কান চলচ্চিত্র উৎসবঃ পুরস্কারের অপেক্ষায় ‘রেহানা মরিয়ম নূর’

কান চলচ্চিত্র উৎসবঃ পুরস্কারের অপেক্ষায় ‘রেহানা মরিয়ম নূর’

এবারের কান চলচ্চিত্র উৎসবটি বাংলাদেশের জন্য চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কেননা এবারই মূল আসর আঁ সার্তে রিগা বিভাগে প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হলো বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেহানা মরিয়ম নূরকে ঘিরে চলচ্চিত্রটির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে।

উৎসবের দ্বিতীয় দিন, গত ৭ জুলাই, বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে কানের ডেবুসি হলে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়। আর পিনপতন নীরবতার মধ্যে এক হাজার ৬৮ জন দর্শক ছবিটি উপভোগ করে। ছবিটি শেষ হওয়ার পর মুহুর্মুহু করতালিতে পুরো হল মুখর হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য, ইংরেজি সাবটাইটেল দেওয়া এক ঘণ্টা ৪৭ মিনিট ব্যাপ্তির ‘রেহানা মরিয়ম নূর’কে বুঝতে দর্শকদের কোনো সমস্যাই হয় নি। ছবিটি তাদের হৃদয় স্পর্শ করেছে।

ছবিটি প্রদর্শনীর আগে চলচ্চিত্রটির পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ দর্শকদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, কানে এসেছেন- এই ব্যাপারটি তার বিশ্বাস হচ্ছে না। আর চলচ্চিত্রটির নাম ভূমিকায় যিনি অভিনয় করেছেন, সেই প্রধান চরিত্রের অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন দর্শক প্রতিক্রিয়ায় অভিভূত হয়ে পড়েন; আবেগে আপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘এখানে আসার মতো এত বড় স্বপ্ন দেখার সাহসও আমার ছিল না। যে সম্মান পেলাম তার পুরো কৃতিত্ব টিমের ও পরিচালকের। আমি শুধু তাঁকে বিশ্বাস করেছি আর তাঁর কথামতো পরিশ্রম করেছি। আজ যে রেসপন্স পেয়েছি, আমি জানি না এরপর আমার আর কী পাওয়ার থাকতে পারে।’

কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করছে ‘রেহানা মরিয়ম নূর’-এর ৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম। এখানে পরিচালক সাদ ও অভিনেত্রী বাঁধন ছাড়াও রয়েছেন ছবিটির সিঙ্গাপুরের প্রযোজক জেরেমি চুয়া, চিত্রগ্রাহক তুহিন তমিজুল, প্রডাশন ডিজাইনার আলী আফজাল উজ্জ্বল, শব্দ প্রকৌশলী শৈব তালুকদার, কালারিস্ট চিন্ময় রায় ও নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু।

বাংলাদেশের চলচ্চিত্র কান চলচ্চিত্র উৎসবের অফিসিয়াল বিভাগে প্রদর্শিত হতে পারে, এটি ছিল আগে শুধুই স্বপ্ন, কিন্তু এখন তা সত্যি। বাস্তব। আর ছবিটিতে যে কাহিনি, যে ঘটনা মূর্ত হয়ে উঠেছে, সেটি কানের চলচ্চিত্র বোদ্ধা এবং দর্শকদের স্পর্শ করেছে। এই ঘটনার সঙ্গে তারা একাত্ম হয়ে গেছেন। এতে একটি বিষয় চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, ছবিটিতে যে ঘটনা দেখানো হয়েছে তা যে-কোনো জায়গায় ঘটতে পারে। হোক বাংলাদেশ, ফ্রান্স কিংবা ইউরোপ অথবা বিশ্বের অন্য কোথাও। পরিচালক সাদ এই চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে সঠিক জায়গাটি স্পর্শ করতে পেরেছেন। আর পুরো ছবিতে প্রাধান্য পেয়েছে নীল রঙের আভা, যা দর্শকদের এই বার্তা দেয় যে, এখানে জীবনের দৃশ্যগুলোকে ছিনিয়ে আনা হয়েছে। তাই কানে চলচ্চিত্রটি পুরস্কার পাবার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী হতেই পারি।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০২ সালে কানের প্যারালাল বিভাগে ডিরেক্টরাল ফোর্টলাইনে, উৎসবের ৫৫তম আসরে প্রদর্শিত হয়েছিল বাংলাদেশের প্রয়াত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের ‘মাটির ময়না’। ছবিটি সেবার পুরস্কৃতও হয়েছিল।  

দক্ষিণ ফ্রান্সের কান শহরের সাগর উপকূলে পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনে গত ৬ জুলাই, মঙ্গলবার, পর্দা উঠেছে বিশ্ব চলচ্চিত্রের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আসর কান চলচ্চিত্র উৎসবের। ৭৪তম এই উৎসবটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল গত মে মাসের ১১ থেকে ২২ তারিখে। কিন্তু করোনার কারণে তা পিছিয়ে এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

উৎসবের উদ্বোধনী চলচ্চিত্র ছিল ‘অ্যানেট’। বহু প্রতীক্ষিত এই মিউজিক্যাল চলচ্চিত্রটির পরিচালক ফ্রান্সের লিও ক্যারেক্স।

এবার ‘দ্য অনারারি পাম ডি’অর’ প্রদান করা হচ্ছে আমেরিকার অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্রকার জুডি ফস্টার এবং ইতালির চলচ্চিত্রকার মার্কো বেলোচ্চিওকে।

৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা নামবে ১৭ জুলাই।

Leave a Reply

Your identity will not be published.