রেহাননামা

রেহাননামা

কাগজটি তার পিঠের নিচে ছিল। সরকারি টাকা ছাপমারা দলিল লেখার কাগজ নয়, সাদা মোটা কাগজ। বোঝা যায় দলিল-দস্তাবেজ কি দানপত্র কিংবা বন্ধকী তমসুকের জন্যেও এ কাগজ ব্যবহার করা চলে। সবচেয়ে বড় কথা কাগজের নিচের দিকে তার স্বাক্ষর। মাত্র দু’বছর আগেই সে সই করা শিখেছিল।

সাদা কাগজে কিছু লেখা নেই। শুধু ঐ স্বাক্ষরটি ছাড়া। একটি শব্দও নেই। ইচ্ছাপত্র যদি এটিকে বলা যায়, তাহলে তার ইচ্ছা কী ছিল তার কোনো হদিস নেই, অথচ যেমনভাবে, যেখানে, স্বচ্ছন্দে সই করা- দেখে মনে হয় এই ভূলোকে তার নামাঙ্কিত সব কিছুই সইয়ের ওপরে লিখে নেওয়া যায়। 

কেন অমন কাগজে সই করেছিল সে? কী দেওয়ার ছিল তার? কিংবা কিছু পাওয়ার জন্যেই কি? তাহলে দাতার সম্মতি কোথায়?

কী দেওয়ার থাকতে পারে তার? ভূমিহীন গ্রামীণ কৃষক, কী আছে তার? ছনের চাল বাঁশের বেড়ার দু’তিনটি ঘর এই তো। কী আর সম্পদ থাকতে পারে তার যে বিনা কথায় সব লিখে দেবে। অনেক দিনের চেষ্টায় অনেক পথ ঘুরে অন্যের জমি চাষ করে নিজ ঘরে ফসল তোলার ব্যবস্থা করেছিল সে ঠিক। রেহানী জমি অনেকটা।

অভাবিতই বলা যায়। আর সেজন্যেই আনন্দে, আশঙ্কায়, আশায় বলে ফেলেছিল, একবার খ্যাতভরা নিজের ফসল দ্যাখার লাইগ্যা জীবনডাও দিতাম পারি। সেই মুহূর্তের অতিশয়োক্তিই কি তার কাল হয়ে দাঁড়াল? জীবন দানের চুক্তি কোনো কাগজে লেখা যায় না। এ কথা সবাই জানে। আরো একটি ব্যাপার ঘটেছিল। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সমিতিতে যোগ দিয়ে কিছু লেখা, কিছু পড়া, নাম স্বাক্ষর করাও শিখেছিল। জমি রেহান নেওয়ার ঋণ মিলেছিল সেই সংস্থা থেকেই। নিজ হস্তাক্ষরে ঋণপত্র সই করেছিল সে। আর এই অসম্ভব ক্ষমতায় গর্বী সে কাগজ পেলেই সই করার চেষ্টা করত যাতে স্বাক্ষর আরো ভালো হয়। সাদা কাগজে সই করা কি ঐ জন্যেই?

ধানের ক্ষেতে বাতাস নেচে চলেছিল তখন। কার্তিক মাসের রোপা ধান। শীর্ষে পুষ্ট সবুজ ছড়া ঢেউয়ের মাথায় ওঠে, কখনো নিচে পড়ে যায়। গাঢ় সবুজ ফিকে হয়ে এসেছে, সেই ঢেউয়ে বোঝা যায়। কখনো হলুদও প্রায়। এক মাসের মধ্যেই কাস্তে হাতে মাঠে নামবে স্বপ্ন দেখা মানুষ। এতো দিনের অপেক্ষা, এতো দিনের শ্রম, অর্থ মাটিতে মিশে ছিল। ক্রমে সবুজ আশা হলুদ বাসনার সঙ্গে ঘরে উঠে আসবে। এই সময়ে কে সর্বস্বত্ব ত্যাগ করবে ঐ ক্ষেতের? হোক না তা রেহানী ক্ষেত। সেও তো তার অধিকারের মধ্যেই। সম্পদই তো।

