বিসর্জিত অহংকার।। ফরহাদ হোসেন

বিসর্জিত অহংকার।। ফরহাদ হোসেন

মনোমুগ্ধকর একটি বিকেল।

আকাশের সর্বত্র আজ নীলের ছড়াছড়ি। নীল আকাশের বুকে পেঁজা তুলোর মতো শুভ্র মেঘের বাস, অদৃশ্য মৌনতায় ছেয়ে আছে চারিদিক। শরৎ শুরু হয়েছে। শরতের আকাশে মেঘের লুকোচুরি। আলোছায়ার খেলা চলছে; এই মেঘ, এই বৃষ্টি, তো কিছুক্ষণ পরই রোদ।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। একটি নিরিবিলি জায়গায় বসে রয়েছে সোমা আর রাজন। সাতাশ বছরের সুদর্শন যুবক রাজনের সাথে সোমার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। সোমার বয়স চব্বিশ। কোনো কোনো তরুণীর সৌন্দর্য বাসন্তী মল্লিকার মতো। বাংলা সাহিত্যে নারীর সৌন্দর্য বর্ণনায় যে সকল উপমা ব্যবহার করা হয়—সোমার সৌন্দর্য সেইরূপ। যদিও সোমার গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, তবে তার মায়াভরা চোখ, স্থির, ধীর, কোমল-প্রকৃতির মুখাবয়বে কিঞ্চিৎ বালিকাভাব তাকে করে তোলে আরও আকর্ষণীয়া। মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত বর্ণবহুল একটি সুন্দর ম্যাগনোলিয়ার মতোই স্নিগ্ধ।

আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সোমা বলল, মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে আজ।

রাজন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে সোমার মুখের দিকে। যেন শরতের সব স্নিগ্ধতা মেখে আরও বেশি আকর্ষণীয়া হয়ে আছে সে। আকাশের দিকে তাকিয়ে সে বলল, তাহলে তো ভালোই হয়। দুজনে ভিজব।

ইশ, কত শখ, দুজনে ভিজব? ওসব ভেজা-ভিজি আমাকে দিয়ে হবে না। রাজন, চলো ফিরে যাই। অনেকক্ষণ তো হলো।

কেন, ভালো লাগছে না তোমার?

লাগছে, কিন্তু কী লাভ? এক সময় তো ফিরতে হবেই।

ফেরার দরকারটা কী? চলো না, দুজন মিলে হারিয়ে যাই?

সোমা গানের সুর ভাজল, ‘আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব, হারিয়ে যাব আমি তোমার সাথে/ সেই অঙ্গীকারের রাখী পরিয়ে দিতে কিছু সময় রেখো তোমার হাতে...’। দু’লাইন গেয়েই সোমা হেসে ফেলল। হাসতে হাসতেই বলল, হারিয়ে যাব, তবে আজ নয়। এখন আমাকে যেতে হবে রাজন, ক্লাসের সময় হয়ে গেছে।

সোমা উঠে দাঁড়াতেই রাজন বলল, আজ ক্লাসে যেতে হবে না। একটা দিন ক্লাস মিস করলে কী হয়?

অনেক কিছু হয়। তোমার কী? পরীক্ষা শেষ, বিসিএস শেষ, রেজাল্ট পেয়েছ, শুধু জয়েনিংয়ের অপেক্ষা। চলো, উঠি।

অগত্যা রাজন উঠে দাঁড়াল। আগ্রহ নিয়ে বলল, আবার কবে দেখা হবে?

আরে, দেখা তো প্রায় প্রতিদিনই হচ্ছে। চলো তো, উঠো। বলেই সোমা আবার গানের সুর ভাজল, ‘আবার হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো...’।

হাঁটতে হাঁটতে রাজন বলল, তোমার এই ব্যাপারটা আমার দারুণ লাগে।

কোন ব্যাপারটা? আয়ত চোখে সোমা জানতে চাইল।

এই যে সুযোগ পেলেই গানের সুরে কথা বলো। তোমার গলা খারাপ না, গান শিখলেও পারতে।

হ্যাঁ, বলেছে তোমাকে!

সোমা গানের সুর থামিয়ে দিল। রাজন বলল, আহা, থামলে কেন, গাও না। ভালোই তো লাগছিল।

সোমা আবার গানের সুর ধরল।

 

সোমা, আজ কিন্তু আমার সঙ্গে যাচ্ছ।

সোমা ঘাড় ঘুরিয়ে বলল, কোথায়?

