ঐতিহ্যবাহী পিঠা

ঐতিহ্যবাহী পিঠা

পিঠা। বাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার। মুখরোচক এই খাবারটি সাধারণত মিষ্টি স্বাদের হয়। কেননা এতে গুড় বা চিনি মেশানো হয়। তবে ঝাল, টক বা অন্য যে-কোনো স্বাদেরও এটি হতে পারে। ডেজার্ট হিসেবেও এটি চমৎকার। কেননা খাবারকে হজম করার ক্ষেত্রে এর অবদান অতুলনীয়। সারা বছরই পিঠা খাওয়া যায়। তবে হেমন্ত ও শীতে এটি বাংলার ঘরে ঘরে তৈরি হয়। এই সংখ্যায় নানা স্বাদের নানা পদের বৈচিত্র্যময় পিঠার রেসিপি তুলে ধরা হলো। এইসব রেসিপি সংগ্রহ এবং স্বনামধন্য রন্ধনশিল্পী নাজিয়া ফারহানার সূত্রে প্রাপ্ত।

 

নকশী পিঠা

উপকরণ: চালের গুঁড়া ৩ কাপ, পানি ২ কাপ, সিরা ২ কাপ, চিনি ১ কাপ, তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি: কড়াইতে লবণ, পানি দিন। ফুটে উঠলে চালের গুঁড়া দিয়ে সেদ্ধ করে ময়ান করে নিন। ময়ান পিঠার আকারে বানিয়ে সুঁই দিয়ে নকশী করে ডুবো তেলে মৃদু আঁচে মচমচে ভেজে তুলুন। এবার সিরায় চিনি দিয়ে ঘন করে পিঠার ওপর দিন।

দুধ চিতই

উপকরণ: আতপ চাল ৩ কাপ, খেজুরের গুঁড় ১ ১/২ কাপ, দুধ ৩ লিটার, মালাই ১ কাপ, দারুচিনি ২ টুকরো, এলাচ ৪টি, পানি ৩ কাপ, লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালি: চাল ৫ ঘণ্টা ভিজিয়ে মিহি করে বেটে লবণ দিয়ে মাখিয়ে ১ ঘণ্টা ঢেকে রাখুন। কুসুম গরম পানি দিয়ে পিঠার পোলা তৈরি করুন। মাটির চুলোয় দিয়ে গরম করুন। বড় ১ চামচ গোলা গরম সাজে দিয়ে ঢেকে দিন। ৪-৫ মিনিট পর পিঠা তুলুন। খেজুরের গুঁড়, পানি, এলাচ, দারুচিনি দিয়ে জ্বাল দিন। সিরা হলে গরম পিঠা ভেজান। তিন লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে দেড় লিটার করে পিঠার ওপর ঢেলে দিন। এবার ওপরে মালাই দিয়ে পরিবেশন করুন।

কুশলী পিঠা

উপকরণ: ময়দা আধা কেজি, তেল এক কেজি, মাংসের কিমা আধা কেজি, লবণ পরিমাণমতো, পানি পরিমাণমতো।

প্রণালি: ময়দা, লবণ ও পানি দিয়ে খামির তৈরি করুন। তারপর ছোট রুটি বেলতে হবে। রুটির ভেতর কিমা দিয়ে পুঁটলি তৈরি করুন। তারপর তেলে বাদামি রং করে ভেজে গরম গরম পরিবেশন করুন।

মুখ পাকান

উপকরণ: মুগ ডাল ১ কাপ, ময়দা ২ কাপ, লবণ ১ চিমটি, পানি পরিমাণমতো, তেল (পিঠা ভাজার জন্য), সিরার জন্য চিনি ২ কাপ, পানি ১ কাপ, দারুচিনি ১ টুকরা, এলাচ ১টি।