দু’হাত ভরে দেবে ফসলে এমন জমি পাওয়া সহজ নয়। তবে নিজে কিনে নিতে না পারলেও চাষ করবার অধিকার পাওয়া যায়। ফসল তৈরির সব খরচা ভাগাভাগি করলে ফসলও ভাগাভাগি। আর নিজে সব করলে ফসলও থাকবে নিজের। এমনও হতে পারে যে, জমি রেহান নিয়ে আর একজনকে চাষ করতে দেওয়া যায়। কোনো খরচ নেই। ফসল শেষে কাঠা প্রতি ধান পাবে এক মণ। নিজে সব করলে কাঠা প্রতি সে রকম জমিতে চার পাঁচ মণ ধানও পাওয়া যাবে, যদিও বন্ধকী টাকা থাকে অক্ষত। জমির মালিক টাকা ফেরত দিলেই ফিরে পাবে তার জমি। রেহানগ্রহিতা ফিরে পাবে তার টাকা।

এমন জমিই সে নিয়েছিল। সমিতির সুপারিশে ঋণ নিয়ে অন্যের সুফলা জমি রেহান নিয়েছিল সে সব নিজে করবে বলে। আদিগন্ত ধানক্ষেতের আইলের কোনায় সেচ করবার কলও বসিয়েছিল ঐ টাকা থেকেই। একটা মাচা তৈরি করেছিল- ওপরে সমান্য ছাউনি। মাচার নিচে সেচের পাম্প।

মাচার চাটাইয়ে রাত্রিবাস। জল চুরি বন্ধ করার জন্যে। কেবল নিজ জমিতেই নয়, অন্যের ক্ষেতেও সেচ করত সে, অর্থের বিনিময়েই। এমনকি এই কাজে তার হাতে হাত লাগানোর জন্যে আর এক ভূমিহীনকেও সঙ্গে নিয়েছিল দৈনিক পারিশ্রমিকের বিনিময়ে। সব কিছু মিলিয়ে যে বৈভব তার মুঠিতে প্রায় সেটি কেন সে খুলে দেবে?

অবশ্য এই রকম মুঠিও অনেক খুলে দেয়। রোগশোক, কন্যাদায় বা আকস্মিক প্রয়োজন অনেককে বাধ্য করে নিজের স্বপ্ন অন্যের কাছে বিক্রি করে দিতে। তার ঐ রকম কোনো দায়, কোনো প্রয়োজনও ছিল না। অন্তত কেউ জানত না। কারো কাছে বলে নি সে।

তাহলে কি আরো কিছু ছিল অন্যের অগোচরে? একাকী কূলহীন পাথারে রাত্রিবাস। দিনশেষের আলো মুছে গেলে রাত্রিবাস তো একাকীই। স্বপ্নও দেখা যায় না তখন। ঘুমকে ঠেকাতে হয়। এসেছিল কি তখন কোনো অভিসারিণী? গ্রামের সীমানা পেরিয়ে, ফলন্ত ধানশীষের আড়ালে আড়ালে? অপরের অধিকার অগ্রাহ্য করে? সেই প্রিয় অপরাধের শান্তিই তাকে মাথা পেতে নিতে হয়েছে কি?

কিন্তু কেউ তেমন কিছু দেখে নি, শোনে নি, এমনকি যে মুনীষ কখনো কখনো রাত্রিবাসে তার সঙ্গে স্থান বদল করেছে, গভীর রাত্রিতেই, সেও কিছু শোনে নি কখনো। কেবল কর্মদাতার কাছে আসা দু’জন অতিথির কথাই জানে।