আমি যেখানে নিয়ে যাব, সেখানে। হেঁয়ালি করে বলল রাজন।

আহা, সেখানটা কোথায় সেটাই তো জানতে চাচ্ছি।

কেন? আমাকে বিশ্বাস করো না?

রাজন, এখানে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্ন আসছে কেন? অবশ্যই আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। বলো, কোথায় যেতে হবে?

জানি না ব্যাপারটাকে তুমি কীভাবে নেবে!

কোন ব্যাপারটা?

রাজন সোমার প্রশ্নের উত্তর সরাসরি না দিয়ে বলল, ইউ নো হাউ মাচ আই লাভ ইউ...

আবার হেঁয়ালি! এসব প্যাঁচানো কথা আমার ভালো লাগে না। যা বলার সরাসরি বলবে।

আমার বাসায় একবার নিয়ে যেতে চাই তোমাকে। অনেকক্ষণ ইতস্তত করে বলল রাজন। তারপর তাকাল সোমার দিকে, উত্তরের অপেক্ষায়।

সোমা কিছু বলল না। অস্বস্তিকর নীরবতা নেমে এল। কিছু সময় পার করে সোমা বলল, নো। নট পসিবল।

আমি কোথায় থাকি তোমার দেখতে ইচ্ছে করে না?

না।

না?

না। দ্যাটস নট ইম্পর্ট্যান্ট! তুমি কোথায় থাকো তা জেনে আমার কী হবে? তুমি বড়লোকের ছেলে আমি জানি। তোমার গাড়ি আছে, ফ্ল্যাট আছে তাও জানি। কিন্তু রাজন, আমি তো সেগুলো ভেবে তোমার সাথে সম্পর্ক করি নি। তোমার সঙ্গে দেখা হওয়াটা আমার জন্য ইম্পর্ট্যান্ট আর দেখা তো হচ্ছেই— অলমোস্ট এভরিডে!

রাজন আর কিছু বলার মতো কথা খুঁজে পেল না। মনে হচ্ছে এ জনমে সোমাকে তার একান্তভাবে আর কখনোই পাওয়া হবে না। রাজন মনে মনে আর কী কী অপশন আছে ভাবতে থাকল।

 

সুন্দর স্নিগ্ধ বিকেল।

পড়ন্ত বিকেল বেলায় প্রকৃতি সেজেছে নিজের রূপে। আর প্রেমিকের মন রক্ষার্থে প্রেমিকা এসেছে প্রেমিকের গৃহে।

ঢাকা শহরের এক অভিজাত এলাকার সুউচ্চ অ্যাপার্টমেন্ট। লিফট দিয়ে উঠে এল রাজন আর সোমা। রাজন উত্তেজিত। সোমা নির্লিপ্ত। ম্রিয়মাণ। সোমাকে দেখেই মনে হচ্ছে ইচ্ছের বিরুদ্ধে এবং শুধু রাজনের অনুরোধ রক্ষার্থে সে এসেছে। স্বভাবসুলভ হাসি কিংবা দুষ্টুমি তার চেহারা থেকে উধাও। লিফট থেকে বের হয়ে তারা এসে দাঁড়াল একটা অ্যাপার্টমেন্টের সামনে। দরজা খুলে রাজন বলল, এসো।

সোমা ইতস্তত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইল। রাজন তার হাত ধরে আলতো করে টেনে ঘরের ভেতরে নিয়ে এল। সোমার পেছনে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে সবগুলো লাইট জ্বেলে দিল রাজন। সোমা মুগ্ধ হয়ে গেল রাজনের সুন্দর পরিপাটি অ্যাপার্টমেন্টের ভেতরের অঙ্গসজ্জা দেখে। ছবির মতো করে সাজানো সবকিছু। এক নজরে বসার ঘর, সোফা সেট, টিভি সেট, দেয়ালে টানানো পোর্ট্রেট, ফ্রেমে বাঁধানো ছবি— সবকিছুতেই আভিজাত্যের ছোঁয়া।

সোমার দিকে তাকিয়ে রাজন বলল, কেমন দেখছ?

সোমা মৃদু হাসল। অস্ফুটে বলল, সুন্দর! কিন্তু তার জড়তা কিছুতেই কাটছে না।

মেক ইয়োরসেলফ কমফোর্টেবল ইয়াং লেডি। ইটস ইয়োর হোম টু!

