হুমায়ূন আহমেদের অষ্টম ও শেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ২০১২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। ওই বছরের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের ৮টি শাখায় ছবিটি পুরস্কৃত হয়। হুমায়ূন আহমেদ শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার হিসেবে পুরস্কৃত হন। ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের সম্মানও লাভ করে। ১৯ জুলাই হমায়ূন আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী। এই উপলক্ষে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ নির্মাণের গল্প এখানে তুলে ধরা হলো।
‘ঘেটুপুত্র কমলা’ একটি পিরিয়ড ফিল্ম। প্রায় দেড় শ’ বছর আগে এ দেশে ঘাটুগান বা ঘেটুগান নামে একটি নতুন সংগীত ধারার সৃষ্টি হয়েছিল। এই ঘাটুগান মূলত প্রেম ও বিনোদনমূলক শ্রেণিভুক্ত। এই গানের পৃষ্ঠপোষক ছিল সমাজের বিত্তবানরা। উল্লেখ্য, সংগীত উপভোগের পাশাপাশি এই গানের শিল্পী তথা নারীবেশী কিশোরদেরও যৌনসঙ্গী হিসেবে ব্যবহার করতেন সেইসব বিত্তবান। এই বিষয়টি অত্যন্ত সুন্দর ও নান্দনিকভাবে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ চলচ্চিত্রে মূর্ত হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আগে আকারে-ইংগিতে সমকামের বিষয়টি ফুটে উঠেছিল। ‘ঘেটুপুত্র কমলা’-ই সেই চলচ্চিত্র যেখানে সরাসরি অথচ শৈল্পিকভাবে উঠে এসেছে এই বিষয়টি।
২০১০ সালের একদিন সকালবেলায় হুমায়ূন আহমেদের প্রধান সহকারী পরিচালক জুলের রানার মোবাইলটি বেজে ওঠে। কলটি রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে হুমায়ূন আহমেদ বলেন, ‘জুয়েল, ঘুমাচ্ছ নাকি? সরি সরি...। আচ্ছা শোনো, কোনো কাজ যদি না থাকে তো বাসায় আসো। একটা স্ক্রিপ্ট পড়ব’।
জুয়েল রানা ধানন্ডির দখিন হাওয়ায়, হুমায়ূন আহমেদের অ্যাপার্টমেন্টে গেলেন। কিছুক্ষণ পর স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন এবং জুয়েল রানাকে পাশে বসিয়ে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র স্ক্রিপ্ট পড়ে শোনালেন হুমায়ূন এবং জানালেন, এই স্ক্রিপ্ট অবলম্বনে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন। তখন জুয়েলের জিজ্ঞাসা ছিল, ‘এত সেনসেটিভ গল্প, আমাদের দেশের দর্শকরা কীভাবে নেবেন?’ হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, ‘শোনো গল্পটির সৌন্দর্য নির্ভর করবে কীভাবে গল্পটাকে তুমি দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করবে। ছবি যখন বানাব তখন দেখো দর্শক মুগ্ধ হয়ে দেখবে।’
‘ঘেটুপুত্র কমলা’ প্রযোজনার প্রস্তাব যখন হুমায়ূন আহমেদ চ্যানেল আই এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাগরকে দিলেন, তখন তিনিও ছবিটির বিষয়বস্তু শুনে বেশ সংশয়ে ছিলেন। পাশাপাশি তার একটা আস্থাও ছিল হুমায়ূন আহমেদের ওপর। তাই তিনি ছবিটি প্রযোজনা করতে রাজি হয়ে যান।
