অন্তহীন স্পর্শের অনুভব: সাদাত হোসাইন

অন্তহীন স্পর্শের অনুভব: সাদাত হোসাইন

মানুষের নানান ধরনের নেশা থাকে। আমার ছিল গল্পের নেশা। কিন্তু যে গাঁয়ে বেড়ে উঠেছি, সেখানে সেই ছেলেবেলায় ক্লাসের ‘পাঠ্যবইয়ে’র বাইরে বই পড়ার সংস্কৃতিটা তেমন ছিল না। আমার মা বই পড়তে পছন্দ করতেন। কিন্তু তাঁর বাবাবাড়ির পড়ুয়া পরিবেশ থেকে অল্প বয়সেই দুম করে হঠাৎ স্বামীর কৃষক-গৃহস্থ পরিবারে এসে তিনি যেন আর থই পাচ্ছিলেন না। এ বাড়িতে গৃহস্থ ঘরের বউয়ের বইপড়া আক্ষরিক অর্থেই আড় চোখে দেখার মতো বিষয়। কানাকানি-ফিসফিসানির বিষয়। গল্প-উপন্যাসের বইকে সেকালে ‘আউট বই’ বলা হতো। এই আউট বই পড়া রীতিমতো পাপ। কারণ এতে চারিত্রিক স্খলন ঘটে। অনৈতিক প্রেম-ভালোবাসা শেখা হয়। কূটচালে দীক্ষা হয়। ফলে, যে রমণীর গুণে সংসার সুখের হওয়ার কথা, সেই রমণীর মনে ঘুণপোকা বাসা বাঁধে। সে স্বামী, শাশুড়ির মুখে মুখে চটাং চটাং কথা বলা শিখে যায়।