সোমা কিছু না বলে চারিদিকটা একবার ঘুরে দেখল। তারপর হেঁটে গিয়ে দাঁড়াল বড় জানালাটার পাশে। পর্দা সরিয়ে উঁকি দিল বাইরে। গোধূলি রঙে রাঙানো বিকেলটা হঠাৎ কেমন ধূসর হয়ে যাচ্ছে।

কফি খাবে? বাসায় ইনস্ট্যান্ট কফি আছে।

সোমা ফিরে তাকাল রাজনের দিকে। কফি খাব না। শুধু পানি। সে আবার তাকাল বাইরে।

রাজন দু’ কাপ কফি, এক গ্লাস পানি আর কিছু স্ন্যাকস একটা ট্রে-তে সাজিয়ে এনে রাখল সোফার সামনের কফি টেবিলে। সোমা এসে বসল সোফাতে। রাজন পানির গ্লাস এগিয়ে দিল সোমার হাতে। সোমা পানি খেয়ে নামিয়ে রাখল গ্লাস। দুজনেই কফি নিয়ে আস্তে করে চুমুক দিল। কিছুটা সময় চুপচাপ পার করে রাজন বলল, টিভি দেখবে? টিভি ছেড়ে দেই?

সোমা কিছু বলল না। সোমা এখনো সহজ হতে পারছে না।

আবারও নীরবতা। কিঞ্চিৎ অস্বস্তিকর। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রাজন বলল, কী ব্যাপার সোমা, একেবারে চুপ হয়ে গেলে যে!

এভাবে আমাকে এখানে নিয়ে আসাটা তোমার ঠিক হয় নি, রাজন। আমার ভালো লাগছে না। চলো, চলে যাই।

আহা, এত অস্থির হচ্ছ কেন? বসো না, তোমাকে একটু দেখি। এত কাছে থেকে দেখার সুযোগ যদি আর না হয়?

মানে?

তোমার সাথে একান্তে কখনোই কথা বলতে পারি না। সারাক্ষণ তোমার বন্ধুরা ঘিরে থাকে। এত রিকোয়েস্ট করে তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দেব ভেবে নিয়ে এলাম, আর তুমি শুধু যাই যাই করছ!

আচ্ছা, কী সারপ্রাইজ দেবে দাও, তবে তাড়াতাড়ি। আমাকে বাসায় ফিরতে হবে। নয়তো মা চিন্তায় অস্থির হয়ে যাবে।

রাজন ঘনিষ্ঠ হয়ে বসল। সোমার হাত থেকে কফির কাপটা নিয়ে রেখে দিল ট্রে-তে। আলতো করে ধরল তার হাত। সোমার হাত নিয়ে রাজন তার আঙুল দিয়ে ধীরে ধীরে স্পর্শ করল। সোমা কিছুই বলল না দেখে রাজন সাহসী হয়ে উঠল। সে অত্যন্ত সন্তর্পণে তার উষ্ণতার হাত দিয়ে সোমার শরীরের কিছু অংশে স্পর্শ করল।

সোমা চোখ বন্ধ করে আছে। রাজন ধীরে অতি ধীরে তার ঠোঁট নামিয়ে এনে স্পর্শ করল সোমার ঠোঁট। সোমা চোখ বন্ধ করেই রইল। রাজন সরে এসে তাকিয়ে রইল সোমার চোখের দিকে। কোনো রকম প্রতিক্রিয়া সে দেখতে পেল না। রাজন আবার কাছে এসে ছোঁয়াল ঠোঁট—এঁকে দিল গভীর চুম্বন। সোমার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এল। রাজন অনুভব করল সোমার উষ্ণ নিঃশ্বাস। তার অভিজ্ঞতায় বুঝতে অসুবিধা হলো না—সোমাকে নিয়ে এখন যা খুশি করা যায়। বাধা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখন ওর নেই। রাজন কালক্ষেপণ না করে অতি সন্তর্পণে সোমাকে পাজাকোলে করে নিয়ে গেল তার বেডরুমে।

বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রাজন জড়িয়ে ধরল সোমাকে—ভালোবাসার আলিঙ্গনে, নিবিড় করে। রাজন তার অবাধ্য হাত দুটো চালিয়ে দিল সোমার শরীরের স্পর্শকাতর অংশগুলোতে।

হঠাৎ করেই সোমা উঠে বসল। পরিস্থিতি অনুধাবন করে নিজেকে শংকুচিত করে ফেলল সে। রাজনকে বাধা দিয়ে বলল, প্লিজ, রাজন, এভাবে না।

রাজন অবাক চোখে বলল, না কেন?

