বলিউডে বিদেশি অভিনেত্রী

বলিউডে বিদেশি অভিনেত্রী

শতবর্ষী বলিউডের আকাশে এখন অসংখ্য তারকা জ্বলজ্বল করছে। কয়েকজন তারকা আবার হলিউডের আকাশে নিয়েছেন ঠাঁই। আবার বিদেশি অনেক তারকাও দ্যুতি ছড়িয়েছেন এখানে। প্লেব্যাক, শর্টরোল থেকে শুরু করে প্রধান চরিত্র সবখানেই তাদের উপস্থিতি। এমনকি কেউ কেউ ক্যারিয়ার শুরুই করেছেন এখানে। থেকে গেছেন একেবারে। তবুও তারা বিদেশি। বলিউডের এমন আলোচিত বিদেশি অভিনেত্রীদের নিয়ে এবারের আয়োজন।

 

হেলেন

মোহনীয় নৃত্য ও লাস্যময় রূপে দীর্ঘদিন বলিউড দর্শকদের আবিষ্ট রেখে ছিলেন হেলেন। পুরো নাম হেলেন জেইরাগ রিচার্ডসন। ১৯৩৯ সালে বার্মায় (মায়ানমার) জন্ম নেওয়া এই অভিনেত্রীই বলিউডের প্রথম বিদেশিনী। ১৯৫১ সালে ‘শাবিস্তান অ্যান্ড আওয়ান’ সিনেমায় কোরাস নৃত্য দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু। তারপর অনেক আলোচিত সিনেমার মধ্যমণি হেলেন সারা জীবন এখানেই অতিবাহিত করেছেন। ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

মনীষা কৈরালা

নেপালের প্রখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান মনিষা কৈরালার জন্ম ১৯৭০ সালে। ১৯৯০ সালে বলিউডে প্রবেশের আগে তিনি নেপালে মাত্র একটি সিনেমা করেছিলেন। সওদাগর (১৯৯১) সিনেমা দিয়ে মনীষা আলোচনায় আসেন। অসংখ্য ব্যবসা সফল সিনেমার অভিনেত্রী।

‘১৯৪২: এ লাভ স্টোরি’, ‘একেলে হাম একেলে তুম’, ‘খামসি: দ্য মিউজিকাল’, ‘বোম্বাই’, ‘দিল সে...’ প্রভৃতি সিনেমার সুবাদে বলিউডে তার পায়ের নিচে মাটি শক্ত হয়। ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ডে  তিনি চার চারবার সেরা অভিনেত্রীর নমিনেশন পান। জিতেছেনও অনেক পুরস্কার। এছাড়া তামিল, তেলেগু, মালায়াম এমনকি ভারতীয় বাংলা সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন এই গুণী অভিনেত্রী।

ক্যাটরিনা কাইফ

ক্যাটরিনার যখন আগমন ঘটে, তখন বলিউড বুঁদ হয়ে ছিল তার রূপে। কাশ্মিরি পিতা মোহাম্মদ কাইফ ও ব্রিটিশ মাতা মুসান্না তোরকো’র বড় কন্যা ক্যাটরিনা কাইফ বা ক্যাটরিনা তোরকো ব্রিটিশ নাগরিক। ১৯৮৪ সালের ১৬ জুলাই হংকং-এ জন্ম নেওয়া এই অভিনেত্রীর শৈশব কেটেছে হংকং, হাওয়াই, ফ্রান্স, চায়না, জার্মানি ও জাপানে। ২০০৩ সালে আলোচিত সিনেমা ‘বুম’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু হলেও অপেক্ষায় থেকেছেন অনেক দিন। অতঃপর সালমান খানের হাত ধরে তার উত্থান হয়। এখন তিনি সবার মধ্যমণি। অসংখ্য পুরস্কার  পেয়েছেন। ফিল্মফেয়ারেও সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন। এই অভিনেত্রী শুরুর দিকে হিন্দি ভাষা না জানার জন্য ডাবিং করেছেন অন্যজনকে দিয়ে।

জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ

শ্রীলঙ্কান সুন্দরী জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ এখন বলিউডের ব্যস্ততম অভিনেত্রী। ‘হাউসফুল’ সিনেমায় আইটেম গান ‘জানাবে আলী’ দিয়ে তার শুরু। ২০০৯ সালে ‘আলাদীন’-এ অভিনয়ের সুবাদে কয়েকটি পুরস্কারের পর এখন তার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। ১৯৮৫ সালের ২ জুন কলোম্বয় জন্ম নেওয়া এই অভিনেত্রী ২০০৬ সালে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরা হন।

