[কর্মসংস্থান, উচ্চশিক্ষা বা ঘোরাঘুরি- এসব ক্ষেত্রে ভ্রমণপিপাসু বেশির ভাগ মানুষের ঝোঁক পশ্চিম ইউরোপের দিকে। অথচ পাহাড়-নদী-প্রকৃতির সৌন্দর্যে বিখ্যাত পূর্ব ইউরোপও। যেখানে রয়েছে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আর ইতিহাস-ঐতিহ্যের বাস্তবধর্মী পাঠ। এমনই এক দেশ সার্বিয়া। ভ্রমণের বহুরৈখিক পথে লেখকের কাছে নতুন উপজীব্য হয়ে ওঠে সার্বিয়ান এক তরুণী। ঠিক প্রেম নয়, প্রেমের চেয়ে কম কিছুও নয়। পার্থিব দৃশ্যপটের সঙ্গে উঠে এসেছে রোমান্সের হৃদয় ছোঁয়া-না ছোঁয়ার গল্পও। যার পুরো বর্ণনা থাকছে ইমদাদ হক-এর এই ভ্রমণকাহিনিতে।]
বাড়ির পাশে আরশিনগর
ঢাকা থেকে গিয়েছিলাম রোমানিয়াতে। সেখান থেকে গন্তব্য বেলগ্রেড, সার্বিয়ার রাজধানী। সরাসরি পাশের দেশ। কিন্তু যেতে হবে ফ্রান্স ঘুরে। কেননা, সরাসরি নিয়মিত ফ্লাইট নেই। ভোর চারটার দিকে বুখারেস্টে হেনরি কোয়ান্ডা এয়ারপোর্টে পৌঁছি। রাষ্ট্রীয় সফর আমাদের। এয়ারপোর্টে চেক ইন, ইমিগ্রেশন কিংবা এয়ারে আসনবিন্যাস- ঝামেলা হয় না। মেলে বাড়তি সুবিধা। এয়ারপোর্টের লাউঞ্জের সময় তাই ভাবনাহীন। দুই ঘণ্টা বসে থাকতে হবে। প্রটোকল অফিসারের সব দিকে নজর। এই ভোরবেলাতেও কোত্থেকে চলে এল গরম কফি, বেশ ভালো লাগে। পৌনে ৬টার দিকে আমাদের নিয়ে ওঠানো হয় এয়ার ফ্রান্সের এয়ারক্রাফটে।
এয়ারক্রাফটের পেছন দিকে, জানালার ধারে সিট। কোনোমতো বসা যায়। এয়ার ফ্রান্সের এই ফ্লাইটটি সাইজে ছোটোখাটো। ঢাকা থেকে সৈয়দপুর, সিলেট বা রাজশাহী রুটে নভোএয়ার বা ইউএসবাংলা যেমন ফ্লাইট চালায়, তেমনি। ইউরোপের এয়ারলাইনসগুলো নাকি ছোটো হয়- আগে থেকে ধারণা ছিল না। এয়ার ফ্রান্সের শব্দটাও নৌকার ইঞ্জিনের মতো। শব্দের তালে তালে চোখের শিরা-উপশিরায় টান লাগে, বন্ধ হয়ে আসে ঘুমে। ঘুমের ঘোরেই শুনি মোহনীয় কণ্ঠের ডাক, ‘এক্সিকিউজ মি...’।
স্বপ্নে যেন পরির হাতছানি, সেই পরির ঘোরও স্থায়ী হয় না। ঘুম এত গাঢ়, পাখা মেলার আগেই পরির বিদায় ঘটে। আমার ঘুম ভাঙে না। তিন সাড়ে তিন ঘণ্টা পর আবার ডাক, ‘ইমদাদ, উঠতে হবে। পৌঁছে গেছি।’
মন্ত্রীর দপ্তরের পরিচালক এমদাদ চৌধুরীর ডাক। নামার কথা শোনার পর চোখ মেলতে হয়। আড়মোড়া ভেঙে উঠি। বিমান তখন মাটিতে, প্যারিস এয়ারপোর্টে।
প্যারিস এয়ারপোর্টে
