সময় যে কত দ্রুত গড়িয়ে যায় তার আরেকটি উদাহরণ হয়ে সামনে দাঁড়াল অন্যদিন। অন্যদিন বাংলাদেশের এই সময়ের অন্যতম পাক্ষিক ম্যাগাজিন। সেই 'অন্যদিন' দেখতে দেখতে এবছরই ২৫ বছর পূর্ণ করেছে। ভাবতে অবাকই লাগে। মনে হয় এই তো সেদিন। আসলে সময়ের হিসাব করতে গেলে সবারই ওই একই কথা, একই অনুভূতি। কিন্তু অন্যদিন-এর এই ২৫ বছর বয়সের হিসাবের সঙ্গে আমার জীবনের কিছু হিসাবনিকাশ জড়িত। সেই কারণে অন্যদিন-এর ২৫ বছরে নতুন করে উপলব্ধি করি, স্বাভাবিকতার বিবেচনায় জীবনের কতটা পেরিয়ে এসেছি আর কতটা বাকি আছে!
কলেজজীবন থেকেই যখন ম্যাগাজিন পড়ার দিকে ঝুঁকি পড়ি তখন নজর ছিল সাপ্তাহিক বিচিত্রা, সাপ্তাহিক রোববার আর সচিত্র সন্ধানী’র দিকে। তারপর প্রথম লেটার প্রেস থেকে কম্পিউটার ফন্ট নিয়ে এল আনন্দপত্র, এখনই সময়। তারপর কত ম্যাগাজিন এল গেল, কিন্তু কোনোটার সঙ্গেই জীবন জড়িয়ে যায় নি কিংবা জড়ানোর সুযোগ হয় নি। যদিও ছাত্রাবস্থায় অধিকাংশ জাতীয় ম্যাগাজিনেই অনিয়মিতভাবে কিছু না কিছু লেখার সৌভাগ্য হয়েছিল।
কিন্তু অন্যদিন-এর সঙ্গে কীভাবে জীবনটা অন্যভাবে জড়িয়ে গেল সেটি না বললে অন্যদিন-এর প্রতি অবিচার করা হবে। অন্যদিন-এ আমার প্রথম লেখা ছাপা হয় ১৯৯৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারিতে। লেখাটি ছাপা হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের ডক্টরস কোয়ার্টারে আমাদের দুজনের নতুন সংসারে সদয় আতিথ্য গ্রহণ করেন জনকণ্ঠের কৃতী সাংবাদিক অতিশয় ভদ্রলোক সাহিদুল ইসলাম চৌধুরী এবং সেই সময়কার উদীয়মান ফটোজার্নালিস্ট ইয়াসিন কবির জয়। ইতিমধ্যে অন্যদিন-এর প্রথম সংখ্যা পাঠকের কাছে পৌঁছে গেছে। প্রস্তুতি চলছে ২য় সংখ্যার। সাহিদুল অন্যদিন-এর চার বন্ধু মাজহারুল ইসলাম, আবদুল্লাহ্ নাসের, মাসুম রহমান এবং সিরাজুল কবির চৌধুরীদের বন্ধু। জয়, আমি এবং সাহিদুল তিনজনই জনকণ্ঠে সহকর্মী এবং সেই সুবাদে বন্ধুত্ব। অন্যদিন প্রসঙ্গটা প্রথমে জয়ই তুললেন তারপর সাহিদুল। বললেন, সম্পূর্ণ ভিন্ন মেজাজের একটি ম্যাগাজিন বেরিয়েছে, যাদের মূল শক্তি পরিশীলিত নিবেদিতপ্রাণ তারুণ্য। সেখানে চাইলে আমি নিয়মিত লিখতে পারি। পরের দিনই সাহিদুলের সঙ্গে চলে গেলাম অন্যদিন-এর গ্রীন রোডের কার্যালয়ে। প্রথম দিনের পরিচয়েই মুগ্ধ হলাম বিনীত অভিবাদন এবং আতিথেয়তায়। যারা অন্যদিন-এর লেখক তারা খুব ভালো জানেন তাদের এই আতিথেয়তার ঐতিহ্য। অন্যদিন-এ প্রথম লেখাটা জমা দিয়ে বেরিয়ে বাসায় ফেরার পথে রিকশায় বসে একাগ্রে নিজেই নিজের মধ্যে সম্ভাবনা খুঁজতে চেষ্টা করলাম। সেই থেকে শুরু। ‘মন আমার দেহঘড়ি’ নামে আমার একটি কলাম প্রকাশ শুরু করে অন্যদিন। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক জনকণ্ঠ দেশে প্রথম স্বাস্থ্যবিষয়ক পাতা প্রকাশ করে, সৌভাগ্যক্রমে আমি ছিলাম সেই পাতার বিভাগীয় সম্পাদক। ইতিমধ্যে আমার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা বিষয়ের ওপর বেশ কয়েকটি বইও প্রকাশিত হয়েছে। সঙ্গে যোগ হয়েছে অন্যদিন। সবমিলিয়ে চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি স্বাস্থ্য নিয়ে লেখালেখিও আমার পেশা হয়ে যায়। পেশা বলছি দুটি কারণে। প্রথমত লেখালেখির জন্য পারিশ্রমিক ছিল, দ্বিতীয়ত লেখালেখির ব্যাপারে ছিলাম অঙ্গীকারাবদ্ধ। যে কারণে অন্যদিন-এ নিয়মিত লিখতে হতো আর জনকণ্ঠে বাড়তি দায়িত্ব হিসাবে করতে হতো সম্পাদনা এবং দেখতে হতো পাতার সাজসজ্জার দিকটাও।
