরের কাছে তখন মনে হয়েছিল যেন অবলম্বন, সাঁতার অনভিজ্ঞ ডুবে যাওয়ার সময় যা অন্বেষণ করে। সংবিত ফিরে পেয়েছিল ক্যাপ্টেন। একবার মনে হয়েছিল, মৃত লাশের চোখ দুটো সে দেখবে : তেমনি দীপ্ত, রহস্যময় না কিন্তু আর সাহস পায় নি। সৈনিক জীবনে আবেগের অত মূল্য দিলে ফকিরি নিতে হয়। তাছাড়া অফিসারদের মেসে যা আলোচনা হয়েছিল গত সপ্তাহে, সেখানে একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে গেছে : বাংলাদেশের জন্ম মানে পাকিস্তান বরবাদ। বছর বছর ডিফেন্সের আড়াই শ’ কোটি টাকা গচ্চা কে বহন করবে ? অতএব, বাঙালিদের ওপর কট্টর শাসন ছাড়া সব অচল হয়ে যাবে...ইত্যাদি ইত্যাদি। আবেগ যেভাবে ঝেড়ে ফেলেছিল ক্যাপ্টেন বশীর দুই চোখের দৃষ্টি তেমনভাবে মুছে ফেলতে পারে নি সেদিন। সন্ধ্যায় অন্য এলাকা থেকে আগত আরও দুই অফিসারসহ বহুত স্কচ হুইস্কি পানের মধ্যেও তার মনে হয়েছিল, এক তরুণ তার গতিবিধি লক্ষ করছে। তাই সিগারেটের পর সিগারেট টেনে রাশ রাশ ধোঁয়া ছেড়ে এবং হাম পেয়ালাদের সঙ্গে কিছু খিস্তিজাত রসিকতায় ডুবে থাকলেও স্বস্তি ছিল না ক্যাপ্টেনের।

সেই জন্যেই হয়তো সে হঠাৎ হঠাৎ নিজের মনে বিড়বিড় করে উঠত, বারুদের গন্ধ আর ভালো লাগে না। কিন্তু কর্তব্যপরায়ণ পাকিস্তানি হিসেবে ক্যাপ্টেনের খ্যাতি গোটা জেলায়। কোনো সামরিক অপারেশনে গেলে ক্যাপ্টেন বশীর কোনো অফিসারসুলভ আত্মাভিমান রাখত না। একটা নিরক্ষণ জওয়ানের পক্ষে যা সম্ভব, সেও তা করতে সক্ষম ছিল। গর্ভিনী মেয়ের স্ফীত উদরে বেয়নেট সে নিঃসংকোচে ঢুকিয়ে দিতে পারত। মৈথুনরত কুকুর-কুকুরীর পাশে প্রজনন মৌসুমে আরও কুকুর যেমন নিজেদের পালার প্রত্যাশালোভে দাঁড়িয়ে থাকে, অন্যান্য জওয়ানদের সঙ্গে ক্যাপ্টেন তেমনি একবার অপেক্ষা করেছিল, একটি রমণী পাঁচজনের শিকার। জওয়ান এবং অফিসার একই আসনে সমাগত। ইসলামি সাম্যের এমন পরিচয় দিতে ক্যাপ্টেন বশীর কোনোদিন পেছপা হয় নি। অথচ মাঝে মাঝে দুটো চোখ—তাও কবেকার মৃত চোখ কেন জানি, বিভীষিকার মতো তার পিছু নিয়েছিল। হয়তো অতীতের কোনো জের। হাজার লোক, লাহোর এচিশন কলেজে পড়া শরীফ খান্দানের ছেলে, একদা মীর, তকী, গালিবের কাব্যপিপাসু, ইংল্যান্ড-আমেরিকা-ফেরত, অমন শৌখিন চেহারা, ধোপ-দুরস্ত ইউনিফর্ম-সৌন্দর্যের প্রতি কিছু টান থাকবে বৈকি। সুতরাং চোখের মায়া স্বাভাবিক কিছু নয়। কবিমাত্রে নয়ন তপস্বী। হয়ত অতীতের জের।