লক্কড়ঝক্কড় মার্কা হলেও গতি ভালোই ছিল এয়ার ফ্রান্সের। নির্ধারিত সময়ের আধাঘণ্টা আগেই পৌঁছে যাই। প্যারিসে ট্রানজিট বিরতি ছিল দেড় ঘণ্টা, সেটাও কমে হয় ৪০ মিনিট। প্যারিস এয়ারপোর্টে প্রটোকল অফিসার আমাদের রিসিভ করলেন। দু’-তিন মিনিট হাঁটাপথ, এরপর এয়ার রেল। এক টার্মিনাল থেকে অন্য টার্মিনালে যেতে এই এয়ারপোর্টে ছোটো ছোটো ট্রেন।
এয়ারপোর্টে ৩৬ নম্বর গেটে আমাদের ইমিগ্রেশন। এয়ারপোর্টের লম্বা ওয়েটিং করিডর, পেতে রাখা চেয়ারে সেখানেই বসি। ‘প্যারিস শার্ল দ্য গোল এয়ারপোর্ট’, ফ্রান্সের সবচেয়ে বড়ো এয়ারপোর্ট। ব্যস্ততার দিক থেকে ইউরোপের মধ্যে এর অবস্থান দ্বিতীয়। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ‘শার্ল দ্য গোলে’র নামে এর নামকরণ। বছরে ৮ কোটিরও বেশি লোকের যাতায়াতের মাধ্যম শার্ল দ্য গোল। পণ্য পরিবহনের দিক থেকে এর অবস্থান বিশ্বে ১২।
করোনার প্রভাবে লোকজনের ভিড় নেই। লাউঞ্জে কফি শপ, পারফিউম, শোপিসের দোকানে ঠাঠা শূন্যতা। দোকানের চকলেটের প্যাকেটের যেন অলস কাল। যাঁরা আসছেন একদিক থেকে, বেরিয়ে পড়ছেন অন্যদিক। রকমভেদ কত; সাদা মানুষ, কালো মানুষ, লম্বা মানুষ, বেঁটে মানুষ। রয়েছেন নারী-পুরুষ, শিশু বাচ্চা, বয়োবৃদ্ধ, তরুণ-তরুণী। চেয়ারে বসে হাতের মোবাইল ফোনে ব্যস্ত কেউ কেউ। পাশাপাশি বসে গল্প করার মতো কাউকে পাওয়া গেল না। সত্তরোর্ধ্ব বয়সী একজন সাদা চামড়ার বৃদ্ধ, শূন্য পানে তাকিয়ে আছেন। কী ভাবছেন তিনি, এভাবেই শেষ হয়ে গেল জীবন নামের ছোট্ট অধ্যায়টি। পৃথিবী নিয়ে কি তার অনেক ভাবনা? কথিত জয়-পরাজয়ের হিসাব? অজস্র ডলার কামাইয়ের নেশা? রঙহীন চপ্পলের মতো সাদামাটা দিনগুলো? প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাওয়ার পর সন্তানের অবজ্ঞা? দুনিয়ার এত ঐশ্বর্য ছেড়ে নিঃস্ব হয়ে পরপারে পাড়ি জমানোর অপেক্ষা? শূন্য দৃষ্টি, তাতে অনেক কথা।
ইমিগ্রেশনের সময় পার হয়ে আসে। এয়ার ক্রাফটের গতি বেলগ্রেড অভিমুখে। এবারের পথ তিন ঘণ্টার। সিট ছিল জানালার ধারে, আরশি দিয়ে বাইরে তাকাই। নিচের দৃশ্য স্পষ্ট। স্বচ্ছ লেক। লেকের কোল বেয়ে পাহাড়, তার খাঁজে খাঁজে ঘরবাড়ি। আরেকটু সামনে এগোতে চোখ বড়ো হয়ে যায়। সারা জীবন সবুজ পাহাড় দেখে অভ্যস্ত। এ দেখি সাদা পাহাড়। পাহাড়কে সাদা বরফ দিয়ে ঢেকে দেওয়া, যেন সাদা রঙে মোড়ানো বিশাল পর্বত। শীতের আবহাওয়ায় তাপমাত্রা পাঁচ বা ছয়। বরফ জমার পূর্বশর্ত হিমাংকের নিচের তাপমাত্রা। কিন্তু কীভাবে সম্ভব!