প্রায় দ্বিপ্রহরে সরু আইল ধরে ধানক্ষেতের সীমায় দাঁড়ানো গ্রামের গাছপালার ছায়া থেকে বেরিয়ে এসেছিল দু’জন মানুষ। সেচকলের সাময়িক সমস্যা নির্ণয়কালে কর্মরত কৃষকের চোখে তা পড়েছিল। ভিন্ন জনপদে যাওয়ার দূরত্ব হ্রাস করতে অনেকেই মাঠ পার হয়, তারা জানে। সরকারি রাস্তা ধরে গেলে তিন মাইল, মেঠো পথে তার অর্ধেক- যাবেই বা না কেন? এ রকম কেউ হবে মনে করে তারা কলের দিকে মন দিয়েছিল আবার। কিন্তু সেই দুই মানুষ তাদেরই জমির দাগ ধরে, কলঘর থেকে দূরে জমির অন্য সীমায় দাঁড়ালে তারা বিস্মিত হয়। চোখের ওপরে হাত তুলে দেখলে মনে হয় যেন চেনা তাই মুনীষকে কল চালাতে বলে আইলে দাঁড়ানো স্পষ্টতই গ্রামীণ নয় এমন দুজনের দিকে এগিয়ে যায় কৃষক। হতে পারে তারা সরকারি কৃষি বিভাগের লোক, অথবা সেই এনজিওর মাঠকর্মী ভেবে মুনীষ তার কাজে মন দিয়েছিল। 

অনেকক্ষণ কথাবার্তার শেষে কর্মদাতা কৃষক ফিরেছিল মুনীষের কাছে। তুই বাইত যা, কইবি দুইজন মেহমান লইয়া আমি আইতাছি। তুই একবারে খাইয়া আহিস। 

ক্ষেতি কাজের দিনমজুর একবার ভালো করে মেহমানদের চেহারা দেখার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সূর্য তখনো মাথার ওপরে নয়, অতিথির চোখ মুখ স্পষ্ট নজরে আসে না। সে হাত ধুয়ে উল্টো দিকে আইল ধরে পশ্চিমের গ্রামে চলে যায়। পৌষ যখন দরজায়, তখন দুজন অতিথি অনাকাঙ্ক্ষিত নয়। এই ভাবে সে হতে পারে ভিন্ন গ্রামের কুটুম্বই তারা। দীন আত্মীয়ের সৌভাগ্যে অংশীদার হতে এসেছে। খাতির যত্নের লোক নিঃসন্দেহে। না হলে এই শেষ কার্তিকের সম্বল ভাগ করবে কেন?

সূর্য মধ্যাহ্নরেখায় দাঁড়ায়, তারপর পশ্চিমের সিঁড়িতে পা রাখে যখন, গৃহস্থ তখনো অতিথিদের নিয়ে ঘরে আসে না। তার স্ত্রী অতিথি কারা না জেনেও যথাসাধ্য ব্যবস্থা করেছিল। না, উঠানে ঘুরে বেড়ানো মোরগটিকে কিংবা বাহির আঙিনায় শস্যকণার জন্যে বৃথা ধুলোমাটি খুঁটে বেড়ানো মুরগির কোনোটিকেই ডাকে না সে আতিথ্যের প্রয়োজনে। বিল থেকে পলো দিয়ে ধরা মাছ, ঘরের পেছনের সবজি এই। তবুও সুসময়ের চিহ্ন নিঃসন্দেহে। 

মুনীষটি ভাবে হয়তো তার ফিরে যাওয়ার জন্যেই অপেক্ষা করছে কলঘরের মালিক। একজন কেউ নজর রাখুক সব সময়, এই চায় সে। বেলার তাপ কমে আসে দেখে গৃহিণীও অবশেষে মুনীষের প্রাপ্য আহার্য দিয়ে দেয়।

আহার শেষে সাতবাড়ির আঙিনা পার হয়ে সবুজ মাঠের কিনারায় পৌঁছে যখন মুনীষ, তখন তার ছায়া সামনে চলে এসেছে। তাপহীন রোদ্দুর গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসা মানুষটিকে আরাম দেয়। সামনে ছড়ানো সবুজ-হলুদ মেশামিশি দেখে সে। দেখে দূরে তালগাছে আঁকা ভিন্ন গ্রামের সীমানা। অনেক দূর দিয়ে চলে যাওয়া ইউনিয়ন বোর্ডের রাস্তার দু’পাশে খেজুর গাছের সারিও চোখে পড়ে তার। এইসব ভালো লাগায় গলায় সম্ভবত কোনো সুরও উঠে থাকবে তার মনে। আর তখনই ফসল শেষ মাঠের খড়কুটো এই মুনীষটিরও মনে জমি রেহান নেওয়ার কথা আসে। আসবেই বা না কেন? সে নিজেও এখন সমিতির সদস্য। ‘অতি দরিদ্রের কাছে যাও’ এই কার্যক্রমের আওতায় সে-ও আর ছ’মাস পরেই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবে। হয়তো পাঁচ কাঠা সে পাবে না। হয়তো কলঘরও থাকবে না তার। কিন্তু তাতে কী? তিন কাঠা জমি তো হতে পারে। ভাগে করলেও অন্তত দু’ফসলী জমিতে পনের মণ ধান। ছ’মাসের দিন যাপন।

