অন্যদিন-এর শাহাবুদ্দিন: মইনুদ্দীন খালেদ

অন্যদিন-এর শাহাবুদ্দিন: মইনুদ্দীন খালেদ

পত্রিকার প্রচ্ছদে সময় কথা বলে। কালের বিচিত্র বার্তা আমরা প্রথমত দেখি সেই প্রচ্ছদে— কথা, ছবি ও ডিজাইনের সমবায়ে। নিজের প্রয়োজন ও জনতার চাওয়া-পাওয়া বিবেচনা করে প্রকাশ পায় সাময়িকী। অন্যদিন দেশের স্বনামধন্য পাক্ষিক। গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও উপন্যাসের পাশাপাশি ফ্যাশন ও বিজ্ঞাপন ভুবনের প্রতি এ সাময়িকীর বিশেষ নজর আছে। পুরো পত্রিকা জুড়ে রেখায়, লেখায় ও ছবিতে একটা রুচির সুচারু প্রকাশ পরিস্ফুট। জনরুচিকে বিবেচনায় নিয়ে জনতাঘনিষ্ঠ থাকতে হয় এবং একই সঙ্গে নান্দনিকবোধের প্রসারে সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী। সব প্রকাশেরই এক বা একাধিক লক্ষ্য থাকে। পাক্ষিক অন্যদিন-এরও তা আছে। জীবনের উৎসব এ পত্রিকা বর্ণরঙিন করে জানান দেয়। তাই এর ঈদসংখ্যা সাহিত্যপ্রিয় ও ফ্যাশনপ্রিয় পাঠন-দর্শকের কাছে হয়ে উঠেছে বছরের সেরা উপহার। 

পত্রিকার প্রচ্ছদে সময় কথা বলে। কালের বিচিত্র বার্তা আমরা প্রথমত দেখি সেই প্রচ্ছদে— কথা, ছবি ও ডিজাইনের সমবায়ে। নিজের প্রয়োজন ও জনতার চাওয়া-পাওয়া বিবেচনা করে প্রকাশ পায় সাময়িকী। অন্যদিন দেশের স্বনামধন্য পাক্ষিক। গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও উপন্যাসের পাশাপাশি ফ্যাশন ও বিজ্ঞাপন ভুবনের প্রতি এ সাময়িকীর বিশেষ নজর আছে। পুরো পত্রিকা জুড়ে রেখায়, লেখায় ও ছবিতে একটা রুচির সুচারু প্রকাশ পরিস্ফুট। জনরুচিকে বিবেচনায় নিয়ে জনতাঘনিষ্ঠ থাকতে হয় এবং একই সঙ্গে নান্দনিকবোধের প্রসারে সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী। সব প্রকাশেরই এক বা একাধিক লক্ষ্য থাকে। পাক্ষিক অন্যদিন-এরও তা আছে। জীবনের উৎসব এ পত্রিকা বর্ণরঙিন করে জানান দেয়। তাই এর ঈদসংখ্যা সাহিত্যপ্রিয় ও ফ্যাশনপ্রিয় পাঠন-দর্শকের কাছে হয়ে উঠেছে বছরের সেরা উপহার। 