দূরের আকাশে নীল, কোথাও ধূসর বা বর্ণহীন। আর নিচে সবুজ মাঠ, ছোটো ছোটো লেক। ফুটবল বা ভলিবলের স্টেডিয়াম। ইউরোপের আকাশ থেকে নিচে সব স্পষ্ট। এর আগে জেনেভা থেকে হিথরো যাওয়ার পুরো সময় নিচের সব দৃশ্য ভিডিও করেছিলাম।
বাংলাদেশের প্রকৃতি সমতল ভূমির। ইউরোপে এসে সমতলের মাঠজুড়ে দাঁড়িয়ে গেছে বিশাল পাহাড়, তাতে ঝরনা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কত লেক। স্রষ্টার অপার বিস্ময়।
পাইলটের কণ্ঠে তখন স্বস্তির বার্তা, আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা অবতরণ করব আমাদের কাক্সিক্ষত গন্তব্য বেলগ্রেডে।
সার্বিয়ার অলৌকিক গল্প
ন্যাম সম্মেলনের তারিখ, ২০২১ সালের ১০ থেকে ১২ই অক্টোবর। সব মিলিয়ে দিনপাঁচেক আমাদের আবাসস্থল বেলগ্রেড। ছোটাছুটি অন্য শহরেও।
পর্যটন, ইতিহাস, যুদ্ধের দামামা, গণহত্যা, খেলাধুলা- এসব বিষয় সার্বিয়াকে আলোচনায় এনেছে বারবার। তবে আমি আটকাই ‘অলৌকিক জীবনযাত্রা’র গল্পে। ঘটনাটি তাও এখন থেকে ৫০ বছর আগের। তেত্রিশ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে পড়ে যাওয়ার গল্প, ‘বিমানের এয়ারহোস্টেস ভেসনা ভুলোভিচ, কাজ করতেন যুগোশ্লাভ এয়ারলাইনসে। ১৯৭২ সালের ২৬ জানুয়ারি বিমানটি চেকোশ্লাভিকিয়ার এক পার্বত্য অঞ্চলে বিস্ফোরিত হয়। বিমানটি প্রায় ৩৩ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। বিমানের ২৭ জন যাত্রী এবং অন্যান্য ক্রু সবাই মারা যান। কিন্তু কেবল বেঁচে গিয়েছিলেন ভেসনা ভুলোভিচ।’
ঘটনাটি অলৌকিকই! একটি খাবার ট্রলির সঙ্গে আটকে যান তিনি। যেটা বিমানের লেজের মতো পেছনের অংশের মধ্যেই আটকে ছিল। এই অংশটি পাহাড়ের একটি চূড়ায় আটকে পড়ে। তখন এমনিতেই শীতকাল। পাহাড়ের ওপরে তাপমাত্রা হিমাংকেরও কয়েক ডিগ্রি নিচে। আগুন নিভে যায়। তাঁর গোঙানির শব্দ শুনে এগিয়ে আসেন বনকর্মী ব্রুনো হংকে। সেখান থেকে উদ্ধার করে নেওয়া হয় হাসপাতালে। বাঁচা-মরা অবস্থার মধ্যে ১০ দিন ছিলেন তিনি। অবশেষে বেঁচে যান। এত উঁচু থেকে পড়েও যে কেউ বেঁচে যেতে পারেন- তা ছিল স্রষ্টার বিস্ময়কর সৃষ্টি আর অলৌকিক ঘটনা। এজন্য গিনেজ বুক অব রেকর্ডসেও তার নাম ওঠে।
ভুলোভিচের গল্পটা বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের মতো। সেই সময়ে আমেরিকার সাহায্য সংস্থা কেয়ারের ঢাকা অফিসে চাকরি করতেন তিনি। বয়সে তরুণ মান্নানকে অফিসের কাজে দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেতে হতো। ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দুই তারিখ, বুধবার। ওই দিন তাঁর কুষ্টিয়া যাওয়ার কথা। পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস বা পিআইএ তখন কিছু হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু করে, যা পূর্ব-পাকিস্তানের কিছু অঞ্চলে যাত্রী পরিবহন করত। ঘটনা ছিল এমন:
‘দুপুর দুইটা নাগাদ মি. মান্নান কুষ্টিয়ার উদ্দেশে যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টারে চড়ে বসেন। ফরিদপুরের কাছাকাছি যখন হেলিকপ্টারটি পৌঁছায়, তখন বিশাল একটা আওয়াজের সৃষ্টি হয়। মুহূর্তের মধ্যেই ঘুরতে-ঘুরতে মাটিতে পড়ে যায় কপ্টারটি। প্রচণ্ড ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় চারপাশ। প্রাণপণ চেষ্টা করে মান্নান হেলিকপ্টারের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন। ধানখেতে কাজ করছিলেন কয়েক জন কৃষক, তারা তাকে উদ্ধার করেন। হেলিকপ্টারে থাকা ২৪ জনের মধ্যে ২৩ জনই সেদিন মারা যান।’
বর্ণিল সাজে হোটেল ক্রাউন প্লাজা
হোটেলের সীমানায় গিয়ে আটকে গেল গাড়িবহর। সামনে আর চলে না, পেছনেও ঘোরে না। এক মিনিট, দুই মিনিট, পার হয়ে যায় ১৫ মিনিটের মতো।
‘কী ঘটনা, কী হলো?’
