পাক্ষিক অন্যদিন-এর ২৬তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের এই বিশেষ রচনা।
‘সুন্দরের বন্ধন নিষ্ঠুরের হাতে, ঘুচাবে কে?’ সামগ্রিক অর্থেই বন্দি হয়ে আছে আমাদের সকল সুন্দর, এখনো; স্বাধীনতার ২৫ বছর পরেও। একটি অন্যদিনের প্রত্যাশা ছিল আমাদের সবার। আমাদের দিনগুলো থেকে গেছে আর দশটি সাধারণ, বৈচিত্র্যহীন, বিবর্ণ দিনের মতোই। আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও সমাজ সংসারে কাটে নি রাহুর করাল গ্রাস। অতঃপর ওই দীর্ঘ লালিত একটি অন্যদিনের প্রত্যাশাকে পূর্ণতা দানের সদিচ্ছা ও ঐকান্তিকতার ফসল ‘অন্যদিন’ পাঠক-সঙ্গ পেল স্বাধীনতার রজত জয়ন্তীর বছরে। অন্যদিন ব্যাপক অর্থেই অন্যদিনের প্রত্যাশী। আমাদের সমগ্র সত্তায় যে-স্বপ্ন আঁকা আছে, আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিতে যে-আকাঙ্খা দীর্ঘদিন ধরে বাসা বেঁধে আছে, সে-স্বপ্ন ও আকাঙ্খার প্রকাশ ঘটবে অন্যদিন-এ। বাংলাদেশ ও বাংলাভাষী বিশাল জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি চেতনায় অন্যদিন যুক্ত করবে নতুন মাত্রা। এই চেতনাকে ধারণ করে স্বাধীনতার পঁচিশ বছর পর ১৬ জানুয়ারি ১৯৯৬ শীতের কুয়াশাঢাকা এক প্রত্যুষে পাঠকের হাতে পৌঁছে অন্যদিন-এর প্রথম সংখ্যা।
সত্যিকার অর্থেই একটি অন্যদিনের প্রত্যাশায় অন্যদিন-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল। আমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছিল, বাংলাদেশে একটি সুন্দর আধুনিক পত্রিকা কেন প্রকাশিত হবে না? যে পত্রিকায় আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির নানাদিক বিধৃত হবে নান্দনিকতার বহুমাত্রিক বিন্যাসে। অন্যদিন পাঠককে পরিচিত করাবে আমাদের সাহিত্যের সঙ্গে, আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে। অন্যদিন পাঠককে বলবে আমাদের খেলাধুলার কথা, ফ্যাশন, রান্না, ঘরকন্নাসহ প্রতিদিনের যাপিত জীবনের কথা। স্বদেশ ও বিদেশের দেখা না-দেখা ঐতিহাসিক স্থান, পর্যটন কেন্দ্র, প্রকৃতি ও মানুষের জীবনকথা মূর্ত হয়ে উঠবে অন্যদিন-এর ভ্রমণকাহিনিতে। নতুন প্রকাশিত বই, দেশ-বিদেশের সাহিত্যের খবরাখবর, অডিও-ভিডিওর বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও সমালোচনা পাঠকের কাছে পৌঁছে দেবে অন্যদিন। শিক্ষা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য ও তত্ত্ব সন্নিবেশিত হবে অন্যদিন-এর পাতায়। অন্যদিন-এর প্রতিবেদনে বর্ণিত হবে আমাদের সৃজনশীল বিনোদনের কথা। সে-রচনাই অন্যদিন-এ অগ্রাধিকার পাবে, যে-রচনায় থাকবে সৃজন ও মননশীলতার প্রতিফলন। সর্বোপরি অন্যদিন হবে এক মলাটের ভেতর একটি সম্পূর্ণ পত্রিকা।
প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশের পর দেশের শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত গুণীজনেরা অন্যদিন-এর আত্মপ্রকাশকে একটি সাহসী উদ্যোগ বলে অকুণ্ঠ সাধুবাদ জানিয়েছিলেন।
পাঠকদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা পেয়ে আমরা দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশের উদ্যোগ নিই। ওই সময়ে উন্নত কাগজ, দৃষ্টিনন্দন গ্রাফিক্স কিংবা বর্ণিল মুদ্রণের প্রযুক্তি কোনো ম্যাগাজিনে ব্যবহার করা হতো না। পাঠক হিসেবে আমরা শুধু ভিনদেশের চমৎকার সব ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে হাপিত্যেশ করতাম। এটি ছিল একটি বড় শূন্যতা। অন্যদিন-এর সূচনা সংখ্যাতেই ওই শূন্যতাটা পূরণ করার চেষ্টা করেছি আমরা। লক্ষ্য ছিল দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের কাছাকাছি ম্যাগাজিন প্রকাশ করা। যদিও প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা তখনো আমাদের হাতে খুব বেশি ছিল না। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে কাজ করতে হয়েছে। তবে আত্মবিশ্বাস আর ইচ্ছাশক্তির এতটুকু ঘাটতি ছিল না। প্রথম তিনটি সংখ্যা প্রকাশের আগের ক’দিন প্রায় চব্বিশ ঘণ্টাই আমাদের অফিসে কাটাতে হয়েছে।
পেছনে ফিরে দেখতে পাই, অভিজ্ঞতা আমাদের তেমন কিছু ছিল না। ছিল না অর্থবলও। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়েছি। পড়াশোনা করেছি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে। একই বিষয়ে আমার আরও দুই সহপাঠী বন্ধু অন্যদিন-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সিরাজুল কবীর চৌধুরী ও নির্বাহী সম্পাদক আবদুল্লাহ্ নাসের এবং আরেক বন্ধু মৃত্তিকাবিজ্ঞানের মিজানুর রহমান মাসুম, অন্যদিন-এর প্রধান সম্পাদক, আমাদের প্রত্যেকেরই ইচ্ছাশক্তিটা ছিল তীব্র। আমরা তিনজন সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করলেও বাস্তব কাজের ক্ষেত্রটা ছিল একেবারেই আলাদা। যদিও ছাত্রজীবন থেকে প্রেস বা প্রকাশনার সঙ্গে কিছুটা যোগাযোগ ছিল বলে কারিগরি অনেক বিষয়ে খুব বেশি হোঁচট খেতে হয় নি। বন্ধু মাসুমের গ্রাফিক সেন্সটা অত্যন্ত উঁচুমানের। মূলত তাঁর নান্দনিকতাবোধেরই প্রতিফলন ঘটেছে অন্যদিন-এর পাতায় পাতায়।
অন্যদিন অল্প সময়ের মাঝেই হয়ে উঠল পাঠকের প্রিয় পত্রিকা। একই সঙ্গে হলো কারও কারও বিরাগভাজনও। নাম উল্লেখ না করেই বলছি, দু’একজন ওই সময়ে ভুরু কুঁচকে বলেছিলেন, ‘এটা কয়েকজন তরুণের মতিভ্রম। ৫/৬টা সংখ্যা প্রকাশের পর কোথায় চলে যাবে এসব খায়েশ। এত সোজা একটি পত্রিকা চালানো!’ এই কটূক্তিতে সাময়িক মনোকষ্টে ভুগেছি, কিন্তু আমাদের চলার গতি থেমে থাকে নি। বরং আমরা আরও উদ্যোগী ও মনোযোগী ছিলাম আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে। তিন-চার সংখ্যা প্রকাশের পর যেমন পাঠকদের ব্যাপক সাড়া পেলাম, তেমনি আন্তরিক সহযোগিতা পেতে শুরু করলাম দেশের প্রথিতযশা লেখকদের কাছ থেকেও। অন্যদিন দৃষ্টি আকর্ষণ করল বিজ্ঞাপনদাতা ও বিজ্ঞাপনী সংস্থাগুলোর। এরপর শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে চলা।
২
১৯৯৭ সালের জানুয়ারি এল আমাদের সামনে একই সঙ্গে দুটি উপলক্ষ নিয়ে। একটি অন্যদিন-এর বর্ষপূর্তি, অন্যটি ঈদ।
ঈদ আমাদের একটি বড় উৎসব। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত হয় ঈদসংখ্যা। বিশেষ করে গত তের-চৌদ্দ বছর ধরে দেশের দৈনিক, সাপ্তাহিক কিংবা পাক্ষিক পত্রিকাগুলোর প্রতিটিই ঈদসংখ্যা প্রকাশ করছে। তবে অন্যদিন-এর সূচনালগ্নে ঈদসংখ্যার এই আধিক্য ছিল না। সাপ্তাহিক বিচিত্রাই শুধু বড় করে ঈদসংখ্যা প্রকাশ করত। এছাড়া আরও দু’একটি পত্রিকার ঈদসংখ্যা প্রকাশিত হতো, তবে তেমন বড় কলেবরে নয়।