নানাদিক থেকে উল্টেপাল্টে ভাবে সে। হতে পারে তার রেহানী জমিও হবে ঐ কলঘরের পাশেই। ঐ পাম্পই প্রয়োজনীয় সেচ যোগাবে তার জমিতেও। শুধু একটি কথাই সে ভাবে না। সাদা কাগজে সেও কি স্বাক্ষর করবে? ততদিনে সেও শিখবে নিজ হস্তে অক্ষরাঙ্কন। সে ভাবে না, কেননা তখনো সে কিছু জানত না।

সুখের পথটুকু আনমনে পার হয় সে। কিন্তু দূর থেকে কোনো মেহমান দেখে না দাঁড়িয়ে আছে কলঘরের পাশে। মাচা ও ঢাকার মাঝের জায়গাটুকুতেও রাস্তার পোশাক পরা কাউকে দেখে না সে। এমনকি হতে পারে যে উল্টোদিকের পথ ধরে ঘুরে চলে গেছে তার বাড়িতেই? আরও কাছে এসে অবাক হয়। 

অতিথিদ্বয়ের চিহ্ন দেখা যায় না। তার গৃহস্থ এই অসময়ে শুয়ে আছে মাচায় বিছানো চাটাইয়ের ওপর। ঘুমন্ত কি? ক্ষুধায়?

একটু দূর থেকেই ডাক দেয় সে। তারপর কাছে আসে আবারও। আবার। আরো কাছে এসে দেখে। পা ধরে নাড়া দেয় আর অসময়ের হিম শরীর তাকে বিমূঢ় করে দেয়। গ্রাম্য ভূমিহীন দিনমজুর তখন সাতগ্রামের পরিচিত অপরিচিত সকলকে চিৎকার করে ‘এই দ্যাহো, দ্যাহো, খুন করছে, খুন করছে’ বলে ডাকতে থাকে। খুন এর চিন্তা তার মাথায় কেনো এলো কে জানে! মৃতের শরীরে কি শরীরের  পাশে কোনো রক্তচিহ্ন ছিল?

বিস্তীর্ণ প্রান্তরের মধ্যখানে যখন সাতগ্রামের মানুষের ভিড় জমে তখনো আলো মুছে যায় নি বৃক্ষশীর্ষ থেকে। সবুজ হলুদ ঢাকা পড়ছে কেবল প্রভাহীন বৈকালের ছায়ায়। 

কর্তব্য স্থির করতে সময় লাগে সাতগ্রামের মাতব্বর কৃষকেরও। এবার চাটাইয়ে মুড়ে কাঁধে করে তাকে স্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবও হয়। কিন্তু তার স্খলিত-বাসনা কৃষাণী দিগ্বিদিক জ্ঞান শূন্য মেঠো আইল বেয়ে ছুটতে ফুটতে এসে মৃতের শরীরে আছড়ে পড়ে। 

ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও দ্রুত খবর পেয়ে চলে আসে। শেষ সিদ্ধান্ত তারই। চাটাইয়ে মুড়ে দেহটিকে মৃতের নিজ আঙিনাতেই নিয়ে যাওয়া স্থির হয়। আর তখনই দেহটিকে তুলতে গিয়েই তার পিঠের নিচে সাদা কাগজের স্বাক্ষর করা প্রায় দলিলটি চেয়ারম্যানের চোখে পড়ে। 

হাত তুলে নিয়ে সে উল্টেপাল্টে দেখে কাগজখানা। তারপর হতবুদ্ধি নিজেকেই প্রশ্ন করে, এডা কী?