হুমায়ূন আহমেদ ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ নির্মাণ করেছেন তাঁর লেখা ‘একজন শৌখিনদার মানুষ’ গল্প অবলম্বনে। বলাই বাহুল্য, পূর্ণদৈর্ঘের চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রয়োজনে এখানে অনেক সংযোজন করেছেন। যেমন, গল্পে ঘেটুপুত্র কমলার বাবার বর্ণনা আছে, বর্ণনা আছে ভাইবোনদেরও। কিন্তু দৃশ্যপটে তারা ছিল না। ছবিতে অবশ্য কোনো ভাই নয়, ছোটবোনকে দেখা গেছে। অনেক নতুন চরিত্র যোগ হয়েছে। গল্পে উল্লেখ আছে, ড্যান্স মাস্টারকে বাড়িতে রেখেছেন বিত্তবান মানুষটি। অন্যদিকে চলচ্চিত্রে ড্যান্স মাস্টারের চরিত্রটি ঘেটুপুত্র কমলার বাবার দলের লোক। উল্লেখ্য, এই চরিত্রটি মূল চিত্রনাট্যে ছিল না, পরে সংযোজন করা হয়েছে। শুরুতে কমলার বাবাই ছিল দলপ্রধান এবং ড্যান্স মাস্টার।
‘ঘেটুপুত্র কমলা’র জন্য প্রয়োজন ছিল এমন একটি পুরোনো জমিদার বাড়ি, যার অবস্থান হবে হাওরের সামনে। যেখানে চিত্রগ্রহণ করা হবে ভরা বর্ষায় এবং শুকনো মৌসুমে। এমন একটি বাড়ির খোঁজ করতে লাগলেন ইউনিটের লোকজন এবং অন্যরাও। কিন্তু কোনো বাড়িই হুমায়ূন আহমেদের পছন্দ হলো না। শেষ পর্যন্ত হবিগঞ্জের মাধবপুরের হরিপুর গ্রামের বাড়িটির সন্ধান দেন অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়। তখন মেহের আফরোজ শাওনের পরামর্শ অনুযায়ী সেই বাড়িটি দেখতে যান সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তিনি ক্যামেরায় ধারণ করেন সেই বাড়িটির অবয়ব এবং চারপাশের প্রকৃতিকে। সেই ভিডিওটি দেখেই লোকেশনটি পছন্দ করেন হুমায়ূন আহমেদ। আউটডোরের কাজ হয় মূলত হরিপুরের সেই বাড়িতে। আর ইনডোরের কাজ হয় নুহাশপল্লীতে। অবশ্য আউটডোরের কিছু অংশও চিত্রায়িত হয় নুহাশপল্লীতে।
ছবিটির প্রথম পর্যায়ের শুটিং হয় ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ৭ নভেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুরের হরিপুর-এর জমিদার বাড়ি এবং নুহাশপল্লীতে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ হয় মাধবপুরের হরিপুর গ্রামের জমিদার বাড়ি এবং নুহাশপল্লীতে। মাধবপুরে ২০১০ সালের ৮ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর এবং নুহাশপল্লীতে ২২ ডিসেম্বর থেকে ১০ জানুয়ারি ২০১১ পর্যন্ত।
আমি এবং অন্যদিন-এর তৎকালীন আলোকচিত্রী বিশ্বজিৎ সরকার ২০১০ সালের ৭ নভেম্বর গিয়েছিলাম গাজীপুরস্থ নুহাশপল্লীতে। সেদিন ছিল প্রথম পর্যায়ের শুটিংয়ের শেষ দিন। গিয়ে দেখি, শিল্প নির্দেশক মাসুম রহমানের নির্দেশনায় সেখানে বিরাট সেট তৈরি করে শুটিং হচ্ছে।
দেখেছিলাম ৮৯ নম্বর সিকোয়েন্সের শুটিং হচ্ছে। চৌধুরী হেকমত সাহেবের প্রাচীন দালানের অন্দরমহল। ঘেটুপুত্র কমলার ঘর। পালঙ্কে শুয়ে আছে সে এক জিরাফের মূর্তিকে বুকে জড়িয়ে। সামনে ক্যানভাসে আঁকা এক ছবিÑঘেটুপুত্র কঞ্চি নিয়ে খেলছে। পেছনে একটি আলনা, সেখানে পরিপাটি করে সাজানো পোশাক। মেয়েদের পোশাক। ঘাঘরা, চোলি ইত্যাদি।
ঘরে ঢুকল কমলার মা। ছেলের মাথার কাছে বসল। মাথায় হাত রাখল। ঘরের চারদিকে তাকাল।
মা: বাবা জহির। কেমন আছ গো বাবা? আমি চইলা আসছি। ঘাটে নাও বান্দা। তোমারে লইয়া আমি চইলা যাব। ঘাটে বইসা আছে কে কও দেখি? তোমার বইন মালা। বাবা তাড়াতাড়ি আসো। সাবধান! কেউ যেন তোমারে না দেখে।
ঘেটুপুত্র কমলা ধড়মড় করে জেগে উঠে পালঙ্কের উপর দাঁড়ায়। ওদিক-ওদিক দেখে। কেউ নেই। অতঃপর সে ঘর থেকে বের হয়। অর্থাৎ এতক্ষণ ঘেটুপুত্র কমলা স্বপ্নে মাকে দেখছিল।