কিন্তু এসব হামেহাল ব্যাপার বা পদে পদে অঘটন ঘটায় নি কোনোদিন। দুটো চোখ যেন অ্যামবুশ করে থাকে বহু শরীরের তলায়—যার মোকাবিলা সম্ভব নয়।

ক্যাপ্টেন বশীর অফিসে বসেছিল আনমনা। জানালা-পথে বিরাট সবুজ প্রান্তর দেদার বিস্তৃতি নিয়ে দূরে এক গ্রামের রেখার ভেতর ঢুকে গেছে। তেমন কোনো তাড়াহুড়ার কাজ নেই। বাংলাদেশে বর্ষার আকাশ হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে। বাইরে তাকালে মনে হয়, সবই শান্ত। গোটা দেশ শান্ত। তেমন কোনো চিন্তা বশীরকে আচ্ছন্ন করে থাকে নি। তবু হঠাৎ বিড়বিড় উচ্চারণ করে ফেলেছিল, বারুদের গন্ধ আর ভালো লাগে না। মুখ থেকে শব্দ বেরিয়ে যাওয়ার পর তার হুঁশ হয়। তখনই অসোয়াস্তির আরম্ভ। আর সুন্দর অভিনব চোখ দুটো তার চোখের দৃষ্টি তখনই মাড়িয়ে যেতে লাগল। এই উৎপাত থেকে রেহাই পেতে কিছু ভাবুকতার আশ্রয় নিতে গেল ক্যাপ্টেন সাহেব, বাইরের দৃশ্য যখন দূরে দূরে টেনে নিয়ে যায়। কিন্তু কোনো কাজ হলো না। দেরাজ থেকে তখন বিয়ারের বোতল, গ্লাস বের করে ঢকঢক এক চোঁ দিয়ে অনেকখানি হলকুমের ওদিকে পাঠিয়ে দিলে। ঝাঁজ কড়া। কিছু দিলে বৈকি। ক্যাপ্টেন বশীর তখন স্মৃতিচারণার দিকে ধাইলে। লাহোরের তিক্কা চাপলী সহযোগে ইয়ারী সন্ধ্যা, হীরামণ্ডিতে পিতার রক্ষিতা, পারিবারিক কলহ, ইরাবতীর কোলাহল, টাংগাওয়ালার চিৎকার, আনারকলির ভিড়...।

কিন্তু অস্বস্তি পরমুহূর্তে আরও ঘনিয়ে আসে। বরং আত্মসমীক্ষা কিছু আনন্দ দিতে পারে। মাঝে মাঝে বিপরীত আচরণ কোথা থেকে আসে ? ক্যাপ্টেন ঠিকই আঁচ করেছিল। বিয়ারের চেয়ে আরও ঝাঁজালো নিজের দিকে তাকানোর চেষ্টা, নিজেকেই কসাইয়ের মতো কুচি কুচি কাটা। তা যেন মেক্সিকোর নির্জলা ‘রাম’। নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়েছিল ক্যাপ্টেন বশীর—মীরণশাহ কবরস্থান থেকে কথাশিল্পী মরহুম সাদাত হোসেন মিন্টু বেরিয়ে এলে তিনি এমন বিস্মিত হতেন না। বিপরীত আচরণ আসে কোথা থেকে ? নিজের জিজ্ঞাসার পিছুপিছু তখন দৌড়াতে থাকে ক্যাপ্টেন বশীর। মনে পড়ে, চার মাস আগে এখানে বদলি হওয়ার আগেকার এক দুপুরের দৃশ্যাবলি।

