নায়িকাদের উন্মুক্ত নাভি: একটি পর্যবেক্ষণ

নায়িকাদের উন্মুক্ত নাভি: একটি পর্যবেক্ষণ

প্রায়ই একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তা হলো ভারতীয় চলচ্চিত্রে নায়িকাদের উন্মুক্ত নাভি প্রদর্শন। এ বিষয়ে আলোকপাত করার আগে একটু পিছন ফিরে তাকাতে হবে, দেখা যাক কী আছে এর গভীরে!

ভারতীয় প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসারে নাভির বেশ গুরুত্ব রয়েছে। কেননা ভগবান বিষ্ণুর নাভিকে জীবন ও সৃজনশীলতার উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি জন্ম ও জীবনের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত।

প্রাচীন ভারতে সাধারণ নারীরা এমন পোশাক পরতেন যাতে তাদের নাভি না দেখা যায়। শুধু নর্তকী বা বিনোদনকারীদেরই নাভি দেখা যেত। প্রাচীন ভারতীয় ভাস্কর্যে অবশ্য নারীদের উন্মুক্ত নাভি দেদার দেখা যায়। উদাহরণ হিসেবে অজন্তা-ইলোরার ভাস্কর্যগুলোর কথা বলা যায়। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে দেখা যায়, ভারতীয় নারীরা নাভির নিচে শাড়ি পড়ছে। তখন থেকে বিষয়টি ফ্যাশন বা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে আসা যাক। বলিউডের ‘ব্রহ্মচারী’ (১৯৬৮) চলচ্চিত্রের ‘আজ কাল তেরে মেরে’ গানে শারারা শাড়িতে নায়িকা মুমতাজের নাভি দেখা গিয়েছিল। শাড়ির এই স্টাইলটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং তা ‘মুমতাজ শাড়ি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। এমনিভাবে ‘এক দুজেকে লিয়ে’ (১৯৮১)-তে রতি অগ্নিহোত্রী, ‘খলনায়ক’ (১৯৯৩)-এর ‘চোলি কে পিছে’ গানে মাধুরী দীক্ষিত, ‘বান্টি অর বাবলি’র (২০০৫) ‘কাজরা রে’ গানে ঐশ্বরিয়া রাই, ‘তিস মার খান’ (২০১০)-এ ‘শীলা কি জাওয়ানি’ গানে ক্যাটরিনা কাইফের উন্মুক্ত নাভি দেখা যায়। মজার বিষয় হলো, ‘জিসম’ (২০০৩)-এ বিপাশা বসু নাভিতে বরফের কিউব নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। আর ‘দ্য ডার্টি পিকচার’-এ বিদ্যা বালানের নাভিতে রাখা একটি ডিম অমলেট হয়ে ওঠে।

অন্যদিকে ভারতের দক্ষিণী সিনেমাগুলো বলিউডকেও যেন হার মানায়। ছবিগুলোতে নায়কদের মারদাঙ্গা অ্যাকশনের পাশাপাশি নায়িকাদের হট ও আবেদনময়ী দৃশ্যগুলো বেশি আকর্ষিত করে। নারী-শরীরের খোলা বিভাজিকায় পথ হারানো পুরুষের সংখ্যা কম নয়।

নারী-শরীরের অলি-গলিতে লুকিয়ে আছে হাজারও সম্মোহন আর হাতছানি। অথচ নাভিতে এসেই যেন ভরাডুবি হয় পুরুষ নাবিকের। আর নারী-শরীরের সেই বিশেষ অঙ্গকেই বারবার বড়পর্দায় তুলে ধরতে চান দক্ষিণী পরিচালকেরা। টলি-পাড়া বা বলিউড সিনেমা জগতের চেয়ে দক্ষিণী ছবিতেই যেন বেশি করে ধরা পড়ে নায়িকাদের নাভির সৌন্দর্য। কেন?

এ প্রসঙ্গে বলা যায়, নারী-শরীরের খোলা নাভির আবেদনে কাত হন না এমন পুরুষ বিরল। শাড়িতে যে নারীকে এত মোহময়ী লাগে তার অন্যতম কারণ কিন্তু উন্মুক্ত নাভির প্রদর্শন। তা কেন এত আকর্ষণ জমা হয়ে থাকে নারীর নাভিতে? সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দক্ষিণী সিনেপ্রেমীদের নারী-শরীরের মধ্যে নাভির প্রতিই বেশি আকর্ষণ। আর সেই বিষয়টিকেই কাজে লাগান পরিচালকেরা। বিশেষ করে কোনো গানের দৃশ্যে নায়িকাকে শাড়ি পরানোর অন্যতম উদ্দেশ্য ওই নাভি প্রদর্শনই। তাঁদের মতে, এর মাধ্যমে অত্যন্ত সহজেই প্রেম ও আসক্তিকে ফুটিয়ে তোলা যায়। আর দর্শকদের চাহিদাই তো শেষ কথা।

তাই তাঁদের কথা মাথায় রেখেই প্রাধান্য দেওয়া হয় নাভিকে। আগে অভিনেত্রী সিল্ক স্মিথার শরীরি ভাষায় মত্ত হয়ে উঠতেন দর্শকেরা। সেই প্রচলন আজও দক্ষিণী ছবিতে বিরাজমান। একটি ইন্টারভিউতে অভিনেত্রী তাপসি পন্নু বলেছিলেন, ‘কস্টিউম ডিজাইনারদের একটা কথাই বলা হয় পোশাক যতটা পারো নাভির নিচে রাখো। তাহলেই বাজিমাত।’

অনেক পরিচালক জানিয়েছেন, নারীর নাভির প্রতি দর্শকদের এতটাই আকর্ষণ যে, অনেক দক্ষিণী ছবির পোস্টারও তৈরি হয় এই বিষয়টি মাথায় রেখে। আসলে দিনের শেষে ছবি থেকে কত আয় হলো, সেটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই আয়ের অন্যতম হাতিয়ার নারী শরীরের নাভি। আরও একটি কারণে পরিচালকরা নাভিকে কাজে লাগান। কী রকম? ছবিতে খোলামেলা কোনো দৃশ্য থাকলে অনেক সময় তাকে ‘অ’ নথিভুক্ত করা হয়। ফলে সব বয়সের দর্শক সেই ছবি দেখা থেকে বঞ্চিত হয়। এই সমস্যারও সহজ সমাধান করে নাভি।

নারী-শরীরের উত্তেজক স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম নাভি ও নাভির চারপাশের অঞ্চল। ফলে নায়িকার সেসব অংশ নায়ক ছুঁলেই দর্শকদের উত্তেজনা বা অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বাড়ে। এভাবেই একাধারে যেমন ছবিতে চাহিদার দিকটি মেটানো হয়, তেমনই এড়িয়ে যাওয়া যায় কোনো খোলামেলা দৃশ্য। ফলে ট/অ তকমা পেতে সমস্যা হয় না। সব মিলিয়ে দক্ষিণী সিনেমা জগতে নারীর নাভি ছবি সুপারহিট করতে বড়সড় ভূমিকা পালন করে, এ বাস্তবতাকে উপেক্ষা করার কোনো উপায় নেই।

Leave a Reply

Your identity will not be published.