সাকিরা পারভীন-এর কবিতা

সাকিরা পারভীন-এর কবিতা

১.

একদিন তুমিও জিজ্ঞেস করো আমি কেমন আছি যেমন কিছুদিন পর পর কোনো অজানায় আমি একটি প্রশ্ন ছুড়ে দিই তুমি কেমন আছ তুমি তার সবথেকে প্রাচীন সোজাসাপ্টা সরল-সুন্দর উত্তর পাঠিয়ে দাও ভালো ভালো আছি আমি তোমার পাঠানো উত্তরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে দেখি মথ দেখি লাল একটা পাঞ্জাবির গতিপথ দেখি ক্রমাগত রেশমের বাহাদুরি সুতোর দরজা খুলে কবরের দেয়াল বানাতে মনোযোগী

২.

পা ডেবে যাচ্ছে যা ডেবে যাচ্ছে পা আর আমি আমি তুমি তুমি মিলে ডুবিয়ে দেয়া পা তুলে তুলে পুনরায় পানিতে জলে কাদায় পা ডুবিয়ে ডুবিয়ে যেন যতদূর যাওয়া যায় ততদূর দৌড়াচ্ছি যেন কিছু ছিটেফোঁটা আমাদের গা ভিজিয়ে দিচ্ছে আর আমরা দৌড়ে যাচ্ছি কৃষকের বুকের ম্যারাথনে গোলাভর্তি ইঁদুরের ঝাঁকে যেন ঢেলে দিতে পারি কালাবিষ

৩. 

ইটখোলাটার কথা মনে পড়ে প্রথম গাঁথুনির পর পোড়ানোর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পর খুব ঝড়-বৃষ্টি মাটির ময়ানগুলো গলে গলে বহুদূর চলে গিয়েছিল সমস্ত পাথর-ইটের সম্ভাবনা ধুয়ে গেল ফজর আলীর ভাই সেইসব গলিত ইটের মাটি কলার পাতায় তুলে শুকাতে দিতেন রোদে শৈশবকে বলতেন এসো আমরাও যেতাম ইটখোলার স্তূপে সাজানো সবুজ কলাপাতা লাল পিঁপড়ের বাসা প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুসের চলন তখন থেকেই যেন পুড়ে পুড়ে মহাশূন্যের দিকে যেতে যেতে নিশ্চিহ্ন হয় তখন গৃহস্থ বাড়িতে মাইনদার ছেলেগুলো বিশ^স্ত ছিল খুব যেমন ছিলেন ফজর আলী

৪.  

কেমন থকথকে একটা ঘন জঙলার মতন বন যেরকম পুকুরের বুকের ওপর চেপে বসে থাকে রোদ পোহাতে দেয় না একটা সবুজ আস্তরণে ঢেকে যায় মাঝে মাঝে কোনো কোনো মরা ডাল চুপ করে পড়ে ডুবে সামান্য ভেসে ওঠে কয়েকটি সরু পথ সিঁথির সিঁদুরের মতন খানিক গিয়ে থেমে যায় রেখাটাকে না থামিয়ে চলে যায় বহুদূর ধুধু মাঠ প্রান্তর পেরিয়ে সেরকম থাকি তুমি যদি জিজ্ঞেস করো কীরকম আছি আমি সেই কথাটাই বলি বলি করে বলতে পারি না বলার মতন কোনো অক্ষরে যথাযথ শব্দ ধরে না বাক্যরা ব্যাকরণে সুগঠিত হয় না তাই আয়োজনে দরজাটায় আঁকা আলপনাটাকে কোনো কল্পনার ছোঁয়াও লাগে না কেমন যে আছি বলা হয় না

 

৫. 

আরো অনেকগুলো কবিতা লেখার কথা ভাবি কবিতাগুলো দিন-রাত আমার সঙ্গেই থাকে কবিতাগুলো তোমার মাধ্যমে এদিক-সেদিক ঘুরতে থাকে যেরকম তুমি আর কোনোদিন এই পথে আসতে পারবে না সেরকম করে কবিতাগুলোর পথ কেটে যায় কিন্ত যেরকম না দেখা পথের দেয়াল ভেঙে তুমি আমার বালিশে মাথা রাখো আমিও তোমার বালিশে কান পেতে সেরকম লিখতে পারি না তবুও কিন্তু এবং অতএব অনেকগুলো সর্বনাম পদের মতন তোমাকে লিখতে চাই পারি না শুনেছি এখন নিজেই হালের বলদ হয়ে মাটিতে আবাদ শুরু করেছ শুনেছি কোনো গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ-হেমন্তের পরোয়া করো না তাহলে দাঁড়াও একবার শুনে যাও জানো কী লিখি তোমায়

 

৬. 

