মারিও পুজোর ভীষণ জনপ্রিয় গ্রন্থ ‘গডফাদার’। আমেরিকার আন্ডার ওয়ার্ল্ডের মানুষদের কাহিনি, যাদের শিকড় প্রোথিত ইতালিতে। এই বই অবলম্বনে হলিউডে সিনেমাও নির্মিত হয়েছে। তিন পর্বে চিত্রায়িত সেইসব সিনেমাও দর্শক সমাদর লাভ করেছে বিশ্বজুড়ে।
মারিও পুজোর ‘গডফাদার’ গ্রন্থটি বাংলায় প্রথম অনুবাদ করেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের স্বনামধন্য কথাসাহিত্যিক লীলা মজুমদার। বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের বইটি ভালো লাগে। কিন্তু তারা পুরোপুরি তৃপ্তি পায় না। কেননা লীলা মজুমদারের মিষ্টি গদ্যে টানটান উত্তেজনা ছিল না, যা এ ধরনের গ্রন্থের ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজনীয় উপাদান। সেই উত্তেজনা তারা খুঁজে পায় গত শতকের আশির দশকে ঢাকার সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘গদফাদার’ পড়ে। এটি অনুবাদ করেছিলেন শেখ আবদুল হাকিম। তাঁর অনুবাদে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকেরা ‘গডফাদার’-এর প্রকৃত আস্বাদন লাভ করেন। আর সেটিই স্বাভাবিক। কেননা শেখ আবদুল হাকিম ছিলেন এই ধারারই লেখক।
সেই শেখ আবদুল হাকিম আর নেই। ২৮ আগস্ট তিনি না-ফেরার দেশে যাত্রা করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে এদেশের রহস্য-রোমাঞ্চ সাহিত্যের ভীষণ ক্ষতি হলো। কেননা এ ধারার সাহিত্যে তাঁর সমকক্ষ কোনো লেখক নেই।
১৯৪৬ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় জন্ম নেওয়া শেখ আবদুল হাকিমের প্রথম উপন্যাস ‘অপরিণত পাপ’। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘জুতোর ভেতর কার পা’, ‘আতঙ্ক’, ‘সোমালি জলদস্যু’, ‘আইডিয়া’, ‘লব্ধ অতীত’, ‘তাহলে কে?’, ‘চন্দ্রাহত’, ‘সোনালি বুলেট’ ইত্যাদি।
শেখ আবদুল হাকিমের অনুবাদগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে এরিক মারিয়া রেমার্কের ‘দ্য ব্ল্যাক অবিলিস্ক’, ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’; ভিক্টর হুগো’র ‘দ্য ম্যান হু লাফস’; জুলভার্নের ‘আশি দিনে বিশ্ব ভ্রমণ’; মার্ক টোয়েনের ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চার অব হাকলবেরি ফিন’; মেরি শেলি’র ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’; আলেকজান্ডার দ্যুমা’র ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’ ইত্যাদি।
গত শতকের ষাট দশকের প্রথম পর্যায়ে ‘মাসুদ রানা’ এবং ‘কুয়াশা’ সিরিজ প্রকাশের মাধ্যমে এদেশে রহস্য-রোমাঞ্চ সাহিত্যের সূচনা করেন কাজী আনোয়ার হোসেন। গড়ে তোলেন সেবা প্রকাশনী। এ প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন বই তুমুল পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। সত্যি বলতে কী, এদেশে পাঠক সৃষ্টিতে সেবা প্রকাশনীর বইগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিশোর পাঠকদের বাংলা ভাষার প্রতি দখল তৈরিতেও এইসব বইয়ের প্রভাব রয়েছে। উল্লেখ্য, সেবা প্রকাশনীর সঙ্গে প্রায় সাড়ে চার দশক পেশাদার লেখক হিসেবে যুক্ত ছিলেন শেখ আবদুল হাকিম।
সেবা প্রকাশনীর জনপ্রিয় রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজ ‘মাসুদ রানা’ এবং ‘কুয়াশা’র অনেক বইয়ের নেপথ্য লেখক ছিলেন শেখ আবদুল হাকিম। ‘জাকি আজাদ’ নামে একটি রহস্য রোমাঞ্চ সিরিজেরও স্রষ্টা তিনি। এছাড়াও অনেক মৌলিক উপন্যাসের লেখক শেখ আবদুল হাকিম। মৌলিক ও অনুবাদ মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা বিপুল।
 
									 
								 
								 
							 
																
															 
																 
																 
																 
																 
														 
														 
														 
														 
														
Leave a Reply
Your identity will not be published.