যুক্তি তর্কে পারদর্শী হয়ে ওঠে। হয়ে ওঠে মুখরা রমণী। আর কে না জানে, রমণী মুখরা হলে সেই সংসারে ‘সঙ’-ই সাড় হয়ে ওঠে। সুখের আর দেখা মেলে না। তো আমার সেই মা গল্প-উপন্যাস পড়ার আসমুদ্র আক্ষেপ নিয়েই রাতভর তাঁর বুকে জমে থাকা গল্পের ঝুলি খুলে দেন আমাদের। আমরা সেই গল্প শুনে কল্পনার জগতে বুঁদ হয়ে রই। কিন্তু সবকিছুই তো একদিন ফুরায়। মায়ের যেমন রাত জেগে গল্প বলার জীবনীশক্তি ফুরায়। ফুরায় আমার আগ্রহও। আমার তখন বই পড়তে ইচ্ছে হয়। আরও নানান রকমের বৈচিত্র্যময় গল্প শুনতে ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে হয় ছবিতে, গল্পতে আদ্যোপান্ত ডুবে থাকতে। সেই সুযোগ মিলে যায় বাজারে থাকা ওষুধের দোকানে। সেখানে রোজ বিকেলে গাঁয়ের বয়োজ্যেষ্ঠদের পত্রিকা হাতে বসে থাকতে দেখা যায়। তারা গম্ভীর মুখে পত্রিকা পড়েন। উত্তেজিত ভঙ্গিতে তর্ক করেন। সেখানে রাজনীতি, অর্থনীতি, খেলা, বিনোদন কত কিছু থাকে! আমার খুব ইচ্ছে হয় সেইসব গল্প-কথা শুনতে। কিন্তু সেখানে শিশুদের প্রবেশ নিষেধ। ওই বয়সের শিশুরা কেন পত্রিকা পড়বে? পত্রিকার পাতায় কত কত খবর-ছবি থাকে, সেসব বাচ্চাদের দেখা উচিত নয়। তারপরও আমি উৎসুক চোখে দূরে দাঁড়িয়ে থাকি। যদি এক মুহূর্তের জন্যও সুযোগ মিলে যায়! তা যায়ও। কখনো কখনো কেউ কেউ হাঁক দিয়ে বলেন, যা-তো, ওই দোকান থেইকা দুই কাপ চা লইয়ায়। কিংবা দুইটা সিকারেট আন। আমি হাওয়ার বেগে ছুটি। চা-সিগারেট নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে থাকি। যাই না। আমার চোখ তখন আঠার মতো এঁটে থাকে ওই পত্রিকার পাতায়, ছবিতে, খবরে, গল্পে। ওই সময়ে একটা অদ্ভুত বিষয় আবিষ্কার করি আমি, পত্রিকার প্রতিটি সংবাদই কোনো না কোনোভাবে গল্প। ঘটনা। কাহিনি। আমি তো গল্পভুক। সারাক্ষণ কেবল মাথার ভেতর অসংখ্য গল্পের পোকা কিলবিল করে। সেই পোকাগুলো ওই অক্ষর, শব্দ আর ছবিতে আরও জীবন্ত হয়ে ওঠে। আমি প্রবল আগ্রহে-আনন্দে সেইসব গল্প গলাধঃকরণ, অন্তঃস্থকরণ করতে থাকি। আমার বুকে গজিয়ে ওঠা গল্পবৃক্ষের শাখা-প্রশাখা ক্রমশই শিকড় থেকে শিখরে পৌঁছাতে থাকে। বয়োজ্যেষ্ঠদের ওই চা-সিগারেট আনার ফুট ফরমায়েশ খাটার অজুহাতেই আমার পত্রিকা পড়ার দুর্নিবার আগ্রহ মিটতে থাকে। কিংবা আরও বাড়তে থাকে। সেকালে টরকি বন্দর নামে এক নদী বন্দর ছিল ঘণ্টা দেড়েকের ইঞ্জিন চালিত ট্রলারের দূরত্বে। দু-চারটাকা কমে পাইকারি চা-ডাল-আলু-তরকারি কিনতে মা সেখানে পাঠাতেন। আমি ওই দিনটির জন্য রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করতাম। কারণ বন্দরে একটা পত্রিকাস্ট্যান্ড আছে। সেখানে ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থাকলে কত কত পত্রিকা পড়া যায়! হরেক রকম রঙের, হরেক রকম ঢঙের পত্রিকা। আমি সেসব গোগ্রাসে গিলতাম। যেখানে কেজি প্রতি দু টাকা কৃচ্ছ্রতা সাধনের নিমিত্তে আমার মা আমাকে অতদূরের বন্দরে পাঠাতেন চাল-ডাল কিনতে, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই ওই পত্রিকা কেনার সাধ্য আমার ছিল না। যা ছিল, তার নাম সাধ। আমি সেই সাধ মিটিয়ে পত্রিকা পড়তাম। কত কত পত্রিকা। সেই পত্রিকার দোকানে ক্লিপ দিয়ে ঝোলানো থাকত কিছু আলো ঝলমলে ম্যাগাজিনও। সম্ভবত, অন্যদিন-এর সঙ্গে আমার পরিচয় সেখানেই। পরিচয় আরও কত কত ম্যাগাজিনের সঙ্গে। তখন তেরছাভাবে পড়ছে ভোরের আলো। চাকু দিয়ে মাখন কাটার মতো শীতের ভোরের ঘন কুয়াশা তখন ফালি ফালি করে কেটে দিচ্ছিল ভোরের সোনালি রোদ। আমি সেই রোদে সাদা-কালো পত্রিকার ভিড়ে ঝলমল করতে থাকা চার রঙা ম্যাগাজিনগুলো দেখে মুহূর্তের জন্য থমকে গেলাম। জমে গেলাম প্রথম যেবার রঙিন টিভি দেখেছিলাম, সেই অনুভবের মতো। যে কখনো চোখে দেখে নি, সে যখন হঠাৎ তার চোখের সামনে প্রথম বারের মতো আলোঝলমলে জগৎ দেখে, সেই অনুভবের মতো। যেন আমার চারপাশ জুড়ে উড়ে যাচ্ছে অযুত নিযুত ডানা মেলা রঙিন প্রজাপতি। সেই শুরু। শহর-গঞ্জে আসার সুযোগ পেলেই ইতিউতি চোখে কেবল পত্রিকাস্ট্যান্ড কিংবা দোকান খুঁজতাম। তারপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। দেখতাম বাহারি রঙের ঝলমলে প্রচ্ছদের নানান পত্রিকা। সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক। কত কত পত্রিকা, লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন, খেলা কিংবা চলচ্চিত্র সাময়িকী।

২.