শুরু হলো আমাদের ঈদসংখ্যার প্রস্তুতি। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম প্রকাশিত হলো চার শ’ পৃষ্ঠার বিশাল কলেবরের ঈদসংখ্যা, যার প্রায় এক শ পৃষ্ঠাই ছিল রঙিন। শুধু কলেবরেই নয়, নয় শুধু বর্ণচ্ছটায়ও; বিষয় বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ এই সংখ্যাটি ব্যাপকভাবে আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে। এর পর থেকে প্রতিবছরই ঈদসংখ্যার কলেবর যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি সমৃদ্ধ হতে থাকে লেখক তালিকা। দেশের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়া আর আধুনিক মুদ্রণ প্রযুক্তির গুণে ‘অন্যদিন ঈদসংখ্যা’ প্রতিবছরই লাভ করে নান্দনিকতার নব নব মাত্রা। বাংলাদেশের প্রধান লেখকদের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের শীর্ষ কয়েকজন লেখকের উপন্যাস, গল্প ও কবিতাও স্থান পায় এতে। কোনো কোনো পত্রিকা সমালোচনামূলক বিজ্ঞাপনও প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের লেখা প্রকাশ করা নিয়ে। এক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল এরকম, আমরা বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখকদের লেখা প্রকাশে আগ্রহী। সাহিত্যকে কোনো সীমানা প্রাচীর দিয়ে আটকে রাখা সমীচীন নয়। অন্যদিন ঈদসংখ্যা হয়ে উঠল বাংলাদেশের সেরা পত্রিকা, বাংলা ভাষার সেরা সাময়িকী। এরপর আমাদের দৈনিক পত্রিকাগুলোও একে একে ঈদসংখ্যা ম্যাগাজিন আকারে প্রকাশে উদ্যোগী হলো। একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, বাংলাদেশে ঈদসংখ্যা প্রকাশের ক্ষেত্রে অন্যদিন এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করে।
অন্যদিন ঈদসংখ্যাকে বাংলাভাষার সেরা সাময়িকীর স্বীকৃতি এনে দিতে আমরা সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছি দেশের প্রধান লেখকদের কাছ থেকে। তাঁরা সবসময় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্যদিন-এ লেখা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমি বিশেষভাবে যাঁর কথা উল্লেখ করতে চাই তিনি হলেন সবচে’ জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। তিনি ঈদসংখ্যার জন্য একটিমাত্র উপন্যাস লিখেছেন এবং তা প্রকাশিত হয়েছে অন্যদিন-এ। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকও তাঁর অগ্রাধিকারের তালিকায় বরাবরই ‘অন্যদিন’কে রেখেছেন প্রথমে। রাবেয়া খাতুন, রাহাত খান, সেলিনা হোসেন, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ইমদাদুল হক মিলনসহ আরও অনেক ঔপন্যাসিক, কবি, প্রাবন্ধিক ও গল্পকারের বিশেষ আনুকূল্য পেয়েছি আমরা।
অন্যদিন-এর রজতজয়ন্তীর এই আনন্দক্ষণে গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তাঁদের সহযোগিতার কথা স্মরণ করছি।
১৯৯৯ সালে অন্যদিন ঈদসংখ্যা আরেকটি বিশেষ কারণে পায় ভিন্ন মাত্রা। প্যারিস প্রবাসী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিনের প্রচ্ছদ। এই প্রথম তিনি কোনো পত্রিকার প্রচ্ছদ আঁকলেন। এরপর থেকে প্রতিবছর অন্যদিন ঈদসংখ্যা মানেই শিল্পী শাহাবুদ্দিনের দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদ— যা ঈদসংখ্যাকে আরও কয়েকগুণ এগিয়ে নিয়ে গেল সামনের দিকে।
৩