একবার মনিটর করে দৃশ্যটি ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন মাহফুজুর রহমান খান। প্রথিতযশা চিত্রগ্রাহক। ক্যামেরা ট্রলিতে প্রথমে ক্লোজে ধরে রেখেছিল কমলাকে। পরে ক্যামেরা ব্যাক করে, ঘরে ঢোকে কমলার মা। এই সময় উপরে তিনটি আর দরজার সামনে ছিল একটি লাইট। পালঙ্কের ওপাশে উপরে একজন ধরে রেখেছিল বুম অর্থাৎ শব্দগ্রহণ যন্ত্র।
সিকোয়েন্সটি ক্যামেরাবন্দি হলে পরিচালক হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, ‘প্যাক আপ।’
আমি কমলার ঘর থেকে বের হয়ে সেটের উন্মুক্ত অংশে দাঁড়িয়েছিলাম। প্রাচীন জমিদার বাড়ির অভ্যন্তরীণ চেহারা মূর্ত হয়ে উঠেছিল যেন। কাঠের সিঁড়ির দু’পাশে দুটি সিংহমূর্তি। পিতলের স্ট্যান্ড। ভিক্টোরিয়ান যুগের কাঠের মূর্তি। খামের গায়ে হরিণের মাথা ঝুলছিল। ভালোভাবে লক্ষ করে দেখেছিলাম, মোটেই কৃত্রিম নয়। এমনিভাবে জমিদারের শোবার ঘর, প্রমোদ কক্ষÑসবই জীবন্ত হয়ে উঠেছিল। প্রাচীন আমলের আসবাবপত্র, তৈজসপত্র, বই-সবকিছুই ঠাঁই পেয়েছিল এখানে।
মাধবপুরের হরিপুরের জমিদার বাড়িতে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’র ক্যামেরা প্রথম ওপেন হয়েছিল। আউটডোরের শুটিং হয়েছিল ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর। আমি ও অন্যদিন-এর আলোকচিত্রী বিশ্বজিৎ সরকার সেখানেও গিয়েছিলাম শেষ দিন।
হরিপুরেও দেখেছিলাম জমিদার বাড়িটির গায়ে শৈল্পিক স্পর্শ। তিতাস নদীর ধারে জমিদার বাড়ির ঘাটে রঙের প্রলেপ, সম্প্রতি যে সংস্কার করা হয়েছে তা স্পষ্ট। জমিদার বাড়ির গায়েও সাদা চুনের প্রলেপ ও নানা রঙের চিহ্ন। দরজা-জানালাও আগেকার দিনের অবয়ব ফিরে পেয়েছে যেন। ঘাট থেকে জমিদার বাড়ির প্রধান দরজার দু’পাশে নানা ধরনের ফুলের গাছ। সবকিছু মিলিয়ে পরিত্যক্ত জমিদার বাড়িটি যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিল।
সেদিন (৩১ অক্টোবর ২০১০) কয়েকটি সিকোয়েন্স ক্যামেরাবন্দি হয়েছিল। যেমনÑ৫৯ নম্বর সিকোয়েন্স। পুতুলরানী অর্থাৎ জমিদার চৌধুরী হেকমত সাহেবের কন্যাÑপুতুল নিয়ে খেলছে। পুতুলকে সে নাচাচ্ছে এবং ঘেটুগান করছে ‘যমুনার জল দেখতে কালো/ছান করিতে লাগে ভালো...।’ ঘেটুপুত্র কমলা নিঃশব্দে তার পেছন থেকে এসে বাতাসার ঠোঙ্গাটা দিয়ে চলে গেল। ফুলরাণী কিছু বুঝতে পারল না। সে খেলেই যাচ্ছে। এক পর্যায়ে ঠোঙ্গা থেকে একটি বাতাসা তুলে মুখে দেয়।
এই সিকোয়েন্সটির শেষ শটটি যখন ক্যামেরায় বন্দি হচ্ছে, তখন আমরা লোকেশনে উপস্থিত হয়েছিলাম। দেখেছিলাম লোকে লোকারণ্য প্রাচীন সেই জমিদার বাড়িটি। হরিপুর এবং আশপাশের গ্রাম থেকে আবালবৃদ্ধবনিতা ভিড় করেছে শুটিং দেখার জন্য। তাদের নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। পরে সিকোয়েন্স ৪৯ ক্যামেরায় ধারণের কাজ শুরু হয়। জমিদার বাড়ির উন্মুক্ত স্থানে সাপের খেলা হচ্ছে। পাঁচ বেদেনি, এক বেদে। জমিদারের স্ত্রী হামিদা বেদের উদ্দেশে বলল, ‘এই তুমি যাও। এখানে কোনো পুরুষ মানুষ আসে না।’ বেদে বের হয়ে গেল।
ফুলরাণী এবং কমলা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ছিল। কাজের মেয়ে ময়না ধাক্কা মেরে কমলাকে অন্য পাশে সরিয়ে দিল। ফুলরাণী সঙ্গে সঙ্গেই তার পাশে এসে দাঁড়াল।