এত এত পত্রিকার ভিড়েও অবশ্য অন্যদিন যেন কোন অগোচরে হয়ে উঠল আমার সেই ছোট্ট গাঁয়ের গল্পের ঝুলি নিয়ে বসা গল্পবুড়ি। শৈশব-কৈশোরে যেটুকু বই পড়ার সুযোগ হয়েছিল, তাতে মনের মুকুরে গেঁথে গিয়েছিল কিছু নাম। বাংলাদেশের হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন। পশ্চিমবঙ্গের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সমরেশ মজুমদার, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। আমাদের কাছে এই মানুষগুলো যেন দূর আকাশের তারা। জ্বলজ্বলে নক্ষত্র। যাদের ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। কেবল আলোটুকু দেখা যায়। জগতের সকল মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকা যায়। ঈদে বাড়ি যাব। তখন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে পাঁচ টাকা-দশ টাকায় বই কেনা যায়। আমি ঘুরে ঘুরে সেই বই দেখি। যদি সুনীল সমরেশ-শীর্ষেন্দু বা হুমায়ূন আহমেদের কোনো বই মিলে যায়! সেই দেখতে গিয়ে হঠাৎ একবার চোখে পড়ল ঢাউস সাইজের এক অন্যদিন। আমি থমকে দাঁড়ালাম। অন্যদিন ঈদসংখ্যা। হাতে নিতেই চমকে গেলাম, ওই এক ঈদসংখ্যায় এত এত উপন্যাস, গল্প, কবিতা! 

আমি রুদ্ধশ্বাসে পাতা ওল্টাতে লাগলাম। পাতার পর পাতা। এখন আর স্পষ্ট নামগুলো মনে নেই। তবে সেই অন্যদিন-এর একই সংখ্যায় উপন্যাস-গল্প কবিতা লিখেছেন বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি লেখকেরা। হুমায়ূন-সুনীল-সমরেশ থেকে শুরু করে কে নেই সেখানে? পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় যেন আলো ছড়াচ্ছেন আমার কাছে দূর আকাশের নক্ষত্র হয়ে থাকা সেই মানুষগুলো। তাদের জাদুকরি কলম। আমার বিস্ময় আর ফুরায় না। বাংলা সাহিত্যের সব রথী-মহারথী এই একই মলাটে! কীভাবে?

আমার মুগ্ধতা কাঁটতে চায় না। বিপুল বিস্ময়ে একের পর এক অক্ষর, শব্দে, গল্পে আমি বুঁদ হতে থাকি। এখনো মনে আছে, সেই ঈদসংখ্যা নিয়ে উঠে গেলাম লঞ্চে। তখন ডেক-এর যাত্রী হয়েই লঞ্চের মেঝেতে বিছানা বিছিয়ে বাড়ি যাই। বিস্তীর্ণ খোলা ডেক-এর টিমটিমে আলোয় চোখের কাছে নিয়ে পড়তে থাকলাম সেইসব গল্প, সেইসব স্বপ্নময় আখ্যান। চারপাশে হকার, যাত্রী, লঞ্চ স্টাফদের তারস্বরে চিৎকার। তুমুল হৈ হল্লা, শোরগোলে কান পাতা দায়। অথচ সব ভুলে আমি যেন সম্মোহিত হয়ে রইলাম ওই পত্রিকার পাতায় পাতায়, ছবিতে ছবিতে, গল্পে-কবিতায়। সেই অনুভবের তুল্য আসলে নেই।

এরপর দিন যত গেছে, তত বেড়েছে অন্যদিন ঈদসংখ্যার জন্য রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা। প্রতিবছর অপেক্ষায় থাকতাম, কবে আসবে ঈদ? কবে? তবে আজ কেন যেন মনে হয়, সেসময় ঈদের চেয়েও যেন বেশি অপেক্ষায় থাকতাম অন্যদিন ঈদসংখ্যার।