প্রণালি: প্রথমে মুগ ডাল শুকনা প্যানে টেলে নিন। এরপর ডাল ভালো করে ধুয়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। ডাল পুরোপুরি গলে গেলে এর মধ্যে এক চিমটি লবণ দিন। এবার ডালে ময়দা ঢেলে দিন। রুটির খামিরের মতো খামির তৈরি করুন। খামির সময় নিয়ে ভালো করে মেখে নিন। মাখা শেষ হলে ২ চা-চামচ তেল দিয়ে আবার কিছুক্ষণ মাখুন। বেলার সুবিধার জন্য খামির দুই ভাগে ভাগ করে নিয়ে প্রতিটিকে আধা ইঞ্চি পুরু করে রুটি বেলুন। রুটি সাঁজ বা ছুরির সাহায্যে বিভিন্ন আকারে কেটে খেজুর কাঁটা বা সুই দিয়ে পছন্দসই ডিজাইন করে নিন। এভাবে সবগুলো পিঠা তৈরি করুন। এবার আলাদা একটি পাত্রে সিরার সব উপকরণ নিয়ে চুলায় জ্বাল দিন। সিরা ভালোভাবে ফুটে উঠলে চামচে সামান্য সিরা নিয়ে হাতে ধরে দেখুন সিরা সামান্য আঠালো হয়েছে কিনা। আঠালো হলে সিরার পাত্র চুলা থেকে নামিয়ে নিন। এখন পিঠা ভাজার জন্য পাত্রে তেল গরম দিন। তেল গরম হলে সবগুলো পিঠা আস্তে আস্তে অনেক সময় নিয়ে গোল্ডেন ব্রাউন করে ভেজে নিন। ভাজার সময় খেয়াল রাখবেন চুলার আঁচ যেন মাঝারি থাকে। কারণ আঁচ প্রথমেই বেশি থাকলে পিঠা দ্রুত লাল হয়ে যাবে কিন্তু ভিতরে ঠিকমতো হবে না। পিঠা ভেজে সঙ্গে সঙ্গে গরম সিরায় ছেড়ে দিন। পিঠাগুলো সিরায় বেশিক্ষণ রাখতে হবে না। দুই-তিন মিনিট পরই পিঠাগুলো সিরা থেকে তুলে প্লেটে রাখুন।

রস চিতই

উপকরণ: চালের গুঁড়া ৪ কাপ, দুধ ১ লিটার, গুড় ২ কাপ, কোরানো নারকেল আধা কাপ।

প্রণালি: প্রথমে দুধ জ্বাল দিয়ে ঘন করে আলাদা করে গুড়ের সিরা তৈরি করে রাখুন। এবার হালকা গরম পানিতে গুঁড়া গুলে পাতলা গোলা তৈরি করুন। এবার মাটির খোলায় গোলা ঢেলে পিঠা তৈরি করুন। পিঠা ঠান্ডা হলে জ্বাল  দেওয়া রসে ভিজিয়ে রাখুন সারা রাত।

পাটিসাপটা পিঠা

উপকরণ: চালের গুঁড়া ১ কাপ, ডিম ১টি, চিনি ১/৪ কাপ, লবণ ২ চিমটি, খির, গরম পানি।

প্রণালি: ডিম, চিনি, লবণ, চালের গুঁড়া গুলিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। এবার প্যানে তেল মেখে ১ চামচ গোলা দিন। প্যান ঘুরিয়ে গোলা চারদিকে ছড়িয়ে ঢাকনা তুলে এক পাশে খির দিয়ে মুড়ে প্লেটে তুলে গরম গরম পরিবেশন করুন।

ঝিনুক পিঠা

উপকরণ: আটা বা ময়দা পরিমাণমতো, চিনি, নারিকেল কুরানো, সয়াবিনের তেল, এলাচ ও দারুচিনি, একটি তালপাখা।

প্রণালি: প্রথমে একটি পাত্রে পরিমাণমতো আটা বা ময়দার মধ্যে চিনি ও খুব অল্প পরিমাণ নারিকেল কুরা দিয়ে পানি গরম করে সিদ্ধ করে নিন। তারপর সিদ্ধ করা ময়দা ঠান্ডা করে হাত দিয়ে ভালোভাবে পেস্ট করে ছোট ছোট লম্বা টুকরো করে রাখুন। এবার তালপাখা ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। শুকানো হয়ে গেলে সিদ্ধ ময়দার লম্বা করা টুকরাগুলো তালপাখার গোড়ার চিকন দিকে দিয়ে হাত দিয়ে চাপ দিন। দেখবেন পিঠাগুলো দেখতে একদম ঝিনুকের মতো দেখাবে। অন্য একটি পাত্র পানি, চিনি, এলাচ ও পরিমাণমমতো দারুচিনি নিয়ে হালকা গাঢ় করে চিনির সিরা তৈরি করুন। এবার আর একটি পাত্রে পরিমাণমতো সয়াবিন তেল দিয়ে চুলায় আঁচ দিতে থাকুন। এবার তালপাখা দিয়ে তৈরি করা পিঠাগুলো ভাজুন। হালকা বাদামি রং হলে নামিয়ে চিনির সিরার মধ্যে চুবিয়ে অন্য পাত্রে রাখুন।

