বৈশাখী নববর্ষ: কালের ধারাবাহিকতায়

বৈশাখী নববর্ষ: কালের ধারাবাহিকতায়

বর্তমান বাংলা বছর শুরু বৈশাখে। ইতিহাসবিদগণের মতে, এর সূচনা মোগল বাদশাহি মহিমার অর্থনৈতিক হিসাব-নিকাশের কারণে। কারণ যাই হোক দীর্ঘকাল থেকে বৈশাখী নববর্ষ তথা পয়লা বৈশাখের জন্য আমাদের আনন্দিত প্রতীক্ষার তুলনা নেই। নেই শিক্ষিত-অশিক্ষিতের মধ্যে গ্রাম-নগরের প্রেক্ষাপট জুড়ে। বরং একসময় এদেশে গ্রামই ছিল বৈশাখী নববর্ষ উৎসবের প্রধান উদ্যাপন-স্থান। এখন অবস্থা ভিন্ন। মহানগর গ্রামের সেই গর্ব, জৌলুস কেড়ে নিয়েছে।

অবশ্য অনেক অনেক আগে প্রাচীন বঙ্গে অগ্রহায়ণ ছিল বছরের সূচনা মাস। নিশ্চয়ই অঘ্রানের প্রথম দিনটিতেই উদ্যাপিত হতো নববর্ষের অনুষ্ঠান উৎসব। আজ ইতিহাসমনস্ক প্রকৃতিপ্রেমী কারও কারও মনে হতে পারে—বেশ তো ছিল ফসলতোলা মাস অঘ্রানে নতুন বছরের উপাদেয় সূচনা। উঠানে মরাই থেকে খড়ের অদ্ভুত গন্ধ আর ঘরে নতুন ধান থেকে তৈরি চালের সুবাস, পিঠা-পায়েসের স্বাদে-ঘ্রাণে পরিবেশটাই যেন পাল্টে যায়, যত কমই হোক তার আয়ু। নবান্নের আয়োজনে জিবের আকক্সক্ষা যেমন মেটে তেমনি সন্তাপ জুড়ায় প্রকৃত পরিবেশের স্নিগ্ধ শীতলতায়। শীতের সূচনা হলেও প্রকৃতি তখনো নিরাভরণ নয়, রুক্ষ নয়, শীত ঋতুর মতো।

স্বভাবতই মনে পড়ে যায় হেমন্তের কবি জীবনানন্দ দাশকে। রবীন্দ্রনাথ হেমন্তকে যতটা দেখেছেন বা মূল্য দিয়েছেন তারচেয়ে অনেক অনেক বেশি হৃদয় মেলে হেমন্তকে দেখেছেন কবি জীবনানন্দ। মাঠে মাঠে ‘ধানকাটা হয়ে গেছে’, নরম খড়ের স্তূপ থেকে উঠে-আসা মন কেমন করা গন্ধ ভিন্ন এক জগতের নিশানা তুলে ধরে। ‘ঘাসের বুকে অশথের পাতা, মাঠের কিনারে ঝরে পড়া ঝাউফল’ পাশে রেখে এগিয়ে গেলেও ‘খড়কুটো উড়ে এসে লাগে শাড়িতে’ কখনো ‘সজনে পাতার গুঁড়ি চুলে বেঁধে যায়’। 

এমন এক প্রাকৃত পরিবেশের রোমান্টিকতায় অঘ্রানের প্রান্তরে দুজনের হালকাপায়ে হাঁটা, কিছু কথা বলা জীবনানন্দের অঘ্রানি কবিতার উপজীব্য হলেও সেখানে রোমন্টিক মাধুর্য ঠিক জমে ওঠে না। বরং ‘হেমন্তের নীরবতা, নির্জনতা আর মাঠের শূন্যতা’ মিলেমিশে কেমন এক বিদেহী বাধার জন্ম দেয়। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে আকাশে ফুটে ওঠা দু-একটা তারাও তাদের উদ্দীপ্ত করতে পারে না। জীবনানন্দের অঘ্রান তার আকর্ষণীয় কাব্যরূপ নিয়েও নববর্ষের উৎসব অনুষ্ঠানের অঘ্রান হয়ে ওঠে না বরং বিষণ্ন নেতির রূপই সেখানে প্রাধান্য পায়। 