বেদেনীরা সাপ খেলা দেখাচ্ছে। ফুলরাণী ভয় পেয়ে ঘেটুপুত্র কমলাকে জড়িয়ে ধরে। হামিদা কাছে এসে মেয়ের হাত ছাড়িয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরল এবং ঘেটুপুত্রকে চলে যেতে বলল।
সিকোয়েন্সটি শুরু হয় টপ শট থেকে। তারপর ক্যামেরা কখনো স্ট্যান্ডে কখনো ট্রলিতে, কখনো মিড শট, কখনো ক্লোজ শট, কখনো আবার লংশট। কখনো ক্যামেরা ধরে ব্যাক টু বেদেনিদের থেকে ফুলরাণী, কমলা, হামিদা, ময়না এবং অন্য কাজের মেয়েদের। আবার কখনো ক্যামেরার ফোরগ্রাউন্ডে বেদেনীর দল। নানাভাবে নানা শটে সিকোয়েন্সটি ক্যামেরাবন্দি হয়।
মেহের আফরোজ শাওনকে দেখেছিলাম এই ছবির সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। প্রতিটি শট ও খুটিনাটি নানা কিছুর প্রতি তীক্ষè নজর রাখছিলেন তিনি। যেমন, এক বেদেনীর উদ্দেশে বলছিলেন: ‘এই মেরুন শাড়ি (মেরুন রঙের শাড়ি পরেছিল মেয়েটি), অ্যাকশন বলার সময় ভয় পেও না।’ কিন্তু মেয়েটি ভয় পাচ্ছিল। হাতে সাপ নিয়ে খেলার সময় সাপটি তার দিকে ফণা তুলছিল। তখন শাওন মেয়েটিকে বলে মাথার কাছে হাত দিয়ে এক হাত দিয়ে সাপকে চেপে ধরতে। এক পর্যায়ে প্রধান সহকারী পরিচালক জুয়েল রানাকে শাওন বলেছিলেন, গানের কনটিনিউটি যেন ঠিক থাকে। উল্লেখ্য, সাপ খেলা দেখাতে দেখাতে বয়স্ক বেদেনীটি গান গাইছিল। কিন্তু নানা শটেই তা ধারণ করা হচ্ছিল। তাই পাঁচ বেদেনী যে যেখানে দাঁড়িয়েছিল, সেটিই যেন বজায় থাকে এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন শাওন। এমনভাবে এ ছবির নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। জানতে পেরেছিলাম, এ ছবির প্রোডাকশন ডিজাইনার মেহের আফরোজ শাওন।
মনে পড়ে, সেদিন আরেকটি সিকোয়েন্স ক্যামেরাবন্দি হয়েছিল। ১২ নম্বর সিকোয়েন্স। ময়না জলচৌকিতে বসা। হুক্কা টানছে। পাশে আধ ঘোমটা দেওয়া আরেক দাসী। নিচে পিতলের তৈজষপত্র মাজছে বয়স্ক এক দাসী।
ময়না [বয়স্ক দাসীর দিকে তাকিয়ে] স্বর্ণের মতো ঝকঝক যেন হয়। প্রথমে ছাই, তারপর তেঁতুলের পানি। তেঁতুলের পানি আছে তো?
[এই সময় নুরু ঢুকল]
ময়না: এইখানে মেয়েছেলে থাকে। তারার শইলে কাপড় সবসময় ঠিক থাকে না। হুটহাট কইরা ঢুকবা না। গলা খাকারি দিয়া ঢুকবা।
[নুরু দূরে গিয়ে গলা খাকারি দিল]।
ময়না: আসো। [নুরু কাছে আসে] কী চাও?
নুরু: দুজন হিন্দু আছে। গরু খায় না।
ময়না: মরিয়াম! খানা বসাও। হিন্দু দুইটারে বলো খানা দিতে বিলম্ব হবে।
একটি শটের দৃশ্যগ্রহণের সময় হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন না। তিনি ভয় পাচ্ছিলেন, যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে! শটটি হলো কমলার মারা যাওয়ার দৃশ্যের শেষ শট। এই দৃশ্যটি ধারণ করতে জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এগিয়ে এসেছিলেন। তিনি হুমায়ূন আহমেদকে আশ্বস্ত করেছিলেন এই বলে যে, শটটি তিনিই ক্যামেরাবন্দি করবেন। ফলে হুমায়ূন আহমেদ দৃশ্য ধারণের সময় ছিলেন না। চলে গিয়েছিলেন হরিপুরের জমিদার বাড়ির ভেতরে। আর শটটি ভালোভাবে করার জন্য জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে ত্রিপল টেনে রাখা হয় নিচে, ফলে ছাদ থেকে ময়না ধাক্কা দিলে কমলা অর্থাৎ শিশুশিল্পী মামুন পতিত হয় ত্রিপলের ওপর। একবারেই শটটি ওকে