জিজ্ঞেস করি গাড়িতে থাকা সিকিউরিটি অফিসারকে।
‘ঠিক জানি না। একটু খোঁজ নিতে হবে।’
বাইরে তখন রিমঝিম বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যেই গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন সার্বিয়ান সিকিউরিটি অফিসার।
মন্ত্রীর গাড়ির পেছনে পুলিশের গাড়ি, তার পরে আমরা। ঘটনা কী, বুঝতেও কয়েক মিনিট লেগে যায়।
‘ডিজিটাল সিকিউরিটি সিস্টেম কাজ করছে না।’
খোঁজ নিয়ে এসে জানালেন সিকিউরিটি অফিসার।
বিমানবন্দর থেকে হোটেল পর্যন্ত আসতে সময় লাগে যা, গাড়িতে বসে থাকতে হয় আরও ততক্ষণ। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ঘাম ছুটতে থাকে। ঊর্ধ্বতন দুয়েক জন কর্মকর্তার মাথায় ছাতা বটে, বাকিরা দাঁড়িয়ে চুপসে ভিজতে থাকেন। বহুরকম কলাকুশলে রিমোট চলে, অফ-অন হয় বিদ্যুতের সুইচ। সংযোগ লাইন চেক করা হয় বারবার, ফল মেলে না কিছুতেই। আরও কতক্ষণ পর, পাশের বিকল্প সড়ক দিয়ে গাড়ি বহর হোটেলে প্রবেশ করে।
ডিজিটাল যুগের বিড়ম্বনা!
বেলগ্রেডে আমাদের আবাস ‘হোটেল ক্রাউন প্লাজা’। এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলের দূরত্ব সাড়ে ১৬ কিলোমিটার। গুগলের হিসেবে এই পথ আসতে ২২ মিনিট লাগার কথা, লাগে ১৮ মিনিট।
হোটেলে অভ্যর্থনা জানান সম্মেলন আয়োজক কমিটির লোকজন। হোটেল লবিতে মানুষ গিজগিজ করছে। ৭১টি দেশের প্রতিনিধি, একেকটি দলে ১০/১২ জন সদস্য। কতজনের কত ব্যস্ততা, ছোটাছুটি! সবার হাতে একটি করে ব্যাগ। তাতে সার্বিয়ান মোবাইল সিম, প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর। সম্মেলনের নোটপ্যাড, শিডিউল, কলম। বেলগ্রেডের আবহাওয়া, খাবার, পরিবহণ, পর্যটনসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ের পেপার নোট।
হোটেল রুমের চাবির জন্য রিসিপশনে যাই। রিসিপশনিস্ট মিলিসা টেরপোরেভিচ, এক হাতে সামলাচ্ছেন সব। ‘হ্যালো’ বলতেই মিষ্টি হেসে ‘হাই’ বললেন প্রতিউত্তরে। বাংলাদেশি ডেলিগেশন- বলতেই আবার স্মিত হাসি। বললেন, ‘প্লিজ ইউর পাসপোর্ট।’
পাসপোর্ট বের করে দিই। স্ক্যান করতেই কম্পিউটারের স্ক্রিনে চলে আসে রুম নম্বর। রুমে চলে যাই। আমরা রুমে পৌঁছার আগেই পৌঁছে গেছে সবার লাগেজ। আমাদের রুম নম্বর ৩১২।
আগের যুগের রীতি ছিল- বাইরে কোথাও থেকে রুমে ফিরে ফ্রেশ হওয়া। এখন হয়েছে ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড খোঁজা। রুমে টেবিলের ওপরে চিরকুটে ওয়াইফাই নাম আর পাসওয়ার্ড দেওয়াই ছিল, খুঁজতে হলো না। মোবাইলে নেট সংযোগ পাওয়া মাত্রই টুং টুং শব্দ। ফেসবুক, হোয়াটস আপ, ইমেইল, সিগন্যাল, লিংকড ইন, ইনসটাগ্রাম...আরও দুই একটা অ্যাপের হাজারখানেক মেসেজ। চেক করতে না করতেই আধাঘণ্টা পার।