এ্যামি জ্যাকসন

২০১০ সালে তামিল সিনেমা ‘মাদ্রাকা পাওনাম’ দিয়ে ভারতে যাত্রা শুরু করেন ব্রিটিশ মডেল-অভিনেত্রী এ্যামি লুইস জ্যাকসন। ‘এক দিওয়ানা থা’ সিনেমার মাধ্যমে আসেন বলিউডে। ১৯৯২ সালে ব্রিটিশ দ্বীপ ইসল অফ ম্যান-এ জন্ম। এ্যামি ২০০৯ সালে মিস লিভারপুল, ২০১০ সালে মিস ইংল্যান্ড বিজয়ী এবং ২০০৯ সালে মিস টিন ওয়ার্ল্ড নির্বাচিত হন। তবে তার ফিল্মি যাত্রা ভারতেই। অভিনয় করেছেন হিন্দি, তামিল এবং তেলেগু ভাষায়।

গিসেল্লি মোন্টেরিও

‘লাভ আজকাল’ সিনেমায় সাইফ আলীর বিপরীতে খাঁটি ভারতীয় নারীর চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ আলোচনায় আসেন গিসেল্লি মন্টেরিও। ব্রাজিলের এসপিরিতো সান্টোয় ১৯৮৮ সালের ১৬ নভেম্বর জন্ম নেন এই মডেল ও অভিনেত্রী। প্রথম সিনেমায় আলোচিত ও কয়েকটা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ার পর তিনি বেশ প্রশংসিতও হয়েছেন।

হাজেল কীচ

বলিউডের তুমুল জনপ্রিয় ‘বডিগার্ড’ সিনেমার আলোচিত পার্শ্ব অভিনেত্রী হাজেল কীচ একজন ব্রিটিশ। লন্ডনের ইস্প্রে নগরে ১৯৮৭ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ মডেল ও অভিনেত্রী হাজেল কীচ ব্রিটিশ বাবা ও ইন্দো-মৌরি মায়ের সন্তান। নৃত্যে দারুণ পটিয়সী এই নারী তামিল সিনেমা দিয়েই ভারতে প্রবেশ করেন। বলিউডের পর তেলেগু সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন।

নারগিস ফাখরি

২০১১ সালের ১৩তম আইফা অ্যাওয়ার্ডে বছরের সবচেয়ে উষ্ণ আবেদনময়ী খেতাব প্রাপ্ত নারগিস ফাখরির নিবাস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

‘রকস্টার’-এ রনবীর কাপুরের বিপরীতে প্রথম অভিনয় করেন। এরপর আলোচিত ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। পাকিস্তানি পিতার সন্তান ফাখরি নিউইয়র্কের কুইন্সের এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৯ সালের ২০ নভেম্বর। বলিউডে অভিনয়ের আগে সেখানে তিনি মডেলিংয়ে কাজ করতেন।

অরুণা কেইন্ডস্

বক্স অফিসে ‘প্রিন্স’ সিনেমা আলোড়ন না তুললেও সবার নজরে পড়েন এর অভিনেত্রী অরুণা কেইন্ডস্। নৃত্য পরিচালনা ও উদর নৃত্যে দারুণ পটিয়সী এই ব্রিটিশ অভিনেত্রী ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি আলোচিত সিনেমায় অভিনয় করেছেন। থ্রিলারধর্মী অভিনয়ে পারদর্শী অরুণা বলিউডের বাইরে বেশ কিছু সিনেমা ও বিবিসি টেলিভিশনেও অভিনয় করেছেন।

যানা গুপ্তা

‘বাবুজি যারা ধীরে চলো’ আইটেম গানে জংলি নৃত্যে সবাইকে নড়িয়ে দেওয়া যানা সাইনো কোভার জন্ম চেক প্রজাতন্ত্রে ১৯৮০ সালে। ভারতীয় এক নন্দনকে বিয়ে করে নামের শেষে গুপ্তা যোগ করেন এই বহু ভাষী নায়িকা। অন্যদের মতো বলিউডের পাশাপাশি তামিল, তেলেগু, কন্নাড সিনেমায় অভিনয় করেছেন ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার চমৎকার দেহ লাবণ্যের অধিকারিণী যানা।