ঝালপোয়া পিঠা

উপকরণ: আতপ চালের গুঁড়া ১ কাপ, সেদ্ধ চালের গুঁড়া ১ কাপ, ময়দা আধা কাপ, ডিম ২টি, পেঁয়াজ মিহি কুচি সিকি কাপ, কাঁচামরিচ কুচি ২ চা-চামচ, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল-চামচ, লবণ পরিমাণমতো, চিনি আধা চা-চামচ, কুসুম গরম পানি পরিমাণমতো, বেকিং পাউডার আধা চা-চামচ, তেল ভাজার জন্য, আতপ চাল ও সেদ্ধ চালের গুঁড়া, ময়দা, বেকিং পাউডার, চিনি একসঙ্গে খুব ভালো করে মিলিয়ে নিতে হবে।

প্রণালি: পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, লবণ একসঙ্গে ভালো করে চটকিয়ে ডিম দিয়ে মাখিয়ে ময়দার মিশ্রণে মিলিয়ে নিন। একটু পানি দিয়ে গোলা করে নিন। খেয়াল রাখতে হবে, গোলা যেন খুব পাতলা না হয়ে যায়। তেল গরম করে সিকি কাপ পরিমাণ গোলা ছাড়ুন। পিঠা ফুলে উঠলে উল্টিয়ে দিয়ে কাঠির সাহায্যে পিঠার মাঝখানে ছিদ্র করে ভেতরের বাতাস বের করে দিন। পিঠা ভাজা হলে চুলা থেকে নামিয়ে টমেটো সস অথবা গ্রিন চিলি সসের সঙ্গে পরিবেশন করুন।

ফুল পিঠা

উপকরণ: চালের গুঁড়া ২ কাপ, লবণ ১ চা-চামচ, সয়াবিন তেল ৬ কাপ, মুগ বা মাসকলাই ডাল ১ কাপ, ময়দা ২ কাপ, গরম পানি ৩ কাপ, জর্দার রং ১/২ চা-চামচ, চিনি ১/২ কাপ।

প্রণালি: মাসকলাই বা মুগডাল আগে সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে নরম হলে পাটাতে পিষে নিন। এবার চুলায় হাঁড়িতে পানি গরম করুন। পানি ফুটে উঠলে তাতে একে একে ময়দা, চালের গুঁড়া ও ডাল বাটা দিয়ে সিদ্ধ করে নিন। ঠান্ডা হলে জর্দার রং দিয়ে ভালো করে মেখে ময়দার ডো’টি মোটা করে রুটি বেলে একটি গোল ছাঁচ দিয়ে কাটুন। এবার কাটাচামচ বা টুথপিক দিয়ে নকশা করে তেলে একটি একটি করে পিঠা ভেজে তুলুন। গরম অবস্থায় উপরে চিনি ছিটিয়ে পরিবেশন করুন।

লবঙ্গ লতিকা পিঠা

উপকরণ: কুরানো নারিকেল ২ কাপ, চিনি ১/২ কাপ বা আপনার পছন্দমতো, মাখন/ঘি/তেল ১/২ টেবিল-চামচ + ২ টেবিল-চামচ, এলাচ ২টি, দারুচিনি ১টি, স্টিক, লবঙ্গ ১০-১৫টি, ময়দা ১ কাপ, লবণ ১/২ চা-চামচ, গরম পানি প্রায় ১/২ কাপ বা এর চেয়েও কম, তেল ডুবো তেলে ভাজার জন্য।