আই অ্যাম নট রেডি ফর দিস।

হোয়াট আর ইউ টকিং অ্যাবাউট? রাজন ক্ষেপে গিয়ে বলল, তাহলে এসেছ কেন?

আমি ভেবেছিলাম—

কী ভেবেছিলে? রাজনের তীক্ষ্ণ কণ্ঠে ভয় পেয়ে শিউরে উঠল সোমা। সে কোনো উত্তর দিতে পারল না আর। বুঝে গেল জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটি সে করে ফেলেছে। অভিমানে তার চোখ ভিজে এল।

রাজন ধাক্কা দিয়ে সোমাকে শুইয়ে দিল আবার নরম ভেলভেটের বিছানায়। চড়ে বসল সোমার নরম শরীরের ওপরে। অসহায় সোমা ছটফট করতে থাকল রাজন নামক এক অন্যরকম পুরুষের ভিন্নরকম ভালোবাসার পরশে। নিষ্পেষিত হতে থাকল তার এতদিনের জমিয়ে রাখা অহংকার।

 

জানালার ফাঁক গলে রাস্তার আলো এসে পড়েছে রাজনের শোবার ঘরে।

বিছানায় শুয়ে আছে দুটি শরীর। সোমা আর রাজন। সোমা ফুলে ফুলে কাঁদছে। রাজন লক্ষ করল সোমার কান্না। সে ঘুরে সোমাকে টেনে নিল নিজের কাছে। হাত দিয়ে চিবুক স্পর্শ করল সোমার। আদুরে গলায় বলল, কাঁদছ কেন, সোমা? কী হয়েছে?

সোমা কিছু বলতে পারল না। সে নীরবে চোখ মুছে চলল।

রাজন আবার আদর করে সোমাকে টেনে নিল তার বুকে। বলবে না? 

সোমা নাক টেনে বলল, আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ, যা আমি বিয়ের রাতে তোমাকে উপহার দিতে চেয়েছিলাম— তা তুমি আগেই নিয়ে নিলে। এটা খুবই অন্যায় হলো।

রাজন খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল, আমার উপহার আমি নিয়েছি, কিছুদিন আগে এই যা, তাতে এত মন খারাপ করার কী আছে? আর আমি তো অন্য কেউ না, আমি সে-ই যাকে তুমি এই উপহারটা দিতে চেয়েছিলে। 

সোমা রাজনের বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে বসল বিছানায়। চোখ মুছে শীতল কণ্ঠে বলল, রাজন, আমার কিছু কথা আছে।

রাজন আধশোয়া অবস্থায় হাত ভেঙে হাতের ওপর মাথা রেখে বলল, বলো।

না, ওভাবে নয়। উঠে বসো।

রাজন উঠে বসল— মুখোমুখি। বলো, কী বলবে?

এভাবে আর কতদিন, রাজন? তুমি তো কিছুই বলছ না।

কী জানতে চাও?

জানতে চাই তোমার কমিটমেন্টের কথা— তোমার প্রতিশ্রুতির কথা। যা একটা মেয়ের সবচেয়ে বড় বিসর্জনকে অহংকারী করে তুলতে পারে।

রাজন সময় নিল সোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে। কী প্রতিশ্রুতি তুমি চাও বলো? সে ব্যাখ্যা দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল, তোমাকে আমি ভালোবাসি এর চেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি আর কী হতে পারে, সোমা?

সোমা স্থির এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। আমি চাই আমাদের ভালোবাসার পরিণতির প্রতিশ্রুতি।

বুঝেছি, বিয়ের কথা বলছ?

এভাবে লুকিয়ে ভালোবাসা-বাসি খেলতে আমার ভয় হয়।

কিসের ভয়, সোমা? বিয়ে তো আমি তোমাকেই করব। পাত্র হিসেবে আমাকে নিশ্চয়ই তোমার বাবা-মা অপছন্দ করবেন না। আফটার অল বিসিএস কোয়ালিফাইড।

তাহলে আমাদের বাসায় প্রস্তাব পাঠাও। আমাদের এনগেজমেন্টটা হয়ে থাক, তারপর আমার পরীক্ষা শেষ হলে বিয়েটা সেরে ফেলব। আমাকে নিয়ে মা ভীষণ চিন্তা করে, তুমি প্লিজ এ কাজটা করো। বোঝই তো, মেয়ে বড় হয়ে গেলে বাবা-মায়ের চিন্তার শেষ থাকে না।

ঠিক আছে প্রস্তাব পাঠাব। বোকা মেয়ে, বিয়ে হলেই তো সব আনন্দ শেষ, এমন লুকিয়ে প্রেমের মজাটা তখন আর পাওয়া যাবে না। বলতে বলতে রাজন সোমাকে আবার কাছে টেনে নেওয়ার জন্য হাত বাড়াল।

সোমা বাধা দিয়ে বলল, না, প্লিজ, আমাকে কথা দাও।

আচ্ছা দিলাম, কথা দিলাম। কিন্তু তার আগে তোমাকে একটা প্রমিজ করতে হবে।

কী সেটা?