তখন অবশ্য ঈদসংখ্যার রমরমা যুগও। ধীরে ধীরে সব পত্রিকাই ঈদসংখ্যা বের করতে লাগল। কিন্তু অন্যদিন-এর মতো অমন করে কি কেউ ঈদের সবটুকু আনন্দ একটা পত্রিকার মলাটে জাদুর বাক্সে লুকানো জাদুর মতো সযত্নে সঞ্চয় করতে পেরেছিল? যেন মলাট ওল্টালেই সেই জাদুর বাক্সের ভেতর থেকে ঝলমল করে আলো ঝরাতে থাকবে ঈদ-আনন্দ। সুবাস ছড়াতে থাকবে আনন্দময় ঈদ! যেন অন্যদিন ঈদসংখ্যা না হলে ঈদ হয়ে থাকত বিবর্ণ, অপরিপূর্ণ, আনন্দহীন।

বাংলাদেশে পত্রিকাগুলোর ঈদসংখ্যা নিয়ে যে বর্ণাঢ্য বিচিত্র আয়োজন, তাতে অন্যদিন-এর ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রণিধানযোগ্য। প্রণিধানযোগ্য ওই ঈদসংখ্যায় লেখার স্বপ্ন বুকে পোষা লেখকের সংখ্যাও।

আমিও তাদের একজনই। কতবার মনে মনে ভেবেছি, ইশ! যদি কখনো এই ঈদসংখ্যায় আমার নামটা ছাপা হয়? যদি কখনো আমার কল্পলোকের গল্পও শব্দ ও অক্ষরে প্রতিভাত হয়ে ওঠে এখানে? কিন্তু ওই অবধিই। এটি যে সত্যি সত্যিই কখনো ‘সত্যি’ হয়ে উঠবে, তা কখনো ভাবি নি।

তারপর সময় চলে যায়। ক্যালেন্ডারের পাতা বদলায়। বদলায় জীবন ও জগতের কত কত গল্পও। আমারও। ততদিনে লিখতে শুরু করেছি। ধীরে ধীরে কিছু পাঠকও আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। কিন্তু কোনো ঈদসংখ্যায় লেখার সৌভাগ্য তখনো হয় নি। কেউ বলেনও নি কোনোদিন। স্বভাব বিরুদ্ধ বলে আমিও কখনো কাউকে অনুরোধ করি নি। লেখালেখি জীবনের নিরুত্তাপ, নিস্তরঙ্গ দিন চলে যাচ্ছে। সেই জীবনে আচমকাই ঢেউ তুলে দিল অন্যদিন। হ্যাঁ, শৈশব-কৈশোরের সেই স্বপ্নময় অন্যদিন। অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম হঠাৎই একদিন বললেন, সামনের ঈদসংখ্যায় তুমি উপন্যাস লিখবে।

দীর্ঘসময় স্তব্ধ হয়েছিলাম আমি। বিশ্বাস হচ্ছিল না, এভাবেও স্বপ্ন সত্যি হয়? সত্যি সত্যিই?

আমি লিখলাম, অন্যদিন-এর জন্য আমার প্রথম উপন্যাস ‘মেঘেদের দিন’। সেই উপন্যাস পাঠিয়ে দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করছি। এই বুঝি কী কী সব ফিডব্যাক আসে? কিংবা অন্যকিছু? কিন্তু অন্যদিন নির্বাহী সম্পাদক নাসের ভাই ফোন করলেন, উপন্যাস খুবই ভালো হয়েছে।

আমি চুপ করে শুনলাম। এ যেন আবারও বুকের ভেতর রঙিন প্রজাপতি উড়ে যাওয়ার অনুভব। এই অনুভব এখনো আছে। হয়তো এমনই থাকবে। যতবার যতদিন অন্যদিন ঈদসংখ্যায় লিখব...

৩.

