‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসাবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’
এ হলো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা। তিনি আমাদের পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার মানুষ। আর তিনি যে এ দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন তা কে না জানে!
বঙ্গবন্ধুর জন্য আমরা আজ স্বাধীন দেশের অধিবাসী। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা তিনি। চব্বিশ বছর ধরে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে আপসহীন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন তিনি। জেল-জুলুম সহ্য করেছেন; মামলা হামলা আর রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে বিদ্ধ হয়েছেন। সবকিছু পেরিয়ে সত্তরের নির্বাচনে বাঙালিকে এনে দিলেন অবিস্মরণীয় জয়। পৌঁছে দিলেন পরাধীনতার শৃঙ্খলে নিষ্পেষিত জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্নের কাছাকাছি। এল ৭ই মার্চ, ১৯৭১। রেসকোর্স ময়দানে বজ্রকণ্ঠে ঘোষিত হলো, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ কবি উচ্চারণ করলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দিব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব, ইনশাআল্লাহ।’ রাজনীতির কবি শোনালেন মুক্তিকামী বাঙালিকে মুক্তির বাণী।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ, বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায়। এ বছর উদযাপিত হচ্ছে বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ। আমরা সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করছি তাঁকে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে ‘মুজিব শতবর্ষে এক্সিম ব্যাংক’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সম্প্রতি ব্যতিক্রমী এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ লিমিটেড।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এই আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও প্রধানন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম মজুমদার। এ সময় শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ শরাফত, এক্সিম ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ, মোঃ নূরুল আমিন ফারুক, মেজর (অব.) খন্দকার নূরুল আফসার, লে. কর্নেল (অব.) সিরাজুল ইসলাম বীরপ্রতীক (বার), খন্দকার মোঃ সাইফুল আলম, ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ ফিরোজ হোসেন এবং উপব্যবস্থাপনা পরিচালকবৃন্দসহ ব্যাংকের সকল নির্বাহী ও কর্মকর্তাবৃন্দ।
শোনো একটি মুজিবরের থেকে...
সেদিন, ৬ ফেব্রুয়ারি, মাঘ মাসের শেষার্ধ্বে শীতের এক সকালে হঠাৎ-ই আর্মি স্টেডিয়ামজোড়া সাউন্ডসিস্টেমে বেজে উঠল— ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি... বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।’
আসলেই তো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই বজ্রকণ্ঠই তো বাংলাদেশ। এক স্বপ্নের বাস্তবায়নে ভবিষ্যতের অমোঘ আহ্বান, যে ভবিষ্যতে এসে বাংলাদেশ নামের লালসবুজ ভূখ-ের বাস্তব জমিনে দাঁড়িয়ে সেদিন এক্সিম ব্যাংক উদ্যাপন করল বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী।
অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন এ আয়োজন
প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন তাঁর বক্তব্যে এক্সিম ব্যাংকের এই আয়োজনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বলেন, আজ আমরা এক বিশেষ কারণে এখানে এসেছি। মুজিববর্ষের যে আয়োজন আপনারা করেছেন, তা অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলেন— ‘আমরা বিজয়ীর জাতি, আমরা অবশ্যই বিজয় লাভ করব।’ আজকে এই মুজিববর্ষ আমাদের জন্য মন ও মানসিকতা পরিবর্তনের একটা বড় হাতিয়ার। বঙ্গবন্ধু সারাটা জীবন মানুষের জন্য দেশবাসীর জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমরা ভাগ্যবান যে তাঁর মতো ত্যাগী নেতা আমরা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের কারণেই আমরা স্বাধীন সার্বভৌম এই দেশ পেয়েছি বলেই আজ এখানে তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন করতে পারছি। মুজিববর্ষ আমাদের একটা সুযোগ করে দিয়েছে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করার। আর এর মাধ্যমেই দেশ উন্নত হবে, বিশে^ আমাদের মর্যাদা উচ্চ হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশ উপহার দেওয়ার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু আমাদের হৃদয়ে একটা স্বপ্ন দিয়েছেন, তা হলো ‘সোনার বাংলা’।
আমাদের হৃদয়ে মুজিব চিরন্তন
বিশেষ অতিথি মুজিববর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ও প্রধানন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষে এক্সিম ব্যাংকের এই আয়োজনকে আমি স্বাগত জানাই। করোনার কারণে আমরা জন্মশতবর্ষের অনেক অনুষ্ঠান করতে পারি নি। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে আগামী মার্চে দশদিনব্যাপী অনুষ্ঠান আমরা করব। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আমাদের এই যে যাত্রা, এ যাত্রাটি অন্তহীন। কারণ তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরও বেশি অবহিত করতে হবে, তরুণ প্রজন্মই আগামী দিনের বাংলাদেশ গড়ার কারিগর। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী আগামী দিনে মুজিব চিরন্তন হিসেবে আমাদের হৃদয়ে আমরা সবসময় বহন করব।
বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু অবিচ্ছেদ্য
সবশেষে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, জাতির পিতার সংগ্রামী জীবন, নেতৃত্ব, ব্যক্তিত্ব সবকিছু মিলিয়েই আজকের এই স্বাধীন দেশ। যতদিন বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে, ততদিন এদেশের মানুষ স্মরণ করবে বঙ্গবন্ধুকে।
বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশে নিবেদিত সকল আয়োজন
ঢাকার বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এক্সিম ব্যাংকের এই দিনব্যাপী ব্যতিক্রমী আয়োজনে পুরো স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। এখানে ব্যাংকের প্রায় সাড়ে চার হাজার সদস্য অংশগ্রহণ করেন। তারা ছিল আনন্দে উদ্বেলিত; বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধায় নমিত।
ব্যাংকের সদস্যবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশে সেদিন, ৬ ফেব্রুয়ারি, সকালে প্রদর্শন করেছিল মানব নির্মিত মুজিব জন্মশতবর্ষের লোগো। তৎসঙ্গে সুনীল আকাশে তারা উড়িয়ে দিয়েছিল মুজিব জন্মশতবর্ষের লোগো আঁকা প্রায় চার হাজার বেলুন। এছাড়া লোগো আঁকা আরও একশত বৃহৎ বেলুনও উড়ানো আকাশে। এগুলো ছিল মুজিব জন্মশতবর্ষের প্রতীক।
ব্যাংকের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই সংস্কৃতিমনা এবং সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। তাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছিল একটি সাংস্কৃতিক দল। এই দলের সদস্যরা বাংলাদেশ আমি স্টেডিয়ামে আয়োজিত বর্ণিল ও ব্যতিক্রমী আয়োজনে পরিবেশন করেছিল নানা গান এবং নাটিকা। বলাই বাহুল্য, সমস্ত আয়োজনই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্দেশে নিবেদিত।
Leave a Reply
Your identity will not be published.