অন্যদিন-এর ১ বর্ষ, ২য় সংখ্যা, যে সংখ্যায় আমার প্রথম লেখা নিবন্ধটি স্থান পেয়েছিল সেই সংখ্যাটির কথা বিশেষভাবে মনে আছে আরও একটি কারণে। সেটির প্রচ্ছদে ছিল নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের ছবি। বিষয়বস্তু ছিল তারই ধারাবাহিক নাটক নিয়ে— ‘নক্ষত্রের রাত এর নক্ষত্রেরা’। আমার সেই লেখাটি ছিল, ডিওডরেন্ট বডি স্প্রে নিয়ে। লেখার শিরোনাম ছিল—বাহুমূলে সুগন্ধি ঢেউ।
অন্যদিনে লিখতে গিয়ে নানাভাবে ঋদ্ধ হয়েছি। লেখালেখির বিষয়বস্তু নির্বাচনে ছিল অবারিত স্বাধীনতা। শিশুস্বাস্থ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঋতুতে রোগবালাই, একান্ত মেয়েদের বিষয়, ফার্স্ট এইড, ভ্রান্ত ধারণা, খাবারদাবারের প্রভাব, এমনকি দাম্পত্যজীবনের সংবেদনশীল বিষয় দাম্পত্যস্বাস্থ্য নিয়েও নিয়মিত লিখেছি। এই লেখাগুলোর একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ছিল। লেখাগুলোতে কখনোই গতানুগতিক ধারা অনুসরণ করি নি। লেখাগুলোতে পাঠ্যবইয়ের আদলে রোগ নিয়ে রচনাধর্মী কোনো উপস্থাপনা ছিল না। তবে কৌশলে তথ্যটা তুলে ধরা হতো, যা থেকে পাঠকমন অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যেত, অনুপ্রাণিত হতো। এই আইডিয়াটা আমি ধার করেছিলাম আমেরিকার কিছু জনপ্রিয় ম্যাগাজিন থেকে। শুধু আইডিয়াটাই ছিল ধার করা, বাদ বাকি প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ। তারই ধারাবাহিকতায় ক্রমশ ঈদসংখ্যার একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়ায় স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখা। যারা বাংলাদেশে গত পঁচিশ বছরের ঈদসংখ্যার খবর রাখেন তারা জানেন অন্যদিন-এর ঈদসংখ্যা কতটা মার্জিত, এবং সার্বিক বিবেচনায় উন্নত ও সেরা। বিষয়বস্তর দিক থেকে অন্যদিন-এর ঈদসংখ্যার স্বাস্থ্যবিষয়ক কয়েকটি লেখার কথা আজও মনে পড়ছে। যেমন— কোরবানিতে শত্রু কোলেস্টেরল; ভোজনের আয়োজনে আশংকা মনে মনে; কী করা যায় দিলে উঁকি, ঈদভ্রমণে স্বাস্থ্যঝুঁকি; ভালোবাসার খাবারদাবার; জিন, সুস্থতার নির্ধারক, ৫ মিনিটের ঘরোয়া চিকিৎসা; খাবারে হয় রোগ নিরাময় ইত্যাদি। তা ছাড়া স্বাস্থ্য-চিকিৎসা-পুষ্টি-স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন নির্ভর বেশ কিছু প্রচ্ছদ কাহিনি প্রকাশ করেছে অন্যদিন। যেগুলোতে গুরুত্ব পেয়েছে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যানসার, শীতের প্রস্তুতি, বর্ষার অসুখবিসুখ, নিরাপদ মাতৃত্ব, চোখের অসুখ, কিডনি রোগের আদ্যপান্ত, ফল খাওয়ার ফলাফল, অ্যালার্জি ও অ্যাজমা ইত্যাদি। এভাবেই