প্রণালি: একটি প্যানে ১/২ টেবিল-চামচ ঘি/তেল দিয়ে মাঝারি তাপে গরম করুন। এখন তেলে এলাচ ও দারুচিনি দিয়ে তা হালকা ভেজে নিন। এরপর নারিকেল, চিনি এবং লবণ দিয়ে মেশান এবং মাঝারি তাপে রেখে দিন। মাঝে মাঝে নারিকেলের মিশ্রণটা নাড়তে হবে। মিশ্রণটা থেকে পানি শুকিয়ে ঝরঝরা হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা হওয়ার জন্য রেখে দিন। খামির তৈরির জন্য একটি বাটির মধ্যে ময়দা, ২ টেবিল-চামচ ঘি/তেল আর লবণ নিন এবং ভালোভাবে মেশান। তারপর এতে ধীরে ধীরে গরম পানি দিন এবং ভালো করে মাখাতে থাকুন। খামির তৈরি হয়ে গেলে তা ছোট ছোট বলে ভাগ করুন। এখন একটি বল রুটি বেলার পিঁড়িতে নিয়ে নিয়ে ছোট আকারের রুটি তৈরি করুন। রুটি তৈরির সময় প্রয়োজনে ময়দা ব্যবহার করুন। এখন রুটির ধার একটি ছুরি দিয়ে কেটে বর্গাকার করে নিন। এবার রুটির মাঝ বরাবর অল্প পরিমাণ নারকেলের মিশ্রণ রেখে রুটির প্রতিটি কোণা চারপাশ থেকে ভাঁজ করে মাঝখানে নিয়ে আসুন এবং মাঝখানে একটি লবঙ্গ দিয়ে ভাঁজগুলো আটকে দিন। লবঙ্গ এমনভাবে ঢোকাবেন যেন এর উপরের অংশটা বাইরে থাকে। একইভাবে বাকি পুলিগুলি তৈরি করে ফেলুন। একটি প্যানে তেল গরম করুন। গরম তেলে একটি পুলি ছেড়ে দিন, যদি এটি কয়েক সেকেন্ডের জন্য তেলে ডুবে গিয়ে আবার উপরে উঠে আসে তাহলে বুঝবেন তেল পুরোপুরি গরম হয়েছে। এরপর তেলে আরও কয়েকটি পুলি দিন এবং পুলির উভয় পাশে সুন্দর বাদামি রং আসা পর্যন্ত ধীরে ধীরে ভাজতে থাকুন। পুলি ভাজা হয়ে গেলে প্যান থেকে তুলে একটি পেপার টাওয়ালের (টিস্যু) ওপর রাখুন। বাকি পুলিগুলোও একইভাবে ভেজে পরিবেশন করুন।

পুলি পিঠা

উপকরণ: নারকেল কোরা ১ কাপ, ময়দা ১/২ কাপ, খেজুরের গুঁড় ১/২ কাপ, আতপচালের গুঁড়া ২ কাপ, পানি পরিমাণমতো, লবণ স্বাদমতো।

প্রণালি: নারকেল গুড় মিশিয়ে জ্বাল দিন।  নারকেল আঠালো হলে নামিয়ে দিন। এবার ময়দা সিদ্ধ করে কাই করে ছোট লুচি বেলে ভেতরে নারিকেল পুর দিয়ে মুখ বন্ধ করে ডুবো তেলে বাদামি করে ভাজুন।

ঝাল কুলি

উপকরণ: চালের গুঁড়া ৩ কাপ, পুরের জন্য হাডছাড়া মুরগির মাংস ২ কাপ, মরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, পেঁয়াজ কিউব করে কাটা ২ কাপ, কাঁচামরিচ কুচি ৪-৫টি, হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ, গুঁড়া দুধ ১ টেবিল-চামচ, তেল পরিমাণমতো, দারুচিনি ২-৩ টুকরো, এলাচ ৩-৪টা, পানি পরিমাণমতো, লবণ পরিমাণমতো।

প্রণালি: প্রথমে পুর তৈরি করার জন্য পেঁয়াজ তেলে ভেজে মাংসের কিমা ও সব মসলা দিয়ে ভুনা করুন। এবার পানিতে লবণ দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে তাতে চালের গুঁড়া দিয়ে খামির তৈরি করুন এবং এই খামির থেকে রুটি তৈরি করে তার ভেতর মাংসের পুর দিয়ে তেলে ভাজুন।