নম্র মেদুর অঘ্রানের তুলনায় অবশ্য গ্রীষ্মের বৈশাখ অনেক তেজি উগ্ররূপ নিয়ে আমাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। এ রুদ্র বৈশাখকে উপেক্ষা করার উপায় নেই। বৈশাখী নববর্ষেরও তাই একই চরিত্র। তবে তার চরিত্রে রয়েছে কিছুটা একাধিক মাত্রা। সে অঘ্রানের মতো সরল, এক রৈখিক নয়। যদিও ষাটের দশকের এক বাংলাদেশি কবি নিঃসংকোচে গ্রীষ্মের রূপ বর্ণনা করতে গিয়ে লিখেছেন: ‘অগ্নিপরিধির নামে আজও এই গ্রীষ্মের শ্মশানে চন্দনকাঠের সাথে পাল্লা দেয় দীর্ঘ দেবদারু, জীবনানন্দের চোখ অমৃতসূর্যের মতো-
সবুজ আগুন জ্বেলে যখন ঠেকায় বুক নীলিমায় কিংবদন্তি কথা বলে...
তবু বৈশাখের অগ্নিরূপই একমাত্র সত্য নয়। সূর্যহীন ভোরে সে আশ্চর্য এক মিঠে বাতাসে ভর করে অশথ বটের কচি পাতার বুকে কাঁপন ধরায়, স্নিগ্ধ আমেজের স্পর্শ আনে ভোরে হাঁটা মানুষের মনে। অবশ্য তা দীর্ঘ সময় ধরে নয়। বেলা বাড়তেই ঝাঁ-ঝাঁ রোদের বৈশাখ গ্রীষ্মের দাবদাহ নিয়ে চড়া মেজাজে আপন অস্তিত্ব ঘোষণা করে।

এ শক্তির প্রকাশ জোরালো হওয়ার কারণেই বোধহয় দুপুরে তার ঝিমমরা রূপ—মনে হয় প্রকৃতি চরাচর সব স্তব্ধ। স্তব্ধতার ঘোর ভাঙে ঘুঘুর ডাক আর দূর আকাশে চিলের চিৎকারে। এ দুপুর জীবনানন্দের সেই মায়াবী দুপুর বলেই মনে হয় যেখানে ‘বাতাস খররোদে পা ছড়িয়ে’ বর্ষীয়সী রূপসীর মতো ধান ভানে গান গায়। কিন্তু বড় ক্ষণস্থায়ী এর রূপ। বিকেলের জীবনানন্দীয় নম্রতা কিন্তু এর নেই।

দুপুর গড়াতেই ফসল তোলা মাঠে মাঠে, চষা ক্ষেতে নতুন করে বীজ বোনার প্রস্তুতি উপেক্ষা করেই প্রকৃতি নতুনভাবে সাজে। গুমোট, উত্তাপ আর ঝোড়ো হাওয়া প্রায়শ অগ্নিক্ষরা দিনটিকে ভিন্ন মেজাজে বেঁধে নেয়। দুপুর শেষ হতেই আকাশে মেঘের দাপটে সাজ, কালবৈশাখীর প্রস্তুতি, কখনো ঝোড়ো হাওয়ার মাতন, কখনো প্রবল বর্ষণে গোটা দৃশ্যপট পাল্টে যায়। উগ্র, রুক্ষ, তপ্ত বৈশাখের তখন এক ভিন্ন চেহারা। মানুষের দেহে-মনে শীতের কাঁপন ধরিয়ে সে বুঝিয়ে দেয় তার বহুমাত্রিক চরিত্র। 