আমি তোমাকে প্রতিদিন একবার করে দেখতে চাই—এখানে।

সোমা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল রাজনের মুখের দিকে। চোখে বিস্ময়!

এভাবে তাকিয়ে আছ কেন?

সেটা কী করে সম্ভব?

চাইলেই সম্ভব। এই যেমন, তুমি চেয়েছিলে বলেই আজ সম্ভব হয়েছে।

আমি চাই নি। পরাজিত কণ্ঠে বলল সোমা। আমি ভেবেছিলাম অন্যকিছু, কিন্তু তুমি যে—

সোমাকে কথা শেষ করতে দিল না রাজন। মুখে হাত চাপা দিয়ে জোর করেই টেনে নিল তার কাছে। রাজনের বাহুবন্ধনে ছটফট করতে থাকল সোমা।

 

সোমার মন ভালো নেই।

বেশ কিছুদিন হয়ে গেল, রাজনের দেখা নেই। ফোন ধরছে না। মেসেজেও রিপ্লাই দিচ্ছে না। কয়েকদিন হলো ওর ফোনে কলও যাচ্ছে না। প্রতিবারই শুনছে, দুঃখিত, কাঙ্খিত নাম্বারটিতে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। যে মানুষটা তাকে একদিন না দেখে থাকতে পারত না, আজ প্রায় দু’ সপ্তাহ হতে চলল, কোনো সাড়াশব্দ নেই তার। কী হলো মানুষটার?

দুশ্চিন্তা পেয়ে বসে সোমাকে। চোখজুড়ে হতাশা। বিষণ্নতায় ছেয়ে যায় তার মন।

 

রাজনের ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সোমা।

অনেকক্ষণ হলো ডোরবেল চেপেছে সে, কিন্তু কেউ খুলছে না দেখে আশপাশে তাকাল। সোমা নিশ্চিত—এটা সেই ফ্ল্যাটই। সেদিনের সব কথাই তার মনে আছে। কাজেই ভুল হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সে আবারও ডোরবেলে চাপ দিল।

দীর্ঘ সময় পার করে একজন অপরিচিত যুবক দরজা খুলে দিল। দরজার ফাঁক গলে সোমা লক্ষ করল, একজন স্বল্প বসনা মেয়ে এগিয়ে এসে দাঁড়াল যুবকের পাশে। যুবকের ঠোঁট এবং চিবুকে লিপস্টিকের দাগ। যুবক-যুবতীর রোমান্টিক টাইম-পাসের মধ্যে সোমা এসে পড়েছে কি-না কে জানে! সোমা কিঞ্চিৎ ধাক্কা মতো খেলো। সে দ্রুত চারিদিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল, সে কি ভুল জায়গায় এসে পড়েছে? দরজার ফাঁক গলে যতটা দেখা গেল, ভেতরের সবকিছুই তার পরিচিত মনে হলো। 

যুবকের প্রশ্নবোধক দৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে সোমা বলল, রাজন আছে?

রাজন তো এখানে থাকে না।

এটা রাজনের ফ্ল্যাট না?

না, এটা লিটনের ফ্ল্যাট! বলেই বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমির হাসি দিল ছেলেটি।

সোমা ভুরু কুঁচকে বলল, মানে?

না না কিছু না। সরি, এটা রাজনের ফ্ল্যাট না।

ও এখানে থাকে না? সোমা দ্বিধায় পড়ে গেল।

না। এটা আসলে আমাদের এক বন্ধুর বাসা। মাঝে মাঝে আমরা এসে সময় কাটাই। ছেলেটি তার বান্ধবীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল আবার। তারপর সোমার দিকে ঘুরে সৌজন্য রক্ষার্থে বলল, আসুন, ভেতরে আসুন।

না, ঠিক আছে। ভেতরে আসতে হবে না। সোমা ইতস্তত কণ্ঠে আবার বলল, রাজন কোথায় আছে বলতে পারেন?