ভাপা পিঠা

উপকরণ : ২ কাপ চালের গুঁড়া, ১ কাপ খেজুর গুঁড়া, ১ কাপ নারিকেল গুঁড়া, স্বাদমতো লবণ, পিঠা বানানোর বাটি, একটি পাতিল, একটি ছিদ্রযুক্ত ঢাকনি।

প্রণালি: প্রথমে চালের গুঁড়া চালুনিতে চেলে নিতে হবে ভালোমতো। এরপর এই চালের গুঁড়ার সঙ্গে পানি ছিটিয়ে ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে হালকাভাবে মেখে নিন। খেয়াল রাখবেন যেন দলা না বাঁধে, দলা বাঁধলে মজাদার ভাপা পিঠা প্রস্তুত করা যাবে না। এখন হাঁড়িতে পানি নিন, হাঁড়ির উপর ছিদ্রযুক্ত ঢাকনিটি রেখে চুলায় বসিয়ে দিন। এরপর চুলাটি খুব অল্প আঁচে রাখুন। ঢাকনির পাশে ছিদ্র থাকলে তা আটা, মাটি বা কাপড় দিয়ে বন্ধ করে দিন, কাপড় দিয়ে বন্ধ করাই তুলনামূলক সুবধাজনক, যাতে ভিতরের ভাপ পাতিলের বাইরে বেরিয়ে না আসতে পারে। পরে ছোট বাটিতে ওই মাখানো চালের গুঁড়া নিয়ে তার মাঝখানে পরিমাণ মতো গুড় আর নারিকেল গুড়া দিন। যারা মিষ্টি একটু বেশি খেতে পছন্দ করেন তারা গুঁড়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারেন। বাটির ওপরে অল্প চালের গুঁড়া দিয়ে পাতলা কাপড় দিয়ে বাটির মুখ ঢেকে ছিদ্রযুক্ত ঢাকুনির ওপর বাটি উল্টে তা সরিয়ে নিন। ২ থেকে ৩ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর পিঠাটিতে নারিকেল গুঁড়া ছড়িয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

দুধভাপা পিঠা

উপকরণ: চালের গুঁড়া ৫ কাপ, গুড়ো দুধ ৩ ১/২ কাপ, ক্ষিরসা ১ বাটি, কাজুবাদাম টুকরা ১/২ বাটি, চিনি ১ কাপ, ঘি ১/২ কাপ, গুড় ১/২ কাপ।

প্রণালি: চালের গুঁড়া, ১ ১/২ কাপ গুঁড়া দুধ, ১ কাপ পানি দিয়ে ভাপা পিঠার গুঁড়া তৈরি করুন। চিনি ১ কাপ পানিতে জ্বাল করে সিরা তৈরি করুন। সিরার মধ্যে কাজুবাদাম দিয়ে খাজা তৈরি করুন। ছোট একটি বাটিতে প্রথমে চালের গুঁড়া দিন, তারপর ক্ষিরসা দিন। তারপর খাজা, ক্ষিরসা, চালের গুঁড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করুন। হাঁড়িতে পানি গরম করে কাপ বেঁধে পিঠা ১০ মিনিট ভাপে দিন। এবার ২ কাপ গুঁড়া দুধ, গুড়, ঘি একসঙ্গে জ্বাল করে সিরাপ বানিয়ে নিন। গরম পিঠা সিরাপে ডুবিয়ে ১ ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করুন।

হৃদয় হরণ পিঠা

উপকরণ: আতপ চালের গুঁড়া ২৫০ গ্রাম, আটা ১০০ গ্রাম, নারকেল কোরা ১ কাপ, লবণ পরিমাণমতো, তেল ভাজার জন্যে পরিমাণ মতো, এলাচ ও দারুচিনি সামান্য, সিরা করার জন্যে ২ কাপ চিনি, গরম পানি পরিমাণ মতো।

প্রণালি: চালের গুঁড়া, আটা, লবণ, নারকেল কোরা, এক টেবিল-চামচ তেল ও সামান্য পানি দিয়ে সব উপকরণ ভালো করে মেখে রাখতে হবে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এবার রুটির মতো পাতলা করে বেলে নিতে হবে। রুটিটি চিকন করে ভাঁজ করতে হবে। লম্বা আকার ধারণ করা গোল রুটিটি ভাঁজ করে হৃদয় আকার দিতে হবে। সবগুলো পিঠা তৈরি হয়ে গেলে ডুবো তেলে বাদামি করে ভেজে তুলতে হবে। ভাজা পিঠাগুলো পানি, চিনি, এলাচ ও দারুচিনির সিরায় ডুবিয়ে রাখুন আধা ঘণ্টা। ঠান্ডা হলে রসে ডুবু ডুবু হৃদয় হরণ পিঠা পরিবেশন করুন।