তোমাকে হারানোর বিবিধ কারণ মেঘ বৃষ্টি ঝড়ো আবহাওয়া জলোচ্ছ্বাস পথভর্তি কাঁকর ঘরে চাল নেই-এর মতন কোনো কোনো অকারণ কখনো কিচ্ছু নয় বলেই পাওয়া হয় না কখনো কাছে না যেতেই ঘুরে যায় মহাকাল অথচ প্রতি পক্ষকাল ধরে তোমার নাই হয়ে যাওয়া সয়ে নিই নিশ্চিত জানি রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে উঠবেন শাহানা বাজপেয়ী তোমার খোলা হাওয়ায় অথচ কী জানো প্রতিটি পূর্ণিমাই আলাদা আলাদা উদ্যাপনের সমস্ত আয়োজন করা থাকে কেবল কোন ফাঁকে তুমি চুরি হয়ে যাও

৭.

এখন আমি কী করব যে কটা দিন বাকি আছে তুমি করো এক কাজ করো দরজার হাতল ধরে দাঁড়িয়ে থাকো আর কোনোখানে যেও না বিছানা পেতে দিছি বসো স্তানিস্লাভস্কির মেথড অভিনয় প্রাকটিস করো জাদুর যদিতে ফেলে দাও তুমি তোমার অন্দরমহল নদী আছে নদীকাটা জাদু তুমি তোমার অন্তর্গত সিত্রাং বিরামহীন বালিয়াড়ি ভাবনার গুড়ো পিঁপড়ে খেয়ে যাবে আর ওইসব বাসী বাতাসায় চিনি থাকে হাওয়াও তদ্রুপ চিবিয়ে খেতে গেলেই বিস্বাদের বনমোরগ ডেকে উঠবে বনে কুরুক্কু কু কু শা শা অ্যাশ্শা...

৮.

না এইটুকু তারপর থেকে বহুবার জানতে চেয়েছিলে কেন কী হলো কোথায় ঘটনাটি কখন ঘটেছে সেই একই উত্তর না না বলে ফেরত দিয়েছে অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ কি না কেননা বলে যেতে না বললেই সবকিছু হয়ে গেল না না মানে তারও তো একটা পর থাকে একটা হুইস্ল না হোক একটা বাঁশি তাতে কোনোখানে লেখা না-ই বা থাকুক ভালোবাসি এসবের আর কোনো মানেই হয় না যদিও তবু না বলো না চোখের পক্ষ্ম বুজে থাকো চুপ চুপ করে কোনো উত্তর প্রত্যাশা কোরো না।

৯.

সন্তানের না থাকা না থাকা নিয়ে প্রশ্ন উচ্চারিত হলে আমি একটানে বলে দিই নেই তাতে প্রতিপক্ষ সন্তুষ্ট হয় না কেন হয়নি কী হয়েছিল পূর্ণিমা নাকি অমাবশ্যার দোষ শুক্রাণু ডিম্বাণুর হিসেব আমি অবশ্য ক্লান্ত হই না বিবিধ কায়দায় না পারার কৈফিয়ত দরদ সহকারে দিই দরুদের মতন পড়তে থাকি আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহাম্মাদিউ ওরা তা শোনে না এই তো সেদিন এক নব্য পরিচিতা পড়ে থাকা ধূলির বাজিমাত সাজিয়ে দেয় কোলে তবু মরণের মতো ছলেবলে কৌশলে পেয়ে যাই অমৃতের খোঁজ মাতৃত্বের ভয়ে মরে থাকি অজানা নক্ষত্রের মতো যদিও জীবনানন্দ নই তবু রোজ ভাবি কিনা এক আলোকবর্ষ পথ কতদূর কতদূরে গেলে কেউ আর হিসেবের তালপাখা কেবল গ্রীষ্মেই বাজাবে না বৃষ্টির গান আষাঢ় এসেও আসি আসি করে মরে পড়ে থাকবে পথে কোনো উত্তরের কিনারা পাবে না

১০.

বহুদিন পর কোনো স্বজনের সাথে দেখা হলে তারা তোমার ভালো-মন্দের দামদর জানতে চাইবে প্রথমেই তোমার পরিচয় মানে তারপর বউ স্বামীর বেতন সস্তানাদি গবাদি পশু এইসব কেন ফিরিয়ে দিলে এই প্রশ্নের যুতসই উত্তর খুঁজতে তুমি চলে গেছ চাঙ্খারপুলে সেখানে তো কবেই মরে ভূত হয়ে গিয়েছেন আজম খান কেউ তা জানে না এমনকি সখিনাও তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল তুমি আমায় ফিরিয়ে দিলে কেন তারপর নানান জনসভায় এই মত প্রচার করে বেড়াচ্ছ প্রত্যাখ্যানের মহত্তম দিকগুলো আমি কেবল দিকশূন্য কি খুঁজে মরি

 

Leave a Reply

Your identity will not be published.