হয়। এভাবে ইনডোর-আউটডোরের শুটিংয়ের ফলে পুরো চলচ্চিত্রটির আখ্যানভাগ ক্যামেরাবন্দি করা হয়। দর্শকরা বড়পর্দায় প্রত্যক্ষ করে এই কাহিনিটি— প্রায় দেড় শ’ বছর আগের হবিগঞ্জ জেলার হাওড় অঞ্চল। এখানকার জলসুখা গ্রামের এক বৈষ্ণব আখড়ায় ঘেটুগান নামে নতুন একটি সঙ্গীতধারার সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের গান গাওয়া হয় প্রচলিত সুরে, যেখানে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রভাব স্পষ্ট। সম্প্রতি মেয়ের পোশাক পরা কিছু রূপবান কিশোর, যাদেরকে ঘেটু নামে ডাকা হচ্ছে, তারা গাইছে ঘেটুগান। এতে সঙ্গত কারণেই অশ্লীলতার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। বিত্তবানরা এইসব কিশোরকে যৌনসঙ্গী হিসেবে পাওয়ার জন্য লালায়িত হয়ে থাকেন। চৌধুরী হেকমত সাহেব এমনই একজন মানুষ।
জোয়ারের সময় হাওড়ের পানি সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো তীরে আছড়ে পড়ছে। এ অবস্থায় মানুষজন জলবন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। চৌধুরী হেকমত যেহেতু বিত্তবান, সেহেতু ঘেটুগান উপভোগ করার জন্যে এক ঘেটুদলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই দলের ঘেটুপুত্রের নাম কমলা। দলটি হেকমতের বজরায় চড়ে রওনা দিয়েছে। নাচ-গান করছে। গানটি হলো—‘শুয়া উড়িল উড়িল...।’ ওদিকে হেকমতের দালানের ছাদে আর্টিস্ট কুদ্দুসের সামনে সিটিং দিচ্ছে হেকমত। কুদ্দুস তাঁর প্রতিকৃতি আঁকছে। হেকমতের পায়ের কাছে ঘুরঘুর করছে বহু সাদা রঙের পায়রা। এরমধ্যে দুটো কালো। এ বিষয়ে হেকমত বিরক্তি প্রকাশ করায় কালো পায়রা দুটি সরিয়ে নেয় ভৃত্য নুরু।... নুরু এবং মাওলানা ইয়াকুব কবুতর জবেহ করছেন, নুরু ‘আল্লাহ আকবার’ না বলায় মাওলানা সমালোচনা করেন কিন্তু কল্লা শুদ্ধু কবুতর কেটে ফেলেন।... ঘেটুগানের দল চৌধুরী হেকমতের বাড়িতে ঢুকে চারদিকের জিনিসপত্র দেখে অবাক হয়। তাদের নির্দিষ্ট ঘরে থাকতে দেওয়া হয়। ঘেটুপুত্র কমলার ঘর হয় আলাদা। হেকমতের মেয়ে জানালার ঘুলঘুলি দিয়ে কমলাকে বুক থেকে নারকেলের মালা এবং মাথা থেকে লম্বা চুল খুলতে দেখে অবাক হয়।... চৌধুরী খেতে বসে। এ সময় তার স্ত্রী হামিদা জানায় যে, ঘেটুপুত্র আসায় তিনি নাখোশ, বাবার বাড়ি চলে যাবেন। চৌধুরী খাওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন বলে জানান।... ঘেটুগানের দলের সদস্যরা আনন্দের সঙ্গে খাচ্ছে। মুসলমান ও হিন্দুর জন্য আলাদা খাবার। খাবার খাওয়ার পর ঘুমান চৌধুরী। ঘুম ভাঙার পর নুরু শরবত নিয়ে আসে। তখন ঘরে ঢুকে হামিদা। স্ত্রীর মুখে আবার বাপের বাড়ি যাওয়ার হুমকি শুনে চৌধুরী জানান যে, হামিদা একেবারে চলে যাক। তিনি মাওলানা ডাকাচ্ছেন। স্ত্রীকে তালাক দিবেন। মাওলানা আসার পর হামিদা জানায়, সে থাকবে। মাওলানা চলে যাক।... আর্টিস্ট কুদ্দুস পাঞ্জেগানা নামাজ পড়ে না বলে মাওলানা সমালোচনা করেন। নামাজে শামিল হওয়ার জন্য বলেন।... হামিদা ও ফুলবানু নামাজ পড়ছে। ঘেটুপুত্র সেই ঘরে উঁকি দেওয়ায় প্রধান কাজের মেয়ে ময়না তাকে চড় মেরে বলে চলে যেতে।... ময়না হাত ধুয়ে নামাজে দাঁড়ায়। তার পেছনে অন্য মেয়েরা।... মাওলানার কাছে ফুলরানী আরবি পড়ছে।... গানের আসর বসেছে। নুপূর পরা কমলা নাচছে আর গাইছে, ‘বাজে বংশী/রাজহংসী/ নাচে দুলিয়া পেখম মেলিয়া...’ গান শেষে হেকমত বলেন যে, কমলা ভালো নাচ শিখে নি। সাজও ঠিক হয় নি। তিনি সাজবার জন্য কমলাকে তার স্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিতে বলেন। হামিদা কমলাকে সাজায়। আড়াল থেকে দেখে ফুলরানী। কমলার ঘরে ঘেটুপুত্রের ঘনিষ্ঠ হয় হেকমত।...হামিদা ও ফুলরানী শুয়ে আছে। হামিদা মেয়েকে বলে সে যেন কমলার সঙ্গে না মেশে। তাদের কথোপকথনের মাঝে কমলার চিৎকার করে কান্নার শব্দ শোনা যায়।... পরদিন সকালে বাবাকে জড়িয়ে কাঁদে কমলা। বাবা তাকে সান্ত¡না দেয়...। কমলার চোখে ভাসে মা ও বোনের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার দৃশ্য।
... একদিন বৃষ্টি নামে। এই বৃষ্টির মাঝে ভিজে হামিদা। কমলার চোখে ভাসে ঝুম বৃষ্টিতে ভেলার ওপর দাঁড়িয়ে ছোট বোনের সঙ্গে লাঠি নিয়ে যুদ্ধযুদ্ধ খেলার ছবি। বর্তমানে ফিরে এসে আর্টিস্ট কুদ্দুসের সঙ্গে বৃষ্টির মধ্যে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় মগ্ন হয় সে।... হামিদা হাতের একটি বালা দিয়ে দাসি ময়নাকে বলে সে যেন সময়-সুযোগ মতো ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ঘেটুপুত্র কমলাকে মেরে ফেলে। ময়না রাজি হয়।... চৌধুরী হেকমত মেয়েকে নিয়ে বেড়াতে বের হন। দেখা যায়, গ্রামবাসীদের কেউ কেউ তাস-দাবা খেলছে। তারা জানায় পানিবন্দি অবস্থার দরুন তারা এমনটি করছে। হেকমত ময়রার দোকান থেকে মেয়েকে মিষ্টি খাওয়ান। গ্রামের ছেলেমেয়েরাও সেই মিষ্টির ভাগ পায়।.. ড্যান্স মাস্টার পুকুরঘাটে কমলাকে নাচের তালিম দিচ্ছে। বাড়ির দাসিরাও তা দেখে।... রাতে হামিদা কমলাকে সাজিয়ে দেয়।... কমলার সঙ্গে হেকমত রাত্রিযাপন করেন।... বাইরে যন্ত্রীর দল বাজিয়ে যাচ্ছে।... বাড়িতে বেদে দল আসে। তাদের সাপের খেলা দেখে মেয়েরা। এর মধ্যে কমলাও রয়েছে। তার কাছে থাকতে চায় ফুলরানী। কিন্তু তাকে সরিয়ে নেয়া হয়। চৌধুরী বেড়াতে বের হয়েছে। অঞ্চলের দুজন বিশিষ্ট মানুষ আসে তার কাছে। তিনি তাদেরকে আমোদ-ফুর্তি করার জন্যে টাকা দেন।... এক গ্রামবাসী, সুলেমান, তার সঙ্গে দাবা খেলায় হেরে যান হেকমত।...কমলার মা ও বোন তার সঙ্গে দেখা করতে আসে। কমলার বাবা তাদেরকে বিদায় করে দেয়। ... বাবার কাছ থেকে মায়ের আনা বাতাসা পায় কমলা। সে সেই বাতাসা চুপি চুপি ফুলরানীকে দেয়। ফুলরানী বুঝতে পারে না।... হামিদা কমলাকে সাজাতে গিয়ে তার হা করা মুখে থুথু দেয়। মেয়ে সাজতে চাইলে তার সারামুখে কাজলের কালি মাখিয়ে দেয়...। মাওলানা বেত দিয়ে কমলাকে মারে। মর্মাহত ফুলরানী তার কাছে পড়বে না বলে জানায়। মাওলানা অনুতপ্ত হয়। কমলাকে বলেন, তিনি যে মেরেছেন তা যেন সে হেকমতকে না বলে।... চৌধুরী হেকমত সিটিং দিচ্ছে কুদ্দুসের সামনে। চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে কুদ্দুস জানায়, ছবি শেষ হয়ে আসছে। সে ছবিটি দেখায় হেকমতকে। হেকমত ডেকে পাঠান কমলার বাবাকে। তার হাতে একটি বাঁশি দিয়ে বাজাতে বলেন। কমলার বাবা বাজায়। শুনে মুগ্ধ হয়ে বাঁশিটি কমলার বাবাকে দিয়ে দেন হেকমত। হামিদা তাগিদ দেয় ময়নাকে ধাক্কা দিয়ে কমলাকে মেরে ফেলার জন্যে।... কমলা ছাদের