মনে হয় শীত-বসন্তের দীর্ঘ খরায় তৃষ্ণার্ত মাটির পিপাসা মিটানোর জন্যই এমন ঝড়জলের আয়োজন, তুমুল বর্ষণের প্রয়োজন। শীত-হেমন্তের কবি জীবনানন্দ গ্রীষ্মের প্রবক্তা না হয়েও সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে, ভিন্ন চারিত্র্যধর্মে গ্রীষ্মের পক্ষে যে দু-চারটে পঙ্ক্তি রচনা করেছেন তাতে এ ‘পিপাসার’ প্রকাশই ঘটেছে। তবে তা ব্যক্তিক বাসনার প্রতিফলন ঘটিয়ে। ‘গ্রীষ্মের সিন্ধুর ঘ্রাণ দেহে মেখে জীবনানন্দের নায়িকাকে পিপাসার আক্ষেপে জেগে উঠতে’ দেখা যায়।

অন্যদিকে জীবনানন্দীয় রচনায় নিতান্ত বিরল হওয়া সত্ত্বেও কবিকে অন্তত একবার ‘বর্ষ-আবাহন’-এর পঙ্ক্তি সাজিয়ে তুলতেও দেখা যায়। বিগত বছরের ‘জীর্ণমলিনকে বিদায় দিয়ে এসো এসো নবীন’ বলে অনেকটা রাবীন্দ্রিক ভঙ্গিতে নতুন বছরের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে ছিলেন কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর কাব্যচরিত্রের বৈপরীত্য প্রতিফলিত করে। অগ্রস্থিত এ কবিতায় জীবনানন্দীয় বৈশিষ্ট্যের কোনো ছাপ লক্ষ্য করা যায় না। তবু ‘বর্ষ-আবাহন’ মিথ্যা নয়। 

তবে জীর্ণ পুরাতনকে ভাসিয়ে দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে নতুনের আবাহনে এবং বৈশাখী বন্দনার ক্যানভাস রচনায়, প্রধানত গ্রীষ্মঋতুর চারিত্র্য-প্রকাশ ঘটাতে বাংলা কাব্য সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের তুলনা নেই। আধুনিক কবিদের অধিকাংশই এদিকটা উপেক্ষা করে গেছেন। তাদের কেউ কেউ আধুনিকতার আবহে প্রকৃতি ও বিশেষ বিশেষ বৃক্ষবন্দনায় পঙ্ক্তি রচনা করেও বৈশাখী নববর্ষের দিকে ফিরে তাকান নি। এটা নিছক চৈতন্য-বৈশিষ্ট্যের হেরফের। কে জানে আধুনিকতার প্রভাব এখানে কতটা।

সত্যি বলতে কী, একটু স্থিরচিত্তে ভেবে দেখতে গেলে বৈশাখের ঝাঁ ঝাঁ রোদে ঝিমধরে বসে-থাকা দুপুর শেষে অশান্ত বিকেলের অস্থিরতা ছিঁড়ে-খুঁড়ে আকাশজুড়ে হঠাৎ করেই ঝোড়ো হাওয়ার খ্যাপামি শেষ চৈত্রে বা পয়লা বৈশাখে দিনটিকে ভিন্নমাত্রায় বেঁধে দেয়, আমাদের সব হিসাব-নিকাশ বা প্রত্যাশা যেন ভণ্ডুল করে দেয়। এখন সময় পালটেছে, ঋতুরও কিছুটা চরিত্রবদল ঘটেছে বলেই বোধহয় পয়লা বৈশাখের ওই ক্লাসিক প্রকাশ বড় একটা দেখা যায় না। অন্তত নগর-বন্দরে তো কমই। 

কিন্তু পেছন ফিরে সত্তর-পঁচাত্তর বছর আগেকার দিনগুলোর দিকে তাকলে এখনো দেখতে পাই কী প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে গ্রামের অশত্থতলায় আয়োজিত বৈশাখী মেলায় যাওয়া, সেখানে কয়েক আনার কেনাকাটায় সিকি-আধুলির সীমা অতিক্রম করাটা ছিল বিরল ঘটনা। বাঁশি, ছুরি (অবশ্য বিদেশি), টানাঢোল, রঙ বেরঙের বেলুন থেকে রকমারি শিশুতোষ জিনিস কেনার মধ্য দিয়ে উত্তেজনার বিরাম। বড়রা, মেয়েরা অবশ্য ব্যক্তিগত প্রসাধন-সামগ্রী থেকে ব্যবহারিক জিনিসপত্র কিনে মেলার কেনাকাটা শেষ করত। পুরুষ-নারী সবারই সমাগম ঘটত মেলায়।