উত্তর না দিয়ে যুবক পাল্টা প্রশ্ন করল, কিছু যদি মনে না করেন, আপনি কি সোমা?

হ্যাঁ। কেন বলুন তো?

রাজন কোথায় আপনি জানেন না?

সোমা বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, না।

আপনাকে কিছু বলে যায় নি?

কেন, কোথায় গেছে রাজন? সোমার কণ্ঠে ভয় এবং শঙ্কা ফুটে উঠল পরিষ্কারভাবে।

যুবক আবার তাকাল তার বান্ধবীর দিকে। তারা চোখ চাওয়া-চাওয়ি করল। সোমার দিকে ঘুরে বলল, আপনি কিছুই জানেন না?

না। সত্যিই কিছু জানি না। সোমা ভয় পেল। ভয়ংকর কিছু শোনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করল।

ও তো আমেরিকায় চলে গেছে। গত সপ্তাহে।

অস্ফুটে বলল সোমা, জি?

আপনি জানেন না? আশ্চর্য! ছেলেটি আরও অনেক কিছুই বলল কিন্তু সোমার কানে সে-সব কোনো কথাই আর ঢুকল না। হঠাৎ করে তার মাথাটা ঘুরে উঠল। মনে হচ্ছে এখনই সে পড়ে যাবে। দেয়াল ধরে নিজেকে সামলে নিল। একটু স্থির হয়ে কোনোরকমে নিজেকে সংযত করে বলল, সরি আপনাদের ডিস্টার্ব করলাম। আসি।

সোমা যত দ্রুত সম্ভব হেঁটে গিয়ে লিফটের বাটনে চাপ দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল।

সোমা উদ্ভ্রান্তের মতো হাঁটছে। তার পা এলোমেলো। সমানে ঘামছে। তার চোখ ফেটে কান্না বের হয়ে আসছে। শত চেষ্টা করেও আটকে রাখতে পারছে না কান্নার অঝোরধারা। সোমার ইচ্ছে হচ্ছে নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে। বুকের ভেতর চাপা কষ্ট উথাল-পাথাল সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়ছে। তার এমন লাগছে কেন?

 

গভীর রাত। 

সোমার ঘুমের সমস্যা দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে। কিছুতেই ঘুম আসে না। প্রায় রাত সে নির্ঘুম কাটায়। সারা দিন মাথা ধরা নিয়ে দিন কাটে তার। গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে সোমা বসে আছে তার ঘরের বারান্দায়। তার শীত শীত লাগছে একটু। এমন সময় সোমার ফোন বাজল। এত রাতে কে ফোন করতে পারে ভাবতে ভাবতে সে ঘরে এসে ফোন ধরল। ফোনের কোনো নাম্বার উঠে নি। সে ফোন ধরে বলল, হ্যালো?

অপরপ্রান্ত থেকে একটা পুরুষ কণ্ঠ ভেসে এল। কণ্ঠস্বর চিনতে সোমার কষ্ট হলো না মোটেও—অনেক পরিচিত কণ্ঠ। সোমা চুপ করে রইল। হঠাৎই তার শরীর কেঁপে উঠল। নিজেকে স্থির রাখতে কষ্ট হচ্ছে।

সোমা, আমি রাজন।

সোমা খুব স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল, বলো শুনছি।

তুমি কি জানো আমি এখন কোথায়?

কোথায়?

নিউইয়র্কে।

ও। সোমা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে চুপ করে রইল। 

আমি জানি, তুমি কী ভাবছ।

কী ভাবছি?

ভাবছ, কেন আমি এমন করলাম?

সোমা কিছুই বলল না।

রাজন আবার বলল, আমি জানি তুমি আমাকে ঘৃণা করছ। আর সেটাই স্বাভাবিক।

আবারও নীরবতা। কিছু সময় নিয়ে রাজন বলল, আজীবন লালিত স্বপ্ন পূরণের স্বার্থে তোমার সাথে বড় ধরনের একটা অন্যায় করেছি সোমা। আমি যা করেছি তার কোনো ক্ষমা নেই জানি, তবুও যদি পারো আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো।

আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। সোমা আক্ষেপের কণ্ঠে বলল, আমার কষ্ট একটাই—আমি আমার সবকিছু দিয়ে একজন ভুল মানুষকে ভালোবেসেছিলাম। তুমি অন্তত নিজের কাছে সৎ থাকতে পারতে।

রাজন কিছু বলতে পারল না। কিছু বলার মতো মনের জোর তার নেই—থাকার কথাও না।

সোমা শীতল কণ্ঠে বলল, ক্যান ইউ ডু মি অ্যা ফেভার?