স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখাগুলো ক্রমশ পাঠকপ্রিয়তার পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্যের মানুষের কাছেও সমাদৃত হতে থাকে। এমনকি তাদের কেউ কেউ যখন কিছু লেখার শিরোনাম উল্লেখ করে তার উপস্থাপনা এবং ভাষাশৈলীর প্রশংসার করেন তখন স্বভাবতই বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, লেখাগুলোর একটা সাহিত্যমূল্য রয়েছে। স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখার এই সাহিত্যমূল্য তৈরির পেছনে অন্যদিন-এর মূল ব্যক্তিদের দৃষ্টিভঙ্গির একটা বড় ভূমিকা ছিল। বিশেষ করে নির্বাহী সম্পাদক আবদুল্লাহ্ নাসেরের দক্ষ ও চৌকস সম্পাদনায় লেখাগুলো নির্ভুলভাবে পাঠকের কাছে পৌঁছাতে পেরেছিল। সেই সঙ্গে সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের আন্তরিকতা, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনায় একটি ব্যাপার ভালোভাবেই বোঝা যেত যে, উনি প্রত্যেকটি লেখারই খুঁটিনাটি পড়েন। তিনি প্রায়ই তাঁর আইডিয়া আমার সঙ্গে ভাগাভাগি করে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশের চেষ্টা করতেন।
তারপর চালু হলো স্বাস্থ্যের ওপর এ টু জেড সিরিজ। গর্ভবতীর এ টু জেড, ত্বকের যত্নে এ টু জেড, নাক কান গলার সমস্যা এ টু জেড, দাঁতের যত্নে এ টু জেড—এই ধরনের বিশাল আকারের নিবন্ধ উপস্থাপনার গুণে পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠে।
শুরুতেই বলছিলাম অন্যদিন-এর সঙ্গে জীবনটা অজান্তেই জড়িয়ে গিয়েছিল। সেই প্রসঙ্গে একটা ঘটনা বলি। অন্যদিন-এ যখন প্রথম লেখা ছাপা হয় তখন আমাদের বিবাহিত জীবনের বয়স মাত্র ৭ মাস। ১৯৯৯ সালে অন্যদিন-এর জন্য গভর্বতীর জীবনধারা নিয়ে একটা প্রচ্ছদ কাহিনি তৈরি করি। কিন্তু প্রচ্ছদ কাহিনিতে ব্যবহারের জন্য ছবির মডেল পাওয়া যাচ্ছিল না। কী আর করা! অগত্যা মডেল বাদ দিয়ে সত্যিকারের গর্ভবতী আমার স্ত্রীই মডেল হলো। এভাবেই অন্যদিন পরিবারের সঙ্গে বাড়তে থাকে হৃদ্যতা এবং সম্পর্ক। নিয়মিত স্বাস্থ্যবিষয়ক নিবন্ধ ছাপার পাশাপাশি এ পর্যন্ত কম করে হলেও অর্ধ শতাধিক স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রচ্ছদ কাহিনি রচিত হয়েছে গত ২৫ বছরে।
অন্যদিন পত্রিকার আর একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এর দৃষ্টিনন্দন সাজসজ্জা। যারা এসব সাজসজ্জার পেছনে কাজ করতেন আমি খুব কাছ থেকে তাদের আন্তরিকতা দেখেছি। অন্যদিন-এর প্রকাশনার ব্যাপারে আবদুল্লাহ্ নাসের ছিলেন খুবই খুঁতখুঁতে। আর ইলাস্ট্রেশন-এর ব্যাপারে মাসুম রহমান ছিলেন আরও বেশি নিবেদিতপ্রাণ। আর মাজহারুল ইসলাম দেখতেন খুঁটিনাটি বিষয়গুলো। তাই প্রেসের লোকজন তাকে বেশ ভয় পেতেন, একটু ভুলভাল হলেই বলতেন—আবার নতুন প্লেট বানাও। কোয়ালিটির ব্যাপারে নো কম্প্রোমাইজ। নান্দনিক বিষয়ে সবার দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য ছিলেন কম্পিউটার গ্রাফিক্সের দক্ষ কারিগর আশুতোষ। আশুতোষ এখনো অন্যদিন-এর সঙ্গে আছেন।