গোলাপ পিঠা

উপকরণ: চালের গুঁড়া ১ কাপ, ময়দা ১/২ কাপ, চিনি সিরা করার জন্য ১ ১/২ কাপ, দুধ পরিমাণমতো, ঘি ১ টেবিল-চামচ।

প্রণালি: চালের গুঁড়া এবং ময়দা দুধ দিয়ে সেদ্ধ করে ঘি দিয়ে মেখে নিন। এবার ১ ১/২ ইঞ্চি গোল একটু মোটা রুটি আকারে বেলে নিন। প্রতিটি  রুটিকে মাঝখান দিয়ে কেটে কেটে ছোট থেকে বড় আকারে গোলাপের পাপড়ির আকৃতিতে বানিয়ে নিন। চিনির সিরা তৈরি করুন। অন্য একটি ফ্রাই প্যানে পিঠা বাদামি করে ভেজে চিনির সিরায় দিন। পিঠার মধ্যে সিরা ঢুকে গেলে পিঠাগুলো সার্ভিং ডিশে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।

ফুলঝুরি পিঠা

উপকরণ : ময়দা ১ কাপ, তরল দুধ ১ কাপ, চালের গুঁড়া ১/২ কাপ, ডিম ১টি, লবণ ১/২ চা-চামচ, চিনি ১/২ কাপ, পানি দরকার মতো, তেল ভাজার জন্য, ছাঁচ পিঠার ছাঁচ পছন্দমতো।

প্রণালি: তেল বাদে সব উপকরণ ভালো করে ফেটিয়ে নিন। বেশ ঘন প্যান কেক-এর মতো গোলা হবে। ১ ঘণ্টা ঢেকে রেখে দিন। তেল গরম করে নিন। পিঠার ছাঁচটা গরম তেলে ডুবিয়ে রাখুন ২ মিনিট। গরম ছাঁচ পিঠার গোলায় অর্ধেকের একটু বেশি ডুবিয়ে তেলে দিন। ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে ছাঁচ থেকে পিঠাটা তেলে ছাড়তে হবে। অল্প আঁচে সোনালি করে ভেজে তুলে নিন। উল্লেখ্য, প্রত্যেক বার ছাঁচ তেলে গরম করে গোলায় দিবেন। গোলায় ছাঁচটা পুরো ডুবানো যাবে না। নয়তো তেলে পিঠা ছাড়া যাবে না। ছাঁচের সঙ্গেই আটকে থাকবে। ঝাঁকিয়ে পিঠা না খুলে এলে চিকন কাঠি বা ছুরির মাথা দিয়ে ছাড়িয়ে দিন।

তেলের পিঠা

উপকরণ: চালের গুঁড়া ২ কাপ, গুড় খেজুর বা আখের ২৫০ গ্রাম, পানি প্রয়োজনমতো, তেল ভাজার জন্য।

প্রণালি: চালের গুঁড়া, গুড় ও পানি একসঙ্গে ভালো করে মেখে গোলা তৈরি করে নিন। চুলায় একটি কড়াইতে তেল দিন। তেল গরম হলে একটি গোল চামচ দিয়ে একবারে মিশ্রণের গোলা দিন। দুপিঠ বাদামি হলে ঝাঝড়ির সাহায্যে পিঠা তুলে নিন। এবারে সব পিঠা ভাজুন। গরম গরম পরিবেশন করুন। ঠান্ডা হলে আরেক রকম স্বাদ পাবেন।

দুধপানা

উপকরণ: চালের গুঁড়া ২ কাপ, দুধ ১ ১/২ কেজি, খেজুরের গুড় ১০০ গ্রাম, তেজপাতা, দারুচিনি ২টি, ১ চিমটি লবণ।