থানায় খবর পাঠায় চেয়ারম্যানই। রক্তপাতে কোনো চিহ্ন দেখে না সে। শরীরে আঘাতের কোনো দাগ নেই। কি অপরিচিত অতিথিদ্বয় ও সই করা কাগজ তাকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব এবং দারোগার অনুমতি ছাড়া সৎকারের কোনো ব্যবস্থা করা সঙ্গত হবে না, সে ঠিক বোঝে। সারা গ্রামের এ সমব্যথি স্ত্রীকুল শোক প্রকাশে মৃতের পরিজনের সঙ্গে গলা মেলায়।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের এস্তেলা পেয়েই হোক বা ঘটনার বিবরণ শুনেই হোক, দারোগা তার দল নিয়ে চলে আসে মোটর সাইকেলে চেপে। হাত পেতে কাগজটি নেয়। উল্টেপাল্টে সে-ও দেখে। তারপর ঐ প্রদোষেই সে চলে যায় মাঠ পার হয়ে কলঘরে। টর্চের আলোয় মাচান ও তার পাশের জমিতে পায়ের চিহ্ন খোঁজে। না, কিছু পাওয়া যায় না। কোনো ধস্তাধস্তির চিহ্ন? না কিছু না।

মুনীষটিকে নানাভাবে জিজ্ঞাসা করে দারোগা। কেমন লোক? কেমন পোশাক? চেহারা কেমন? লোক যে এসেছিল তার কোনো সাক্ষী আছে? মৃতের স্ত্রী রোরুদ্যমান জানায়, হ্যাঁ, মুনীষ তাকে বলেছিল, দুইজন অতিথি নিয়ে ঘরে আসবে কৃষক।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করে দারোগা। স্বাভাবিক মৃত্যু, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে- এই লিখলেই সব মিটে যায়। 

চেয়ারম্যান বলে। কিন্তু হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়েছিল আকস্মিকভাবে? কেন? কোন আনন্দে? কোন দুঃখে? কোন শোকের মুহূর্তে পড়ে যাবে সে মাটিতে? আর সেই লোক দু’টি? তারা কারা? কী জন্যে এসেছিল তারা? কোন কাজে? খবর পেয়ে এনজিওটির থানা অফিস থেকে দু’জন কর্মীও চলে এসেছিল। মোটর সাইকেলে চেপেই। না, এই সপ্তাহে এই গ্রামের সমিতি পরিদর্শন বা সদস্যের কর্মোদ্যোগ পর্যালোচনার কোনো সূচিই ছিল না তাদের। কেউ আসে নি এদিকে।

তখন তারা তিনজনে মিলে নানা পরামর্শ করে। আপাতদৃষ্টিতে দেহত্যাগ। কিন্তু ঐ রহস্যময় অতিথিদ্বয়, ঐ সই করা কাগজ? আবার আলোচনার শুরুতে ফিরে যায় তারা। মৃত্যু দূতের কথা অবশ্য বারবারই বলে গ্রামবাসী।

অন্তত থানা হাসপাতালে নিয়ে একবার ডাক্তারের মত নেওয়ার প্রয়োজন-এটা স্থির হয় অবশেষে। পরিজন এবং প্রতিবেশীবর্গের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও দারোগা শেষতক ঐ রাত্রেই মৃতদেহ থানা সদর হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

লণ্ঠনের আলো হাতে কয়জন গ্রামবাসীর কাঁধে শুয়ে সে হাসপাতালে যেতে থাকে। আসন্ন ফসলের মাঠ পার হয়েই। শুধু যে দৃশ্য দেখাবার জন্যে জীবন বাজি রেখেছিল সে, তার কিছুই তখন দেখা যায় না। তার ঐ অতিশয়োক্তির কথাও কেউ মনে করে না। জানত না বলেই।

মোটর সাইকেলে করে দারোগা আগেই চলে যায়। তার হাতে সেই কাগজটি। থানার ডাক্তার যদি মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করতে না পারে, তাহলে মৃতদেহটিকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠাতে হতে পারে।

কিন্তু ঐ কাগজটি? কাগজটি নিয়ে সে কী করবে? আছে কী এমন কোনো উপায় যা স্পষ্ট করবে অদৃশ্য কালিতে লেখা কোনো চুক্তির বয়ান?

Leave a Reply

Your identity will not be published.