মুজতবা আহমেদ মুরশেদ-এর একগুচ্ছ কবিতা

মুজতবা আহমেদ মুরশেদ-এর একগুচ্ছ কবিতা

একটি অপ্রচলিত শোক

তোমার রোমান্টিক দ্রাঘিমা রেখায় আমি উদযাপন করছি একটি অপ্রচলিত শোক।
এখন একটি বোকা বুনোহাঁসের কথা শোনার জন্যে কথা রাখার সময় নয়!

সারা রাত বালুচরে থেকে থেকে এতটা ক্লান্ত আমি তোমাকে তা বোঝাতে বোঝাতে
আমার প্রকাশিত শোকগুলো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।

শোক উদযাপনের আড়ালে এখন আমি তোমার রোমান্টিক রেখাগুলোয় নিখুঁতভাবে চুমু দিচ্ছি।
দ্যাখো, মৃত্যুর সাথে কাটাকুটি খেলছে মৃত্যু। শোকের সাথে শোক।

 

আমাদের বিরহজীবন

বিপুল বিরহের বিকেল বলেছে
          শরাবের নহরে তিন ডুব মেরেই গোলাপ দেখা ভালো।
          সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে টের পাই চশমার ডেলিভারি বাকি!

বুঝি না কখনো বারবার এত সবকিছু বাকি থাকে ক্যানো!
           একমাত্র আগামীগুলো থাকে না বাকি।
            তারা ক্ষয় হয়ে যায় প্রতিদিন গোলাপ না দেখেও।

 

মূলত সকলের এক জীবনে কখনোই গোলাপ দর্শন হয় না।
         এমন নীলবিষে আক্রান্ত সত্য নিয়ে অনেকদিন, 
          অনেক বসন্ত বেঁচে থাকতে সাহস লাগে।

 

জলেরাও কাঁদে ডাহুক হয়ে

এত জল কোথা পাও? শুধু ঘোলা করো!

জানো না কি
বিরান নগরীতে ডেকে আনা জলও ব্যথাতুর হয়
ভয় পেয়ে মুছে দেয় পদচিহ্ন নিজের!

জলেরাও সকল জানতে চেয়েছিল একদিন সমস্বরে
          “ডাহুকেরা শুধু দুপুরেই ডাকে বলে লোকে জানে।
           ভোরেও কোনো কোনো ডাহুক জলের তলে কাঁদে।
           বোঝে নাই কেউ! জানে নাই কোনোদিনও, জানে নাই!”

বুঝেছিলাম একদিন অপহৃত জলেরাও ফেরত চাইবে
আপন অধিকারে উচ্চকিত হতে তারা সকল কিছু—
          “আমাদের আলোগুলো কই?
           আমাদের দিগন্তগুলো ফেরত দিয়ো।
           জলের ডাহুক জীবন আমাদের
           থাকে না কেন ডায়েরির পাতায় লেখা!”

তাদের জীবনকথা থাকে নাই লেখা বলে কেউ জানে নাই।
শোনে নাই কেউ।
করে নাই কেউ
জীবনের ওইসব উৎসব
তাদের সাথে অবিকল মানুষের অনুভব নিয়ে!

 

টের পাও কবিতার কথপোকথন

ওখানে লিখেছি কবিতা ওখানে—এই তো শব্দ রং তার!
এখানেও দ্যাখো—তোমার ওদিকে— গ্রীবায় টের পাও!

এই যে এখানে শস্যদানা শুয়ে আছে চিবুকের একটু নিচে।

আবার এখানেও নিচে— উপমা পরত 
এই যে এখানে বড়ো ভালোবেসে ভোরের শিশির
একদম ক্লান্তির শেষে।

একটু নিচে কী নেবে কিছু কি দেবে বিশ্বাস?
এখানে—এখানে দারুণ কথোপকথন জমে ওঠার কাহিনি এবার।

এবার এখানে এই তো স্বাক্ষর শিল্পের ওপর
অমোন উপমা বিন্যাশে দ্যাখো তোমার শিল্পসম্ভার, আফ্রোদিতি!

 

প্রিয় বিস্ময়ের খেলা

ছায়ার বিপরীতে বিস্ময় নতুন কোনো এক অস্তিত্বের সন্ধানে নামে নিমগ্ন সন্ধ্যায়।
মানুষেরা তখন প্রদীপ প্রজ্জ্বলন আয়োজনে আপ্রাণ সচেষ্ট।

ঠিক তখুনি
কোমল এক বোধের তুষারপাতে
ছায়া হাতরে ফিরি।
একটি প্রগাঢ় ছায়া ছাড়া
কোনো আকার পাই না নিজের!
অথবা আমার ছায়ার বিপরীতে
ধীর প্রবাহে জেগে ওঠা বিস্ময়!

জেনো, বিস্ময় আমার বরাবরই প্রিয় খেলা।

Leave a Reply

Your identity will not be published.