অন্যদিন-এর পঁচিশ বছরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো, অন্যদিন ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতা। ঈদ আসে, ঈদকে ঘিরে আমরাও মেতে উঠি নতুন আনন্দে। সেই আনন্দ পূর্ণতা পায় নতুন পোশাকে। ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে দেশীয়ভাবে তৈরি পোশাকের ব্যাপক পরিচিতি, পোশাক নির্মাতা ও ক্রেতার মধ্যে সংযোগ ঘটানো, ঈদ উৎসবের আমেজকে বৈচিত্র্যময় করার পাশাপাশি আমাদের দেশীয় পোশাকশিল্পকে সামগ্রিকভাবে উৎসাহিত করাই আমাদের এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য ছিল। দেশীয় তাঁত, রং, সুতা এবং ডিজাইনে নিজস্বতা—অর্থাৎ আমাদের দেশীয় ঐতিহ্যের বিকাশ এবং দেশীয় কাপড়ের ব্যাপক জনপ্রিয়তা সৃষ্টিতে অন্যদিন ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। অন্যদিন ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতার যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। তারপর থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছরই এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবং প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। একটু পেছনের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, বিশ বছর আগে দেশে বুটিক হাউজের সংখ্যা যা ছিল তা আজ কমপক্ষে দশ গুণ বেড়েছে। বুটিক হাউজগুলোর ক্রমাগত প্রসারই প্রমাণ করে যে দেশীয় পোশাক ব্যবহার অনেকগুণ বেড়েছে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আমাদের তাঁতশিল্প। লক্ষ লক্ষ তাঁতির জীবনধারণ যেমন হচ্ছে তেমনি প্রায় বিলুপ্ত হতে বসা আমাদের তাঁতশিল্পও কিন্তু রক্ষা পেয়েছে। ২০০৭-এ এই প্রতিযোগিতা একাদশবারের মতো আয়োজিত হয়েছিল। অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা আর আয়োজনের ব্যাপকতায় দেশে এটি-ই এ ধরনের একমাত্র মেগা ইভেন্ট ছিল। প্রতিযোগিতার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল, পুরস্কারপ্রাপ্ত পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার অথবা ডিজাইনারের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া এবং পুরস্কার বিজয়ী পোশাকগুলোর ফ্যাশন শো। ১৩টি বিভাগে পুরস্কার তুলে দিয়েছেন আমাদের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ১৩জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। এই অনুষ্ঠানে প্রতিবছর আমরা ‘আজীবন সম্মাননা’য় ভূষিত করেছিলাম আমাদের ফ্যাশন জগতের কৃতী কোনো ব্যক্তিকে। আমাদের দেশজ ফেব্রিক, ডিজাইন, তাঁত, তাঁতি, সর্বোপরি দেশজ ফ্যাশনের উৎকর্ষের জন্যে অনেক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিরন্তর কাজ করে চলেছেন। তাঁদের এই অবদানের স্বীকৃতি দিয়েছি আমরা। আর এজন্যই প্রবর্তন করা হয়েছিল ‘আজীবন সম্মাননা’ পদক।
২০০৭ সালের পুরস্কার বিতরণের আগের একটি অভিজ্ঞতার কথা এখানে না বললেই নয়। দেশের প্রথিতযশা একজন সঙ্গীত শিল্পীকে আমি ফোনে অনুরোধ করলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে একটি বিভাগের বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবার জন্যে। উনি প্রস্তাব শুনে প্রথমেই বলে উঠলেন, না না, ফ্যাশনের সাথে আমি কেন? এগুলো তো করবেন বিবি রাসেলরা। আমি উনাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম এটা কোনো পশ্চিমা ফ্যাশন শো না। ঈদ উপলক্ষে তৈরি আমাদের দেশীয় পোশাকের একটা ক্যাটওয়াক থাকবে পুরস্কার বিতরণের মাঝে মাঝে। এতসব বোঝানোর পর উনি পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আসেন, পুরস্কার তুলে দেন এবং যাবার সময় আমাকে বলেন, না এলে আমি বুঝতামই না আপনারা কী নিয়ে কাজ করছেন। আপনাদের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই।
