আগামী ২০ মে মুক্তি পাচ্ছে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘পাপ পুণ্য’। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের নতুন এক ইতিহাস গড়তে চলেছে এ সিনেমা। ‘পাপ পুণ্য’ বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা, যেটি প্রথমবারের মতো দেশের বাইরের শতাধিক প্রেক্ষাগৃহে একযোগে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। একই দিনে বাংলাদেশের পাশাপাশি উত্তর আমেরিকার ১০৪টি এবং কানাডার ৮টি প্রেক্ষাগৃহে আসতে যাচ্ছে সিনেমাটি। অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়াতেও ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে।
গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ছবিতে খুঁজে পাওয়া যায় বাংলাদেশের আত্মাকে। তাঁর ছবিতে যেমন চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক ভাষা মূর্ত হয়ে ওঠে, তেমনই তা জাতীয় শিল্পরূপও। এ যে বাংলাদেশের ছবি, তার নানা উপাদান ছড়িয়ে থাকে ছবিজুড়ে। ‘মনপুরা’ ছবির কথাই ধরা যাক। এখানে সোনাই ও পরী যেভাবে হৃদয়ের কথা বলে, যে ভঙ্গিতে বলে, সেখানে আবহমান বাংলাদেশ কথা কয়ে ওঠে। এমনকি গানের মাঝেও তার ছাপ রয়েছে। অন্যদিকে ‘স্বপ্নজাল’-এ শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চিত্রও উঠে এসেছে। এ হলো ট্রাভেল মুভি। এর কাহিনি ভ্রমণ করে চাঁদপুর, কলকাতা ও আগরতলায়। বলাই বাহুল্য, ‘স্বপ্নজাল’ও একটি প্রেমের ছবি। পাশাপাশি একটি বক্তব্যও এখানে ফুটে ওঠে- যে বা যারা অন্যায় করে প্রকৃতি তাকে শাস্তি দেয়। আবার ‘গুণিন’-এ গ্রামবাংলার চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে এই ধরনের চরিত্র- গুণিনদের দেখা মেলে এই জনপদের শুরু থেকেই। তাদের মধ্যে যে রহস্যময়তা, অন্য ধরনের ব্যাপার-স্যাপার সেটি এ ছবিতে উঠে এসেছে। আর এটি অতি প্রাকৃত প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্রও।
‘পাপ পুণ্য’ গিয়াস উদ্দিন সেলিমের চতুর্থ চলচ্চিত্র। এখানে পরিবারের গল্প রয়েছে; রয়েছে হৃদয়ঘটিত উপাখ্যান। সন্তানের সঙ্গে মায়ের গভীর সম্পর্ক। নারীদের অন্তরের ছবি। পাপ-পুণ্য সম্পর্কে মানুষের বোধ।
‘পাপ পুণ্য’-এ অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, আফসানা মিমি, ফজলুর রহমান বাবু, ফারজানা চুমকি, মামুনুর রশীদ, সিয়াম আহমেদ, গাউসুল আলম শাওন, শাহনাজ সুমিসহ আরও অনেকে।
সিনেমাটির মধ্য দিয়ে ‘মনপুরা’র এক যুগ পর একই সঙ্গে কাজ করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম ও চঞ্চল চৌধুরী। চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে প্রথমবারের মতো স্ক্রিন শেয়ার করেছেন সিয়াম। এই ছবির মাধ্যমেই বহু বছর পর চলচ্চিত্রে প্রত্যাবর্তন করলেন আফসানা মিমি।
‘পাপ পুণ্য’ সম্পর্কে পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ভাষ্য হলো, ‘সিনেমাটি বিশ্বব্যাপী মুক্তি পাচ্ছে, পরিচালক হিসেবে এটা আমার জন্য অনেক আনন্দের। এটা মূল ধারার সিনেমা, সব শ্রেণির মানুষের জন্য। এটি কোনো কমিউনিটি শো না। চলচ্চিত্রের এই দুর্দিনে এমন ছবির দরকার যা পাপ পুণ্যের মতো। আগের ছবিগুলোর চেয়ে এটি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে বানানো হয়েছে।’ দীর্ঘদিন পর চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে কাজ করছেন এ পরিচালক। এ নিয়ে তিনি বলেন, “পাপ পুণ্য’তে একজন পরিণত বয়সী মানুষের চরিত্রে চঞ্চল অভিনয় করেছে। চঞ্চল সবসময় ভালো কাজ করে। পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে চঞ্চল সেটে আসে। মনপুরা সিনেমা থেকে পাপ পুণ্যতেও সে নিজের গতিতেই রয়েছে। আমার ধারণা, পাপ পুণ্যে তার অভিনয় দর্শক খুব পছন্দ করবেন।”