নিজেকে খুব সম্মানিত মনে হতো যখন অন্যদিন-এর কোনো কর্মী বাসায় আসত লেখা সংগ্রহের জন্য। প্রথমদিকে এই বিষয়টি চালু থাকলেও পরবর্তী সময়ে লেখা কম্পিউটারে কম্পোজ করে ইমেইলে পাঠিয়ে দেওয়ার কারণে অন্যদিন-এর কর্মীদের আর বাসায আসতে হতো না। তবে অন্যদিন প্রকাশিত হওয়ার পর একটি কপি তাদের কর্মীরা সযতেœ নিয়মিত বাসায় পৌঁছে দিত। অন্যান্য অনেক পত্রিকায় স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখাকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া না হলেও অন্যদিন বেশ ভালোই গুরুত্ব দিত। ইলাস্ট্রেশনসহ চার রঙে ছাপা হতো, কাগজ ছিল সব সময়েই ঝকঝকে এবং উন্নত।
অন্যদিন-এর আতিথেয়তার কথা না বললেই নয়। তাদের সেই আতিথিয়তা কোনো কোনো সময় বাসা পর্যন্ত পৌঁছে যেত ফুল এবং মিষ্টি সহযোগে। একজন লেখককে সম্মান দেখানোর বিষয়টা তাদের মধ্যে প্রথম থেকেই ছিল এবং হয়তো এখনো আছে। লেখকদের সম্মানিত করার অভিপ্রায়ে সম্ভবত বাংলাদেশে প্রথম ঈদসংখ্যার মোড়ক উন্মোচনের আয়োজন করে অন্যদিন। সেই আয়োজনে সবসময়ই বিনীত আহ্বানে আমন্ত্রিত হযিেছ।
যা হোক, আবার ফিরে আসি লেখালেখির প্রসঙ্গে। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিয়ে যে সব লেখা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয় সেগুলোর বেশির ভাগেরই একটা কাঠামো রয়েছে। এই কাঠামো কিন্তু ধার করা, বহু প্রচলিত এবং কেতাবি, অনেকটা অধ্যয়নবিষয়ক। যেমন—রোগটা কী, কারণ কী, উপসর্গ ও লক্ষণ, রোগ নির্ণয় পদ্ধতি এবং শেষে চিকিৎসা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র কিংবা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সহজ করে বোঝানোর জন্য বাংলায় এমন করে লেখা যেতে পারে, তাতে অনেকেরই জানার এবং জ্ঞান আহরণের আকাক্সক্ষা পূরণ হবে। এক্ষেত্রেও কারা বইটির পাঠক তাদের কথা মাথায় রেখে তারপর ভাষাশৈলী প্রয়োগ করতে হবে। তা ছাড়া চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষা এখনো ততটা প্রসার লাভ করে নি। বাংলা একাডেমি থেকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষার ওপর একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছিল ৮০'র দশকে, যার কোনো কপি এখন আর পাওয়া যায় না। আমার কাছে তার একটি কপি ছিল, যেটি পড়ে মনে হয়েছে চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষা শুধু স্কুল-কলেজের জন্য নির্ধারিত পাঠ্য বইগুলোতে প্রয়োগ করা যেতে পারে। যারা বাংলায় চিকিৎসাবিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট বই লিখবেন তারা এটি প্রয়োগে সচেষ্ট হতে পারেন। তাতে করে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বাংলা পরিভাষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যমে সাধারণের কাছেও ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই পরিভাষা প্রথমেই গণমাধ্যমে প্রয়োগ করলে তা সাধারণের কাছে বোধগম্য হওয়ার কথা নয়। এই ধারণা থেকেই আমি প্রথমে আমার পাঠক নির্বাচন করেছি। যারা দৈনিক পত্রিকা পড়ে তাদের সবাই ম্যাগাজিন পড়ে না। আবার কোন পাঠক কোন দৈনিক পড়বে আর কোন পাঠক কোন ম্যাগাজিন পড়বে সেটা কিন্তু একজন সম্পাদক বুঝতে পারেন। আমি বলতে চাচ্ছি, একটি পত্রিকা বা বই কিন্তু সব পাঠকের জন্য নয়। তবে হ্যাঁ এরও ব্যতিক্রম আছে। যেমন হুমায়ুন আহমেদ, তাঁর লেখা দেশের অধিকাংশ পাঠকই পড়ে থাকবেন।