এভাবে একটানা আঠারো বছর এই আয়োজন চলার পর ২০১৩ সালে এর ছন্দপতন ঘটে। এই আয়োজনের স্পন্সর প্রতিষ্ঠান বেক্সিফেব্রিক্স-এর চেয়ারম্যান হাজি মোঃ নান্নু মিয়া ২০১২-তে না-ফেরার দেশে চলে যান। তাঁর মৃত্যুর পর এ আয়োজন বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৩ সালে শেষবারের মতো বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে বেক্সিফেব্রিক্স্ অন্যদিন ঈদ ফ্যাশন শো অনুষ্ঠিত হয়।
৪
অন্যদিন সব সময়ই সময়ের দাবি মেটাতে সচেষ্ট থেকেছে। আর তাই অন্যদিন পাঠককে খেলাধুলার কথা বলবে না তা হয় না। জার্মানিতে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর হোক কিংবা ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে বিশ্বকাপ ক্রিকেট, অন্যদিন তার পাঠকদের জন্য সব সময়ই প্রস্তুত। বিশ্বজুড়ে যত খেলার আয়োজন হয় তার মধ্যে আকর্ষণ ও জনপ্রিয়তার দিক থেকে বিশ্বকাপ ফুটবল ও বিশ্বকাপ ক্রিকেট সবচেয়ে ব্যাপক ও জমজমাট।
অন্যদিন ফুটবল বা ক্রিকেটের বিশ্বকাপ উপলক্ষে সব সময়ই ভিন্নরকম আয়োজনের ব্যবস্থা করে এসেছে ক্রীড়ামোদী পাঠকদের জন্য—যেন দেশে বসেই তারা সম্পৃক্ত থাকতে পারেন বিশ্বকাপের জমজমাট আসরগুলোর সঙ্গে। অন্যদিন-এর বিশ্বকাপ অ্যালবাম এবং বিশ্বকাপ কুইজ প্রতিযোগিতা সব সময়ই পাঠকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অ্যালবামগুলো নানা তথ্য, বিশ্লেষণ আর ছবিতে সমৃদ্ধ ছিল। অনেককেই দেখেছি এগুলো ভবিষ্যতের কথা ভেবে যত্ন সহকারে সংরক্ষণ করতে। ২০০৬-এ অন্যদিন আয়োজিত বিশ্বকাপ ফুটবল কুইজের প্রথম পুরস্কার ছিল ১০০ সিসির মটরসাইকেল এবং ২০০৭-এ বিশ্বকাপ ক্রিকেট কুইজের মেগা পুরস্কার ছিল ৮০০ সিসি মারুতী গাড়ি। একটি পাক্ষিক পত্রিকার জন্য এধরনের বিশাল আয়োজনও বাংলাদেশে সম্ভবত প্রথম। আর এ আয়োজন সম্ভব হয়েছিল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গুঁড়ো দুধ ‘ডানো’র সৌজন্যে।
৫
সূচনাসংখ্যায় আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম, হাজার বছরের সমৃদ্ধ যে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার আমাদের রয়েছে, ‘অন্যদিন’ হবে সেই উত্তরাধিকারের প্রতিভূ। আর তাই দেশের পারফরমিং জগতের নানা খোঁজখবর, মূল্যায়নধর্মী প্রতিবেদন কিংবা সাক্ষাৎকারসহ বিভিন্ন রচনা প্রকাশ করছি আমরা। শুধু এটুকুতে সীমাবদ্ধ না থেকে আমরা আয়োজন করি ‘অন্যদিন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড’। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত শিল্পী-কুশলীদের কাজের স্বীকৃতি দিতে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের সঙ্গে এটা ছিল আমাদের যৌথ আয়োজন। পর পর তিন বছর এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। এবং আমাদের সংস্কৃতি অঙ্গনের সবচে’ মর্যাদাবান পুরস্কারের মর্যাদা পায় এটি। অনিবার্য কারণে আমাদের এই আয়োজন স্থগিত হয়ে যায়।
৬