একুশ বছর ধরে অন্যদিন-এর ঈদসংখ্যার প্রচ্ছদে থাকে একই শিল্পীর ছবি। সেই শিল্পীর নাম শাহাবুদ্দিন। আরও অনেক পত্রিকা ও আয়োজনে এ শিল্পীর আঁকা ছবি আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা নিয়ত আপ্লুত থাকি। তাই শুধু পত্রিকার পাতায় নয় সারা বছরই প্রচুর ব্যানার ও পোস্টারে শোভমান শাহাবুদ্দিনের ছবি। তা হলে অন্যদিন যে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এ শিল্পীর ছবি দিয়ে ঈদসংখ্যার প্রচ্ছদ করছে তার মাহাত্ম কোথায়? শাহাবুদ্দিনের যে-কোনো একটা শিল্পকর্ম নিয়ে অন্যদিন প্রচ্ছদ করে না। প্রতিবছরই অন্যদিন-এর ঈদসংখ্যার জন্য শাহাবুদ্দিন একটি করে ছবি এঁকে দেন। এ ছবি কোনো ব্যক্তি সংগ্রহে নেই বা গ্যালারিতে প্রদর্শিত পরিচিত শিল্পকর্ম নয়। তাই এতে কৌমার্য আছে। শাহাবুদ্দিন ছবি এঁকে অন্যদিন নামে একটি পাক্ষিকের ঈদসংখ্যার উদ্বোধন ঘোষণা করেন, এর চেয়ে নান্দনিক চমৎকারিত্ব আর কী-ই বা হতে পারে! বাংলা মায়ের শৈল্পিক বরপুত্র এ শিল্পীর নতুন কাজ প্রতিবছর আমাদের দেখার সুযোগ ঘটে না। কিন্তু অন্যদিন-এর প্রচ্ছদের সুবাদে তার একটি শৈল্পিক মুদ্রা ঠিকই দেখতে পাই ঈদের উৎসবে। 

প্রচ্ছদের জন্য ছবি আঁকবেন বলে শাহাবুদ্দিনের ভাবনা কি নতুন কোনো স্পন্দন অনুভব করে? যদিও তার ছবির মানুষ কেবলই আমাদের আশা জাগানিয়া প্রান্তরের দিকে ধাবিত করে। কিন্তু সেই প্রচ্ছদের শাহাবুদ্দিন একটু বেশি রঙিন। কখনো একক মানুষের উল্লসিত অভিব্যক্তি, কখনোবা শক্তিমত্ত নারী ও শিশু, কখনো আবার সমষ্টির আনন্দ ধ্বনির চিত্ররূপময় প্রকাশ ঘটেছে এসব প্রচ্ছদে। 

প্রচ্ছদে শিল্পীর নতুন ছবি প্রকাশের বিশেষ তাৎপর্য আছে। কারণ, যারা পত্রিকাটি কেনেন না তারাও সেই প্রচ্ছদের শিল্পরস বইপত্রের দোকানে দাঁড়িয়ে অবলোকন করে থাকেন। কোনো সাময়িকীর হয়তো কয়েক হাজার পাঠক থাকে, কিন্তু তার প্রচ্ছদ দেখে লক্ষ লক্ষ লোক। এই ভাবনার জমিনে আরও একটি চিন্তার বীজ অঙ্কুরিত হতে দেখি। শাহাবুদ্দিনের ছবি সংবলিত অন্যদিন-এর প্রচ্ছদগুলো প্রদর্শিত হলে, হয়তো হবেও একদিন, শিল্পীর ছবির একটা প্রদর্শনী দেখার আনন্দ অনুভব করবেন শিল্পপ্রাণ দর্শক। এই আয়োজনে শাহাবুদ্দিন পাক্ষিক অন্যদিনকে শিল্পময় ঐতিহাসিক মাত্রা দিয়েছেন। 

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-পরিশ্রুত শিল্পীর ছবিই শুধু প্রতিবছর প্রচ্ছদপট হবে পত্রিকার; এ ভাবনায় অন্যদিন কর্তাব্যক্তিদের বাসনা ও আস্থা অবশ্যই প্রশংসা দাবি করে। কেননা তারা বুঝেছেন, অনাস্থা, পরাজয়, নিরাশার চিত্রকর শাহাবুদ্দিন নন। শাহাবুদ্দিন মানে মানুষের জয়, মানুষের আলোর পিপাসা, আলোর পথে যাত্রা। এ শিল্পীর প্রায় সব ছবিতেই  দেখি মানুষের ছুটে-চলার উদ্দাম বেগ। তার বেগ এতই বেশি যে তা যেন মুহূর্তের মধ্যেই শূন্য স্পেসে হারিয়ে যায়, আবার ফিরেও আসে নতুন এক গতির ব্যঞ্জনায়। ছুটে-চলার অভিব্যক্তি যদি তার মানুষী দেহে নাও থাকে, তবুও তাতে থাকে শক্তির ঘূর্ণন, চরম-পরম আশ্বাসে মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা মানব বা মানবী প্রত্যাশার অগ্নিময় মশাল হয়ে জ্বলে। 