আমি অন্যদিন-এর লেখাগুলোকে অন্যদিন-এর সেই বিশেষ পাঠকগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে লেখার চেষ্টা করেছি। সেই সঙ্গে চেষ্টা করেছি চিকিৎসা বিজ্ঞানের কঠিন কিংবা অজানা পরিভাষাকে প্রয়োগ না করে একটু বর্ণনা যোগ করে সেটিকে তুলে ধরতে। আর গতানুগতিক কাঠামোকে এড়িয়ে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা তো ছিলই। বডি ডিওডরেন্টকে চিকিৎসাশাস্ত্রের সঙ্গে যোগ করেছি, এনেছি সানগ্লাসের প্রসঙ্গ। এসেছে মসলাপাতির কথা। আমরা ভাবি না জুতো ব্যবহারেও স্বাস্থ্যের কথা মনে রাখতে হয়, নিরাপত্তার কথা ভাবতে হয়। একটু কান্নাও যে স্বাস্থ্যকর হতে পারে সেটা লিখেছি। দাম্পত্যস্বাস্থ্য নিয়ে লিখেছি। এই ধরনের অনেক অনেক বিষয় নিয়ে লেখার জন্য অন্যদিন-এর কাছ থেকে পেয়েছি অকুণ্ঠ সমর্থন। যার ফলে এমন কিছু লেখা লিখতে পেরেছি যেগুলো মননশীল পাঠকের কাছেও হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠেছে। অনুপ্রেরণাও পেয়েছি। আমার খুব মনে পড়ছে দাম্পত্যস্বাস্থ্য নিয়ে লেখাগুলো সম্পর্কে কথাসাহিত্যিক নাসরীন জাহান বলেছিলেন, লেখাগুলো অসাধারণ হচ্ছে। প্রথম পরিচয়ে প্রয়াত কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন বলেছিলেন, ওহ তুমি সজল, তোমার লেখা আমি অন্যদিন-এ পড়েছি। আর প্রাবন্ধিক আহমাদ মাযহার বলেছিলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞানে তোমার লেখার একটা বৈশিষ্ট্য আছে। এই পর্যায়ের প্রশংসাই আমার পাথেয় হয়েছে। আমাকে আরও দায়িত্বশীল ও সতর্ক করেছে।
এত কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে অনেক লেখা লিখেছি সেগুলো থেকে অন্যদিন-এর লেখাগুলো ছিল সম্পূর্ণ আলাদা, যেগুলো আর কোথাও দ্বিতীয়বার ছাপা হয় নি। তবে অধিকাংশই বই আকারে বেরিয়েছে।
ইতিমধ্যে অন্যদিন-এর প্রসার ঘটে অন্যপ্রকাশ-এর মাধ্যমে। অন্যপ্রকাশ, অন্যদিন-এর সহযোগী প্রকাশনা সংস্থা। সেখান থেকে আমার বেশ কিছু বই প্রকাশিত হওয়ার মাধ্যমে এই পরিবারটির সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়ে যায। অন্যদিন প্রথম থেকে চেষ্টা করে আসছে কাক্সিক্ষত অন্য একটি দিনকে উপহার দেওয়ার। তাদের সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। কোনো কিছুই সর্বাঙ্গীন সুন্দর হয় না, একটু-আধটু ভুল-ত্রুটি থাকে, অন্যদিন-এরও হয়তো ছিল। কিন্তু সেই ত্রুটিগুলো কখনোই ভালো কর্মকাণ্ডের উপস্থিতিকে ম্লান করতে পারে নি।
অন্যদিন এখন ২৫ বছরের যুবক। আরও অনেকদিন সামনে পড়ে আছে। পত্রিকার কোনো নির্দিষ্ট আয়ু হয় না। তাই এটি চিরজীবী হোক সেই কামনাই করছি।
Leave a Reply
Your identity will not be published.