বাংলাদেশের চৌষট্টি হাজার অন্যতম এক গ্রামে তারা অপারেশনে গিয়েছিল। মহকুমা সড়কের পাশে অবস্থান বিধায় জিপ-লরি ইত্যাদি নিয়ে প্রায় একশোজন সিপাই। সব ধরনের অস্ত্রসস্ত্র সঙ্গে, তা বলা বাহুল্য। একদিন আগে এই পথে মুক্তিবাহিনী একটা ব্রিজ উড়িয়ে দেয়, সঙ্গে সঙ্গে একটা জিপ। যার ভেতর ছিল অফিসারসহ আরও চার জওয়ান। সকলেই ফৌত হয়। তারই বদলা। ভোর হওয়ার আগেই তারা গোটা গ্রাম ঘিরে ফেলেছিল। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অপারেশন। নির্বিচার হত্যা, অগ্নিদাহ, লুট। রমণীর চিৎকার, আর্তনাদ, আগুনের লেলিহান শিখা, প্রাণভীত মানব-মানবীর দৌড়, বেয়নেট গাঁথা শিশু, মেশিনগানের খটখট রব—নারকীয় তাণ্ডবের নানা অধ্যায়। বিরাট গ্রাম। বহু জনঅধ্যুষিত। ঝোপঝাড়, বাঁশবন পরিপূর্ণ। অনেক সময় লেগেছিল। একতরফা যুদ্ধ। এখানে প্রতিবাদ শুধু হাহাকার, ক্রন্দন এবং অবধারিত মৃত্যুর মুখে পৃথিবীকে এক লহমা দেখার আকুলতা—স্নেহ মায়া মমতার সকল বন্ধন ছেঁড়ার অসম্ভব প্রয়াস। বড় গ্রাম, তাই শেষ হয়েও শেষ হয় না। লুটের জন্য আরও বিলম্ব ঘটে। ধ্বংসের লেলিহান জিভ তাই সংযত করতে হয় কোনো এক সময়। এক হিসেবি সিপায়ের হিসাব অনুযায়ী শিশুনারী পুরুষ মিলে পাঁচ শ’ মৃত, দু’হাজার অন্তত জখম।

এই দলের পরিচালক ক্যাপ্টেন বশীর। নিজের সঙ্গে আরও চৌদ্দজন জওয়ান। সামনে পড়ল একটা টিনের ঘর। আশপাশ দেখে মনে হয়, এককালে অবস্থা ভালো ছিল। বাড়ির সামনে টিনের ফটক। বশীরের নির্দেশে আর কেউ গুলি ছোড়ে নি। আর বেশি লাভ নেই আতঙ্ক বাড়িয়ে।

ফটকে লাথি মেরেছিল এক জওয়ান। ঢনঢন শব্দ চতুর্দিকের নারকীয় আবহাওয়ার মধ্যে যেন কেয়ামতের ঘোষণা।

এক বৃদ্ধ ফটক খুলে দিয়েছিল। দাড়িধারী জয়ীফ মানুষ। তাই এক জওয়ান হাত তুলেও নামিয়ে নিল। ভিড়ভিড় দল বেঁধে সিপাইরা ঢুকে গেল। হাতে উঁচানো হালকা মেশিনগান। কারও কারও হাতে রাইফেল।

সকলকে কিন্তু থমকে দাঁড়াতে হয়েছিল।

উঠানে সাদা চাদর ঢাকা কী যেন খাটের ওপর। লাশই হবে। তা কারও বুঝতে দেরি হয় না। অস্পষ্ট শব্দে কলেমা শাহাদাৎ পড়ছে তিন-চারজন। একজন কোরান মজিদ তেলওয়াত-রত। খাটের কিনারায় মাথা রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিল দুই সুঠামদেহী তরুণী। এক একবার মুখ তুলছে তারা। দুইজনে যুবতী। আলুথালু চুল এবং কান্নায় কান্নায় কোটরগত চোখ। ডুকরে কেঁদে উঠল একজন। লাশ, হ্যাঁ লাশ। তিন-চারটে লোবানদান থেকে ধোঁয়া উঠছে। তারই গন্ধে জায়গাটা যেন গোটা বসুন্ধরা থেকে নির্বাসিত। একদম মৃত্যুর পরিবেশ। ক্যাপ্টেন কী নির্দেশ দেয় তারই প্রতীক্ষায় সিপাইবৃন্দ। বশীর এক সময় জিজ্ঞেস করেছিল, কৈসে মরা ? কীভাবে মরল ?