প্রণালি: ২ কাপ পানিতে চালের গুঁড়া সেদ্ধ করে কাই করে নিন। হাতের তালু দিয়ে চেপে চেপে ১/২ ইঞ্চি পরিমাণ চওড়া এবং ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা করে মোটা সেমাই বানিয়ে নিন। এবার এই লম্বা সেমাই থেকে অল্প কাই নিয়ে শুকনো চালের গুঁড়া ছিটিয়ে দিয়ে হাতের তালু দিয়ে সেমাই বানিয়ে চাপ দিয়ে ছেড়ে দিন। সাইজটা হবে মাঝখানটা চ্যাপ্টা ও দুই সাইড পটলের মতো সরু। এভাবে সবগুলো পানা তৈরি করে রাখুন। ১ কাপ পানি দিয়ে গুড় ফুটিয়ে ঠান্ডা করুন। হাঁড়িতে তেজপাতা, দারুচিনি দিয়ে দুধ ফুটিয়ে নিন। ফুটে উঠলে তৈরি করা পানাগুলো দুধে দিয়ে দিন। ১০-১৫ মিনিট নেড়েচেড়ে রান্না করুন। দুধের ভেতর ফুটানো গুড় দিয়ে আরও ১০ মিনিট রান্না করুন। দুঘ ঘন হয়ে এলে নামিয়ে পরিবেশন বাটিতে ঢেলে ঠান্ডা করুন।

মালপোয়া

উপকরণ: ১/২ লিটার দুধ, ১ কাপ চিনি, ১ কাপ পানি, ১ চা-চামচ এলাচ গুঁড়া ও জাফরান, ১/২ কাপ ময়দা, ১/২ কাপ দুধ, ১ টেবিল-চামচ চিনির গুঁড়া, ১ টেবিল-চামচ ঘি, ১/৪ চা-চামচ বেকিং সোডা।

প্রণালি: প্রথমে একটি প্যানে এক লিটার দুধ জ্বাল দিয়ে আধা লিটারে নিয়ে আসুন। আধা লিটার হয়ে গেলে নামিয়ে রাখুন। আরেকটি পাত্রে সিরা তৈরির জন্য চিনি এবং পানি একসঙ্গে জ্বাল দিন। সিরা ঘন হয়ে এলে চুলা নিভিয়ে ফেলুন। এরপর চিনির সিরায় জাফরান, এলাচ গুঁড়া দিয়ে দিন। তারপর ঘন দুধের সঙ্গে ময়দা ভালো করে মিশিয়ে নিন। এমনভাবে মেশাবেন যেন কোনো দানা না থাকে। দুধ এবং ময়দার মিশ্রণ ঘন হয়ে এলে এতে তরল দুধ ভালো করে মেশান। এরপর এতে চিনির গুঁড়া দিয়ে আবার মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে বেকিং পাউডার মিশিয়ে নিন ভালো করে। খেয়াল রাখবেন মিশ্রণটি যেন খুব বেশি ঘন না হয়ে যায়। প্যান গরম হয়ে এলে এতে ঘি দিন। এবার এতে দিন ছোট ছোট করে বেটার। ভাজা হয়ে গেলে নামিয়ে চিনির সিরায় দিয়ে কিছুক্ষণ রাখুন। চিনির সিরা থেকে নামিয়ে প্লেটে সাজিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার মালপোয়া পিঠা।

গুলগুলা

উপকরণ : আটা ২ কাপ, কনডেন্সড মিল্ক ১/৪ কাপ, গুঁড়া দুধ ১/৪ কাপ, খাওয়ার সোডা এক চিমটি, বেকিং পাউডার ১ টেবিল-চামচ, চিনি ১/২ কাপ, নারকেল ১/২ কাপ (কোরানো), লবণ ১ চা-চামচ, পানি ১ কাপ, তেল ভাজার জন্য পরিমাণমতো।

প্রণালি: সব উপকরণ একসঙ্গে মাখিয়ে আধা ঘণ্টা রেখে গোলা বানান এবং ডুবোতেলে বাদামি করে ভেজে তুলুন।

বিবিখানা পিঠা

উপকরণ: ১ কাপ চালের গুঁড়া, ১/২ কাপ খেঁজুরের গুড়, ডিম দুটি, দুধ ২/৪ কাপ, পানি পরিমাণমতো, সামান্য লবণ, ৫-৬টি কিসমিস ও বাদাম।