ব্রুনা আব্দুল্লাহ

ব্রাজিলিয়ান অভিনেত্রী ও মডেল ব্রুনা আব্দুল্লাহর বলিউড যাত্রা আইটেম গান দিয়ে। ১৯৮০ সালে জন্ম নেওয়া এই অভিনেত্রী ‘আই হেট লাভ স্টোরি’, ‘দেশি বয়েজ’ ‘বিল্লাহ-২’ (তামিল)-তে পারফরমেন্সের সূত্রে দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করেন।

ক্যানডিস বাউচার

এফএইচএম, জিকিউ, কসমোপলিটান, সোর্স ইলাসট্রেড এবং ইল্লে’র মতো দামি ম্যাগাজিনের মডেল ক্যানডিস বাউচারের জন্ম সাউথ আফ্রিকার ডারবানে, ১৯৮৩ সালে। বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন প্লেবয়-এর ২০১০ সালের এপ্রিল সংখ্যার প্রচ্ছদ কন্যা ক্যানডিস-এর বলিউডে অভিষেক ‘আযান’ (২০১১) সিনেমার মাধ্যমে।

সোফিয়া হায়াত

বলিউডে আসা বিদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে গুণী অভিনেত্রী বোধহয় সোফিয়া হায়াত। ব্রিটিশ-এশিয়ান অভিনেত্রী-গায়িকা-মডেল সোফিয়ার জন্ম ১৯৮৪ সালে ব্রিটেনে। তিনি ব্রিটিশ এবং এশিয়ান- দুই ধরনের প্রজেক্টেই কাজ করেছেন। বিশ্বখ্যাত অনেক টিভি অভিনয় ও হলিউডের পর ২০১১ সালে আলোচিত ‘ডাইরি অফ এ বাটারফ্লাই’ সিনেমার মাধ্যমে তার বলিউডে প্রবেশ। তার ‘নাচলে লন্ডন’ও বিদেশে বহুল প্রশংসিত হয়। এ ছাড়া তিনি বেশকিছু ম্যাগাজিনের সম্মানসূচক মডেল হয়েছেন। প্লেব্যাক করেছেন কয়েকটি সিনেমায়।

সানি লিয়ন

সানি লিওন ১৯৮১ সালের ১৩ই মে তারিখে কানাডার অন্টারিওর সার্নিয়া নামক শহরের এক শিখ পাঞ্জাবি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন। তার বাবা তিব্বতে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং দিল্লিতে শৈশব অতিবাহিত করেছেন, অন্যতদিকে তার মা (যিনি ২০০৮ সালে মারা গিয়েছেন) ছিলেন হিমাচল প্রদেশের সিরমৌর জেলার বাসিন্দা ছিলেন।

সানি পর্নো সিনেমার অভিনেত্রী ছিলেন। ভারতে তার অভিষেক ঘটে ‘জিসম-২’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এই ছবিতে তিনি অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর শুধু নায়িকা নয় আইটেম গানেও তিনি পারফর্ম করেছেন। টিভির বিশেষ অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা যায়।

নোরা ফাতেহি

জন্মসূত্রে নোরা ফাতেহি একজন কানাডিয়ান। ২০১৯ সালে বলিউড চলচ্চিত্র ‘রোয়ার: দ্য টাইগার্স অব দ্য সুন্দরবনস’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে তার চলচ্চিত্রাঙ্গনে অভিষেক ঘটে। এরপর তিনি পুরী জগন্নাথের তেলুগু চলচ্চিত্র ‘টেম্পার’-এ একটি আইটেম গানে পারফরম করেন। টিভিতে নাচের প্রতিযোগিতা, মডেলিং, উপস্থাপনাসহ নানা ক্ষেত্রে নোরার পদচারণা রয়েছে। এখন তিনি শুধু চলচ্চিত্র নয়, মিউজিক ভিডিওতেও পারফরম করছেন।

এছাড়া ক্যাটরিনা কাইফের ছোটবোনসহ আরও কয়েকজন বিদেশি অভিনেত্রী বলিউডে জায়গা করে নেওয়ার জন্য কাজ করে চলেছেন।  

Leave a Reply

Your identity will not be published.