‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’ ২০২৩ পেয়েছেন ইমদাদুল হক মিলন ও মাহবুব ময়ূখ রিশাদ। ১০ নভেম্বর শুক্রবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে তাদের পুরস্কার দেওয়া হয়।
এ আয়োজনে সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন ও ‘রাইরিন্তার শেষ উপহার’ গল্পগ্রন্থের জন্য নবীন সাহিত্যশ্রেণিতে মাহবুব ময়ূখ রিশাদ এবারের পুরস্কার পেয়েছেন।
পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। আবদুল্লাহ নাসেরের সঞ্চালনায় শামা রহমানের সংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শুরু হয়। ইমদাদুল হক মিলনের শংসাবচন (প্রশংসা) পাঠ করেন বিচারকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য কথাসাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। মাহবুব ময়ূখ রিশাদের শংসাবচন পাঠ করেন বিচারকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক। শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, “কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ, যাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে, ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের মাধ্যমে, পরের চার দশক আপন সৃষ্টিশীলতায় আচ্ছন্ন রেখেছেন কোটি বাঙালিকে। পরিস্থিতি নির্মাণ, বর্ণনাভঙ্গি, সংলাপে তিনি এমন শৈলীর উদ্ভাবন করেছেন যা বাংলা সাহিত্যে অদ্বিতীয়। তিনি এখন আমাদের নয়ন সমুখে না থাকলেও রয়েছেন নয়নে নয়নে। তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর কালজয়ী সৃষ্টির মাঝে। আমরা সশ্রদ্ধচিত্তে তাঁকে স্মরণ করছি”। এরপরে তিনি ‘এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার’-এর পটভূমি বর্ণনা করে বিগত বছরগুলোতে যাঁরা পুরস্কার পেয়েছেন তাঁদের নাম উল্লেখ করেন। অতঃপর এই বছরের বিজয়ী দুজন—সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য খ্যাতিমান কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলন ও নবীন সাহিত্যশ্রেণিতে মাহবুব ময়ূখ রিশাদকে অভিনন্দন জানান। সবশেষে তিনি এক্সিম ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। বিশেষ করে কৃতজ্ঞতা জানান এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মো. আব্দুল বারী ও ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং হেড অফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ব্র্যান্ডিং ডিভিশন মি. সঞ্জীব চ্যাটার্জীকে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে এক্সিম ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ মো. আবদুল বারী জানান, এ বছর সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫ লাখ টাকা থেকে ৭ লাখ টাকা ও নবীন সাহিত্য পুরস্কারের অর্থমূল্য ১ লাখ টাকা থেকে ৩ লাখ টাকায় উন্নীত হয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের সাহিত্য যে স্বাতন্ত্র্যবোধ নিয়ে এগিয়ে গিয়েছে, হুমায়ূন আহমেদ সে পথ দেখিয়ে গেছেন’।
অনুষ্ঠানে হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিচারণ করেন তাঁর সহোদর অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও স্ত্রী অভিনেত্রী-পরিচালক মেহের আফরোজ শাওন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের আরেক ভাই কার্টুনিস্ট, কথাসাহিত্যিক আহসান হাবীব, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ, লালনগীতি সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীন, রাজনীতিবিদ ও একাডেমিক ব্যক্তিত্ব রাশেদা কে চৌধুরী, মনো চিকিৎসক ও কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল, সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, সাংবাদিক, নাট্যকার ও কথাসাহিত্যিক রেজানুর রহমান, স্থপতি ও লেখক শাকুর মজিদ, নাট্যজন ম.হামিদ, ফাল্গুনি হামিদ, বৃন্দাবন দাশ, অলোক বসু ও বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা প্রমুখ।
২০১৫ সালে প্রথমবার এই পুরস্কার পেয়েছিলেন যথাক্রমে শওকত আলী ও সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম। ২০১৬ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক ও স্বকৃত নোমান। ২০১৭ সালে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছিল জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও মোজাফ্ফর হোসেনের হাতে। ২০১৮ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন রিজিয়া রহমান ও ফাতিমা রুমি। ২০১৯ সালে পুরস্কার পেয়েছেন রাবেয়া খাতুন ও সাদাত হোসাইন। ২০২০ সালে পুরস্কৃত হয়েছেন হাসনাত আবদুল হাই ও নাহিদা নাহিদ। ২০২১ সালে পুরস্কার পেয়েছেন সেলিনা হোসেন ও ফাতেমা আবেদীন। আর ২০২২ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন আনোয়ারা সৈয়দ হক ও মৌরি মরিয়ম।
Leave a Reply
Your identity will not be published.