ইউরোপের দেশে দেশে সাদাত হোসাইন সংবর্ধিত

ইউরোপের দেশে দেশে সাদাত হোসাইন সংবর্ধিত

‘সব ঠাঁই মোর ঘর আছে, / আমি সেই ঘর মরি খুঁজিয়া, / দেশে দেশে মোর দেশ আছে, / আমি সেই দেশ লব যুজিয়া।’-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

এ সময়ের তরুণ কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইনের তুমুল জনপ্রিয়তার কথা আমরা জানি। গত কয়েক বছর ধরে বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আমরা প্রত্যক্ষ করেছি বিষয়টি। অন্যপ্রকাশসহ কয়েকটি প্রথম সারির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়নে সব শ্রেণির পাঠকেরা ভিড় জমিয়েছে, লাইন ধরে কিনেছে সাদাতের বই এবং সেইসব বইয়ে হাসিমুখে অটোগ্রাফ দিয়েছেন এই তরুণ কথাসাহিত্যিক। একই চিত্র গত দুই বছর দেখা গেছে কলকাতায়, বাংলাদেশ বইমেলায়। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলাতেও। সেখানেও দেখা গেছে, পাঠকদের সারিবদ্ধ দীর্ঘ লাইন। বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের বাইরেও সেই লাইন ছড়িয়ে পড়েছিল। ভারতের ত্রিপুরাতেও দেখা গেছে সাদাত হোসাইনের এমনই পাঠকপ্রিয়তা।

কিন্তু সাদাত হোসাইনের অনুরাগী পাঠকেরা কি শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সীমাবদ্ধ? না, এই তরুণ কথাসাহিত্যিকের পাঠক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের যেখানেই বাংলা ভাষাভাষী পাঠকেরা রয়েছেন, সেখানেই সাদাতের জয়জয়কার। গত বছর দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ বইমেলা’য় বই কেনা এবং তার সঙ্গে কথা বলার জন্য পাঠকদের গভীর আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। একই দৃশ্য দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়ায়, যখন একটি বেসরকারি সংগঠনের আমন্ত্রণে সাদাত সেখানে গিয়েছিলেন।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও সাদাত হোসাইনের বিশাল পাঠকগোষ্ঠী রয়েছে। সেখানকার বিভিন্ন বাঙালি পাঠক সংগঠন সম্প্রতি সাদাত হোসাইকে সংবর্ধনা জানায়। ইতিমধ্যে তিনি নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, জার্মানি এবং ফ্রান্সে ভ্রমণ করে ফেলেছেন। এরপর তিনি যাবেন সুইজারল্যান্ড এবং ইতালি। রোম থেকে তিনি ঢাকা প্রত্যাবর্তন করবেন।

বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে গিয়েছিলেন সাদাত হোসাইন। সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত সুধীজনদের সঙ্গে কথা বলেন; মতবিনিময় করেন। সাদাত হোসাইন সেখানকার প্রবাসীদের অপার ভালোবাসা এবং তার প্রতি প্রদর্শিত সম্মানে অভিভূত হয়ে পড়েন। এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মাহ্বুব সালেহ্-এর তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকাও ছিল প্রশংসনীয়।

২৭ এপ্রিল সাদাত হোসাইনকে সংবর্ধনা দিয়েছে ফ্রাঙ্কফুর্ট এবং জার্মানির বিভিন্ন এলাকার সাহিত্যপ্রেমী প্রবাসী বাংলাদেশিরা। একটি হলে এই সংবর্ধনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় লেখককে স্বাগত জানিয়ে প্রবাসী সাহিত্যপ্রেমীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব হাফিজুর রহমান আলম এবং জার্মান প্রবাসী কবি দিলশাদ জাহান খান ও ব্লগার লেখক আমিনুল হক।

কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন তার জীবনের গল্প শোনান, কীভাবে তিনি লেখক হয়ে উঠলেন, তার ছেলেবেলা, তারপর ঢাকায় এসে জীবন-সংগ্রাম এবং লেখক হয়ে ওঠার বিভিন্ন পর্যায়ের নানা দিক তিনি তার বক্তব্যে তুলে ধরেন। তার কথাগুলো মনোযোগী ছাত্রের মতো প্রবাসীরা মুগ্ধ হয়ে শোনেন। সাদাত প্রবাসীদের সঙ্গে আড্ডা আর গল্পে মেতে ওঠেন। অল্প সময়েই প্রবাসীদের আপন করে নেন। অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন প্রবাসী কবি মায়েদুল ইসলাম তালুকদার এবং হাফিজুর রহমান আলম। গান পরিবেশন করেন নিম্নি কাদের।