বাঙালি সত্তার গভীরে প্রোথিত পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ উৎসব। তাই তো চৈত্রের ঝরা পাতার শেষ মর্মর ধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে যখনই বৈশাখের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়—গ্রাম প্রধান বাংলাদেশের মানুষ জেগে ওঠে, যাপিত জীবনের কষ্ট-গ্লানি ভুলে বর্ষবরণের উৎসবে মেতে ওঠে সবাই। বৈশাখ আমাদের সবচে’ বড় সর্বজনীন উৎসব। ঈদসংখ্যার পাশাপাশি আমরা বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বর্ধিত কলেবরে বৈশাখী সংখ্যা প্রকাশের উদ্যোগ নেই। পরপর চার বছর চারটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়। আমরা চেয়েছি ঈদসংখ্যার পাশাপাশি বৈশাখী সংখ্যাও যেন আমাদের সাহিত্যচর্চার অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে ওঠে।
৭
আমাদের একটা স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বাংলাভাষী মানুষের কাছে অন্যদিন পৌঁছানো। আমাদের মনে হয়েছিল বাংলা ভাষার একটি পত্রিকা কেন বাংলাভাষী সকল মানুষের কাছে যাবে না? পৃথিবীর নানা প্রান্তের বাঙালিদের কাছে ‘অন্যদিন’ পৌঁছে গেলেও পৌঁছাতে পারছিল না পশ্চিমবঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো আমাদের দেশে আসে। তাহলে আমাদেরটা যাবে না কেন? আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করে এগোতে থাকি। অসম্ভব সব আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীর বছরে যখন ‘অন্যদিন’ যাত্রা শুরু করেছিল তখন প্রত্যয় ছিল বাংলাদেশ ও বাংলাভাষী বিশাল জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি চেতনায় নতুন মাত্রা যুক্ত করার, রাহুর করাল গ্রাসে বন্দি সুন্দরের সকল বন্ধন ঘুচানো। অবশেষে রাহুর করাল গ্রাস থেকে মুক্ত হয়ে ২০০০ সালের ২৮ জানুয়ারি কলকাতার ইন্টারন্যাশনাল ক্লাবে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মি. কবি অরুণ মিত্রের মোড়ক উন্মোচনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে তথা ভারতে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো অন্যদিন-এর। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুই বাংলার অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। অন্যদিন-এর প্রর্বতনা অনুষ্ঠানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘এই উদ্যোগের ফলে বাঙালি পাঠকদের মধ্যে সাহিত্যের এক নতুন সেতুবন্ধ রচিত হলো।’ হুমায়ূন আহমেদ বলেন, ‘এই ধরনের একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত হতে পেরে আমি গর্বিত।’ এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কথাশিল্পী বুদ্ধদেব গুহ, সমরেশ মজুমদার, দিব্যেন্দু পালিত, নবনীতা দেবসেন, রমাপদ চৌধুরী, কবি মল্লিকা সেনগুপ্ত, চিত্রনায়িকা ঋতুপর্ণাসহ পশ্চিমবঙ্গের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির আরও অনেকেই। ওই দিনটি ছিল আমাদের জন্য অসম্ভব আনন্দের একটি দিন, অসাধারণ আনন্দময় এক স্মৃতি। এই প্রথম বাংলাদেশের কোনো পত্রিকা পশ্চিমবঙ্গের বাজারে প্রবেশ করল। আমার চোখে সহজে পানি আসে না। কিন্তু আনন্দে কখন যে চোখে পানি এসে গিয়েছিল বুঝতে পারি নি।
৮
কিংবদন্তি কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে ও আমাদের প্রবীণ-নবীন কথাকারদের সাহিত্য সৃষ্টিতে প্রেরণা জোগাতে প্রবর্তন হয় এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ুন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার। ২০১৫ সালে প্রবর্তিত এ পুরস্কার পান সামগ্রিক অবদানের জন্য কথাশিল্পী শওকত আলী এবং নবীন সাহিত্য শ্রেণিতে সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম।