১৬ মে ‘পাপ পুণ্য’-এর মুক্তি উপলক্ষে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইমপ্রেস টেলিফিল্মের পক্ষে তেজগাঁওস্থ চ্যানেল আই ভবনে ‘শুভমুক্তির শুভক্ষণ’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এখানে উপস্থিত ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী, আফসানা মিমি, মামুনুর রশীদ, সিয়াম আহমেদ এবং শাহনাজ সুমি। এখানে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘আমি সবসময় চলচ্চিত্রে ভিন্ন ধরনের চরিত্রে কাজ করতে পছন্দ করি। এই ছবির চরিত্রটিও তেমন। এখানে আমি আমার বয়সের চেয়ে একটু বেশি বয়সের চরিত্রে অভিনয় করেছি। কাজটি আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি মনে করি, পাপ পুণ্য মনপুরার চেয়ে কম নয়, বরং অনেক ভালো ছবি। একটি আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র।’
আফসানা মিমি বলেন, ‘গিয়াস উদ্দিন সেলিম আমার বন্ধু। ওর লেখা প্রথম নাটকে যেমন আমি অভিনয় করেছি, তেমনই ওর পরিচালিত প্রথম নাটকেও আমি অভিনয় করেছিলাম। পাপ পুণ্য-র মতো ছবির মাধ্যমে আবার চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে আমার ভালো লাগছে। চঞ্চল চৌধুরীর মতো গুণী অভিনেতার সঙ্গে এবার কাজ করেছি, এটাও আমার ভালোলাগার আরেকটি বিষয়। আর তারুণ্যের প্রতীক, সম্ভাবনাময় শিল্পী সিয়ামের সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারটিও ছিল ভীষণ আনন্দের।’
সিয়াম আহমেদ বলেন, ‘বড়পর্দায় যাঁদের অভিনয় দেখে বড় হয়েছি, তাঁদের সঙ্গে এ ছবিতে কাজ করাটা আমার জন্য ছিল ভীষণ সৌভাগ্যের। অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এ আমার চিরদিন মনে থাকবে। এ ছবিতে কাজ করে আমার স্বপ্নের শিল্পীদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। অনেকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক গভীর হয়েছে। যেমন আগে চঞ্চল চৌধুরীকে আমি “চঞ্চল ভাই” বলতাম, এখন বলি “চঞ্চল কাকা”। একসঙ্গে তাঁর সঙ্গে আমি অভিনয় করেছি, এতে আমাদের দুজনের ভক্ত-অনুরাগীরাই খুশি হয়েছেন নিশ্চয়ই। ফলে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক বাড়বে, কমবে না। তাই আমাদের দুজনকে একসঙ্গে কাস্ট করার বিষয়টি একটি ভালো উদ্যোগ নিঃসন্দেহে।’
মামুনুর রশীদ জানান, এ ছবিতে তিনি একজন এমপি’র চরিত্রে অভিনয় করেছেন। আর সাধারণত গিয়াস উদ্দিন সেলিমের কাছ থেকে কোনো কাজের প্রস্তাব পেলেই কাজ করতে রাজি হয়ে যান তিনি। এ ছবির ক্ষেত্রেও তা ব্যতিক্রম হয় নি। তিনি আরও বলেন, এ ছবির আউটডোর লোকেশন ছিল চাঁদপুর। খুবই সুন্দর লোকেশন। সেখানে বড়োই আনন্দের সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁরা।
শাহনাজ সুমি বলেন, ‘আমি দর্শক হলে এ ছবিটি হলে গিয়ে তিনবার দেখতাম। সেক্ষেত্রে আমার প্রত্যাশা, দর্শকেরা অন্তত একবার হলে গিয়ে ছবিটি দেখবেন।’
Leave a Reply
Your identity will not be published.