‘বাংলাদেশে যদি এমন সুন্দর কয়েকটি হোটেল থাকত! নিজের ঘরে আন্তর্জাতিক সভা-সম্মেলন আয়োজনে বাংলাদেশের দাবিটা আরও জোরালো হতো।’
হোটেল ক্রাউন প্লাজার সাজসজ্জা দেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিস্ময়!
দুপুরে বাইরে খেতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি। সেই সময়ে হোটেল-মোটেলের রকমফের নিয়ে বলছিলেন তিনি। বাংলাদেশের পর্যটনের হালহকিকতও উঠে এল তার কথায়, যেখানে আশা-নিরাশার দোলাচল।
বড়োসড়ো মাপের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ন্যামের। তাই হোটেলের রূপও বর্ণিল। চিরাচরিত প্রথা, সব জায়গায় এমনই হয়। অংশগ্রহণকারী ৭১টি দেশের পতাকা দিয়ে সাজানো হোটেলের দীর্ঘ করিডর। লবিতেও সাজসজ্জার বাড়তি অনুষঙ্গ। নিচতলায় বার ও রেস্টুরেন্টের ডেকোরেশন করা হয়েছে নতুন করে। বাড়তি চমক ডিউটি ফ্রি শপ, সাইবার পয়েন্ট, স্পা সেন্টারেও।
বাণিজ্যিক নগরী বেলগ্রেড শহর, তা থেকে হোটেলের দূরত্ব পাঁচ মিনিট। বড়ো, মাঝারি, ছোটো সাইজের ৪১৬টি রুম আছে এই হোটেলে। দুটি রেস্টুরেন্ট, একটি লবি বার, বড়ো মাপের প্রদর্শনী হল, সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বড়ো বিজনেস সেন্টার। ১২টি মিটিং রুম, ফিটনেস ও স্পা সেন্টার, সুইমিংপুল দিয়ে অভ্যাগতদের কাছে টানার চেষ্টা করছে হোটেলটি। বিশ্বখ্যাত হোটেল ব্যবসায়ী গ্রুপ ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল গ্রুপ’ বেলগ্রেডে প্রথমবারের মতো হোটেল ক্রাউন প্লাজা চালু করে। সার্বিয়াতে হোটেলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়ো বলরুম এই হোটেলেই। সব ধরনের সভা-সেমিনারের আয়োজনও করা যায় সহজে। ২০১৪ সালে হোটেলটি চালু করা হয়।
ছোটোবেলায় ঢাকার হোটেল মানেই বুঝতাম সোনারগাঁও আর শেরাটন। পরে না আরও কয়েকটা নতুন করে হলো। বাংলাদেশে হোটেল-মোটেলের আসল চিত্রটা কী? বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশে ১৭টি পাঁচ তারকা ও ছয়টি চার তারকা মানের হোটেল রয়েছে। এই তালিকায় তিন তারকার হোটেলের সংখ্যা ২০টি। ঢাকা শহরে আরও ১৭টি তারকা-ক্যাটাগরির হোটেল ২০২৫ সালের মধ্যে চালু হওয়ার কথা।
(চলবে)
Leave a Reply
Your identity will not be published.