প্রণালি: একটি পাত্রে চালের গুঁড়া নিন। এবার এর মধ্যে ডিম ভেঙে দিয়ে, গুঁড়, দুধ, সামান্য পরিমাণ স্বাদের জন্য লবণ দিয়ে সব একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। তারপর মিশ্রণটি ঘন তরল করার জন্য পরিমাণমতো পানি দিয়ে গুলিয়ে নিন ভালো করে। এরপর মিশ্রণটি একটি সসপ্যানে নিয়ে নিন। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে তার চারদিকে অল্প পরিমাণ আটা গুলিয়ে ঢাকনাটি শক্ত করে আটকিয়ে দিতে হবে, যেন কোনো ফাঁকা না থাকে। এবার সসপ্যান চুলায় বসিয়ে দিন, ওভেনেও করতে পারেন। এভাবে এক ঘণ্টা রেখে পিঠা হয়ে গেলে নামিয়ে রেখে হালকা ঠান্ডা করুন। এবার কেকের মতো পিস পিস করে কেটে পরিবেশন করুন।

সুজির রস মঞ্জুরি পিঠা

উপকরণ: পিঠার জন্য তরল দুধ ২ কাপ, চিনি ১ কাপ, সুজি ১ কাপ, ময়দা ২ টেবিলচামচ, ডিম ১টা, ঘি/তেল ১ টেবিল চামচ। সিরার জন্য : চিনি ১ কাপ, পানি ২ কাপ, তেজপাতা ১টি, এলাচ ১টি, দারচিনি ১টি।

প্রণালি: সিরার সব উপকরণ চুলায় জ্বাল দিয়ে নামিয়ে রাখুন। চুলায় দুধ বসিয়ে দিন ফুটে উঠলে চিনি দিয়ে সুজি দিয়ে আস্তে আস্তে নেড়ে দুধ শুকিয়ে গেলে ময়দা দিয়ে নামিয়ে ফেলতে হবে, রুটির গোলারমতো হবে। ঠান্ডা হলে ডিম আর ঘি দিয়ে ভালো করে ময়ান করে পিঠা বানাতে হবে। পিঠার সাজ বা হাতেও পছন্দমত নকশা করা যায়। মাঝারি আচে ভাজতে হবে। সিরা হালকা গরম অবস্থায় পিঠাগুলো সিরায় দিতে হবে। পিঠায় সিরা ঢুকলে পিঠা সিরায় ডুবে যাবে, তখন তুলে ফেলতে হবে। এবার পরিবেশন করুন মজাদার মিষ্টি সুজির রস মঞ্জুরি।

দুধে ভেজানো সুজির পিঠা

উপকরণ: সুজি ১১/২ কাপ, পানি ২ কাপের বেশি, লবণ ১/২ চা চামচ, ডিমের কুসুম ৩টি, ঘি ২ টেবিল চামচ, পিঠার সাজ বা চামচ বা ছুরি।

দুধের সিরার জন্য: চিনি পরিমাণমতো, দুধ ১ লিটার, সবুজ এলাচ ৩টি।

প্রণালি: একটি পাত্রে পানি, ঘি ও লবণ দিয়ে বলক আসলে সুজি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ঢেকে একদম অল্প আঁচে ৫ মিনিট রাখুন। সসপ্যানে খামির নিয়ে একটু ঠান্ডা করে হাতে ঘি মাখিয়ে ভালো করে মথুন। খামির কম হলেও ৫ মিনিট মথতে হবে। ডিমের কুসুম অল্প অল্প করে মিশাতে থাকুন। আরো কিছুসময় মথতে হবে। খামির খুব সফট ও নরম হবে। এখন গোল বা ডিমের আকৃতি করে পিঠার সাজ (সাজ তেল মাখিয়ে নিন) বা চামচ দিয়ে ডিজাইন করে ডুবোতেলে অল্পতাপে বাদামি করে ভাজুন (পিঠা অনেক ফুলে যাবে)। ঠান্ডা হতে দিন। একটি ছড়ানো পাত্রে দুধের মিশ্রণ হাল্কা গরম থাকা অবস্থায় পিঠা দুধে দিয়ে ৪-৫ ঘন্টা রেখে দিন। সিরায় ভিজে এটা ফুলে বড় হবে। ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন রসালো পিঠা।

Leave a Reply

Your identity will not be published.