অন্যদিন-এর প্রচ্ছদের শাহাবুদ্দিনে আশার রং কেবলই লাল নয়, আশা তো সব সময় তপ্ত নয়, তা শান্তির সবুজ এবং সে-সবুজও প্রশস্ত সাদা স্পেসে সবুজ প্রদীপের আলোর মতো অনুভূত হয়। শাহাবুদ্দিন মানুষ আঁকেন। মানুষের অপরাজেয় শক্তিমত্ত রূপ না আঁকলে তাঁর স্বস্তি নেই। যে ভাষা তাঁর হৃদস্পন্দনের গ্রাফ হয়ে সাহসের স্বরলিপি রচনা করে চলেছে তাকে ভুলে গিয়ে অন্য ভাষার নিরীক্ষা মানে সাধনার সর্বনাশ ডেকে আনা। কারণ শাহাবুদ্দিন এ শিল্পভাষা অর্জন করেছেন ঐক্যবদ্ধ জনতার সংগ্রামে সশরীরে অংশ নিয়ে, সম্মুখ যুদ্ধে প্রাণ বাজি রেখে লড়ে এবং জয়ের পতাকা উত্তোলিত করে এদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। শাহাবুদ্দিনের চিন্তায় বাংলাদেশের ইতিহাসের অবয়ব পূর্ণতা পেয়েছে, এ কথা আদৌ অত্যুক্তির মতো শোনায় না। 

যে শিল্পীর প্রিয় বিষয় মানুষ ও মানুষের মুক্তির সংগ্রাম, তিনি তো চাইবেনই জনতাঘনিষ্ঠ হয়ে থাকতে। তাই এদেশের মানুষ প্রতিনিয়ত শাহাবুদ্দিনের ছবিতে দেখে বিজয়ের উল্লাস। অন্যদিন-এর প্রচ্ছদে শাহাবুদ্দিন মানুষের সেই মুক্তিকে মুদ্রিত করেছেন, এঁকেছেন উল্লসিত হৃদয়াবেগ। অন্যদিন-এর প্রচ্ছদে যত লক্ষ মানুষ শাহাবুদ্দিনের ছবি পাঠ করেছেন, সে পরিমাণ দর্শক অন্য আয়োজনে শিল্পীর সৃষ্টির মুখোমুখি হন নি। অন্যদিন-এর প্রচ্ছদের কল্যাণে শাহাবুদ্দিনের ছবির দর্শকের চোখ শিল্পপাঠের বিশেষ অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন, এমন ভাবনাও আমার কাছে অসংগত মনে হয় না। কারণ এ শিল্পী যতই মানুষী দেহ শিল্পভাষায় রূপান্তরিত করুন না কেন, তা কিন্তু আমাদের চোখচেনা, নয়নজুড়ানো অভ্যাসের দেখায় মানুষ নয়। তা সাহস ও শক্তির তোড়ে বিশেষ শিল্পরূপ। শাহাবুদ্দিনের ছবির মানুষকে বুঝতে হয় শিল্পের সত্যে উপনীত হয়ে। শিল্প বোঝার এই আয়োজনে অন্যদিন-এর প্রচ্ছদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। জনতার শিল্পীকে, শিল্পকে জনতার সঙ্গে সংযুক্ত করার এক বিশেষ ভূমিকা আছে শিল্পীর ছবি সংবলিত অন্যদিন-এর ঈদসংখ্যাগুলোর। অন্যদিন ঈদসংখ্যায় শাহাবুদ্দিন হতে পারে প্রদর্শনীর নাম।

Leave a Reply

Your identity will not be published.