রেলিংয়ে হাঁটছে। ময়না তাকে ধাক্কা দিতে যাচ্ছে, এ সময় কুদ্দুস এসে বাধা দেয়। ময়না রুষ্ট হয়ে জানায়, সে মিথ্যে কথা বলে কুদ্দুসের নামে নালিশ দেবে হেকমতের কাছে।... কুদ্দুস খোঁজখবর নেয় কমলার। কুদ্দুস তার আঁকা কমলার একটি প্রতিকৃতি উপহার দেয় কমলাকে। বলে সে যেন বাড়ি গিয়ে স্কুলে ভর্তি হয়।... কমলা স্বপ্নে দেখে মা তাকে নিয়ে যেতে এসেছে।... সহিস কল্পনায় দেখে, সে ঘোড়ার পিঠে। হেকমতের মতো সাজসজ্জা। তার সামনে ঘেটুপুত্র।... হেকমত কমলার সঙ্গে রাত্রিযাপন করে। এক পর্যায়ে সেই ঘর থেকে কমলার আর্তচিৎকার ভেসে আসে। ফুলরানী দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে।... ময়না ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে কমলাকে ফেলে দেয়। কুদ্দুস সেই দৃশ্য দেখে কিন্তু তা জানায় না।... কমলার মৃতদেহ পড়ে আছে। গ্রামবাসী অনেকেই ভিড় করে তা দেখছে। কমলার বাবা কাঁদছে। হেকমত তাকে টাকা দেয়। কমলার বাবা জানায়, সে মরা ছেলে বাড়িতে নিয়ে যাবে না। চৌধুরী জানায়, তাহলে এখানেই কমলাকে কবরস্থ করা হবে।... আর্টিস্টের ছবি আঁকা শেষ হয়েছে। সে ছবিটি হেকমতকে দেখায়। জানায়, সে বাড়ি চলে যাবে। হেকমত হামিদাকে ডেকে পাঠান। ময়নাকে বিদায় করার নির্দেশ দেন। জানান হাওর শুকিয়ে গেছে। এখন নানা কাজকর্মে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। ঘেটুপুত্রের আর দরকার নেই।... রাতে সাজগোজ করে ঘরে ঢোকে হামিদা। সালাম করে স্বামীর পাশে বসে।...ঘেটুগানের দল চলে যায়।... ফুলরানী ঘেটুপুত্রের ঘরে ঢোকে। শূন্যঘর। কমলার ঘুংঘুরটা বিছানায় পড়ে আছে।
‘ঘেটুপুত্র কমলা’র নান্দনিক সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে শিল্প নির্দেশনার গুরুত্ব কম নয়। এ সম্পর্কে চলচ্চিত্র পরিচালক মতিন রহমানের ভাষ্য হলো: ‘ঘেটুপুত্র কমলা চলচ্চিত্রে শিল্পনির্দেশক মাসুম রহমান পরিচালকের সমগ্র ইতিহাস চেতনাকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।... কাহিনি অনুযায়ী চরিত্রগুলোর চলাফেরার স্বচ্ছন্দময় পথ, কৃত্রিম আলো প্রয়োগের জন্য কৌশলগত স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া এবং সেটের কালার মুড নির্বাচন করা। এই তিনটি বিশেষ ক্ষেত্রেই শিল্পনির্দেশক কালের বা সময়ের ছাপ রাখতে যতœবান ছিলেন। চৌধুরী বাড়ির বহির্ভাগ এবং অন্দরভাগের কালার মুডে হারমনি থাকায় আসল ও নকল দেয়ালের অপবাদ মুক্ত হয়েছে। শিল্পনির্দেশক পোশাকের বিচিত্র রঙের কথা চিন্তা করেই সেটের রঙ নিউট্রাল রেখেছেন। সেট-সজ্জায় বাঘের মূর্তি, ঝাড়বাতি, পিতলের ফুলদানি, শ্বেতপাথরের খাবার টেবিল, কারুময় জলচৌকি, নামাজ আসন, পালঙ্ক—সবই পিরিওডিক্যাল ফিল্মের আবহ সৃষ্টিতে যথাযথ সম্পর্কযুক্ত’। (হুমায়ূন আহমেদের শেষ ও প্রথম চলচ্চিত্র, অন্যপ্রকাশ, ঢাকা, ২০১৩, পৃ. ৩৫)