রাজন আগ্রহ নিয়ে বলল, বলো?

ভবিষ্যতে আমাকে আর কখনো ফোন করবে না। যোগাযোগেরও চেষ্টা করবে না। অন্তত এই সম্মানটুকু আমায় দিয়ো।

রাজন চুপ করে রইল। সোমাও চুপ। দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ ভেসে এল শুধু। হঠাৎ করেই ফোনটা কেটে দিল সোমা। মূর্তির মতো বসে রইল কিছুক্ষণ। তারপর কান্নায় ভেঙে পড়ল—ফুলে ফুলে কাঁদতে থাকল সে।

 

অনেকক্ষণ কোনো কথা বলতে পারল না ইমরান।

অনেক ভেবেও সোমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পেল না সে। চুপ করে কাঁদতে দিল কিছুক্ষণ। সোমার জীবনের এই অন্ধকার দিকটার কথা জানার পর থেকে সোমার প্রতি ওর মমতা আরও বেড়ে গেল। মেয়েটি এভাবে কষ্ট পাচ্ছে! আহারে!

কান্নাটা একটু ধরে এলে সোমা বলল, ওইদিন প্রথমবারের মতো সত্যি সত্যিই বুঝলাম, রাজন চলে গেছে। অথচ, ওর ফোন আসার একমুহূর্ত আগে পর্যন্ত আমি কারও কথাই বিশ্বাস করি নি। অ্যান্ড দেন আই অ্যাকচুয়ালি রিয়ালাইজড ইট ওয়াজ ওভার ফর গুড!

ইমরান বলল, আমি ভাবতেই পারি না, তোমার মতো একটা মেয়ের সাথে কীভাবে কেউ এমন প্রতারণা করতে পারে?

সোমা কিছু বলল না। আয়ত চোখে তাকাল ইমরানের মুখের দিকে। শূন্য দৃষ্টি।

এই তো কয়েকদিন আগের কথা। সেদিন সকালে সোমা রান্নাঘরে সাহায্য করছিল তার মাকে। হঠাৎ ডোরবেল শুনে দরজা খুলে সোমা দেখল—ঝাঁকড়া চুলের একহারা লম্বা গড়নের এক সুদর্শন যুবক দাঁড়িয়ে আছে। কিছুদিন আগেও যুবকটি এসেছিল একবার—ওর ভাই শাহেদের সঙ্গে। দুজনকে দেখেছে নিচুস্বরে কথা বলতে—যেন কোনো গোপন পরামর্শ করছে। চোখেমুখে অস্থিরভাব এবং উত্তেজনা। কাকতালীয়ভাবে একটা প্রতারক চক্রের প্রতারণার শিকার হয় শাহেদ আর ইমরান। এবং ঘটনাক্রমে ওদের পরিচয় এবং সেই সূত্রে বন্ধুত্ব।

প্রথম দেখাতেই সোমাকে পছন্দ হলো ইমরানের। কেমন মায়াকাড়া মুখশ্রী। শান্তস্নিগ্ধ জ্যোতি। এরপরে যতবারই এসেছে, সোমার সঙ্গে দেখা হয়েছে—কথাও। এত সুন্দর মুখের একটি মেয়ে, এত সুন্দর হাসি, তবুও কোথায় যেন একটা বিষণ্নতার ছায়া লুকানো। ইমরানের খুব ইচ্ছে হলো মেয়েটি সম্পর্কে জানতে। সে বলল, একটা কথা জিজ্ঞেস করি, ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড।

করুন।

আপনি সবসময় ডিপ্রেসড থাকেন কেন? ইজ এনিথিং রং?

নাথিং রং।

ইট একচুয়ালি, ডাজনট গো উইথ ইউ।

এক্সকিউজ মি?

তোমার চেহারায় বিষণ্নতা মানায় না। সরি, মানে আপনার চেহারায়।

তাই? কী মানায় আমার চেহারায়?