বুখার থা।

কলেমা শাহাদাৎ-পাঠক একজন জবাব দিয়েছিল। যুবতী যুগলের দিকে চোখ ফিরিয়েছিল ক্যাপ্টেন এবং তার অনুচরবৃন্দ। হামলাকারীরা সকলে স্তব্ধ। আওয়াজ তুলছিল শুধু পবিত্রগ্রন্থ পাঠক এবং কলেমা উচ্চারণকারীগণ। ঈষৎ বাতাসে লোবানের ধোঁয়া সকলের নাকেমুখে এসে লাগে। তার সর্পিল কুণ্ডলী আকার ভেঙে ছড়িয়ে যায়।

আরও পাঁচ মিনিট।

শেষে ক্যাপ্টেন নির্দেশ দিয়েছিল, চলো ইয়ার। ছোড়ো আজ বহুৎ হুয়া। সবাই একে একে উঠান পরিত্যাগ করল, হয়তো লাশ দেখার খায়েশ তাদের সেদিনের মতো মিটে গিয়েছিল, পূর্বে বহু মৃতদেহ দেখার ফলে।

জিঘাংসার জায়গায় এমন বৈরাগ্যের উদয় সম্পর্কে ক্যাপ্টেন বশীর আজ হঠাৎ সচেতন হয়ে উঠল। নিজের অফিসের কামরায় বসে বসে কিন্তু কোনো জবাব পেল না। এমন অস্বস্তি। কিন্তু তার পেছনে নিরাবিল কী যেন আনন্দের রেশ ছিল। তাই আর সঠিক জবাবের জন্য কোনো কৌতূহল রইল না তার।

সদুত্তর পেত বৈকি ক্যাপ্টেন বশীর যদি ওই উঠানের পরবর্তী দৃশ্যাবলি তার চোখে পড়ত।

আরও দু’ঘণ্টা পরে।

হানাদার সেনারা একে একে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। তখন দিনের আলো আর কোথাও নেই। একটা পিদিম জ্বেলে এনেছিল যুবতীদের একজন। অস্পষ্ট আলো খাটের পাশে। তখন লাশের সিথানে কলেমা পাঠ দরুদ বন্ধ করে ফিসফিস ডাক দিয়েছিল, রণেশদা এবার উঠেন।

কথা শেষ হয় নি, সাদা চাদর ঠেলে লাশ ধড়মড়িয়ে ওঠে, লাফ দিয়ে খাটের বাইরে। তারপর আবার খাটের কিনারায় এবং পাশ থেকে স্টেনগান হাতে নিয়ে দ্রুত বলে চলেছিল এক সুদেহী যুবক ‘তাড়াতাড়ি করো। এ অন্ধকারেই সখিনা, তাহমিনাকে (যুবতীদের দিকে নির্দেশ) কোনো নিরাপদ এলাকায় নিয়ে যেতে হবে, আমি জানতাম।’

খাটের অন্য পাশ থেকে দুটো রাইফেল হাতে নিয়ে এক কলেমা পাঠক (পাঠ আগেই বন্ধ) জিজ্ঞেস করলে, কী জানতেন ?

জবাব এল তখনই, স্বাভাবিক মৃত্যুর কাছে, অপমৃত্যু নিয়ে যাদের কারবার এমন বর্বরও নাড়া খায়। বাজি ধরেছিলাম। এখন দেখছি ঠিক ঠিক কাজে লেগে গেছে।

দাদা, ভাই কী সৌভাগ্য আমাদের! আপনার মতো গেরিলাবাহিনীর লিডার পেয়েছি। শুধু উপস্থিত বুদ্ধির জোরে—কিন্তু মন্তব্য শেষ হওয়ার আগেই সদ্যজীবিত ব্যক্তি খেঁকিয়ে উঠল, আহ, কথা ছাড়ো। ওদের বর্বরতার শাস্তি দেওয়ার আগে আর কোনো কথা না। জলদি—বোন সখিনা, তহমিনা—জলদি যা পারো সঙ্গে নাও জলদি।

Leave a Reply

Your identity will not be published.