২৮ এপ্রিল প্যারিসে সংবর্ধিত হন সাদাত হোসাইন। এই আয়োজনটি ছিল বিশাল। প্রবাসী বাংলাদেশি পাঠকদের ভালোবাসা সাদাত হোসাইনকে মুগ্ধ করেছে। করেছে বিস্মিত। ‘ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশি সাহিত্যপ্রেমী’-এর ব্যানারে তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার সমস্ত আয়োজনে ছিল বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন ফ্রান্স (বিসিএফ), আয়েবা এবং মাদারীপুর জেলা এসোসিয়েশন ফ্রান্স। অনুষ্ঠানে মাদারীপুরের কৃতী সন্তান সাদাত হোসাইনকে জেলা এসোসিয়েশন-এর পক্ষ থেকে ক্রেস্ট এবং ফুলের তোড়া দেওয়া হয়।

প্যারিসের উপকণ্ঠে ওবারভিলিয়ে শহরের একটি হলে এই সংবর্ধনা ও শর্ট ফিল্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আয়েবা মহাসচিব, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব এবং লেখক কাজী এনায়েত উল্লাহ ইনু।

জহিরুল রানার সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বিসিএফ-এর সহসভাপতি মোজাম্মেল হোসেন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব সুব্রত শুভ, শিল্পী আরিফ রানা, মাদারীপুর জেলা এসোসিয়েশন ফ্রান্স-এর সভাপতি হাবিবুর রহমান, বরিশাল বিভাগীয় কমিউনিটি ফ্রান্স-এর সভাপতি ও. আই. রিয়াদ।

অনুষ্ঠানে বিসিএফ-এর সভাপতি এমডি নূর-এর নেতৃত্বে একটি দল উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেন ফারুক শোয়েব, আব্দুর রহমান শিপন, শাহেদ ভুঁইয়া, শাহজাহান, মাহমুদ আহমেদ। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন সাহিত্যিক সাদাত হোসাইনের বাল্যবন্ধু ওহিদুজ্জামান টিপু।

অনুষ্ঠানে লেখকের সম্মানে মানপত্র পাঠ করেন সঞ্চালক জহিরুল রানা এবং মানপত্র লেখকের হাতে তুলে দেন প্রধান অতিথি কাজী এনায়েত উল্লাহ ইনু। সাংস্কৃতিক পর্বে গান পরিবেশন করেন মৌসুমী চক্রবর্তী এবং ইমতিয়াজ রনী। পুঁথি পাঠ করে শোনান স্বনামধন্য পুঁথিশিল্পী কাব্য কামরুল। অনুষ্ঠানে আকর্ষণীয় পর্ব ছিল লেখকের নিজের মুখে ‘জীবনের গল্প, গল্পের জীবন’।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লেখকের পরিচিতিমূলক তথ্যচিত্র ও তারই নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘বোধ’ প্রদর্শন করা হয়।

অন্যদিন-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সাদাত হোসাইন বলেন, ‘ইউরোপে যে এত মানুষ আমার বই পড়ে, আমাকে ভালোবাসে, এটা অকল্পনীয় ছিল। এ আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। সেখানকার স্থাপত্য ও ঐতিহ্য আমাকে টেনেছে, আকর্ষণ করেছে। ব্রাসেলসে বনের মধ্যে দেখেছি ঐতিহাসিক স্থাপনা। ইউরোপে দেখেছি ম্যানহোলের ঢাকনার মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এখানকার ইটও এক ঐতিহাসিক বিস্ময়!...ইউরোপে আমাকে সবচেয়ে যে বিষয়টি অভিভূত করেছে, সেটি হলো সবুজ। প্রত্যেকটি শহর সবুজে আচ্ছাদিত। ফ্রাঙ্কফুর্টে যাওয়ার পর মনে হয়েছে যে আমি এক পার্কের মধ্যে ঢুকে পড়েছি।’

Leave a Reply

Your identity will not be published.