পরের বছর ২০১৬-তে সামগ্রিক অবদানের জন্য কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও নবীন সাহিত্য শ্রেণিতে স্বকৃত নোমান এ পুরস্কার পান।
২০১৭-তে সামগ্রিক অবদানের জন্য পুরস্কার পান কথাসাহিত্যিক জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত ও নবীন সাহিত্য শ্রেণিতে মোজাফ্ফর হোসেন।
২০১৮-তে সামগ্রিক অবদানের জন্য কথাসাহিত্যিক রিজিয়া রহমান ও নবীন সাহিত্য শ্রেণিতে ফাতিমা রুমি এ পুরস্কার পান।
২০১৯-তে সামগ্রিক অবদানের জন্য কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন ও নবীন সাহিত্য শ্রেণিতে সাদাত হোসাইন এ পুরস্কার পান।
২০২০-এ সামগ্রিক অবদানের জন্য কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই ও নবীন সাহিত্য শ্রেণিতে নাহিদা নাহিদ এ পুরস্কার পান।
গত বছর সামগ্রিক অবদানের জন্য এক্সিম ব্যাংক অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ও নবীন সাহিত্য শ্রেণিতে ফাতেমা আবেদীন।
৯
গত বছরে ১২ মার্চ সন্ধ্যায় ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ সেন্টারে অন্যদিন-এর রজতজয়ন্তী উপলক্ষে একটি প্রীতি সম্মিলনীর আয়োজন করা হয়।
এই আয়োজনে সম্মানিত অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এদিন অন্যদিন-এর উপদেষ্টা সম্পাদক হিসেবে স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামকে বরণ করে নেন অন্যদিন সম্পাদক। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন অনুষ্ঠানের সহযোগী এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শাহিদ এবং অন্যদিন-এর অনলাইন ভার্সনের কারিগরি সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইবিএস-এর পরিচালক এনামুল হক।
অনুষ্ঠানটির সূচনা হয় পূজা সেনগুপ্ত এবং তার দলের নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে। অতঃপর প্রদর্শিত হয় একটি তথ্যচিত্র, যেখানে তুলে ধরা হয় অন্যদিন-এর পঁচিশ বছরের পথচলা। এটির চিত্রনাট্যকার মোমিন রহমান এবং নির্মাতা তুষার তুহিন। সম্মাননা প্রাপ্তদের হাতে সম্মাননা-স্মারক তুলে দেন দেশের সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং রাজনীতির জগতের স্বনামধন্য মানুষেরা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মাননীয় কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রথিতযশা কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই, সেলিনা হোসেন, স্বনামধন্য গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, চলচ্চিত্রের সোনালি যুগের নায়িকা সুজাতা, সুরকার শেখ সাদী খান, খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, স্বনামধন্য অভিনেত্রী এবং বাচসাস-এর সভাপতি ফাল্গুনী হামিদ, কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক।
প্রীতিসম্মিলনীতে ‘সমৃদ্ধির বাংলাদেশ’ এবং ‘সম্ভাবনার বাংলাদেশ’ শিরোনামে নানা ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠিত এবং প্রতিশ্র“তিশীল ১৩ জন ব্যক্তিকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। একই আয়োজনে নতুন আঙ্গিকে আত্মপ্রকাশ করে পাক্ষিক অন্যদিন’ এর অনলাইন ভার্সন। ‘সমৃদ্ধির বাংলাদেশ’ শিরোনামে সম্মাননা লাভ করেন আহমদ রফিক (ভাষা ও সাহিত্য); আসাদুজ্জামান নূর (অভিনয়); মৌসুমী (অভিনয়, চলচ্চিত্র); সৈয়দ আবদুল হাদী (সংগীত); রকিবুল হাসান (ক্রিকেট); শাহাবুদ্দিন আহমেদ (চিত্রকলা); শাইখ সিরাজ (কৃষি উন্নয়ন ও কৃষি সাংবাদিকতা)। অন্যদিকে ‘সম্ভাবনার বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই সম্মাননা লাভ করেন মুশফিকুর রহিম (ক্রিকেট); সাদাত হোসাইন (কথাসাহিত্য); আয়মান সাদিক (অনলাইন এডুকেশন); সোমনুর মনির কোনাল (সংগীত); সিয়াম আহমেদ (অভিনয়, চলচ্চিত্র); প্রার্থনা ফারদিন দীঘি (নবাগত, চলচ্চিত্র)।