তবে সময় সুবর্ণ যেমন, তেমন বর্ণহীনও। সেই যে শৈশবে পত্রিকাস্ট্যান্ডে দাঁড়ালেই সার বেঁধে ক্লিপে ঝোলানো হরেক রঙের ম্যাগাজিন দেখতাম, আজ সেখানে কেবলই হেমন্তের পাতা ঝরা সন্ধ্যার গল্প। বুকের ভেতর অদ্ভুত এক শূন্যতার, হাহাকারের হাওয়া। সেই সুবর্ণ সময়টা কোন ফাঁকে চলে গেল কোথায়! তার পলাতক ডানায় চেপে উড়ে উড়ে চলে যেতে থাকি আমি ও আমরাও। কত কত বৃক্ষ বড় হয়, বেড়ে ওঠে, তারপর শুরু হয় পাতা ঝরার গল্প। সেই গল্পে নিদারুণ সংকট যেমন জমা হয়, জমা হয় সংযোগও। ইন্টারনেট আসতে থাকে। পত্রিকার দোকানগুলোয় অমন ঝলমলে রঙের বসন্ত ক্রমশই ফিকে হতে থাকে। হতে থাকে বিবর্ণ, ধূসর। সেসব পত্রিকা কই আজ? বেশিরভাগই আর দেখা যায় না। সময়ের চক্রে কিংবা নতুন সময়ের সঙ্গে ছুটতে না পেরে কোথায় হারিয়ে গেছে তারা। পত্রিকার দোকানগুলো তাই এখন অনেকটাই সাময়িকী শূন্য। ম্যাগাজিনের সেই রমরমা যুগও আর নেই। তাই শৈশব-কৈশোরের সেই স্বপ্নালু আবেগ কিংবা অভ্যস্ততায় এখনো মাঝে মাঝে আনমনেই পত্রিকার স্ট্যান্ডের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। যেন সময়ের পাঁজর খুঁড়ে স্মৃতির খেরোখাতায় লিখে দিতে চাই সেইসব দিন, সেইসব স্বপ্ন রঙিন। কিন্তু সবকিছুই কেমন অচেনা লাগে। দোকানগুলো যেন শীতের প্রকৃতির মতোই শূন্য, খাঁখাঁ, নি®প্রাণ। সেই ক্লিপে টানানো প্রজাপতির রঙিন ডানাওয়ালা ম্যাগাজিনগুলো আর দেখা যায় না। দেখা যায় না উৎসুক মানুষের ভিড়ও। সময় কত কিছু যে কেড়ে নিয়েছে! হারিয়ে ফেলেছে অজানায়। অচেনা করে দিয়েছে বুকের ভেতর সঙ্গোপনে, সযতনে লুকিয়ে রাখা স্মৃতির চিরচেনা অ্যালবাম। তবে একটি দৃশ্য এখনো ঠিক একইরকম আলো ঝলমলে, রঙিন। সেই গল্পটা অন্যদিন-এর। তাঁর পাতায় পাতায় এখনো স্বপ্ন খেলা করে। ভেসে বেড়াতে থাকে জীবনের রূপ, রস, গন্ধ। তাতে বুঁদ হয়ে থাকে পাঠক। পত্রিকাস্ট্যান্ডে দাঁড়ালে এত এত শূন্যতার ভিড়েও অদ্ভুত এক পূর্ণতার অনুভব নিয়ে আগের মতোই জ্বলজ্বল করতে থাকে অন্যদিন, যেন এক নিঃসঙ্গ শেরপা। আর আমার বুকের ভেতর এখনো সেই আগের মতোই বেপরোয়া পাখি ডানা ঝাপটায়।

ওই যে, এত অচেনার ভিড়েও ওই একটা ছবি ভীষণ চেনা। ওই দৃশ্যটা গত পঁচিশ বছর ধরেই চেনা। যেন আদি ও অকৃত্রিম এক দৃশ্য। পাক্ষিক অন্যদিন! সময়ের সঙ্গে ছুটে চলা, এগিয়ে যাওয়া অনবদ্য এক নাম। সময়ের রেসে কখনো পিছিয়ে পড়ে নি সে। বরং নতুন নতুন ভাবনায় এগিয়ে চলেছে, এগিয়ে থেকেছে সময়ের চেয়ে আরও বেশি।

এবার পঁচিশ বছর পূর্তির এই দিনে অন্যদিন আসছে নতুন অবয়বে। নতুন ভাবনায়। অনলাইনে-অফলাইনে আরও সরব, আরও সোচ্চার, আরও উজ্জ্বল। আমাদের স্বপ্নময় সেই শৈশব আর এই আজকের দিন, এর পুরোটাই যে গভীর মমতায় আর রঙের ছটায় রঙিন করে চলেছে অন্যদিন, তার জন্য ভালোবাসা অপার। এই যাত্রা হয়ে থাক অন্তহীন স্পর্শের অনুভব। ছুঁয়ে যাক স্বপ্নের সবটুকু সীমানা...

Leave a Reply

Your identity will not be published.