‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’ পাচ্ছেন নবীন-প্রবীণ দুই কথাসাহিত্যিক

‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’  পাচ্ছেন নবীন-প্রবীণ দুই কথাসাহিত্যিক

আপন দ্যুতিতে উদ্ভাসিত প্রয়াত এই লেখকের স্মরণে এবং দেশের নবীন-প্রবীণ কথাশিল্পীদের শিল্পসৃষ্টিতে প্রেরণা জোগাতে ২০১৫ সালে প্রবর্তিত হয় ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’। এক্সিম ব্যাংকের সহযোগিতায় পাক্ষিক ‘অন্যদিন’-এর এই উদ্যোগ। এ বছর সপ্তমবারের মতো এ পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। 

‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’-এর জন্য নির্বাচিত হয়েছেন দুজন। কথাসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য প্রবীণ কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন এবং নবীন সাহিত্যশ্রেণিতে (অনূর্ধ্ব চল্লিশ বছর বয়স্ক লেখক) ফাতেমা আবেদীন এ বছর পুরস্কার পাবেন।

সেলিনা হোসেন
সেলিনা হোসেনের  জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৪ জুন, রাজশাহী শহরে। ছয় দশক ধরে লিখছেন তিনি। জীবনবাদী এ লেখকের লেখায় এদেশের মানুষের সংগ্রাম, যাপিত জীবন, আশা-আকাক্সক্ষা, স্বপ্ন, স্বপ্নভঙ্গের বেদনা মূর্ত হয়ে ওঠে বারবার। বাংলার লোক-পুরাণের গল্প ও উজ্জ্বল চরিত্রসমূহ সমসাময়িক ব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত হয়। এদেশের নিচুতলার মানুষের জীবন বিশ্বস্তভাবে উঠে আসে। এ জন্য তিনি ছুটে যান এদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, উপকূল এলাকায়, এমনকি দুর্গম দ্বীপাঞ্চলে। তাঁর কথাসাহিত্যে প্রতিফলিত হয়েছে সমকালের সামাজিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংকটের সামগ্রিকতা। বাঙালির অহংকার ভাষা আন্দোলন ও  মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তাঁর লেখায় বারবার ফিরে ফিরে এসেছে; নতুন মাত্রা অর্জন করেছে। 
শিশুসাহিত্যেও সৃজনশীলতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর মননশীল প্রবন্ধ ও ভ্রমণসাহিত্যও পাঠকদের চিত্ত জয় করেছে।  

 

সেলিনা হোসেনের  উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে : উপন্যাসÑহাঙ্গর নদী গ্রেনেড (১৯৭৬), মগ্ন চৈতন্যে শিস (১৯৭৯), নীল ময়ূরের যৌবন (১৯৮২), চাঁদবেনে (১৯৮৪), পোকামাকড়ের ঘরবসতি (১৯৮৬), নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি (১৯৮৭), কাঁটাতারের প্রজাপতি (১৯৮৯), কালকুট ও ফুল্লরা (১৯৯২), গায়ত্রী সন্ধ্যা (১৯৯৬), যুদ্ধ (১৯৯৮), লারা (২০০০), মর্গের নীল পাখি (২০০৫), পূর্ণ ছবির মগ্নতা (২০০৮), ভূমি ও কুসুম (২০১০। গল্পগ্রন্থÑউৎস থেকে নিরন্তর (১৯৬৯), জলবতী মেঘের বাতাস (১৯৭৫), খোল করকাল (১৯৮২), মতিজানের মেয়েরা (১৯৯৫), সখিনার চন্দ্রকলা (২০০৮), মৃত্যুর নীলপদ্ম (২০১৫)। শিশু-কিশোর সাহিত্যÑকাকতাড়–য়া (১৯৯৬), মেয়রের গাড়ি (২০০৩), মিহিরুনের বন্ধুরা (২০০৪), চাঁদের বুড়ির পান্তা ইলিশ (২০০৮), হরতালের ভূতবাবা (২০১৪)। প্রবন্ধÑস্বদেশে পরবাসী (১৯৮৫), নির্ভয় করো হে (১৯৯৮), পথ চলাতেই আনন্দ (২০১৪)।   
বাংলা সাহিত্যে তাৎপর্যপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সেলিনা হোসেন পেয়েছেন বহু পুরস্কার। সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৮) ও একুশে পদক (২০০৯) অর্জন করেছেন। 
এবার কথাসাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’ পাচ্ছেন সেলিনা হোসেন। 

ফাতেমা আবেদীন
জন্ম ১৯৮৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, শেরপুর শহরে। বাবা জয়নাল আবেদীন। মা আলেয়া বেগম। বেড়ে উঠেছেন ঢাকার বাসাবোতে। বই পড়াই তখন একমাত্র বিনোদন ছিল। পরে রান্নার দিকে ঝোঁক গড়ে ওঠে। এ জন্য ‘রূপচাঁদা-ডেইলি স্টার সুপার শেফ’ পুরস্কার পেয়েছেন। এন’স কিচেন নামে তার একটি ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। 

ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর এই লেখিকা দেশের বাইরে একসময় শিক্ষকতায় যুক্ত ছিলেন কিছুকাল। বর্তমানে কাজ করছেন অনলাইন নিউজপোর্টাল ‘বাংলা ট্রিবিউন’-এ।
লেখালেখির সূচনা ২০০৫ সালে। প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক ভোরের কাগজ-এ। পরে বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইনের নানা ব্লগেও প্রকাশিত হয়েছে সাহিত্য ও নানা বিষয়ের বিচিত্র সব রচনা।
প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে উপন্যাস ‘সেই সকালের গল্প’ (২০১২) এবং গল্পগ্রন্থ ‘ছায়া খুঁজে ফিরি’ (২০১৩)। গল্প-উপন্যাসের পাশাপাশি অনুবাদও করেন। 

‘মৃত অ্যালবাট্রস চোখ’ গল্পগ্রন্থের জন্য নবীন সাহিত্যশ্রেণিতে ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ২০২১’ পেলেন ফাতেমা আবেদীন। সাহিত্যবিষয়ক এটি তার প্রথম পুরস্কার। 

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে এই দুটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছিলেন যথাক্রমে শওকত আলী এবং সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম। ২০১৬ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক এবং স্বকৃত নোমান। অন্যদিকে ২০১৭ সালে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছিল জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত এবং মোজাফ্ফর হোসেনের হাতে।  ২০১৮ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন রিজিয়া রহমান এবং ফাতিমা রুমি। ২০১৯ সালে পুরস্কার পেয়েছিলেন রাবেয়া খাতুন ও সাদাত হোসাইন। আর ২০২০ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন হাসনাত আবদুল হাই ও নাহিদা নাহিদ। 
আগামী ১২ নভেম্বর, শুক্রবার, বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এবছরের পুরস্কার প্রদান করা হবে।
 

Leave a Reply

Your identity will not be published.