১০
নতুনভাবে এসেছে অন্যদিন। মুদ্রিত ‘অন্যদিন’-এ এসেছে পরিবর্তন। অবশ্য এরকম পরিবর্তন গত ছাব্বিশ বছরে নানা সময়েই হয়েছে। বিষয়, উপস্থাপন, কাগজ, মুদ্রণসৌকর্য, এমনকি মাস্টহেড বা লোগো—পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে এগিয়েছে ‘অন্যদিন’। এবার বড় পরিবর্তনটি এসেছে অনলাইনে। ‘অন্যদিন’-এর অনলাইন ভার্সন এসেছে একেবারে খোলনলচে পাল্টে, অনেক বেশি পাঠকবান্ধব হয়ে, পাঠকের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়া করতে। মুদ্রিত পত্রিকার লেখাগুলো যেমন এখানে রয়েছে, তাৎক্ষণিক খবর বা খবরের আপডেটও রয়েছে, অডিও-ভিজ্যুয়াল সংযোজিত হচ্ছে নতুন করে। অনলাইন ‘অন্যদিন’ আমাদের পাঠকদের ডিজিটাল জীবনে ভিন্ন স্বাদ এনে দিচ্ছে বলেই আমরা মনে করি।
১১
পঞ্জিকার দিন গণনার হিসেবে ‘অন্যদিন’ অতিক্রম করেছে গৌরবের ছাব্বিশ বছর। গত বছর ২৬ মার্চ ছিল আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী।
নতুন শতাব্দীর অতৃপ্ত পাঠক মানসের রুচি ও সংস্কৃতি চেতনার পরিপূরক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল অন্যদিন-এর। আমাদের স্লোগান ছিল, ‘অন্যদিন’ হবে অন্যদিনের প্রত্যাশী পাঠকের পত্রিকা। আমরা একটি অন্যদিনের সন্ধান করব আমাদের বিচিত্র ধারার লেখাগুলোয়। যে সংকীর্ণতা আমাদের সামগ্রিক জাতিসত্তাকে করেছে গতিহীন, স্থানু—আমরা কথা বলব সেই সংকীর্ণতার বিপক্ষে। অন্যদিনের প্রত্যাশী পাঠকের সঙ্গে অন্যদিন রচনা করবে সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন। ফেলে আসা দিনগুলোতে আমরা সবসময়ই আন্তরিকভাবে সচেষ্ট ছিলাম এই অঙ্গীকার পালনে।
সুন্দরের বন্ধনমুক্তির আকাঙ্খা নিয়ে পাঠকের কাছে গিয়েছিলাম আমরা, পথ চলেছি পাঠকদের সঙ্গেই। কিন্তু প্রত্যাশার সেই অন্যদিনে পৌঁছুতে পারি নি আমরা। দেখেছি সুন্দরের অপমৃত্যু, প্রবলের বিক্রম, পরাক্রমের সর্বগ্রাসী দংশন, নিরীহের অশ্রুপাত। তবে বিরুদ্ধ পরিবেশ আর দুর্জনের অপ্রতিরোধ্য বিস্তারেও আশাবাদী আমরা। আমরা জানি—
শাবাশ বাংলাদেশ! এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়,
জ্বলেপুড়ে খাক, তবু মাথা নোয়াবার নয়।
[অবাক পৃথিবী, সুকান্ত ভট্টাচার্য]
ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে ওঠে এ জাতি বারবার। অসুন্দর আর অসংস্কৃতের পরাজয় ঘটে। হেসে ওঠে মানবতা, নতুন আলোয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে চারদিক।
আজন্মলালিত সেই অন্যদিনের প্রত্যাশায় গত বছর থেকে নতুন পথচলা শুরু হয়েছে অন্যদিন-এর। ফেলে আসা ছাব্বিশ বছরের অভিজ্ঞানে, আমরা আরও পরিণত; দুই যুগেরও বেশি সময়ের পথচলার সঙ্গী হাজারো পাঠকের ভালোবাসায়-সমালোচনায়-আশ্বাসে-বিশ্বাসে আমরা ঋদ্ধ। এই শুভক্ষণে আমাদের দৃঢ় প্রত্যয়, পাঠকের সঙ্গে অন্যদিন-এর এই বন্ধন কখনো ছিন্ন হবে না।
Leave a Reply
Your identity will not be published.