কিন্তু এর মধ্যে একটি ঘটনা ছিল বরাবরের মতো নিয়মিত। তখনকার প্রকৃতি কী আপন বৈশিষ্ট্যে প্রায় প্রতিবছরই আমাদের গ্রামের মেলাটিকে দুপুরশেষে পাশের গ্রামের ঝাঁকড়া চেহারা অশথ্তলায় পৌঁছে গোছগাছ করে বসতে না-বসতেই ঝড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড করে দিত। কালবৈশাখীর এ তাণ্ডব ছিল প্রায় নিয়মিত, কদাচিৎ কোনো বছরে ব্যতিক্রম। শেষ চৈত্রে ঝড়বাদলের দাপট আগাম সেরে ফেললে রেহাই পেত পাশের গ্রামের বৈশাখী মেলা, বৈকালি মেলা।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখায় বারবার নানা উপলক্ষে বৈশাখী মেলা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত মেলার সাংস্কৃতিক গুরুত্ব সম্বন্ধে সবিস্তারে বলেছেন। তবে বৈশাখী মেলার আকর্ষণই কেমন আলাদা বৈশাখের মেজাজ ও চরিত্র। উগ্র, দুরন্ত মেজাজের বৈশাখের ছবিটা চমৎকার পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের কবিতায় গানে, এমনকি শিলাইদহ-সাজাদপুর-পতিসর-ভিত্তিক ছিন্নপত্রাবলির পাতায়। প্রকৃতি যেন সেখানে রেখারঙে আঁকা জলছবি।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর ঋতুভিক্তিক গানে মূলত বর্ষাবসন্ত, অংশত শরৎ ঋতুর কবি, যদিও পাতাঝরা শীতের ছবি একবারে অনুপস্থিত নয়। তবে হেমন্ত নিঃসন্দেহে অবহেলিত, তবে বৈশাখী ছবি সংখ্যার দিক থেকে অল্প হলেও তার চরিত্র ধর্মের প্রতিফলনে ঘাটতি দেখা যায় না। বৈশাখের বহুমাত্রিক প্রাকৃতরূপ রবীন্দ্রনাথের কবিতায় গানে ঠিকই গভীর বাস্তবতায় ধরা পড়েছে, আঁকা হয়েছে নিসর্গচিত্রের গরিমায়।

একদিকে বৈশাখ যেমন দারুণ অগ্নিবাণে দগ্ধ করে আরামের কোনো অবকাশ রাখে না তেমনি আবার ঝড়জলের বৈচিত্র্য প্রাণে স্বস্তি জাগিয়ে ভিন্ন উপলব্ধিরও জন্ম দেয়। চেতনায় শুধু বেড়া ভাঙার মাতনই নামে না, বিগত বছরের যা কিছু আবর্জনা, জঞ্জাল সবকিছু উড়িয়ে নিয়ে চলে যায়। এমনকি পুরোনো স্মৃতিও নতুনের কাছে হার মানে। কবির প্রাণ থেকে পাঠকের প্রাণে এমন বোধ সঞ্চারিত হয়- মুছে যাক গ্লানি মুছে যাক জরা
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। তবে কবির এই আকাক্সক্ষা শুধু প্রকৃতির এবং প্রাকৃত পরিবেশের জন্যই নয়, এ প্রত্যাশা সম্ভবত সমাজজীবনের জন্যও। বৈশাখী ঝড়ের মাতন আমাদের এমন এক উপলব্ধিতে পৌঁছে দেয় যে একদিকে আগুনের মতো রোদের উত্তাপ প্রতীকী অর্থে হলেও সব অনাকাক্সিক্ষতকে দূর করে দেবে, দেবে জীবনের আঙিনা থেকে, প্রকৃত পরিবেশ থেকে। জীবনের আঙিনা থেকে, প্রকৃত পরিবেশ থেকে। তেমনি জন্ম নেবে সুশ্রী, সুন্দর, তকতকে আঙিনার মতো জীবন ও প্রকৃতির শুদ্ধ পরিবেশ। বৈশাখের এ মহিমা একান্তভাবেই বৈশাখের। সে বরাবরই বৈপরীত্যে বাঁধা। 