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০১২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি লাভ করে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ (অবশ্য এর আগে, ২০১২-এর ২৯ মে রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সে আয়োজন করা হয়েছিল ছবিটির প্রিমিয়ার শো। তখন ছবিটি স্বজন এবং সংস্কৃতি অঙ্গণের বিশিষ্টজনদের নিয়ে উপভোগ করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ এবং ঘোষণা দিয়েছিলেন, এটিই তার শেষ ছবি। তিনি আর ছবি নির্মাণ করবেন না। আর কী আশ্চর্য! সত্যি এটিই হুমায়ূন আহমেদের শেষ চলচ্চিত্রকর্ম হয়ে রইল। তিনি না-ফেরার দেশে চলে গেলেন)। ছবিটি দেখে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আহসানের মন্তব্য ছিল, অসাধারণ। ছবিটি হালকা বিনোদন নয়, মানবিক আবেদন নিয়ে দর্শকদের কাছে হাজির হয়েছে।’... দৈনিক কালের কণ্ঠ-এর প্রতিবেদক দাউদ হোসাইন রনির ভাষ্য, “খুব সূক্ষ্মভাবে তিনি (হুমায়ূন আহমেদ) দুই শ্রেণির মানুষকে হতাশ করেছেন। এক, যাঁরা পর্দায় ‘সমকাম’ দেখার মানসিকতা নিয়ে হলে এসেছেন। এবং দুই. যারা সমকামিতার ইস্যু তুলে নাচবেন বলে ভেবেছেন।...হুমায়ূন যখন পরিপূর্ণ চলচ্চিত্রকার হয়ে উঠেছেন ঠিক তখনই তাঁকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি।” দৈনিক যুগান্তর-এর প্রতিবেদক ইয়াসিফ আকবরের মন্তব্য হলো: ‘চলচ্চিত্র হিসেবে ঘেটুপুত্র কমলার বড় বৈশিষ্ট্য হলো, বিষয় নির্বাচনের দিক দিয়ে। শিশু নির্যাতন এবং মানুষের বিকৃত মানসিকতার বিরুদ্ধে অসম্ভব আবেদনময় এবং সময়োপযোগী একটি চলচ্চিত্র।’
এক নজরে
কাহিনি, সংলাপ, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: হুমায়ূন আহমেদ, নির্বাহী প্রযোজক: ফরিদুর রেজা সাগর, ইবনে হাসান খান।
অভিনয়: তারিক আনাম খান, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মুনমুন আহমেদ, আগুন, প্রাণ রায়, আবদুল্লাহ রানা, শামীমা নাজনীন, তমালিকা কর্মকার, মাসুদ আখন্দ, রহমত আলী, এহসানুর রহমান, জুয়েল রানা, রুশো সালেহ সোহেল, শাহানা রহমান গীতা, পুতুল, প্রাপ্তি, কুদ্দুস বয়াতি, ইসলাম উদ্দিন বয়াতি ও তাদের দল, জেড. এইচ. সামির, যূথি, রাজু, পুষ্প, রাণী, জরিনা বেগম, আবদুর রাজ্জাক, কামরুল এবং কমলা চরিত্রে কিশোর মামুন।
চিত্রগ্রহণ: মাহফুজুর রহমান খান; ধারা বর্ণনা: আসাদুজ্জামান নূর; কোরিওগ্রাফি: শাওন; কণ্ঠশিল্পী: ফজলুর রহমান বাবু, শফি মন্ডল, প্রাপ্তি; গীতিকার: হুমায়ূন আহমেদ (বাজে বংশী), শিতালং শাহ (শুয়া উড়িল), সংগ্রহ (সাবান আইনা, যমুনার জল); সুরকার: মকসুদ জামিল মিন্টু (বাজে বংশী), রামকানাই দাস (শুয়া উড়িল), সংগ্রহ (সাবান আইনা, যমুনার জল); সংগীত পরিচালক: মকসুদ জামিল মিন্টু, এস.আই.টুটুল (শুয়া উড়িল); আবহসংগীত: ইমন সাহা।
শিল্পনির্দেশক ও টাইটেল: মাসুম রহমান, প্রধান সহকারী পরিচালক: জুয়েল রানা; সহকারী পরিচালক: মোহাম্মদ ইব্রাহিম, চন্দন খান; রূপসজ্জা: খলিলুর রহমান; পোশাক সরবরাহ: অঞ্জন’স; পোস্ট প্রোডাকশন: মাহফুজুর রহমান খান, জুয়েল রানা; পরিস্ফুটন, মুদ্রণ এবং কালার অ্যানালিস্ট: সিয়াম ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কো. লি., ব্যাংকক, থাইলান্ড; শব্দগ্রহণ ও পুনঃশব্দ সংযোজন: ধ্বনিচিত্র লি.; সম্পাদনা: লীলাচিত্র; কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ফারুক আহমেদ, প্রজ্ঞা ঐশ্বরিয়া; নৃত্য প্রশিক্ষক: আবদুর রহিম রয়; প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান: ইমপ্রেস টেলিফিল্ম।
Leave a Reply
Your identity will not be published.