ইমরান আর কিছু বলতে পারল না। শুধু নীরবে তাকিয়ে রইল সোমার মুখের দিকে।

আমাকে তুমি করে বলায় আমি কিছু মনে করি নি। বলেই সোমা চলে গেল ভেতরে। ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মায়ায় মোড়ানো তীব্র এক টান অনুভব করল ইমরান।

সোমার শূন্যদৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ইমরান বলল, আমার কী মনে হয় জানো? আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে প্রতারিত হচ্ছি। কে জানে, এটাই হয়তো নিয়ম।

সোমা দৃষ্টি সরিয়ে তাকিয়ে রইল সম্মুখ পানে।

একটু সময় নিয়ে ইমরান বলল, সবার জীবনে কিছু স্বপ্ন থাকে। কারোটা পূরণ হয়, কারোটা ভেঙে যায়। তাই বলে জীবন তো থেমে থাকে না। লাইফ গোজ অন। একটা মেয়ে যখন কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, সে তখন নিজের মধ্যে হারিয়ে যায়। তার সমস্ত চিন্তা-ভাবনা ওই সম্পর্কের আবর্তে ঘুরপাক খায়। দ্যাট ক্যান বি ডেঞ্জারাস সামটাইম।

দীর্ঘ সময় চুপ করে থেকে ইমরানের কথা শুনেছে সোমা। এবার সে সাড়া দিয়ে বলল, কেন?

কেননা, ওই সম্পর্কের বাইরে সে আর কিছুই ভাবতে পারে না। ইমরান অনুশাসনের সুরে বলল, ওই ঘূর্ণির বলয় থেকে তোমাকে বের হয়ে আসতে হবে সোমা।

কীভাবে? প্রশ্ন করে সোমা তাকিয়ে রইল ইমরানের মুখের দিকে।

কীভাবে? ইমরান থেমে থেমে বলল, একদিন ঘুম থেকে উঠে সারা দিনের জন্যে পেছনের কথা ভুলে যাবে। ভুলে যাবে যে মানুষটাকে বিশ্বাস করে মনে প্রাণে ভালোবেসেছিলে, তার কথা। একটা দিন কাটিয়ে দেবে, তার কথা একবারের জন্যেও মনে করবে না। তারপরের দিন দেখবে, তুমি একজন নতুন মানুষ। দেখবে, তার কথা না ভেবেও বেঁচে থাকা সম্ভব।

তারপর?

তারপর আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে, নিজেকে দেখবে, সুন্দর করে হাসবে। আয়নার মধ্যে আবিষ্কার করবে একজন নতুন সোমাকে।

সোমা দু’হাত ভাঁজ করে ঘুরে দাঁড়াল। তারপর বলল, আয়নার সামনে দাঁড়াব, নিজেকে দেখব, সুন্দর করে হাসব—তারপর নিজেকে আবিষ্কার করব নতুনভাবে। ইজ ইট দ্যাট সিম্পল?

ইট ইজ!

সোমা অবাক চোখে দেখল ইমরানকে। তারপর বলল, ভাবতে অবাক লাগে, আপনার মতো এমন স্মার্ট ছেলেও কীভাবে ভুল করে, প্রতারিত হয়?

উত্তরে ইমরান বলল, জীবনে আমরা সবাই ভুল করি। কেউ বুঝে, কেউ না বুঝে। সবাই কোনো না কোনোভাবে ঠকি। বিশ্বাস করি, আবার ঠকি। আই গেস, ইটস অ্যা পার্ট অফ লাইফ।

ইমরানের কথাগুলো দার্শনিকের মতো শোনালেও একরাশ মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিল সোমার মনে।

শোবারঘরের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সোমা। তার দ্যুতিময় শান্ত চোখে, অপলক তাকিয়ে আছে সে। গভীরভাবে দেখছে নিজেকে।

সোমা সুন্দর করে সেজেছে। পরিপাটি করে চুল আঁচড়েছে। চোখে কাজল, কপালে লাল টিপ। ঠোঁটে লিপস্টিক। নিজেকে দেখতে দেখতে সে হারিয়ে গেল ইমরানের কথায়। ইমরান বলেছিল, আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে, নিজেকে দেখবে, সুন্দর করে হাসবে। আয়নার মধ্যে আবিষ্কার করবে একজন নতুন সোমাকে। 

সোমা হাসল। তার সব মন খারাপের মেঘ এক নিমেষে উড়ে গেল। সে ভুলে গেল তার পেছনের কথা। ভুলে গেল রাজন নামে কোনো ছেলেকে সে ভুল করে ভালোবেসেছিল। ভালোবেসে বিসর্জন দিয়েছিল তার অহংকারটুকু। দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থেকে সত্যি সে দেখল একজন নতুন সোমাকে।

 

Leave a Reply

Your identity will not be published.