হয়তো তাই মৌন তাপসের মতো বৈশাখের আগুনঝরা রূপ উত্তাপের দাবদাহ নিয়ে যেমন এক নিষ্ঠুর, রুক্ষ ও তপ্ত ছবির জন্ম দেয় আশ্চর্য কিছু শব্দের জাদুতে তেমনি সেখানে ধরা পড়ে ঝড়বাদলের বিপরীত চরিত্রের মধ্য দিয়ে, মাটির দেহজাত বৃষ্টির সুবাসের মধ্য দিয়ে নতুন ফসলের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার ইঙ্গিত, যা তরুণ শ্যামলের সম্ভাব্য রূপে নবজীবনেরই প্রতীক। আসলে বৃষ্টিহীন, শুষ্ক বৈশাখী দিন বৃষ্টির সজল রূপের মধ্য দিয়েই পরিণতি পায়।

বৈশাখের এ দ্বৈতরূপ রাজধানীর নাগরিকজীবনে কতটা সত্য হয়ে ধরা পড়ে তা নিয়ে হয়তো প্রশ্ন উঠতে পারে কিন্তু গ্রামাঞ্চলের মুক্ত পরিবেশে এর প্রাকৃত রূপের বাস্তবতা ঠিকই প্রাকৃতজনের উপলব্ধিতে ধরা দেয়। অন্তত একসময় তা এতটাই সত্য ছিল যে গ্রামাঞ্চলে সবকিছু চলেছে প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে, অবশ্য যতটা সম্ভব। হয়তো তাই বৈশাখী দুপুরে ঝাঁজালো রোদের আগুনঝরানো অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে স্কুলে স্কুলে ছিল ‘মর্নিং ক্লাসের’ (প্রভাতী ক্লাসের) ব্যবস্থা। খুব ভোরে ওঠে স্কুলে যাওয়া এবং দুপুর উগ্র হয়ে ওঠার আগেই ঘরের স্নিগ্ধতায়, গাছগাছালির শীতলতায় ফিরে আসা। ছাত্রদের কেউ কেউ স্কুলে যাওয়ার পথে বিশাল চেহারা বকুল গাছের তলায় স্তূপাকারে পড়ে থাকা বকুল ফুল কুড়িয়ে পকেটে নিয়েছে, কেউ আবার এরই ফাঁকে বা ক্লাসে বসে ছোট ছোট মালা গেঁথে সহপাঠী কোনো বন্ধুকে সুবাস উপহার দিয়েছে। সে আরেক অভিজ্ঞতা, আজকের দিনে তা কতটা বাস্তব জানি না। 

এ সবই ছিল বৈশাখের দান, যা প্রকৃতির আচরণে আজও সত্য, মানুষের আচরণে কতটা বাস্তব বলা কঠিন। এ কালে শহরে-নগরে নানা কারণে সামাজিক পরিবেশে অবস্থা পালটে গেছে অনেকটাই, তুলনায় গ্রামাঞ্চলে হয়তো তার কিছু রেশ রয়ে গেছে। আর আমাদের মতো ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে বৈশাখের সুখস্মৃতি, আনন্দদায়ক স্মৃতি। এ কথা সত্য যে পয়লা বৈশাখ তথা বৈশাখী নববর্ষ একদা আমাদের জীবনে এসেছে, গেছে। স্থির করে দিয়েছে তার বৈশাখী চরিত্র। তবে বৈশাখী নববর্ষ এবং বৈশাখ এখনো তার প্রাকৃত চরিত্র পুরোপুরি হারায় নি, আর সে নববর্ষের অনুষ্ঠান গ্রাম ছাড়িয়ে এখন রাজধানীতে এসে বরং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক রূপ নিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে, করেছে আকর্ষণীয় বর্ণময়তা নিয়ে।

Leave a Reply

Your identity will not be published.